হাজীরা যে ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন-
ক. সংক্রামক ব্যাধি খ. অসংক্রামক ব্যাধি
সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে রয়েছে-
* শ্বাসনালীর প্রদাহ
* ডায়রিয়া
* চর্মরোগ
* নতুন সংক্রমণশীল জীবাণুবাহিত রোগ
অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে রয়েছে-
* হৃদরোগ : এটি হাজীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ
* উচ্চতাপমাত্রাজনিত অসুস্থতা
* আঘাত, ক্ষত, আগুনে পোড়া
সংক্রামক ব্যাধি
শ্বাসনালীর প্রদাহ : এ কারণে এক বা একাধিক সমস্যা হতে পারে : হাঁচি/কাশি, বুকে কফ জমা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট।
ইনফ্লুয়েঞ্জা : এটি ভাইরাসজনিত শ্বাসনালীর ইনফেকশন। হজের সময় এ সমস্যা বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা রেসপিরেটরী সিনসাইটাল ভাইরাস দ্বারা এ অসুখ হয়। এর প্রতিরোধের জন্য সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু সুপারিশ করেছে- ১. হজের আগেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন নেয়া ২. হজের সময় জনসমাগমে মুখে মাস্ক পরা। ভ্যাক্সিন নেয়ার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বয়স্ক হাজীদের হৃদরোগ, হাঁপানি থাকার কারণে এ ভ্যাক্সিনের প্রয়োজনীয়তা বেশি।
এ ছাড়া সার্বজনীন কিছু পরামর্শ রয়েছে : ১.সব সময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ২. হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকা। ৩, অসুস্থদের কাশি/হাঁচি থেকে এক মিটারের বেশি দূরত্বে থাকা। ইনফ্লুয়েঞ্জা ছাড়া নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিসের ভ্যাক্সিন নেয়া জরুরি।
নিউমোনিয়া : নিউমোনিয়া হজকালীন হাজীদের হাসপাতালে ভর্তির অন্যতম কারণ। হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি, স্ট্রেপ্টো নিউমোনিয়া ।
মেনিনজাইটিস :
হজের মৌসুমে মেনিনজাইটিসের প্রাদুর্ভাব হয় বলে মেনিনজাইটিস ভ্যাক্সিন নেয়া এবং এ ভ্যাক্সিন নেয়ার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক। হজযাত্রার তিন বছরের মধ্যে এবং কমপক্ষে ১০ দিনের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিতে হবে। ভ্যাক্সিন দুই ধরনের।
পেটের পীড়া : খাওয়া-দাওয়া থেকেই প্রধানত পেটের পীড়া হয়। ডায়রিয়া হাজীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তৃতীয় কারণ। ফুড পয়জনিং, কলেরা, হেপাটাইটিস এ হলে ডায়রিয়া হয়। এসব প্রতিরোধের জন্য হাজীদের উচিত নিয়মিত হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা, রাস্তার খোলা যাবার না খাওয়া। পাতলা পায়খানা হলে প্রচুর পানি, পানীয়, খাওয়ার স্যালাইন, রাইস স্যালাইন, ফলের রস, তরল খাবার খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
চর্মরোগ : লম্বা সময় ধরে হাঁটা, খালি পায়ে থাকা, প্রচণ্ড গরমে থাকা, ঘামা ইত্যাদি কারণে হাজীদের বিভিন্ন চর্মরোগ হয়ে থাকে। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। ঘর্মাক্ত কাপড় পরিবর্তন করে পরতে হবে। শোয়ার সময় পায়ের তলায় ও গোড়ালিতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ময়েশ্চারাইজার মেখে শুতে হবে।
নতুন সংক্রমণশীল জীবাণু : মার্স করোনা ভাইরাস ইনফেকশন সম্প্রতি সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশে ছড়িয়ে পরেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রতিরক্ষা ও সতর্কতাই এ ক্ষেত্রে জরুরি। আফ্রিকাতে ছড়িয়েছে ইবোলা ভাইরাস ইনফেকশন। ইবোলা ভাইরাস ইনফেকশন হাজীদের মধ্যে ছড়াতে পারে। মারাত্মক এ রোগে রক্তক্ষরণ হয়। রোগীর যে কোনো নিঃসরণ (রক্ত, লালা, প্রস্রাব, পায়খানা)-এর সংস্পর্শে এটা ছড়ায়। ইবোলা আছে এবং সংক্রমিত হতে পারে- এটা মনে রাখতে হবে এবং সে অনুয়ায়ী হাজীদের সতর্ক হয়ে চলতে হবে।
অসংক্রামক রোগ :
* হৃদরোগ
* ডায়াবেটিস
* উচ্চ রক্তচাপ
* শ্বাসনালীর অসুখ
* উচ্চ তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতা
আমাদের দেশের হাজীরা যে বয়সে হজে যান তখন অধিকাংশরই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস জাতীয় কিছু না কিছু অসুখ থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চলমান ওষুধগুলো সঙ্গে রাখতে হবে। প্রেশক্রিপশন সঙ্গে নিতে হবে।
উচ্চ তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতা : অতিরিক্ত গরম, রোদের মধ্যে চলাচলের কারণে হিট ক্রাম্প, হিট সিনকপ, হিট এক্সহশন জাতীয় সমস্যা হতে পারে। হিট স্ট্রোক হাজীদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ। এসব ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ছাতা ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, পানি ও জুস খেতে পারলে ভালো। যে কাজ রাতে করলে চলে সেটি দিনে না করা শ্রেয়।
ব্যক্তিগত সাবধানতা, নিজের শারীরিক অবস্থার সম্যক ধারণা ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার মানসিকতা থাকলে মহান আল্লাহতায়ালার মর্জি থাকলে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।