somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: কোন পথে যুব সমাজ?

০৪ ঠা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সংস্কৃতি মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । মানুষের জীবনটাও একটি সংস্কৃতি। এ জন্য বলা হয়ে থাকে Man is a culture building animal. মানুষ হচ্ছে সংস্কৃতি তৈরি কারক প্রাণী। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এ যুগে সুস্থ ও নির্মল সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অপসংস্কৃতির সুনামিতে সুস্থ সংস্কৃতি ভেসে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। আসলে সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন অংশ রয়েছে এর মধ্যে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ সবচেয়ে জঘন্য। কথায় আছে কোন জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাইলে তাহলে তাদের শিা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও। সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদীরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে অপসংস্কৃতির মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ইচ্ছেমত পৃথিবী দখলের পায়তারা করছেন। অপসংস্কৃতির কারণে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েও ধ্বংসমুখ সভ্যতায় পরিনত হতে চলেছে ইউরোপ আমেরিকা। বিয়ে প্রথা ভেঙ্গে গিয়ে এক বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। যেখানে পুরুষ পুরুষকে,নারী নারীকে বিয়ে করছে, যা পশুত্বেও হার মানায়। ফলশ্র“তিতে খুন,ধর্ষন,আত্মহত্যা,বিকৃত যৌনাচার, মাদকাসক্তি ও অপরাধ সংস্কৃতি তাদের জীবনকে নরকের কুন্ডে পরিনত করেছে। তারা যেন তাদের নিজেদের হাতে তৈরি সাংস্কৃতিক দানবের হাতে বন্দী হয়ে কেঁদে মুক্তি পাচ্ছে না। আর অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহন করে নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলতে বসেছে। দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে তাদের বস্তাপচা অপসংস্কৃতিগুলো গরীব ও মুসলিম দেশসমুহে চালিয়ে দিচ্ছে। ফলশ্র“তিতে গৌরবময় মুসলিম জাতি আজ স্বীয় ঈমান-আকিদা, নীতি নৈতিকতা হারিয়ে নাম সর্বস্ব জাতিতে পরিনত হয়েছে। আর এ সুযোগে সাম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন মুসলিম দেশ দখল করে বিশ্বের মানচিএ ইচ্ছেমত পাল্টানোর পায়তারা করছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে মুসলিম যুব সমাজ, যারা মুসলিম জাতির ঐক্যের প্রতিক, ইসলামের রক তাদেরকে সেক্স নামক আফিম খাইয়ে অথর্ব বানিয়ে ঘুমিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে চলমান ক্রসেডকে রুখার মতো কোন শক্তি মুসলিম বিশ্বে বর্তমান না থাকে। এবং এ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা ফ্রি উইল, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স বাসা বাধঁছে মুসলিম দেশ সমূহের সহজ সরল মানুষের জীবনে। উশৃঙ্খল হচ্ছে মুসলিম যুব সমাজ, বাড়ছে অনাচার পাপাচার আর যৌন সন্ত্রাস। যা রীতিমত আতঁকে উঠার মতো। আতংকগ্রস্ত করে চলেছে দেশের সচেতন নাগরিকদের। তাই আগামী দিনে মুসলিম যুব সমাজের অবয়ের কবল থেকে ঘুম ভাঙিয়ে আবার সোনালী যুগের সেই সোনালী মানুষে পরিনত করার ল্েয সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সর্ম্পকে নিম্নে আলোকপাত করা হল :-
* সংস্কৃতি : ‘সংস্কৃতি’ বাংলা শব্দ। নতুন বাংলা অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ, কৃষ্টি, Culture । অপর এক গ্রন্থকারকের ভাষায়-সাধারণত আমরা সংস্কৃতি বলতে বুঝি মার্জিত রুচি বা অভ্যাসজাত উৎকর্ষ। সংস্কৃতিকে ইংরেজিতে বলা হয় Culture, এ শব্দটি ল্যাটিন Colere থেকে এসেছে। এর অর্থ হল- চাষাবাদ বা কৃষিকাজ। জনৈক বিশেষজ্ঞ বলেন-সংস্কৃতি শব্দটি সংস্কার থেকে গঠিত। অভিযানে তার অর্থ- কোন জিনিসের দোষ ক্রটি বা ময়লা-আবর্জনা দূর করে তাকে ঠিক ঠাক করে দেয়া। অধ্যাপক Murray তার লিখিত ইংরেজি ডিকশনারীতে বলেন- Culture বা সংস্কৃতি হচ্ছে সভ্যতা বা civilization এরই মানসিক ও রুচিগত ব্যাপার। তাতে খাওয়া-দাওয়া, নিয়ম-নীতি, সামাজিক সামষ্টিক আচার অনুষ্ঠান, স্বভাব চরিত্র এবং আনন্দ স্ফৃর্তি লাভের উপকরণ, আনন্দ-উৎসব, ললিতকলা, শিল্পচর্চা, সামষ্টিক আদত-অভ্যাস পারস্পরিক আলাপ-ব্যবহার ও আচরণ বিধি শামিল রয়েছে। বিখ্যাত OxfoDictionary তে বলা হয়েছে- - Intellectual Development improvement by (mental or physical) Traininge. মানসিক শারীরিক কোন ট্রেনিং এর সাহায্যে মানসিক উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন। ম্যাথু আর্নল্ড তার Culture and Anarchy গ্রন্থে লিখেছেন-কালচার হল পূর্ণত্ব অর্জন। