somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আততায়ীর হাতে খুন হলেন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে (১৮৪৬-১৯০১)

১৯০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। নিউয়র্কের বাফেলো শহরের একটা মেলা যার নাম ছিল 'প্যানআমেরিকান এক্সপজিশন' সেটা দেখতে এসেছেন আমেরিকার ২৫ তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা তার দ্বিতীয় মেয়াদ, পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।


জনতার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে'র শেষ ভাষন

৫ ই সেপ্টেম্বর ১৯০১ সেখানে (প্যানআমেরিকান এক্সপোজিশন) একটা ভাষন দিয়েছেন, তারপরদিন মানে ৬ তারিখে সকালে গিন্নিকে নিয়ে গেছেন কাছেই নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে। ঐদিন বিকেল ৪ টার দিকে 'টেম্পল অফ মিউজিক' নামক একটা কনসার্ট হলে জনতার সাথে তার মোলাকাত হ্ওয়ার কথা আছে।

টেম্পল অফ মিউজিক এর ছবি

নায়াগ্রা দেখে আসার পর গিন্নি বললেন তিনি ক্লান্ত প্রেসিডেন্ট যেন একাই টেম্পল অফ মিউজিকে যান। বিকেল ৩:৩০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে চলে গেলেন টেম্পল অফ মিউজিকে, স্হানীয় জনগনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে। উল্লেখ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি মোটেই সিরিয়াস ছিলেননা, গার্ড ফার্ড ছাড়াই তিনি প্রায়ই এখানে সেখানে ঘুরতেন বা চলে যেতেন। আর এতে নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত ব্যাক্তিরা বেশ ঝামেলায় পড়তেন।

জেমস এ গারফিল্ড

উল্লেখ্য যে এর ৩৬ বছর আগে ১৮৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন আর মাত্র বছর বিশেক আগে ১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জেমস আব্রাহাম গারফিল্ড--- দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে খুন হয়েছেন।


শেষবারের মত টেম্পল অফ মিউজিকে উঠছেন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে, তারিখটা ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ বিকেল ৩:৩০ মিনিট।

বিকেল ৪:০০ টার সময় গেট খুলে গেল আর জনতা হুড় হুড় করে ভেতরে ঢুকতে শুরু করল। তাদের উদ্দেশ্য প্রেসিডেন্টর সাথে সৌজন্য বিনিময়।

ঐ জনতার মাঝে একজনের নাম ছিল লিয়ন কযলগশ (Leon Czolgosz)। তার বয়স ছিল ২৮ বছর জন্মস্হান মিশিগান আর তিনি বিশ্বাস করতেন এনার্কীজম এ (Anarchism) মানে প্রচন্ড ভায়োলেন্স আর অরাজকতাতে। তার উদ্দেশ্য ছিল আদর্শগত কারণে প্রেসিডেন্টকে খুন করা।


(আততায়ী লিয়ন কযলগশ ১৮৭৩-১৯০১ বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যু)

যাহোক দর্শনার্থী সবাই ঢুকে প্রেসিডেন্ট এর সাথে হ্যান্ড শেক করে 'হ্যালো নাইস টু মিট ইউ মিঃ প্রেসিডেন্ট' বলে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

বিকেল ৪:০৭ মিনিটে লিয়ন কযলগশ এর সুযোগ এল প্রেসিডেন্টের সাথে হাত মেলাবার । তিনি ডান হাতে ০.৩২ ক্যালিবারের ইভর জনসন রিভলবারটা একটা রুমাল দিয়ে ঢেকে প্রেসিডেন্টের দিকে এগোলেন।
তখন ছিল গরম কাল, অনেকেই ঘাম মুছবার জন্য হাতে রুমাল রাখছিল, তাই কেউই ততটা সন্দেহ করেনি।
আবার প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে মনে করেছিলেন লিয়নের ডান হাতটা আহত বা জখম তাই তিনি লিয়নের বাঁহাতের সাথে হ্যান্ড শেক করার জন্য নিজের হাত বাড়িয়ে দেন।


(লিয়ন কযলগশ প্রেসিডেন্টকে গুলি করছেন, শিল্পির আঁকা ছবি)

