[এক]
...সুজন। সিদ্দিক কাকার বড় ছেলে। ছোটবেলাকার সময়টা গ্রামে কাটানোতে আমারও অন্যতম খেলার সাথী ছিল এই সুজন। বয়সে ছোট হওয়ায় আমাকে ভাই বলেই ডাকতো। আমার আবার ছোটবেলা থেকেই চায়ের অভ্যাসটা হয়ে গিয়েছিল। সুজন 'চ' আর 'ল' এর একই রকম উচ্চারণ করত। প্রায়শই আমার আম্মাকে ডেকে বলত "খালা...খালা ভাইয়ারে সিগার সা (লিকার চা) দেও!
মাটির ঘর হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে সাধারণত ইঁদুরের উৎপাতটা একটু বেশিই হয়। একদিন বিকেলবেলা সুজনের মা হালিমা চাচী আমাদের বাসায় টুকিটাকি কাজ করে দিচ্ছিলেন। হঠাতই সুজন দৌড়ে চিৎকার করতে করতে এসে ঘরে ঢুকল "আমাগো ও আম্মাগো দেইখা যাও ঘরো অতকান (এতো) বড় এক সিগা (চিকা)!!" আমরা তো প্রথম ওর কথা বুঝে উঠতে না পেরে রীতিমত ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।
[দুই]
সিদ্দিক কাকার বয়স তখন খুব বেশি হলে চৌদ্দ কি পনেরো। বয়সের তুলনায় তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় দুরন্ত এক বালক। উনার একটা বাজে অভ্যাস ছিল কি হাতের কাছে যখনই কোন ইট বা পাথরের টুকরা পেতেন সেটা দিয়েই যেখানে সেখানে ঢিল ছুঁড়তেন। একবার করলেন কি হাট থেকে আসার পথে পাক্কা রাস্তার মাথার নুইয়ে তেঁতুল গাছটাতে তেঁতুল পাড়ার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার ঢিল ছুঁড়লেন। অল্প সময়ের মধ্যেই যে কি ঘটতে চলেছে তা তখনও সিদ্দিক কাকার মগজ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। হঠাতই একগুচ্ছ কালো মাছির মত বিশাল একটা ঝাঁক (গ্রাম্য ভাষায় ভেঙ্গুল বলে) উনার দিকে শনশন শব্দে উড়ে আসতে চলল। সিদ্দিক কাকা এক মুহূর্ত দেরি না করে পড়নের লুঙ্গি একটানে মাথায় তুলে (যেহেতু খালি গায়ে ছিলেন) চোখমুখ ঢেকে বাড়ির দিকে ভোঁ দৌড়! গ্রামের কাঁচা রাস্তা...অবস্থাটা বুঝতেই পারছেন! কাকু লজ্জা শরমের সলিল সমাধি দিয়ে জান বাঁচানো ফরয চিন্তায় বিভোর। সেদিন কাকুর সামনে উসাইন বোল্ট থাকলে নিশ্চিত দৌড় ঝাঁপের চিন্তা থেকে সেখানেই ইস্তফা দিয়ে বাড়ির পথ ধরতো। তবুও কাকা মিয়ার শেষ রক্ষা হয়নি। সারা শরীর ফুলিয়ে বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। একটানা ৮/১০ দিন জ্বর ছিল।
এই ভেঙ্গুলটা যে কি মারাক্তক তা গ্রামের কোন আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের মুরুব্বীদের কাছে জিজ্ঞাস করলেই সত্যতা জানতে পারবেন আশা রাখি

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