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সংস্কৃতি সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন- Culture is what we are or have i আমরা অথবা আমাদের যা কিছু আছে তাই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মূল কথা নিজেকে সুন্দর করা, সভ্য করা । প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির মূল আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলে সংস্কৃতি ধ্বংস হয়। সমাজ বিজ্ঞানী E.B.Taylor বলেন- - Culture pervension might lead the youth generation to contamination and destruction. Aggression হল ইংরেজি শব্দ। এই শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে বিনা উত্তেজনায় আক্রমন করা। তবে সেটা বাস্তব হচ্ছে ‘তোমার পছন্দের ওপরে আমার পছন্দকে কৌশলগতভাবে এমনভাবে চাপিয়ে দেয়া দেবো তুমি পর্যায়ক্রমে তাতে প্রভাবিত হও এবং এক সময় আমার পছন্দকে গ্রহণ করো’। দ্বিতীয় বিষয় হলো-যুব ও তরুণ স¤প্রদায়ের শিা মাধ্যমে এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা এবং কিছু বিষয় কৌশলে বাতিল করা যাতে তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন সাধিত হয় এবং আমার পছন্দকে নিজের পছন্দ হিসাবে গ্রহণ করে। এক সমাজ বিজ্ঞানী বলেন- Man dies when his heart fails and a nation dies when its culture dies. মানুষ মৃত্যুবরণ করে যখন তার হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি একটি জাতির ও মৃত্যু ঘটে, যখন তার সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলে।
* অপসংস্কৃতি : অপসংস্কৃতি হলো সংস্কৃতির বিকৃত রূপ। সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমময় করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনে বিকৃতি আনে, চিত্তে কলুষ ঢালে, মানুষের চেতনাকে নষ্ট করে, মূল্যবোধে ভাঙন ধরায়। যেসব আচার আচরণ মানুষের আত্মার অবনতি তাই অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতি হলো জীবন চর্চা, আর অপসংস্কৃতি হলো জীবন নাশ। যা সাময়িকভাবে মুগ্ধকর, মোহনীয় অথচ স্থায়ী কোন ফল তা থেকে লাভ হয় না তাই অপসংস্কৃতি। আমাদের সমাজে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যে চলছে, তা তরুণ সমাজের আচার আচরণে, পোশাক-আশাকে দেখলেই বোঝা যায়। তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বিদেশী জীবনবোধকে গ্রহণ কওে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যেও অনুগামী হয়ে ডিসকো নাচ গান ও অশীল ছবি দর্শনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
* সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রবেশদ্বার :-
মূলত পাচঁটি বিষয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সংগঠিত হয়। তা হচ্ছে-
১. ব্যক্তিগত যোগাযোগ
২. ধর্মপ্রচারকের তৎপরতা
৩. দশ বিজয়
৪. বাণিজ্য
৫. গণসংযোগ মাধ্যম। এর মধ্যে রয়েছে সংবাদ পত্র, সাময়িকী, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ডিস এন্টেনা ইত্যাদী।
চিত্র অভিনেতা শেখ আবুল কাশেম মিঠুন তার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নামক এক প্রবন্ধে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অনুপ্রবেশের ২৪টি পথের বর্ণনা দিয়েছেন। তা নিম্নে দেয়া হল :
১. রেডিও
২. ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া
৩. বিজ্ঞাপন শিল্প
৪. সঙ্গীত শিালয়
৫. নাট্য বিদ্যালয়
৬. নাট্যশালা
৭. আর্ট স্কুল
৮. ফ্যাশন শো
৯. সঙ্গীত ও অভিনয় প্রতিযোগিতা
১০. সুন্দরী প্রতিযোগীতা
১১. সংবাদ পত্র
১২. ম্যাগাজিন
১৩. পাঠ্যপুস্তক
১৪. সাহিত্য
১৫. সেমিনার
১৬. এনজিও
১৭. হাসপাতাল
১৮. বিউটি পার্লার
১৯. শিাবৃত্তি
২০. কাব বা সমিতি
২১. সাংস্কৃতিক সফর
২২. ট্যালেন্ট হান্ট
২৩. আবৃত্তি শিা কেন্দ্র
২৪. চলচ্চিত্র
উপরোক্ত প্রবেশ পথ দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে আমাদেও নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে চলেছে।
* মিডিয়া ও বাংলাদেশ :
মিডিয়ার জন্ম মূলত: একজনের অনুভবকে দশজনের কাছে উপস্থাপনের জন্য। তাই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মিডিয়ায় প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বর্তমান দুনিয়ার শক্তিশালী হাতিয়ার হলো মিডিয়া। একটি সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠার দুর্দান্ত শক্তি রয়েছে এ মিডিয়ার। বর্তমান সময়টি মিডিয়া সাম্রাজ্যবাদের সময়। যে জাতি বা যে দেশের হাতে মিডিয়া তারাই এখন পৃথিবীর সভ্যতা-সংস্কৃতির দায়িত্ব কাধেঁ তুলে নিচ্ছে। বরং অদৃশ্য সুতোর টানে এখন সবকিছু তাদের হাতের মুঠোই চলে গেছে। মিডিয়া লড়াইয়ের প্রধান বিষয় সংস্কৃতি। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সহায়তায় পাল্টে দেয়া হচ্ছে মানুষের বোধ-বিশ্বাস-আচার-অনুষ্ঠ ান সব কিছুকে। এ সত্যটি অনুধাবনের পর ইহুদী ও হিন্দুগণ পৃথিবীর বড় বড় মিডিয়ার মালিকানা অর্জন করে নিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ডিকারেশন প্রাপ্ত মোট পত্রিকার সংখ্যা ১৫৯৭ । (সা¤প্রতিক সময়ের গুলো বাদ দিয়ে ) দৈনিক সংবাদ পত্র রয়েছে ৫৯৫ টি, মিডিয়া তালিকা প্রাপ্ত পত্রিকার সংখ্যা ৫৫৮টি, সাপ্তাহিক পত্রিকা ৪৫০ টি। এছাড়া বর্তমান বাংলাদেশে ডিশ গ্রাহক রয়েছে ৪২ লাখের বেশি। এর মধ্যে পে চ্যানেল ২ লাখ ফ্রি চ্যানেল গ্রাহক ৪০ লাখ। ডিশে মোট ৮২ টি চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ টি হিন্দী। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে ভারতের সব চ্যানেল অবাধে বাংলাদেশে প্রদর্শিত হলেও বাংলাদেশে কোন চ্যানেল ভারতে প্রদর্শিত হয় না। আর এ ব্যাপারে দেশের সরকারগুলো বড় উদাসীন। এছাড়াও বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে ৬ লাধিক।
* বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের উলেখযোগ্য দিক :




তিনদিকে ভারত , একদিকে বার্মা এবং অপর দিকে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ । হাজার বছরের পুরনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে চলছে। এরপরও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর বিশ্বায়নের প্রভাবে এর ভাষা ও সাংস্কৃতি নানা ভাবে বিনষ্ট হতে চলেছে। নিম্নে তার কিছু নমুনা পেশ করা হলো :


* চলচ্চিত্রে প্রভাব :
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর বিশ্বায়নের বাস্তব রূপই হলো আমাদের নতুন প্রজন্মের আচার-আচরণ, কথা-বার্তার আমূল পরিবর্তন। অনুসরণ ও অনুকরণ প্রিয় শিশুরা বাব-মাকে বাংলা ভাষায় সম্বোধন না করে বিদেশী বিশেষত ইংরেজিতে পাপা/মাম্মী/ডেড/মম ডাকতে আগ্রহী। কথায় কথায় অন্য শব্দের ব্যবহার, বাংলা শব্দের ভয়াবহ বিকৃতি প্রায়শ ল্য করা যাচ্ছে। অবস্তব ও অবান্তর বাহিনী এবং পাত্র পাত্রী মুখ দিয়ে বাংলা ভাষাকেও অশুদ্ধ ও বিকৃত ভাবে করেছোকে কর-ছ, বলেছোকে বল-ছ, খাইতাছ, চাইতাছি জাতীয় শব্দ বলানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর দেশে যেমন সৃষ্টি হয় চরম নৈরাজ্য, অরাজকতা, তারই ঢেউ এসে লাগে চলচ্চিত্র শিল্পে। চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়েছে মৌলিকত্ব, সৃজনশীলতা, মূল্যবোধ, জাতীয় চেতনা। এরই সুযোগে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ডুকে পড়েছে অশিতি, দুঃচরিত্র ও বেশ্যাপ্রকৃতির লোকজন। ফলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের বারটা বাজতে শুরু করেছে। সেই সাথে শুধু চলচ্চিত্র শিল্প নয় , সাহিত্য, নাটক সহ সাংস্কৃতির সব কিছু কলকাতামুখী ও বম্বে-মাদ্রাজের অশুভ পথে হাটা শুরু করেছে। এর অশুভ প্রভাব বেশি ল্য করা যাচ্ছে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে একের পর এক হিন্দী কনসার্ট আয়োজনের নামে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ কে সম্পূর্ণ রুপে হিন্দী আদলে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। শুধু কি তাই দেশের সিনেমা হল গুলোতে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের নামে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনকে জীবন্ত কবর দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিল বর্তমান সরকার। যদিও চলচ্চিত্র শিল্পীদের আন্দোলনের মুখে আত্মঘাতি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এছাড়া বিদেশী চলচ্চিত্রের অশুভ প্রভাব পড়েছে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে। চলচ্চিত্রে এখন স্বল্প বসনা নারীদের পদচারণা খুবই বেশি। শিল্পের ছোঁয়া নেই এসব অভিনয়ে। উত্তেজনা দৃশ্যসমূহে শিহরিত হয় দর্শকবৃন্দ। কাটপিচ দৃশ্যের নামে চলচ্চিত্রে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে পর্ণোগ্রাফী। বিদেশী চলচ্চিত্রে তরুণদের বিয়ার খাওয়ার দৃশ্য, চুমুর দৃশ্য, সরাসরি শারিরীক সর্ম্পকের দৃশ্য দেখে আমাদের তরুণেরা মত্ত হচ্ছে নেশা, মাদক এবং অবাধ যৌনাচারে। বিদেশী সংস্কৃতির মরণ ছোবল আমাদের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজকে অপরাধপ্রবণও করে তুলেছে। ৯০% সিনেমাতে নায়ক-নায়িকা সব ধনকুবের। চোখ ধাধাঁনো বাড়ি, গাড়ির মালিক। এরা অভিনয় করে জিন্স আর গেঞ্জি পরে, অনেকের বেশ ভূষা, চুলের ছাট অত্যন্ত হাস্যকর। এসব হাস্যকর বেশ-ভূষা পরিহিত তথাকথিত ধনকুবদের সুখ-দুঃখ আমাদের সত্তর ভাগ দরিদ্র মানুষের জীবনকে প্রতিফলিত করতে পারছে না।
* সাহিত্যে প্রভাব :
পৃথিবীর মধ্যে আমরাই ভাষার জন্য লড়াই করে ইতিহাস গড়েছি। রক্তের দাম দিয়ে কিনে নিয়েছি আমরা বাংলা ভাষা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, শুধু এই কথা বলে আত্মতৃপ্তি লাভ একটা স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক কারণে ভাষা-সংস্কৃতি আগ্রাসনের ফলে এমন অনেক শব্দ আমরা আমাদের লেখায় ও দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, যেগুলো সামগ্রিক ভাবে আমাদের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসবিরোধী। যেমন, ‘প্রয়াত’ শব্দটি। আজকাল শব্দটি যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে ‘প্রয়াত’ বলার প্রচলন আছে, কিন্তু কাদের মধ্যে? ‘প্রয়াত’ মানে প্রস্থান করা বা চলিয়া যাওয়া। সব কিছু শেষ হয়ে যায়, মরণের পরে মানুষ চিরতরে চলে যায়-একথা মুসলমানরা বিশ্বাস করে না। মুসলমানরা পরকালে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে মৃত্যুর পরই অনন্ত জীবনের শুরু। সুতরাং মুসলমান প্রয়াত হয় না, সে ইন্তেকাল করে অর্থাৎ রূপান্তরিত হয়। স্নাতক-এ শব্দটিরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে; যা নিতান্তই স্নান ও পৈতে পরিয়ে শিা সমাপনের স্বীকৃতি দানের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