তখনই লিয়ন কযলগশ ডানহাতের রিভলবার দিয়ে প্রেসিডেন্ট এর বুকে দুটো গুলি করেন।


ডানে নীচে কোনায় ক্রশ চিহ্ন দেয়া জায়গাতেই প্রেসিডেন্ট গুলিবিদ্ধ হন

প্রেসিডেন্টকে দুটো গুলি করা হয়েছিল। একটা গুলি হয়ত শার্টের বুতামে বা মোটা কোন জায়গাতে লেগে ভেতরে আর ঢুকতে পারেনি, তবে অন্য আরেকটা গুলি তার তলপেট দিয়ে ঢুকে পাকস্হলি, কিডনি আর প্যানক্রিয়াস ফুটো করে দেয়।

এই ঘটনার পর উপস্হিত উত্তেজিত জনতা রিভলবারধারী আততায়ী লিয়ন কযলগশকে ধরে গনপিটুনি শুরু করে, তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে তাদের নিবৃত্ত করেন আর এও বলেন 'আমার স্ত্রীকে এই খবর বলার সময় সাবধানে বলবে'।
তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তাকে দ্রুত বাফেলোর স্হানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খেয়াল করুন এধরণের পরিস্হিতি মোকাবেলার জন্য প্রেসিডেন্ট অফ আমেরিকার বা তার সফরসঙ্গীদের কোন প্রস্তুতিই ছিলনা!
দুর্ভাগ্যবশত বাফেলোর সেখানে ভাল কোন ডাক্তার ছিলেননা, আর একমাত্র সার্জন গেছিলেন অন্য আরেকটা অপারেশনে অন্য এক জায়গাতে। সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় সরন্জামও তেমন কিছুই ছিলনা।
গুলি বের করার একমাত্র সার্জন যাকে পাওয়া গেল তিনি ছিলেন একজন গাইনকলজিস্ট, নাম ডাঃ ম্যাথিউ মান।

গাইনকলজিস্ট ডাঃ ম্যাথিউ মান যিনি প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে'র শরীর থেকে গুলি বের করবার অপারেশন করেন তবে বের করতে পারেননি


প্রেসিডেন্টেকে যেখানে রেখে অপারেশন করা হয় সেই অপারেশন টেবিল

বিকেল ৫:২০ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়। ডাক্তার সেই ২য় বুলেটটা খুজে না পেয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য সেই অবস্হাতেই ভাল করে জীবানুমুক্ত না করেই তলপেট সেলাই করে দেন, সময় তখন সন্ধ্যা ৭:০০ টা, ০৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯০১, যুক্তরাস্ট্র।

প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল তিনি ভাল হয়ে যাবেন। কিন্তু ভাল করে পরিষ্কার না করাতে আর সম্ভবত বুলেট রয়ে যাওয়াতে সেই জায়গাতে পরে ইনফেকশন হয়ে গ্যাংগ্রীন হয়ে যায়, যা আর ভাল হয়নি।
১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৯০১ রাত ২:১৫ মিনিটে যুক্তরাস্ট্রের ২৫ তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে গুলি খাওয়ার পর গ্যাংগ্রীনে মারা যান।


থিউডর রুজভেল্ট যুক্তরাস্ট্রের ২৬ তম প্রেসিডেন্ট

ঐদিন বিকালে থিউডর রুজভেল্ট যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

এই বাড়ীতেই প্রেসিডেন্ট গুলিবিদ্ধ হন

লিয়ন কযলগশ তখনি গ্রেফতার হন আর দ্রুত তার বিচার সম্পন্ন করা হয়। তিনি মোটেই অনুতপ্ত ছিলেননা, বরং বলেছিলেন 'আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে কে খুন করে আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। আমি মনে করি তার এত সুযোগ সুবিধা থাকবে আর আরেকজনের কিছুই থাকবেনা, এটা বেআইনী'।

বিচারে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন আর তার শাস্তি হয় মৃত্যুদন্ড ।

২৯ শে অক্টোবর ১৯০১ তারিখে বৈদ্যুতিক চেয়ারে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।


প্রেসিডেন্ট ম্যাকিনলে'র নিজ রাজ্য ওহায়োতে তার স্মৃতিসৌধ

সুত্র: ইন্টারনেট
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×