somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরস্পরের দেখানো পথেই হাঁটছে আওয়ামীলীগ আর বি এন পি ! কিন্তু সমঝোতার বিকল্প আছে কি ?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে ক্ষমতার পালা বদলের ইতিহাস খুব একটা সুখপ্রদ নয়। ৯০ এর গণ -অভ্যুত্থানে এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর ধারনা করা হয়েছিল দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সংস্কৃতি চালু হবে, গণতন্ত্র ফিরে পাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। কিন্তু ইতিহাস চলে তার নিজস্ব গতিতে। এর গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের সাধ্য মনে হয় মানুষের নেই।



এরশাদের পতন পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে একমাত্র ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নজির রয়েছে। বাকি টেনিউর গুলিতে ক্ষমতার পালাবদল স্বস্তিদায়ক ছিল না। ১৯৯৬ সালে বি এন পি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। আওয়ামীলীগের নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের চাপে বি এন পি সরকার বাধ্য হয় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে। এ পদ্ধতি দেশে - বিদেশে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলনের পূর্বে ১৯৯৬ সালে বি এন পি যেরকম সংবিধানের দোহাই দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করেছিল, এবার একই ভাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামীলীগ তত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে! এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে – ঘাটে জল কম ঘোলা হয়নি। কিন্তু দুই দলের কঠোর মনোভাবের কারনে বিভিন্ন পর্যায়ে সমঝোতার প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দেশের এহেন সংকটময় পরিস্থিতি দেশের গণ্ডী পেরিয়ে পায় আন্তর্জাতিক মাত্রা। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব দেশের এ সংকটকাল উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনড় অবস্থানের কারনে সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের এ সংকট নিরসন প্রচেষ্টায় আপাতত ইস্তফা দিয়েছে বলেই প্রতীয়মান।



আমাদের সকলের অনুধাবন করা উচিত বাংলাদেশের এ আভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান আভ্যন্তরীণ ভাবে হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। অন্য কোন বহিঃশক্তির এতে নাক গলানো দেশের মান মর্যাদার জন্য হানিকরই বটে। কিন্তু বিবদমান দুই পক্ষ কিছুটা ছাড় না দিলে সমঝোতার অনুকূল ক্ষেত্র তৈরি হবেনা। বিষয়টা কিঞ্চিৎ অনুধাবন করে বি এন পি তাদের পূর্বের তত্বাবধায়ক সরকারের একদফা দাবি থেকে কিছুটা সরে এসেছে। তাদের বর্তমান দাবি নির্বাচনকালীন সরকার নির্দলীয় হোক বা সর্ব দলীয় হোক , প্রধানমন্ত্রীকে তারা কিছুতেই এ সরকারের প্রধান হিসাবে মেনে নেবেনা।



সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বি এন পি কে সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের আহ্বান জানালেও কে হবেন নির্বাচনকালিন সরকারের প্রধান এ বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলেন নি। তাছাড়া সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়েও সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা আসেনি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। অবশ্য, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে সংলাপ এবং সমঝোতার কথা বলেছেন এখন বি এন পি’র উচিত হবে এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা। আশা করা যায় আলোচনার টেবিলে বসলে অনেক সমস্যারই গ্রহন যোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে।



আশার কথা হল প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের পক্ষ থেকে সংলাপের জন্য সৈয়দ আশরাফকে মনোনীত করেছেন। একই ভাবে এখন বি এন পি কে তাদের সংলাপের মুখপাত্র হিসাবে মির্জা ফখরুলকে মনোনীত করে সংলাপের দ্বার উন্মোচনে এগিয়ে আসতে হবে। তবে এ সংলাপ যেন আবার মান্নান ভূঁইয়া – আব্দুল জলিলের সংলাপের মত নিস্ফলা না হয়। যদি তাই হয় তবে বলতে হবে – বি এন পি’র দেখানো পথেই হাঁটছে আওয়ামীলীগ আর আওয়ামীলীগের প্রদর্শিত পথে বি এন পি( লগি –বৈঠার আদলে দা – কুড়াল নিয়ে সমাবেশে আসার আহবান সেরকম ইঙ্গিতই দেয়); সমঝোতার দ্বার উন্মোচন না হলে যে ১/১১ এর অনির্বাচিত সরকারের ভয় করছে আওয়ামীলীগ; দেশে হানাহানি , অরাজকতা সৃষ্টি হলে দেশ মাতৃকার স্বার্থে সেই অনির্বাচিত সরকারই অনিবার্য হয়ে পড়বে। সেটা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের জন্য যে সুখকর হবেনা নিকট অতীতেই রয়েছে তার জ্বলন্ত প্রমান।
শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গণতন্ত্রের শেষ কথা না হলেও এটিই গণতন্ত্রের মূল চাবি কাঠি। তাই দেশের গণতন্ত্র সমন্নত রাখার স্বার্থে সাংবাধিনিক সংকট সৃষ্টির পূর্বেই নিম্নলিখিত বিষয়ে প্রধান দুই দলের সমঝোতা আজ সময়ের দাবিঃ



(১) নির্বাচন কালীন সরকারের রূপরেখা কি হবে এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো।



(২) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকার প্রধান কে হবেন এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে গ্রহনযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা।



(৩) সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হবে নাকি চালু থাকবে এ ব্যাপারে সর্বজন স্বীকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। সংসদ চালু থাকলে নির্বাচনের মাঠে কিভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকতে হবে। কারন ক্ষমতাসীন দল সরকারি খরচে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে অসমতল ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।


(৪) নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টা আমলে নিয়ে কমিশনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে সমঝোতায় আসতে হবে।

(৫) আর পি ও এর যথাযোগ্য সংস্কার করতে হবে, না ভোটের বিধান রাখতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের তৃণমূল কমিটি থেকে সুপারিশকৃত প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। নির্বাচনী অপরাধের দন্ডবিধি আরও কঠোর করতে হবে। মিথ্যা হলফ নামা দিয়ে কেউ নির্বাচিত হলে তার নির্বাচন বাতিল করতে হবে। নির্বাচনে কারচুপি হলে ফলাফল স্থগিত এবং বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।

সব চেয়ে বড় কথা একটি শক্তিশালী, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারলে রাজনৈতিক মহলে বিদ্যমান পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে প্রতীয়মান। তার জন্য আমাদের আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে কে জানে?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×