somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ করুন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত বেশ কিছুদিন ধরেই মিডিয়া পাড়ায় বিশেষ করে ব্লগ, ফেসবুকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এক রকম তোলপাড় বয়ে যাচ্ছে। কি রকম সেটা আশা করি একটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এইতো মাত্রই ব্লগে লগইন করে দেখতে পেলাম একজন ব্লগার (সংগত কারণেই নাম দিচ্ছি না) পোস্ট করেছেন-

"হিজাব পরার কারণে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হতে হয়েছে এক ছাত্রীকে। গত ১২ই সেপ্টেম্বর ইউনিভার্সিটির হাফসা ইসলাম নামে এক ছাত্রীকে হিজাব পরায় ড্রেসকোড ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত ২২শে জানুয়ারি ড্রেস কোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও যেসকল ছাত্রী হিজাব পরিধান করতো তাদেরকে ২৮ মে শোকজ করা হয়। শোকজ কারার পরও হিজাব পরা অব্যাহত রাখায় গত ১২ই সেপ্টেম্বর হাফসাকে বহিষ্কার করা হয়। সনাক্তকরণ সমস্যা ও নিরাপত্তা ঝুকিকে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।"

লেখার শিরোনামটিও ছিল চোখে পড়ার মত। আমার কাছে লেখাটিকে নিছক কপি পেস্ট ছাড়া কিছুই মনে হয় নি যেহেতু সে কোন সঠিক লিঙ্ক দেখাতে পারে নি। ব্যাপারটি বাড়াবাড়ি ঠেকেছে যখন দেখলাম এটিকে নির্বাচিত পোস্ট করা হয়েছে! বলাবাহুল্য, ফেসবুকে বিতর্কিত নাম, সম্প্রতি ইমামকে হত্যার হুমকিদাতা থলের বিড়াল ফারাবিও বিষয়টিকে রঙ লাগিয়ে নিজের স্ট্যাটাস আপডেট করে এবং সেখানেও যথারীতি কোন লিঙ্ক ছাড়াই!! আর সেটিকে তার একঝাঁক ফলোয়ার্স বেশ ভালোই খেয়েছে।

এবার আসা যাক প্রকৃত ঘটনায়। নাহ হিজাব না। ভার্সিটির ড্রেসকোড অমান্য করে নেকাব পরিধান করার জন্যই হাফসাকে এই সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশান করতে দেয়া হয়নি (বের করে দিয়েছে খবরটি মিথ্যা)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোডে শুধুমাত্র নেকাব জাতীয় মুখোশ ব্যবহারের উপরেই নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখানে মিনি স্কার্ট বা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পরার ব্যাপারেও স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে।



অথচ অনেক ছিদ্রান্বেষী মহল এবং কিছু অসাধু মিডিয়াও ঢালাওভাবে প্রচার করছে বোরকা বা হিজাবের কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রীটিকে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোডের কোথাও বোরকা বা হিজাবের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই। নিষেধাজ্ঞা আছে কেবল নেকাবের ব্যাপারে। যেহেতু নেকাবের জন্য ব্যবহারকারী ছাত্রীটির আইডিকার্ড জাস্টিফাই করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। এবার দেখা যাক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নেকাবের ব্যাপারে কি বলা আছে,

‘হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ, এবং মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়, এটা তাদের জন্য ভালো নিয়ম ও রীতি, যেন তাদের চিনতে পারা যায় ও তাদের উত্ত্যক্ত করা না হয়' (সূরা আল আহজাব : ৫৯)।
‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের বিধান পাঠিয়েছি, যাতে করে এর দ্বারা তোমরা তোমাদের গোপন অঙ্গ বা লজ্জাস্থানসমূহ ঢেকে রাখতে পার এবং নিজেদের সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তুলতে পার, তবে আসল পোশাক হচ্ছে তাকওয়ার, আর এটাই হচ্ছে উত্তম পোশাক এবং এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহেরও একটি' (সূরা আল আরাফ : ২৬)।
সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাত যেমন ফরজ পর্দাও তেমন ফরজ। কারণ পর্দা করার কথা সরাসরি কোর-আনে বর্ণনা করা আছে। সম্পূর্ণ শরীর আবৃত রেখেই পর্দা করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু পর্দা এমন হতে হবে যেন "তাদের চিনতে পারা যায়" এই জন্য বিভিন্ন আলেম-ওলামারা পর্দা করার যে নিয়ম বের করেছেন তা হল, "পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকতে হবে, নারীদের জন্য পুরো শরীরটাই ঢাকতে হবে, তবে যে অংশটুকু অনাবৃত থাকতে পারে তা তাদের মুখ আর হাতের কব্জি, যদি সেটাও ঢাকতে চায় ঢেকে রাখতে পারে, তবে এটা আবশ্যিক না যে ঢাকতেই হবে।" কিন্তু যাতে "তাদের চিনতে পারা যায়" তা খেয়াল রাখতে হবে।

আরেকটি বিষয় হজ্ব যাত্রীরা তাদের পাসপোর্টের ছবিতে নেকাব ব্যাবহার করতে পারেনা। এমন কি হজ্বের সময় নারী-পুরুষ উভয়েরই মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক। সুতরাং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রেই নেকাববিহীন ড্রেসকোড ব্যবহার করতে হয় মুসলিমদের।



সবশেষ সবার অবগতির জন্য বলব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন আগেই বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সামনে ককটেল ফুটিয়েছে একদল দুর্বৃত্তরা। প্রসঙ্গতই তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদারকি করতে হচ্ছে। এখন সবার সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই, হিজাব আর নেকাব কি এক জিনিস হল? কেন সঠিক খবরটি না জেনে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন জানতে পারি? আশা করব বিবেকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সবাই সঠিক ঘটনাটি লিখবেন আদারওয়াইজ পোস্ট ডিলিট করবেন। আর ওয়ান থিং আমরা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা কিন্তু বসে নেই। ভার্সিটি অথোরিটি পরিস্থিতির সুন্দর সুরাহার জন্য কোন গ্রহণযোগ্য পন্থায় না আগালে আমরাও আন্দোলনে যাবার সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

বিস্তারিত দেখুন এখানে Click This Link

আরো দেখুন http://studentbd24.com/?p=12993
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৩
৩৪টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×