নীলক্ষেতের আলাদা গন্ধ আছে। নতুন পুরোনো বইয়ের গন্ধ। হাজারো মানুষের ঘামেভেজা শার্টের গন্ধের সাথে বইয়ের গন্ধ মিশে অন্যরকম হয়ে আছে পরিবেশটা। অন্যদিকে একটি বিরিয়ানির দোকানে বিরিয়ানি খাচ্ছে মিথুন এবং নিশা।মিথুন মাত্র HSC পরীক্ষা দিল। সামনে চোখভরা স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু মিথুন জানে বিষয়টা অত সহজ নয়। আশেপাশের সবাই বিষয়টা যত সহজ ভাবছে এটা তত সহজ না।
বিরিয়ানির প্লেটের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খাচ্ছে মিথুন। ইশার খাওয়া শেষ আরও ৫ মিনিট আগে। মিথুন অস্বাভাবিক ভাবে অতিরিক্ত সময় লাগাচ্ছে। নিশা এবার রেগেগিয়ে বললো
-হাড়গুলারে এবার মুক্তি দেও। চলো ধানমন্ডি যাব। কথা আছে তোমার সাথে।
-এখানেই বলেফেলো। বিরিয়ানি টেস্ট হইছে। আসলে তোমার টাকায় বিরিয়ানি সত্যিই একটু বেশি টেস্ট হয়।
-টেনশন নিওনা। বিল আমিই দিব।
-আমি জানতাম তুমি দিবা। তাই তো মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছি।
-আচ্ছা শোনো। আপু আমাদের রিলেশনের কথা জেনে গেছে।এখন তোমার সম্পকে জানতে চাইছে।
-খুব ভাল। বলছো সব? বিরিয়ানি যে আমার বেশি পছন্দ এটা বলছো?
-আজব! তোমার পছন্দ অপছন্দ এগুলা আপু জানতে চায়নাই। উনি তোমার ফিউচার প্লান সম্পকে জানতে চাইছে।
-ও আচ্ছা আচ্ছা। তো আপুকে বলছো যে ফিউচারে তোমার আর আমার গভীর রাতে বৃষ্টি ভেজার প্লান আছে।
-আরেহ এসব না।ধুর! তুমি সবকিছু নিয়া মজা করো।
-ইসস। মজা শুনেই মোজোর কথা মনেপড়ে গেল। একটা মোজো খাওয়াবা। বিরিয়ানির পর ঠান্ডা মোজো বেশ ভাল্লাগবে।
-অফফ।তুমি যদি এমন করো তাহলে কিন্তু আপু আমাদের যোগাযোগই বন্ধ করে দেবে।
-সামান্য একটা মোজোর জন্য আপু আমাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে!
-শোনো তুমি যেভাবেই হোক পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হবা।আপুর ঢাকা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে অনেক পছন্দ।
-বিয়ে কি তোমার আপু করবে নাকি তুমি করবা?
-মানে কি!
-না মানে ভাবতেছি তোমার আপুর জন্য একটা ঢাকা ভার্সিটির ছেলে নিয়ে যাবো। আর আমি তুমি আগের মতই প্রেম চালায়া যাবো। আচ্ছা বাদদেও চলো মোজোখাই।মোজোর বিল নাহয় আমিই দিলাম।
নিশা বিল দিয়ে একা একা হাটতে শুরুকরলো। পেছন পেছন মিথুন হাটছে। রিক্সা নিয়ে বাড়িতে চলেগেল নিশা। মিথুন আজ মনেমনে বেশ খুশি। লেগ বিফোর উইকেট আদায় করেছে সে।নিশা বুঝতেই পারেনি যে মিথুন এভাবে বল ছুড়বে যা স্ট্যাম্প ভাংবে না অথচ আউট হয়েযাবে।
এভাবে কেটেগেল কিছুদিন। ভার্সিটি এক্সাম শেষ। মিথুনের সুযোগ হয়নি ঢাকা ভার্সিটি তে।নিশা ধীরে ধীরে এড়িয়ে চলতে শুরুকরে মিথুনকে।
-হ্যালো নিশা!
-হ্যা বলো।
-কালকে একটু দেখা করবা?
-আমি টাকা পাঠায়া দিব। বিরিয়ানি খেয়ে নিও।
-আমি বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য তোমাকে ডাকি নাই। প্লিজ একটু দেখাকরো।
-বাই। আপু এসেগেছে বাসায়। কথাবলা যাবেনা।
ইদানীং নিশা এভাবে মিথুনকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাদে ফেলে।মাথানিচু করে পেভিলিয়নের পথে হাটা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা মিথুনের।কে জানে বিহাইন্ড দা স্ক্রিনে কে কলকাঠি নাড়ছে। শুধুমাত্র ভার্সিটি ইস্যু হতে পারে না। এসব ভাবনা মিথুনের মাথা সারাদিন ব্যাস্ত রাখে। রাস্তায় হাটছে আর ভাবছে। হঠাত থেকে গেল।তার মনেহল বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিরি গন্ধ তার নাকে আসছে। পাশফিরে দেখলো একটি বিরিয়ানি হাউজ।