দুভাগ্যক্রমে এটিরও প্রচলন এদেশে শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চ শিার একটি স্তরে স্নাতক নামে একটি কোর্স রয়েছে। এই হীনমন্যভোগী সাহিত্যিকরা লাশকে মরদেহ, দাফনকে শেষ কৃত্য, দাওয়াতকে নেমন্তন্ন, নাস্তাকে জলপানি, মুনাজাতকে প্রার্থনা, শহীদ মিনারকে শহীদবেদি লেখে এবং বলার চেষ্টা করে। আরও কিছু অপ্রচলিত শব্দকে প্রচলিত করা হচ্ছে যেমন-জান্নাত, কবর, পানি, দোয়া শব্দগুলোর স্থলে স্বর্গ, সমাধী, জল, আর্শীবাদ। আগামীতে হয়ত বা এরা রুহের মাগফিরাতকে আত্মার সদগতি, নামাজকে উপসনা, রোজাকে উপবাস, হজ্বকে তীর্থযাত্রা বলবে। এরা সালামের পরিবর্তে সুপ্রভাত, গুড মনিং বলতে আত্মতৃপ্তিবোধ করেন।
ভারতীয় সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, এমনকি পাঠ্য বইয়ের জন্যও আমরা ভারত বা কলকাতা নির্ভর হয়ে পড়েছি।
স্বাধীন দেশে বাস করে এখনো মনে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি নামের পরজীবীর বাংলা সাহিত্যে ভারতপ্রীতি লণীয়। অথচ বাংলাদেশের অত্যন্ত উন্নতমানের প্রকাশনাগুলো পশ্চিম বাংলায় ঠাঁই পাচ্ছে না।

* মাল্টি ডিজুস জেনারেশন :
সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের লাে যৌন সুডসডি মার্কা আহবান নিয়ে হিন্দী এসে আমাদের ঘর ও মনে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে। ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়ালগুলো মূলত চারিত্রিক অধ:পতন আর পণ্যের বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজ মজে যাচ্ছে কোজআপ ওয়ানে, লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায়, মেরিল প্রথম আলো তারকা জরিপ কিংবা উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল উলাসে। এ যুব সমাজ মঞ্চে ওঠে গান গায় ‘ আমি নই হিন্দু, বুদ্ধ মুসলিম, আমি বাঙ্গালী’ আর মোবাইল ফোনে এমপি থ্রি, ফোর এ বেজে ওঠে আশিক বানায়া-----ধুম্বা জালে----। ফেব্র“য়ারী, মার্চ, এপ্রিল আর ডিসেম্বর মাসের ৪ দিন লাল-সবুজ আর হলুদের বাহারী সাজে ছেয়ে যায় দেশ। তখন মনে হয় আমাদের চেয়ে দেশপ্রেমিক জাতি পৃথিবীতে আর একটিও খুজেঁ পাওয়া যাবে না। কিন্তু যখন ভারতীয় বিএসএফ শত শত নিরীহ বাংলাদেশীকে গুলি করে, নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে তখন এর প্রতিবাদ জানানোর মতো দেশপ্রেমিক লোক খুজেঁ পাওয়া যায় না। হৃতিক, শাহরুক খান, সালমান খানের ছবি কিংবা দু’তিনটা পদ্য সংবলিত টি-শার্টেই যৌবনের প্রাণশক্তি নয়। জাতীয় কবি এই ঘুণে ধরা হিন্দী মার্কা যৌবনের জয়গান গায়নি। তিনি এ তারুণ্যের ভেতরে বৃদ্ধের কংকাল দেখতে পেয়েছেন। গাই গরুর শিং ভাঙলেই যেমন বাছুর হতে পারে না, এসব উগ্র সাজে তথকথিত যোদ্ধা সেজেও যোদ্ধা হওয়া যায় না। তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার এসব ‘রিজেস্টেড প্রোডাক্ট’ ইদানিং ছেয়ে গেছে আমাদের অলি-গলি, হ্রাস পাচ্ছে যুব সমাজের জাতীয় চেতনা শক্তি, দেশ প্রেম।

* বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন ও কার্ডে অশ্লীলতা :
হিন্দীর অনুকরণে অশ্লীল বিজ্ঞাপনের ছড়া ছড়ি আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক শালীনতাকে দিন দিন বিলীন করে দিচ্ছে। পণ্য যাই হোক কেন বিজ্ঞাপণে নারীর বিভিন্ন অশীল ভঙ্গি থাকবেই এ যেন নারীরই বিজ্ঞাপন। এখানে নারী একটি পণ্য। যেমন:-পুরুষের মুখের ক্রিমের বিজ্ঞাপনেও নারী মডেল, কনডমের বিজ্ঞাপনের ভাষা, জন্মবিরতীকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি বিজ্ঞাপনের দৃশ্য এবং ভাষা সমূহ আমাদের সুস্থ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ফর্বস জানিয়েছে, পর্ণোগ্রাফী এখন ৫৬ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাণিজ্য। বিদেশী পর্ণোগ্রাফী ভিডিও দৃশ্য সমূহ দেখে আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং যুব সমাজরাও নিজেরা নিজেদের পর্ণো ছবি তৈরি করছে আর্থিক লাভের আশায়। তাই দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ম্যাগাজিন, সিডি, ভিডিও, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বিস্তারকে আশংকাজনকভাবে শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্র জগতে সহিংসতা ও যৌনতার বৃদ্ধি এবং সঙ্গীতে পশ্চিমা ঢং অনুকরণ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ডিশের মাধ্যমে এ ব্যবস্থার বিস্তারকে আরো বেগবান করেছে। ডিশে প্রচারিত অনুষ্ঠানের ধরণ ও বিষয়বস্তুর সাথে স্থানীয় মূল্যবোধের প্রত্য সংঘাত অনেক েেত্রই লনীয়। আমাদের দেশে যত্রতত্র পর্ণো ম্যাগাজিনের হিড়িক চোখে পড়ার মতো। যৌন উত্তেজনাকর এসব ম্যাগাজিনের সিংহভাগ গ্রাহক আমাদের কোমলমতি যুব সমাজ। ফলে নিজের অজান্তেই কালো মেঘের গ্রাসে আচ্ছন্ন করে ফেলে তাদের সুন্দর চরিত্রকে। এই অশ্লীল সিডি ও ম্যাগাজিনগুলো অধিকাংশই আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে আমদানি করা। স¤প্রতি এর সাথে পালা দিয়ে দেশের পর্ণো সিন্ডিকেটও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
* রেডিও টেলিভিশনের প্রভাব :
