মদনমোহন তর্কালংকার এর
শিশু শিক্ষা বইটি ছোটবেলায় যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের হয়তো মনে আছে। কিস্তু, বর্তমান প্রজন্ম কি এই বই-এর কথা শুনেছে? তখনকার ’শিশু শিক্ষা’ বইটিতে কি ছিল? আমি বইটি সংগ্রহ করেছি। বইটি হুবহু কস্পিউটারে টাইপ করেছি। ইচ্ছে হলো, এসবি ব্লগের সব-বয়েসী পাঠক-পাঠিকাদের জানানোর। বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরকম ... ... ...
''তুমি কি লোক, তোমার নাম কি? তোমার বাড়ী কোথায়? তুমি কি পড়? তোমার হাতে কি পুথি?
আমি বামন, আমার নাম রামনাথ। আমার বাড়ী বালী। আমি য-ফলা পড়ি। আমার হাতে শিশু শিক্ষা।
তুমি কি করিতেছ? আজ পড়িতে যাইবে না? বসিয়া আছ কেন? কি ভাবিতেছ? তুমি কি ভয় পাইয়াছ? ভয় কি? আমার সহিত আইস।
অলস হইও না। খেলা করো না। বেলা হইল। পড়িতে চল। গৌণ কর কেন? কাপড় পড়। পুথি লও, পাঠশালায় চল। তেমার পুথির মলাট কোথায় গেল? গুরুমহাশয় দেখিলে রাগ করিবেন।
ভোর হইয়াছে। আর শুইয়া থাকিও না। এখন মুখ ধোও। ঘরের ভিতর আলো আসিয়াছে। পাঠের পুথি হাতে লও। আগে নূতন পাঠ শিক্ষা কর, পরে পুরাতন পাঠ একবার দেখ। পাঠের সময় ভাল বলিতে না পারিলে সহপাঠিরা উপহাস করিবে। গুরু মহাশয়ও ভালবাসিবেন না।
কমল ফুল ফুটিয়াছে, ভাল সৌরভ আসিতেছে। ঘরে জল পড়িতেছে, বিছানা ভিজিয়া গেল।
তিনি ভোজন করিতেছেন, এখন দেখা হইবে না। তাহার পায়ে বেদনা হইয়াছে চলিতে পারে না। বড় মাথা ধরিয়াছে, কথা বলিতে পারিব না।
মাত পিতার কথা শুনিবে। সদা মন দিয়া পড়িবে। তাহা হইলে শেষে খুব সুখ থাকিবে। যাহার মলিন বেশ তাহার আদর নাই। অধিক আহার করিলে রোগ হয়। অলস লোক দুঃখ পায়। দয়ার সমান গুণ নাই। দীন দেখিয়া দান করিবে। চীৎকার করিও না। পাঠের সময় গোল করিও না। গুরুজনের নাম ধরিয়া ডাকিও না। দুখিত জনে ভোজন করাইবে। কাহারও সহিত বিবাদ করিও না। কাহারও গায়ে হাত তুলিও না। সুশীল বালককে সকলে ভালবাসে। কদাচ মিছা কথা কহিও না। কাহারও কথায় শপথ করিও না। পিতামাতার সেবা করিবে, তাঁহারা যাহা কহিবেন, তাহাই করিবে। গুরুজনের উপদেশ অবহেলা করিও না। তোমার সহপাঠিদের সহিত কখনও কলহ করিবে না। কাহাকেও কটু কথা কহিও না।
সকলকে ভালবাসিবে ও ভাল কথা কহিবে। যে জন যে কথায় মনে পীড়া পায় কখনও তাহাকে তেমন কথা কহিবে না। কাণাকে কাণা খোড়াকে খোড়া বলিও না, তাহা বলিলে তাহারা মনে দুঃখ পাইবে। পড়িবার সময়ে আর কোন দিকে মন দিও না। যিনি তোমাকে শিা দেন সাবধানে তাঁহার কথা মনে রাখিবে।
মেঘ হইতে জলধারা পড়িতেছে। এখন ঘরের বাহিরে যাইব না। আমার গা ও পা ভিজিয়া শীত করিবে ও কফ কাশি হইয়া বড় পীড়া হইবে। মেঘের মাঝে মাঝে আলো বাহির হইয়া আমার চে লাগিতেছে। উঃ! মেঘের ডাকে কান ফাটিয়া যায়। রবির আলো বাহির হইতেছে আবার বুঝি মেঘ ডাকে, চু বুজিয়া থাকি, কান ঢাকিয়া রাখি ও মাঝের কুঠরিতে গিয়া বসি। আঃ, জল ছাড়িল আপদ গেল। মেঘের ডাকে এখনি মরিয়া গিয়াছিলাম।
