[এক]
রিতা…আমার চাচার বাসার কাজের মেয়ে। বয়স বড়জোড় ১০/১২ হবে। চাচা-চাচী থেকে শুরু করে সবাই ওকে অনেক আদর করে। যার দরুন 'পাখি' নামে ওর একটা আদুরে নামও পড়ে গেছে। মাঝে মাঝে কেমন পাহাড়ীদের মত করে কথা বলে আর কি সব বকাবাজী করে যা বোঝার সাধ্য রীতিমত আমাদের কারোর নেই। যাই হোক ব্যাপারটা সবাই হাস্য রসাত্মক হিসেবেই মানিয়ে নিয়েছে।
[দুই]
রিতা আবার খুব টিভি এডিক্টেড একটা মেয়ে। ধর্মীয় দিক বিবেচনায় আমার চাচা শয়তানের বাক্স (চাচার ভাষ্যমতে) আই ম্যিন টিভি জিনিসটাকে নিজের ঘরে ঠাই দেন নি। তাই রিতা প্রতিদিনই সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় চলে আসে টিভি দেখার জন্য। স্টার প্লাস আর জলসার এমন কোন সিরিয়াল নেই যেগুলোর নায়ক নায়িকার নাম, প্রেম বিরহের আদ্যপান্ত আর সাংসারিক কুটনামীর যাবতীয় খবর আপনি আমাদের রিতার কাছে পাবেন না
[তিন]
গেল রোজার ঈদের কথা। রিতা পাগল হয়েছে 'আকসারা' না কি ড্রেস কিনবে! কেউ কোনভাবেই তাকে বুঝিয়ে পারছে না। তার এক কথা এই ড্রেস না পেলে সে বাড়ি চলে যাবে!! আমার বড় চাচী অসুস্থ মানুষ। কি আর করা শেষ পর্যন্ত কিনে দিলেন। যাক আমাদের বাসায় সৃষ্ট লঘু চাপ মুহূর্তেই বাপ ডেকে পালালো।
[চার]
ঈদের দুই দিন পর। হায় খোদা…রিতা আবার বাড়ি যাবার জন্য কান্নাকাটি শুরু করেছে! বাবা মায়ের জন্য নাকি খারাপ লাগছে। দুই দিন থেকেই চলে আসবে। যথারীতি এই আবদারও রাখা হল। অসুস্থ শরীর নিয়ে বড় চাচী একাই সব মেহমানদারীর দখল সামলালো।
[পাঁচ]
বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর,
রিতার ভাব ভঙ্গিমায় এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। কথা বার্তায়ও কেমন বড়দের ছাপ। হঠাৎ করেই যেন এই পুচকি মেয়ে বেশ বড় হয়ে গেল! সেদিনই আম্মা ফোন দিয়ে জানালো বাসায় রিতাকে নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে। কারণ কি?? এই মেয়ে মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য সবার মাথা খেয়ে ফেলছে!!! শোনে তো আমি পুরো তাজ্জব বনে গেলাম। ঘটনা যদি এখানেই শেষ হত তাহলেও আমি মোবাইল দিয়ে এত কষ্ট করে এই পোষ্ট দিতে উদ্ধত হতাম না।
[ছয়]
গত কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় টিভি দেখার ছলে কথা বের করার উদ্দেশ্যেই আম্মা একটু ফাপড় মেরে জিজ্ঞাস করল,
- কি??? ছেলে কি করে শুনি?
- (টিভির দিকে তাকিয়েই) হেয় গারমেন্ট্স্ִ এ কাম করে।
- হেই কি তোরে বলছে মোবাইল কিনতে?
- হ…হেই কইসে। আরো কইসে কয়দিন পরেই আমারে বিয়া করব।
- ওই বান্দরনী তোর বয়স কত হইসে এখনি যে বিয়া বিয়া করস!! লজ্জা শরমের মাথাও কি খাইয়া ফালাইছস??
- ইহ্ִ আমার ১৫ বসর অইয়া গেসে। আমাগো বাড়িতে আমার থেইকা ছোডো ছোডো মাইয়াগো বিয়া অইয়া যাইতাসে।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি আর আম্মা দুজনেই চরম মাত্রায় টাস্কিত। চাচা-চাচি এখনও থলের ভিতরের খবর জানেন না। উনাদের কাছে রিতা বলছে সে যখন তখন ইচ্ছা হলেই গান শোনতে পারে না তাই আর্জেন্ট একটা মোবাইল চাই-ই চাই। আপাতত এটা নিয়েই বাসার পরিবেশ উত্তপ্ত। ছোট পোলাপান থেকে শুরু করে মুরুব্বী পর্যায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে।
কিছু কথাঃ
পুরো ঘটনার জন্য এই ইন্ডিয়ান চ্যানেল গুলোর দায় কোন অংশেই খাট করে দেখার মত না। অন্তত আমাকে জিজ্ঞাস করলে আমি বলব এসব ঘটনার পিছনে ৭০% ভূমিকাই এই চ্যানেল গুলো অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