আমাদের জাতীয় প্রচার মাধ্যম রেডিও টেলিভিশনের ভূমিকা এখনো খুবই আপত্তিকর। শুরু থেকেই এখানেই বাম-রামদের আখড়া গড়ে উঠেছিল। জাতীয় আদর্শের প্রতিক হওয়ার পরিবর্তে দলীয়করণের হিংস থাবায় এটি জর্জরিত হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই। গোটা জাতি বিস্ময়ের সাথে ল্য করেছে ৯০% মুসলমানদের দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যমটিতে নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অসৎ চরিত্রের লোকগুলোকে টুপি ও দাড়ি পরিয়ে উপস্থাপন করা হয়। ইসলাম পন্থীদের ঘৃণা করাই যেন এ সকল প্রচার মাধ্যমের মূল কাজ। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমাদের সমাজ বিনিমার্ণে যতটুকু ভূমিকা রাখার কথা তা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত। এর মূল কারণ মিডিয়া মালিকদের রাজনৈতিক অভিলাস, শুধূ অর্থোপার্জনের হীন চিন্তু এবং বৈধ-অবৈধ বিজ্ঞাপণের প্রতিযোগিতা। এখন আর টিভি চ্যালেনগুলো পরিবারের সবাই বসে এক সাথে দেখার সুযোগ নেই। চ্যানেল সমূহে উপস্থপনায় যে অবস্থা পরিলতি হচ্ছে তাতে মূল বিষয়ের চেয়ে উপস্থাপিকার রং ঢংই মূখ্য মনে হয়। এসব রং ঢংয়ের উপস্থপনার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে অবমাননা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠান শুরু করা হচ্ছে Hi, Hello viewers, good morning, good evening ইত্যাদীর মাধ্যমে।


* সঙ্গীত ও লোককাহিনীর উপর প্রভাব :
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতিতে আজ মহা বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুরসম্ভার হারিয়ে গেছে ইংরেজি আর হিন্দী সঙ্গীতের প্রভাবে। আজ বাংলাদেশের কোথাও বাংলা সঙ্গীত শোনা যায় না সবখানে হিন্দী আর ইংরেজি দখল করে নিয়েছে। বিয়ে, উৎসব, পিকনিক থেকে শুরু যে কোন আচার অনুষ্ঠানে আজ শুধু হিন্দী সঙ্গীতই শোনা যায়। এখানে বাংলা যেন নিষিদ্ধ। এখন আর আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিন কন্ঠের সেই পল্লী জীবনের যে হৃদয়গ্রাহী চিত্র ফুটে উঠত তা এখন আর শোনা যায় না। ব্যান্ড সঙ্গীতের নামে আমাদের নতুন প্রজন্মে শিল্পীরা যে চেচামেচির মহড়া দেয় তা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে না মোটেও। এরপরও একদল উঠতি যুবকের অবচেতন মনের দূর্বলতাকে পুঁজি করে এসবের বাজার দিন দিন সরগরম হচ্ছে। আগে যে একতারা, দোতরা, সারিন্দা. তবলা, ঢোল এবং বাঁশির সুরে বাঙালির হৃদয় আকুল হতো এখন গীটার আর কী বোর্ডের কর্কশ সুরের মাঝে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে বেহুলা-লীন্দর, কমলা বনবাস কিংবা আলেমতি প্রেমকুমারের যে যাত্রাগান পালাগান হতো এবং গ্রাম বাংলার মানুষ রাতভর প্রাণ ভরে উপভোগ করতো, তাও এখন আর দেখা যায় না। এখন যুবক যুবতীদের প্রেম কাহিনী ছাড়া গান রচনা চিন্তাও করা যায় না। গানের ভাষাও ককর্শ, উচ্চ শব্দের কারণে বুঝাও যায় না গায়ক কি গায়।

* পোশাক-পরিচ্ছেদের উপর প্রভাব :
এক সময় পোশাক পরিচ্ছদে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে তা আজ হারিয়ে গেছে। বিদেশী সংস্কৃতিক ব্যাপক প্রসার ও চর্চা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জিন্স, টি শার্ট, স্কার্ট এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের খুবই প্রিয়। শাড়ি লুঙ্গি, পাজামা পাঞ্জাবী এখন আর তেমন প্রিয় নয়। আমাদের মেয়েদের অনেকেই স্বল্পবসনকে আধুনিক জীবনের নমুনা বলে মনে করে এর প্রতি চরম আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। একদিকে পশ্চিমা সাংস্কৃতিকে অন্ধ অনুকরণ যেমন আধুনিক অচিন পাখিকে ধরতে পারে না, তেমনি দেশীয় সংস্কৃতিতেও নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে দোদুল্যমান অবস্থার কারণে তাদের জীবন হয়ে পড়ে মূল্যহীন ও হতাশাপূর্ণ।

* কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল :
প্রযুক্তি আমাদেরকে যতটুকু এগিয়ে নিয়ে গেছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের যুব শ্রেণীর চরিত্রকে নষ্ট করার জন্যও সমান ভূমিকা রাখছে। কম্পিউটারে বাসায় বসে সৃজনশীল কাজ কর্ম করার বদলে অশ্লীল সিডি ভিসিডি দেখা, ইন্টারনেটে অশ্লীল পর্ণোগ্রাফী তে মজে থাক ইত্যাদী এখন ছাত্র ও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের মোবাইল কোম্পনিগুলো যুব সমাজের চরিত্র ধ্বংসের জন্য গভীর রাতে ফ্রি প্যাকেজ দিচ্ছে অথচ সময় মতো ঠিকই গলাকাটা করছে, যা আমাদের জাতিকে মেধাশূণ্য করে দেবার ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
* উৎসবের উপর প্রভাব :
আমাদের সংস্কৃতিক আর এক ভয়ংকর থাবা পড়েছে যা গ্রাস করেছে সম্ভাবনাময় তারুণ্যকে। থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন ডে, ভালবাসা দিবস প্রভূতি বিজাতীয় সংস্কৃতি তরুণ-তরুণীদের গ্রাস করেছে, তাদের সুকুমার বৃত্তিকে করছে কলুষিত। নিজেদের পরিচয় ভূলে বিদেশী সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে হারিয়ে ফেলতে বসেছে নিজেদের সংস্কৃতি। বাঙালির পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন তরুণ-তরণীদের এতটা আলোড়িত করতে পারছে না। যা ছিল সুস্থ, যা ছিল সুন্দর, যা ছিল চিরন্তন সেসব মূল্যবোধের রক্তে সর্বনাশা মহামারির বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানসিক গোলামীর কারণে ইকবাল-শেখ শাদী-নজরুল কে বাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে আদর্শ বানানো হয়েছে। মঙ্গল প্রদীপ, শিখা অনির্বাণ প্রভূতি কালচার আমদানী করা হচ্ছে। জাতীয় সংস্কৃৃতিতে মনসার গান, শিবের গাজন, ঢাকের বাদ্য, কাঁসার ঘন্টা, শঙ্খ, উলুধ্বনি প্রভূতিকে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে অঙ্গীভূত করা হচ্ছে। পথে পথে মূর্তি নির্মাণ করে মসজিদ নগরীর গৌরব ম্লান করা হচ্ছে। ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বা সংস্কৃতির কথা বলে এক শ্রেণীর মানুষ এদেশের শিল্প সংস্কৃতিতে কোলকাত-মুম্বাই মডেলের ব্যভিচারী শিল্প-সংস্কৃতিতে রুপান্তর করতে চাইছে। এ দেশের বেশিরভাগ সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদী সবই আজ বেজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে পরিচালিত হচ্ছে।
# সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলাফল :
* সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অবৈধভাবে প্রেম করার কৌশল, ভাষা বিন্যাস, পোশাকের স্টাইল, চুল-চেহারার বিন্যাস, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, আত্ম হত্যায় উদ্বুদ্ধ হওয়া-এ ধরণের যত অনাচার ও সংকীর্ণতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। যুব সমাজ থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের মন-মস্তিষ্কে পর্যন্ত ব্যভিচার করার আগ্রহ সৃষ্ট করা হয়। এতে করে মানুষের সৃজনশীল শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। মানুষ হয় পরিশ্রম বিমুখ এবং ধিরে ধিরে পরনির্ভর হয়ে রোজগারের জন্য হাহাকার করে মরে।
* সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়ে আমাদের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজ আজ কোন পর্যায়ে তার একটি দৃষ্টান্ত দেয়া হল: চট্রগ্রামের সানমারের সামনে চার জন যুবক দাঁড়িয়ে হরে কৃঞ্চ হরে রাম/ হরে রাম হরে কৃঞ্চ গানটি গাইছিল। তাদের দুজনের মাথায় লম্বা চুল পেছনে ঝুটি বাধাঁ। আরেক জনের চুলে তার মুখটি দেখা যাচ্ছে না, গলায় ওড়না ঝুলানো, আরেক জনের দাড়ি বিশেষ স্টাইলে কাটা। চার জনেরই দামী ভিড়িও মোবাইল হাতে। গলায় ঝুলছে মোবাইলের হেডফোন, কানে রিং, রাম হাতের তিনটি আঙ্গুলেই আংটি, দুই হাতেই চেইন ও ব্রেসলেট এবং গলায় স্বর্ণের চেইন। প্রত্যেকের রয়েছে ৫-৬ টি সিম। মোবাইলে রয়েছে বিভিন্ন পর্ণোগ্রাফীর ছবি ও ভিডিও। রয়েছে নিজেদেরও বিভিন্ন পর্ণোগ্রাফীর ভিডিও ছবি। কথা হলো তাদের সাথে। তারা নিয়মিত ইংলিশ এবং হিন্দী চ্যালেন দেখে। বাংলা চ্যালেনকে তারা দেখতেই পারে না। তারা বলল, বাংলা চ্যালেন সমূহে দেখার মতো কিছুই নেই। প্রত্যেকের বাসায় ইন্টারনেট সমৃদ্ধ ল্যাপটপ রয়েছে। আলাপান্তে জানা গেল ইতিমধ্যে তাদের অনেকের সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে যৌন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এবং তারা হিন্দী বলতে বেশি আগ্রহী। চার জনের প্যান্ট এমন ভাবে পরা যে তা খুলে পড়ার মতো অবস্থা।
* ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিবার প্রথা : বেড়ে যাচ্ছে অবাধ যৌনাচার
১৯৯৩ সালে আমেরিকান কংগ্রেসের জন্য প্রণীত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-মুসলিম বিশ্বের দেশ সমূহে পশ্চিমের ব্যর্থতার প্রধান কারণ হচ্ছে ‘ইসলামের পরিবার প্রথা’। তাই বর্তমানে মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবার প্রথার উপর তীব্র আঘাত হানা হচ্ছে। পারিবারিক জীবনের সুন্দরতম দিকগুলো উপো করে মানুষদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে অবাধ যৌনাচারের দিকে। তরুণ-তরুণীকে শুধু তাদের দু’জনের প্রগাঢ় বন্ধনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে কারণে নারী সমাজের ভেতর একজন আদর্শ স্ত্রী, বোন, ভাবী, চাচী,দাদী, নানী ইত্যাদী হওয়ার চাইতে কেবল একজন প্রেমিকা হওয়ার প্রতিযোগিতা ল্য করা যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত তালাক, পারিবারিক কলহ, পরকীয়ার শিকার হয়ে ঘর পালানোর খবর, ধর্ষণ ও সম্ভম হানির সচিত্র বর্ণনা ও লৌমহর্ষক ঘটনা পত্রিকার পাতায় ছাপা হয় তা আমাদের পরিবার প্রথার ভাঙ্গনের খবরই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না, তা যেন আমাদের এক আবশ্যম্ভাবী পতনমুখী/গজবমুখী যাত্রার খবরও দেয়।
* মানুষ যেন সামাজিক নয় যৌনজীব :
মানুষ সামাজিক জীব এ বক্তব্য অসার হতে চলেছে। মানুষ তার আশরাফুল মাখলুকাত বা শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় ভূলতে বসেছে। সারা পৃথিবীতে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদীরা মানুষকে এক প্রকার যৌন জীব হিসাবে পরিচিত করানোর এবং সে হিসাবে বাঁচিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চলচ্চিত্র জগতের তারকাদের কে নারী পুরুষের কাছে স্বপ্নের মানুষ হিসাবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠার এবং তাদের মতো জীবন যাপনের অপপ্রয়াস চলছে সর্বত্র। প্রতিনিয়ত তাদেরকে বড় ও আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। উপমহাদেশের মিডিয়া পুরুষ বলে পরিচিত খুশবন্ত সিং লিখেছেন- Love does not last, lust lasts.
