...গ+রু= গরু
ছোটবেলায় ইস্কুলে পড়ার সময় এই গরু নিয়ে অনেক পোস্টমর্টেম করেছি। গরুর কয়টা পা, চোখ, কান, লেজ এই সবই জানি। তাই আজ ভিন্ন আঙ্গিকে দৃষ্টিআকর্ষণ করা যাক।
লক্ষ্য করুন। গরু আমাদের কত উপকার সাধন করে তা কমবেশি আমরা সবাই জানি। একটু আদর করে হাত বুলিয়ে দুধের বাটে সরিষার তেল লাগিয়ে হাত মারলেই নিজের বকনাটার কথা দিব্যি ভুলে গিয়ে বিনা কসুরে ছ্যার ছ্যার করে আদর্শ পানীয় দিয়ে পাতিল ভরে দেয়। যেমনটা পদ্মার ইলিশ দিয়ে হরহামেশাই আমরা দাদাদের বাজারের নোংরা থলেটা ভরপুর করে দিচ্ছি।
ফসলি জমি চাষের কথাটা একটু ভাবুন তো। এই গরুদের ঘাড়েই কিন্তু আমরা নির্দয় পাষাণের মত বিশাল জোয়ালের বোঝা চাপিয়ে পিছনে লাঙল আর মই বেঁধে দেই। এখানেই শেষ নয়। উপরন্তু বাঁশের মোটা কঞ্চি দিয়ে উপর্যপুরি প্রহার করতে করতে অবজ্ঞাসূচক "গরু হুট হুট" বলে গাধার মত চেঁচাই। এদিকে বেচারা গরু বাবাজীর ব্যাথায় কুঁচকানো হাম্বা ডাক আমাদের কানের পর্দা ভেদ করে মস্তিষ্কের নিউরনে ঝংকার তুলে না। এক মিনিট এক মিনিট 'পরমবন্ধু' খ্যাত ভারত আমাদের সাথে কি করছে? অপসংস্কৃতির বোঝাস্বরূপ তাদের ঘরানা কুটনামির আখড়াগুলো সস্তা আকাশ সংস্কৃতির সুবাদে চড়া মূল্যে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের স্বীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চাকে গলা টিপে ধরেছে। পানি পানি করে হাহাকারকে চরমে তুলে আমাদের দুরন্ত যৌবনা নদীগুলোর একের পর এক শাড়ির আঁচল খামছে ধরছে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেশের প্রাণ সুন্দরবনের উপর গরম নিঃশ্বাস ছাড়ছে। আর আমরা এই অবলা গরুর মতই তাদের সব পারপাস সার্ভ করে যাচ্ছি।
এবার আসা যাক গরুর মাংস প্রসঙ্গে। আহ কত মজা তাই না? মনে হতেই জিহবায় কেমন পানি চলে আসে। বাজারে প্রতিদিন সারি সারি গরু জবাই হচ্ছে। মাঠে বেঁধে রাখা গরুটির সামনেই আরেকটি গরু পড়ে ধাপড়াচ্ছে। এতে তার ক্ষণিক ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলেও প্রকৃত অর্থে কোন পরিবর্তন নেই। দেখা যাবে একটু পরেই সে মনের সুখে ঘাস চিবানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে কি ঘটছে? সীমান্তে প্রতিদিন কি দেখছি?? বিএসএফ মজা করে মানুষ মারছে, ইচ্ছামত সীমান্তবর্তী অসহায় মানুষগুলোর টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে আর আমরাও ওই গরুটির মতই নিরবে সব সইয়ে যাচ্ছি। ফেসবুক, ব্লগে সাময়িক হম্ভিতম্ভি করলেও দুইদিন পরেই আবার নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো- এর শেষ কোথায়???
বলাবাহুল্য কেউ যদি উপরোক্ত লাইনগুলোতে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক গন্ধ খুঁজে পান তাদের বলব অতিসত্বর স্থানীয় কোন পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। আপনার মধ্যে 'অ্যানথ্র্যাক্স' এর প্রাথমিক লক্ষন দেখা দিয়েছে।
কিছু কথাঃ
সাম্প্রতিক ফেলানি হত্যার রায় তো আমাদেরকে গরুর থেকেও অধম করে দিয়েছে বলতে হয়। আমি অন্তত এ কথাটিই বলব। আজ তারা সদর্পে গলা উঁচিয়ে বলে সীমান্তে নাকি চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন পাঠাবে! সময়মত পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে না ধরার দায় কার? এই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর কত?? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে আমরা কি রেখে যাচ্ছি...???
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