দশ দিক। সাত বার। দুই প। বার মাস। ছয় ঋতু। পনর তিথি। পৃথিবী গোলাকার। রবি তেজোময় ও গোলাকার। সাগরের জল লোনা। নিশাকর গোলাকার। নিজে তেজোময় নহে।
পাহাড় সকল পাষাণময় এবং ভূতল হইতে অনেক উচ্চ। নদ নদী সকল পাহাড় হইতে বাহির হইয়া উচ্চ দেশ হইতে নীচ দেশে বহিয়া যাইতেছে এবং সকলেই সাগরের জলে মিশিতেছে। যেমন ভাগীরথী নদী হিমালয় হইতে বাহির হইয়া দেিণ ভারত মহাসাগরে পড়িতেছে।
মানুসের দুই পা। যাহার পা বিকল সে খোড়া। আমাদের দুই হাত। যাহার হাত নাই, সে কিছুই করিতে পারে না। তাহাকে নুলো বলে। সকলেরই মুখ আছে। মুখ দিয়া আহার করা যায়। আহার না করিলে কেহই বাঁচিতে পারে না। মুখের ভিতর যে জিভ আছে, তাহাতেই সকল রস টের পাওয়া যায়। জিভ না থাকিলে লবণ, মধু, ঝাল, তিত, আদৌ বোধ হইত না। সকলেরই দুই ঠোঁট। ঠোঁট থাকাতে দুধ, জল চুমুক দিয়া খাইতে পারি। ঠোঁট না থাকিলে মুখ হইতে আহার পড়িয়া যাইত।
মানুষের দুই পাটি দাঁত। দাঁত দিয়া কঠিন ফল, মাছ, মাংস চিবান যায়। আমাদের জিভ, দাঁত, ঠোঁট আছে তাই কথা বলিতে পারি। যে কথা বলিতে পারে না, লোকে তাহাকে বোবা বলে। মানুষের দুই চু, চু দিয়া সকল বস্তু দেখিতে পাওয়া যায়। যাহার চু নাই, সে কিছুই দেখিতে পায় না। আহা! কাণা বড় দুঃখী। তোমাদের দুইটি কান আছে। কান না থাকিলে কাহারও কথা শুনিতে পাইতে না। কাণারা কিছুই দেখিতে পায় না। কাণারা কিছুই দেখিতে পায় না। নাক দিয়া বাহিরের বাতাস টানিয়া লওয়া যায় এবং ভিতরের বাতাস বাহির করা যায়, তাহাতেই জীবন রা হয়। যাহার নাক কাই সে ফুলের বাস পায় না ও তাহাকে অতি কদাকার দেখায়। মানুষের দুই ভুরু। ভুরু চরে শোভা। ভুরু থাকাতে চে রোদ লাগে না এবং পথের ধূলা ও কপালের ঘাম চে পড়িতে পারে না। সকলের মাথায় চুল আছে। যাহার মাথায় চুল নাই তাহাকে নেড়া কহে। এক এক হাতে পাঁচটি করে আঙ্গুল আছে। আঙ্গুল না থাকিলে হাত দিয়া কিছু ধরা যাইত না। দুই পায়ে দশ আঙ্গুল আছে। পায়ে আঙ্গুল না থাকিলে চলা কঠিন হইত। দুই চে চারি পাতা আছে। ঐ পাতা থাকায় চুর ভিতর ধূলা পড়িতে পারে না এবং রবির তাপ ও আলো লাগিয়া চুর কোন দোষ ঘটে না।
বার মাস তিথি যত।
একে একে হয় গত ॥
বার মাস সাত বার।
আসে যায় বার বার ॥
লেখা পড়া করে যেই।
গড়ী ঘোড়া চড়ে সেই ॥
লেখা পড়া যেই জানে।
সব লোক তারে মানে ॥
কটু ভাবী নাহি হবে।
মিছা কথা নাহি কবে ॥
পর ধন নাহি লবে।
চিরদিন সুখে রবে ॥
পিতামাতা গুরুজনে।
সেবা কর কায় মনে ॥ পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুম কলি ফুটিয়া উঠিল ॥
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ॥
ফুটিল মালতি ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লেভে অলি আসিয়া জুটিল ॥
গগণি উঠিল রবি লোহিত বরন।
আলোক পাইয়া সকল পুলকিত মন ॥
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায় পতায় পড়ে নিশির শিশির ॥
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ ॥