হায় হায় হায় ! জাত গেলো ভাই জাত গেলো ! এ কি অবস্থা দেশের জিপিএ 5 পাওয়া শিক্ষার্থীদের ! দেশ তো চলে গেলো ধ্বংসের পথে ! হায় হায় হায়
ভাই থামেন। ওই ভিডিও দেখে হাহাকার করার আগে নিজের চোখ বড় করে খুলেন আগে।
.
দেশের এক বেসরকারী টিভি চ্যানেলের জিপিএ 5 পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা ভিডিওটা নিয়ে আমার যথেস্ট পরিমানে সন্দেহ আছে .. বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস, নিউটন নিয়ে প্যাচটাকে দোষ হিসেবেই নিলাম, বাট “স্মৃতিসৌধ” কোথায় সেটা না জানা আর পীথাগোরাস “ঔপন্যাসিক” এই দুইটা প্রশ্ন/উত্তর –ইই ভিডিওটার মেকিং নিয়া ১০১টা প্রশ্ন তুলবে ..
.
স্টুডেন্টরা পীথাগোরাসের উপপাদ্য পারুক-আর না পারুক, হোক সে সাইন্স-কমার্স-আর্টসের স্টুডেন্ট, তারপরেও ভুলেও কেও পীথাগোরাসকে ঔপন্যাসিক বলবে না .. “গনিতবিদ” শব্দটা মাথায় না আসলেও অন্তত এতটুকু বলতে পারবে যে “তার উপপাদ্য পড়সি, বাট পরিচয় জানি না” .. এতটুক সেন্স অন্তত আমাদের স্টুডেন্টদের আছে .. যতোটা বাজে বলা হচ্ছে ততোটা বাজে এরা না।
.
আচ্ছা ধরে নিলাম ভিডিওটা ট্রু .. এখানে আগে থেকে বানানো কিছু হয় নাই .. এখন কথা হচ্ছে ক্যামেরার সামনে আসলে সবারই আত্মা ৯০% নাই হয়ে যায় .. যারা দাড়ান নাই তারা জীবনেও বুঝবেন না এটা কেমন অনুভূতি .. ৫০-৬০ বছরের মানুষও ক্যামেরার সামনে গেলে ভড়কাইয়া যায় .. আর সেখানে এরা মাত্র এসএসসি দিয়েছে .. নিজেই চিন্তা করেন, একটা এসএসসি দেয়া স্টুডেন্টের ম্যাচুউরিটি লেভেল কতটুকুই বা থাকতে পারে ! .
.
আপনি নিজে কতোটা ম্যাচিউর ছিলেন? নর্মালি এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা অপরিচিত একটা মানুষের সামনেই ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, সেখানে ওদেরকে ক্যামেরায় ইন্টার্ভিউ নেয়া হচ্ছে ! ব্যাপরটা একটু বুঝেন। তার উপর প্রশ্নকর্তা যেইভাবে সিআইডি অফিসারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করসিলো, মনে হয় সামনে “মার্ডার কেস” এর আসামীরা বসে আছে .. একজন স্বাধীনতা দিবসের উত্তর দিতে গিয়ে বলে ফেলে ২৬ শে ডিসেম্বর। ১৬ই ডিসেম্বর/২৬ শে মার্চ/২১শে ফেব্রুয়ারির বাইরে উত্তর আসা টোটালি অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার .. এতেই তো বোঝা যায় সে কতোটা নার্ভাস ছিলো।
.
তৃতীয় কথা, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা ভাল না এটাও ট্রু .. তবে যতোটা বাজে ভাবে দেখানো হচ্ছে, বা যতোটা বাজে ভাবছেন, এতোটা বাজেও না .. যারা “ছি ছি” রব করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ভিডিও শেয়ার করার টাইমে উপন্যাস লিখে ক্যাপশন দিচ্ছেন, তাদের কাছে আমি যদি জানতে চাই ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম বলা শুরু করেন, তাইলে তো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আরো ভয়াবহ হাল প্রকাশ পাবে (according to ur logic)।
.
এই ১৩ জনের কারনে আমি রাজউক থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া স্টুডেন্টদের জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না, এই ১৩ জনের কারনে পারি না ভিকারুন্নেসা, হলিক্রস, রেসিডেন্সিয়াল, শামসুল হক খান, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট থেকে পাওয়া জিপিএ ৫ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে .. পারিনা জিপিএ ৫ পাওয়া ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জনের সবাইকে .. এরা পাতিলের ভাত না, যে একটা টিপ দিলেই পুরো পাতিলের খবর পাওয়া যায়।
.
এদের নিয়ে ছি ছি করছেন তো?? সাহস থাকলে রাজউক, আদমজী, ভিকারুন্নেসার সামনে গিয়ে ওদের স্টুডেন্টের সামনে গিয়ে ওদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন .. লিখিত দিতে পারি, ওদের জ্ঞানের সামনে আপনি আপনাকে নিতান্তই মুর্খ হিসেবে আবিষ্কার করবেন।
.
আমিও স্বীকার করি, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিম্নমুখী, কিন্তু ছি ছি পর্যায়ে চলে যায় নাই .. তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে যেই ব্যবস্থা তাদের এই যোগ্যতা দিয়েছে, দিচ্ছে, তাদের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ছি ছি করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:১৪