এই কামনা কেন্দ্রিক জীবন যে পশু সমাজের হতে পারে মনুষ্য সমাজের নয় তা উপেতি হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে কয়েক কোটি মানুষ তথাকথিত যৌন পেশার সাথে জড়িত। Uglist profession
বা বীভৎসততম এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন সকল শ্রেণীর মানুষ। এই বীভৎসতম পেশার নামে সাম্রাজ্যবাদী চক্র পৃথিবীর এক বিরাট অংশ মানুষকে যৌন দাস-দাসীতে পরিণত করছে। তাই মানুষ পরিনত হচ্ছে হীন যৌন কীটে, হারিয়ে যাচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাতের পরিচয়। বাংলাদেশের ও এ বীভৎতম পেশার এক শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে, আর এর জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে আমাদের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজ, সর্বত্র বাড়ছে যৌন সন্ত্রাস। সা¤প্রতিক সময়ের ঘটনাবলী ভাবিয়ে তুলেছে দেশের সচেতন নাগরিকদের।
* সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে আমাদের যুব সমাজ আজ কোন পর্যায়ে নেমে গেছে তা ডা: লূৎফর রহমানের ভাষায় ‘যৌবনকালে কি বিবাহিত আর অবিবাহিত, পাঁচজন এক স্থানে একত্রিত হলেই অতি জঘন্য, অতি কুৎসিত আলাপ করা বর্তমান যুবকদের বড়ই প্রিয় অভ্যাস। নারীর অঙ্গ নিয়ে এরা যে জঘন্য আলাপ করে তা প্রকৃত মনুষ্য শুনলে তাদেরকে একপাল বিষ্ঠাভোগী কুকুর শাবক বলবেন। কতভাবে, কতপ্রকারে এরা যে নারী অঙ্গের আলোচনা করে তার ইয়ত্তা নেই। আর এেেত্র আমাদের ছাত্র সমাজও অপকর্মের রেকর্ড গড়েছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে গঠা করে উৎসবের মাধ্যমে মিষ্টি খাওয়ায় এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পার পেয়ে সরকারি খরচে বিদেশে উচ্চ শিার জন্য যায়, ফিরে এসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরী পায় তখন এর মাধ্যমে সাধারণ ছাত্ররা কি শিখবে?
* হারিয়ে যাচ্ছে গ্রহণ বর্জনের মাপকাঠি :
এক সময় গ্রহন বর্জনের েেত্র ভাল-মন্দ, নৈতিক-অনৈতিক, হালাল-হারাম ভাবতো। কিন্তু আজ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বদৌলতে তা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। বরং এসবকে গেয়ো আখ্যা দিয়ে বাস্তববাদের নামে অন্যায়, অনৈতিক হারাম বিষয়গুলোকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। সুদ-ঘুষ এখন যেন অনুমোদিত। এসবের বিরুদ্ধে মানুষের মনকে তৈরি করার কোন উদ্যোগই নেই।
* তৈরি হচ্ছে ফ্রি ভ্যালু সোসাইটি :
আস্তে আস্তে সকল মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে মানুষকে মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে অন্যরকম অবস্থায় নিয়ে যেতে। পশ্চিমা ফ্রি সেক্স, ফ্রি মাইন্ড এর জোয়ারে আমাদের সহজ সরল মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। তারা সবাই যেন নিজেদের অজান্তেই একটি ফ্রি ভ্যালু ফ্রি মাইন্ড সমাজ গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
* ফ্যাশন শো : হারিয়ে যাচ্ছে আব্র“ ভূষন
ফ্যাশনের নামে এক শ্রেণীর মানুষের কাম উদ্দীপক অঙ্গ ভঙ্গির তথাকথিত শিল্পিত উপস্থাপন। এসব আবার ভিডিও করে গভীর রাতে চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে। আব্র“ নামে ফ্যাশন শোর আয়োজন করে আমাদের জাতিকে বে-আব্র“ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
* পরকীয়া/ নীল ছবির দংশন :
অবাধ যৌনাচারের প্রচারক আজকের পশ্চিমা সংস্কৃতি। আজ তথাকথিত স্টারদের/ পারফর্মারদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনে পরকীয়া, লিভ টুগেদার এর প্রভাব তাদের ভক্তদের মাঝে জন্ম নিচ্ছে। দেশের খ্যাতনামা বৃদ্ধিজীবিরা যখন বলেন-‘নারী পুরুষের বসবাসের যত নিয়ম গড়ে উঠেছে তার মাঝে আমার কাছে সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য লিভ টুগেদার’ তখন ভাবতেই অবাক লাগে তাদের সংস্পর্শে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েরা কোন সংস্কৃতিকে গ্রহণ করবে?
