somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরতে গেছিলুম ইউরোপ- ৭

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতালীর ভিসেন্জাতে আমার আবাসস্হল, হোটেল কাসটেলি

ইতালীর ভেরোনাতে প্রাচীন মল্লযুদ্ধের স্টেডিয়াম- এরেনা।

এরেনার ছবি।

ইতালীর ভিসেনজা পৌঁছে আমার জন্য রিজার্ভ করা হোটেলে উঠলুম। চমৎকার তিন তারকা হোটেল। রিসেপশনে মেয়েটি বেশ খাতির করল। যদিও বিদেশে বাঙালী পর্যটকদের খুব সুনাম নেই। তোয়ালে সাবান চামচ মায় বেডশিট...... অনেকেই জানে। প্রকান্ড রুম, কয়েকদিন এখানেই থাকব। ভাগ্নে আজাদ সাথেই ছিল সবসময়। সে এখানে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভিসেনজাতে আছে। ওখানে বাঙালীরা বেশী ভাল নেই। ভিসেনজা শিল্প শহর হলেও কারখানা সবগুলো ভাল চলছেনা, ফলে চাকরী হারাচ্ছে বাংলাদেশীরা, নতুন করে চাকরী পাচ্ছেনা। কিন্তু বেচারারা চাকরী হারিয়ে দেশেও আসতে পারছিলনা। এসে কি করবে জানেনা আবার আশাও করে যদি অবস্হার পরিবর্তন হয়। সরকার কিছুটা সাহায্য করে।

এসেছি ঘুরতে । ভাগ্নে আজাদের বন্ধু মিলনের গাড়িতে করে আমাদের ঘোরা শুরু। ঝা চকচকে শহর ভিসেনজা, একটু ধুলো নেই ময়লা নেই অপুর্ব সুন্দর। ইতালীকে ভেবেছিলুম সুইজারল্যান্ডের মত হবেনা বরং একটু নোংরা হতে পারে। ওমা ভিসেনজা দেখি সুইজারল্যান্ডের প্রায় কাছাকাছিই! বেলা এগারোটা রাস্তায় কোন লোকই নেই। গাড়ির হর্ণ নেই, হকার নেই শব্দ নেই একেবারে স্বর্গই!

এখানে ডলার চলবেনা ইউরো করতে হবে। গেলুম একটা পোস্ট অফিসে, দুএকটা কাগজে সই করে পাসপোর্ট দেখিয়ে ইউরো করলুম। তারপর একটা জনমানবশুন্য পেট্রোল পাম্প থেকে মিলন নিজেই গাড়ির ট্যাংক ভরে তেল নিল। ওদের দুজনের মানে আজাদ আর মিলনের সার্ভিসের দাম টাকায় হয়না। এখানে তেলের দাম সুইজারল্রান্ড থেকে কম।
প্রথমে ভিসেনজার কিছু গির্জা। দেখা টেখা শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে ঠিক হল যাব রোমিও জুলিয়েটের শহর ঐতিহাসিক প্রাচীন স্হাপনার শহর ভেরোনা। মিলনের গাড়িতেই চললুম। ইউরোপিয়ান হাইওয়ে হয়ে ভিসেনজা থেকে ভেরোনা। ঘন্টা তিনেকের পথ।

ইতালীর প্রাচীন মল্লযুদ্ধের স্টেডিয়াম এরেনা।

ভেরোনাতে রোমিও জুলিয়েটের বাড়ী

রোমিও জুলিয়েটের বাড়ীতে দর্শকদের ভিড়।

ভেরোনাতে

ভেরোনা

ভেরোনা থেকে ভিসেন্জাতে হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত হল।

পরদিন যাব ইতালীর বিখ্যাত শহর ভেনিযিয়া বা ভেনিস। সকালেই দুই যমরাজ আজাদ আর মিলন হাজির। বেশ দুরের পথ আর ওখানে সমুদ্রে স্নান খালে বেড়ানো ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক সময় লাগে তাই তাড়াতাড়ি রওয়ানা হতে হবে। সমুদ্রে স্নান করার জন্য একটা হাফপ্যান্ট কিনতে হল পনেরো ইউরো দিয়ে। টাকাটা দিতে বেশ গা জ্বললো! একশো টাকার হাফপ্যান্ট দেড় হাজার টাকা!

ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার স্পীডে গাড়ি চালিয়ে ভেনিস পৌছতে বেশ সময় লাগল। পৌছেই চালক মিলন খুঁজতে শুরু করল পার্কিং প্লেস। অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর সমুদ্রের ধারেই একটা পাওয়া গেল, জনৈক ভারতীয় মালিকের পার্কিং এরিয়া, অনেক টাকা ভাড়া। যাহোক গাড়ি রেখে হেটে শহরটা দেখতে দেখতে শুরু হল গোলক ধাঁধা! সরু সরু সব গলি আবার দুপাশেই খাল। কোথা দিয়ে ঢুকলুম আর বেরুলুম মনে নেই তবে অনেক পরে একটা খালের কিনারে দাঁড়ালুম। ধনুকের মত সব স্পিড বোট ভেড়ানো আছে, নাম গন্ডোলা। আবার আধুনিক স্পীড বোটও আছে। দল বেধে বা একা রিজার্ভ করে ঘুরুন। আমরা তিনজনে একটা বোট ভাড়া করলুম, শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যাবে আর আসবে, ঘন্টাখানেকের পথ, ভাড়া একশ পন্চাশ ইউরো!

দুপাশে চমৎকার সব বাড়িঘর আর মাঝখান দিয়ে টলটলে পানি কেটে চলেছিল আমাদের বোট। দারুণ লাগছিল।

পুরো ভেনিস শহরটাই মনে হয় পানির খানিকটা নীচে।

শহর বানাবার প্রাচীন ছবি



ভেনিস শহরটা কয়েকটা দ্বীপের উপর বানানো। শচারেক বছর আগে যখন কন্ক্রীটের প্রচলন অতোটা ছিলনা তখন গাছের লগ জলাভুমিতে গেথে তারউপর ভিত গেড়ে বাড়ি বানানো হয়। কথা হল কাঠের ভিত অতোদিন টেকে কি করে! কারণ আছে। লোনাপানিতে ডোবার পর কাঠগুলোর বাইরে পানির কারনে অক্সিজেন ভিড়তে পারেনা, প্রুফ হয়ে পড়ে ফলে ব্যাকটেরিয়া জনিত ক্ষয় আর হয় না, তার উপর নোনা পানির কারণে কাঠগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়া করে লোহার চাইতে শক্ত হয়ে যায়। ভেনিসের শেষ মাথায় একটা প্রকান্ড প্রাসাদ, সমুদ্রের পারেই। সেখানে ম্যালা লোকের ভিড়, খাবারের দোকান আছে।


ভেনিসের সমুদ্রপার।

ভেনিসের রাজপ্রাসাদ

একটু খিদে পেয়েছিল, তাই আজাদ আর মিলনকে বললুম চল বাপু পেটে কিছু দিই। ওরা সানন্দে রাজী। ইতালিয়ান পিজ্জার সুনাম দুনিয়াজোড়া তার উপর আবার ভেনিসের পিজ্জা! তিনজনের জন্য দুটো পিজ্জার অর্ডার করলুম। চটপটে আর সুন্দরী ইতালিয়ান ওয়েট্রেস মেয়েটি পিজ্জা আনার আগে এক বোল ফ্রেন্চ ফ্রাই দিয়ে গেলো আর সাথে অপুর্ব কিছু ইতালিয়ান সস আর অলিভ অয়েল। অবশ্য অলিভ অয়েলটা স্পেনের ছিল। পেটে খিদে ছিল, মজা করেই খেলুম। বাংলাদেশী টাকায় বিল হল প্রায় সাড়ে নয় হাজার টাকা। পর্যটকদের এলাকা তো তাই খাবারের দামটা ওরকমই।




শহরের ভেতরে গাড়ি চলাচল নেই পুরোটাই হাঁটতে হয়, অথবা বোটে।
খালের পারে দোকানগুলোর পাশ দিয়ে হাঁটছি আর বিভিন্ন খেলনা গিফট আইটেমের দাম দেখছি। চমৎকার সব স্যুভেনিয়র, মুখোশ গন্ডোলা, চাবির রিং। এক দোকানে দেখি এক বাংলাদেশী যুবক, ওসব বিক্রী করছে। আমরা দাম করতেই সে বলল আপনারা পছন্দ করুন দামে আটকাবেনা। তাকে পেট্রনাইজ করতেই বেশ কিছু খেলনা গন্ডোলা আরো অন্যান্য কিছু জিনিস কিনলুম। শেষে দাম দেয়ার সময় দাম বাঙালী দোকানদার দামটা অন্য দোকান থেকে একটু বেশীই নিল দেখলুম। আমরা আগেই কয়েক দোকানে ওসব জিনিসের দাম দেখেছি, দেখলুম বাংলাদেশী যুবক ওসব দোকানের চাইতে সব মিলিয়ে প্রায় চৌদ্দ ইউরো বেশী নিল। দিশি মানুষ বলেছে দামে আটকাবেনা, তাই দরাদরি না করে, চুপচাপ কিল হজম করে দাম দিয়ে কেটে পড়লুম। বাংলাদেশী চরিত্র বড়ই দুর্বোধ্য!

রাতের মধ্যেই ব্যাক টু হোটেল।
-চলবে--
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×