স্বরস্বতি পূজার ছুটি চলিতেছে । অবসর পাইয়া বাংলা সিনেমা দেখার এবং দেখিয়া একখানা বিটল রিভিউ লেখিবার সাধ(পড়ুন, ভীমরতি) মনে চাগার দিয়া উঠিল । অতঃপর “রিভিউ আমি লেখিবই” এই মর্মে নিজেরে প্রস্তুত করিয়া লইলাম । কিন্তু ততক্ষণে আরো একখানা সমস্যা দেখা দিল……রিভিউ আমি লেখিব বটে, কিন্তু বাংলা সিনেমা আমি এখন কোথায় পাই??? স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিছু সিনেমা চলিতেছে বটে কিন্তু তাহাতে খবর আর ইশতেহার(পড়ুন বিজ্ঞাপন) মাঝারে বালির ডাইনি(পড়ুন স্যান্ডউইচ) তে পরিণত হইবার নিশ্চয়তাও রহিয়াছে
যাহাই হউক, সন্ধ্যাবেলা গৃহে ফিরিয়া ছোটভাই বলিল তিন দোকান খুঁজিয়া সে কলকাতার বাংলা সিনেমা ছাড়া আর ডিভিডি/ভিসিডি/সিডি কিছুই পায় নাই । আমি যাতে না চটিয়া যাই এইজন্য তিনটা মোবাইল ফিল্ম(3GP) কাজী মারুফের “ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না”, শাকিব খান-ডিপজলের “কোটি টাকার কাবিন”, আর এম এ জলিল অনন্তের মাষ্টারপিস
ছবির প্রথমে কয়েদী মারুফকে জেলার ডেকে পাঠান । জেলার মারুফকে তার জামিনের বুলেটিন দিলেন । মারুফ ঝুনা মাল, সে জেলারকে জিজ্ঞাস করে আসলেই কি সে মুক্ত নাকি জেল গেটেই আবার জামাই বানানো হবে । তখন জেলার বলে মারুফের আটটি মামলাতেই নাকি তার জামিন হয়ে গেছে, কাজেই এবার বোধহয় আর তেমন হবে না । জেলার মারুফের পবিবার-পরিজনের কথা জানতে চান, মারুফ বলে তার বাবার নামের জায়গায় কি লেখা আছে তা দেখতে । জেলার দেখে বলে, “তোর বাবার নামের জায়গায় লেখা মিঃ ড্যাশ, তুই কি খ্রিষ্টান?”
মারুফ ছাড়া পাইল । নূরজাহান(ববিতা)র পাঠানো কর্মচারী মারুফকে ববিতার বাসায়(পড়ুন এফডিসিতে) নিয়ে যায় । মারুফকে ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করতে বলা হয় । সেখানে যাওয়ার পর দেখানো হয় বখাটে সেতু(পূর্ণিমা)র সাথে । পূর্ণিমা সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম “হিরোইনচি” ক্যাটগরির নায়িকা (কারিনা হিরোইন হইতে পারে, কিন্তু আমাদের আছে হিরোইনচি!!!
সিনেমার এই পর্যায়ে হিন্দির তুবড়ি ছোটাতে ছোটাতে জহুরুল(মিজু আহমেদ)র আগমন । আচমকা ১০ কোটি টাকা লোপাট হবার খবর পেয়ে লোপাটকারী হিসেবে সেতুর বাবা সিরাজকে শনাক্ত করা হয় । দল-বল নিয়ে গিয়ে পুরো পরিবার ক্লিয়ার করে দেয় সে……কিন্তু মারুফের ঘরে থাকায় সেতু বেচেঁ যায় । জহুরুল ১০ কোটি টাকার মাঝে ৮ কোটি টাকা উদ্ধার করলেও জর্জ ওয়াশিংটন মানে ২ কোটি টাকা মূল্যমানের ডলার কিন্তু সেতুর কাছেই ছিল । এই টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে পাগল্পারা হয়ে উঠে জহুরুল । সেতুর খোজ চলতেই থাকে । পরে মারুফের হাতে দল-বল সহ পটল তুলে জহুরুল ।
অন্যদিকে জানা যায় ধূমকেতু আর নূরজাহানের একটি ছেলে হয়েছিল । কিন্তু সেই ছেলেটি কোথায় তা তার বাবা জানে না । ধূমকেতু নূরজাহানের কাছে তার ছেলের খবর জানতে চায় । কাজীহায়াতকে খুন করার জন্য মারুফকে পাঠায় নূরজাহান । কিন্তু গুলি করার সময় হাত থেকে পিস্তল ফস্কে গুলি গিয়ে লাগে হায়াতের ভাই জলিলের গায়ে । আবারো একটি খুন, আবারো মারুফ আদালতে । আদালতে দাঁড়িয়ে মারুফ তার বাবা-মার পরিচয় জানানোর জন্য আবেদন করে । মারুফের এতিমখানার একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মারুফ আসলে নূরজাহান আর কাজী হায়াতেরই সন্তান । আদালতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হলেও জজসাহেবা মারুফের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন ।
যদিও বিটল রিভিউ লেখতে চাইসিলাম, তারপরো বলব সিনেমাটা আমার বেশ ভালই লেগেছে । ববিতা, কাজী হায়াত, পূর্ণিমা আক্ষরিক অর্থেই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন । মারুফ মোটামুটি করেছে । কিছু কিছু ডায়লগ বেশ চিত্তাকর্ষক । “দেশ অনেক আগায়ে যাবে, পদ্মা ব্রিজ হবে, ঢাকায় দুতলা রাস্তা হবে, পাতাল রেল হবে, ঘরে ঘরে সবাই চাকরি পাবে……কিন্তু এইসব তুই কিছুই দেখতে পাবি না” এই রকম একটা ডায়লগ দিয়ে কাবিলাকে খুন করে মারুফ । সিনেমাটা “লিও” বা “বিচ্ছু”র বাংলাদেশী সংস্করণ হলেও চোখে পড়ার মত স্বকীয়তা আছে(ডাবল-মিনিং, বুইঝা নেন) । আশা করি নেক্সট টাইম শাকিব খানের সহায়তায় সত্যিই বিটল কিছু লিখতে পারব
ও ভালো কথা, এই সেই ঐতিহাসিক নয়া ব্লগ যা খুলবার মাধ্যমে আমি বাংলা সিনেমার রিভিউ লেখতে পারলাম
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