* সহযোগিতার ছন্ধাবরণে এনজিও :
আসল কথা হল, এনজিও গুলো মূলতঃ সাহায্যের ছন্ধাবরণে এক নতুন প্রভু, নতুন সাম্রাজ্যবাদ, নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। বাংলাদেশ সরকারও তাদের নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। কোন কিছু মনিটরও করতে পারে না। উল্টো তাদেরকে সহযোগিতা করতে হয়। বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো ভাঙ্গন সৃষ্টি করাই এদের প্রধান টার্গেট। এনজিওদের তহবিল, মূলধন, বিনিয়োগ আসছে খ্রীস্টান সংগঠন সমূহের প থেকে। বর্তমানে এনজিওগুলোর প্রধান টাগের্ট ধমান্তর করা। দুই কোটি বেকারের এ দেশে নারীর মতায়নের নামে নারীদের অর্থনেতিকভাবে সয়ম্ভর করে তোলার পাশাপাশি তাদের মুখে শ্লোগান তুলে ধরছে ‘কিসের বর কিসের ঘর’ দেহ আমার সিদ্ধান্তও আমার।
প্রফেসর মাহবুব উদ্দীন বলেন- সাম্রাজ্যবাদীরাও তাদের এজন্টরা বুঝল সাম্রাজ্যবাদকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষকে সব কিছু থেকে ভূলিয়ে রাখতে হবে। সেই জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের লুন্ঠনের বিরুদ্ধে মানুষ যাতে সচেতন হতে না পারে, প্রতিবাদ করতে না পারে এবং প্রশ্ন করতে না পারে সেজন্য তাদের কোনো নেশাতে মাতিয়ে সব কিছু থেকে ভূলিয়ে রাখা দরকার বলে তারা মনে করে। তাই তাদের নেশা হলো সেক্স। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে আমাদেরকে সেক্সের নেশা খাওয়ানো হচ্ছে। ভোগবাদিতার দিকে উসকে দেয়া হচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজকে বোধহীন ও রাজনীতিহীন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো আজো ভারতে দেখানো হয় না। অথচ ভারতের সব চ্যানেলগুলো অবাধে আমাদের দেশে দেখানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের কে হিন্দী সংস্কৃতিতে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। এ হিন্দী আগ্রাসনের কারণে আমাদের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গন বিপন্ন হতে চলেছে। আজকে আমাদের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গন হুবহু কলকাতা ও মুম্বাইয়ের অনুকরণে চলছে।
বিশেষজ্ঞ মহল আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, সামাজিক আন্দোলন ও সরকারী ভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এর ভয়াবহ পরিনতি গোটা জাতিকে বহন করতে হবে।
# সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে করনীয় :
১. মিডিয়ার জবাব মিডিয়া দিয়েই দিতে হবে। মিডিয়া সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধের জন্য সুস্থ, রুচিশীল, এবং দেশীয় সংস্কৃতির ধারক বাহক মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। শক্তিশালী মিডিয়ার মাধ্যমে সকল আগ্রাসনের যুক্তিপূর্ণ জবাব দিতে হবে। হতে হবে দেশীয় ও নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক বাহক। দেশপ্রমিক ও নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে শক্তিশালী মিডিয়া প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করতে হবে।
২. দরকার ইসলামী শক্তিসমূহের ইস্পাত কঠিন সুদৃড় ঐক্যের। থাকতে হবে কথা ও কাজের অপূর্ব সমন্বয়।
৩. সবার আগে ঘর সামলাতে হবে। নিজস্ব ও ইসলামী সংস্কৃতি অনুযায়ী সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে।
৪. জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নীতি নৈতিকতার সমন্বয়ে শিা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. শাখা প্রশাখা নয় আগে নিজেদের বিশ্বাসকে বাঁচাতে হবে। ধর্মকে পীর আলেমদের কথায় নয় কোরআন হাদীস থেকে ইসলাম শিখতে ও মানতে হবে।
৬. সরকারী পৃষ্টপোষকতায় সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশে কার্যকর পদপে নিতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে সুস্থ সংস্কৃতির আলোক রশ্মি।
৭. অপসংস্কৃতির তিকর দিক সমূহ মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে।
৮. অপসংস্কৃতি বর্জন করে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার এক নির্মল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাদের ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাদের বানাতে হবে দেশীয় ও নিজস্ব সংস্কৃতির সূতিকাগার।
৯. অপসংস্কৃতির প্রবেশধারকে তার রুপ পাল্টিয়ে নিজস্ব ও ধর্মীয় সংস্কৃতির আলোকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ কে পরিশুদ্ধ করতে হবে। দেশীয় ও নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
অপসংস্কৃতির শত শত মিসাইল, এটমবোমা এসে আমাদের ভাষা সংস্কৃতিক চেতনা বিশ্বাসকে চুরমার করে দিচ্ছে। অপসংস্কৃতিক তুফান আমাদের রাজনীতিবীদ, অধ্যাপক, ছাত্র, শিল্পী, সাহিত্যিক, বৃদ্ধিজীবি মহলকে হিপ্নোটাইজড করে জাতীয় বেঈমানের কাতারে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভাষা ও সংস্কৃতিক আগ্রাসনের একতরফা যুদ্ধের হাতে দেশকে সঁপে দিয়ে দেশ বাচঁনোর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজা ঠিক নয়। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে রার জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা সময়ের দাবী।
তথ্যসূত্র:
আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব : আসুন সচেতন হই-এম আই খান
তরুণ তোমার জন্য-আ.জ.ম ওবাইদুল্লাহ
শিা সাহিত্য ও সংস্কৃতি-মাওলানা আব্দু রহিম
গ্রামীণ ও পৌর সমাজবিজ্ঞান







সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×