somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ধর্ষিত বাঙালী নারীদের বীরাঙ্গনা ভুলে যাবার নয়

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বীরাঙ্গনা বলতে এখানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে ধর্ষিত বাঙালী নারীদের বোঝানো হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর সদস্যগণ দুই থেকে চার লক্ষ বাঙালী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গবেষকদের মতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী মুসলমান এবং সংখ্যালঘু হিন্দু উভয় সম্প্রদায়কে ভীত সন্ত্রস্থ করতে এই ধর্ষণ চালানো হয়। তার ফলে সহস্র রমনী গর্ভধারণ করেন যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয়, গর্ভপাত, আত্মহত্যা ইত্যাদি সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। পাক হানাদার এবং তাদের সহযোগী বাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে এই যুদ্ধাপরাধের সমাপ্তি ঘটে। প্রথমদিকে ভারত দাবী করেছিলো যে তারা মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করছেন। পরবর্তীতে তারা মানবাধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে এই যুদ্ধে অংশ নেওয়াকে ব্যাখ্যা করেন। কিন্ত জাতিসংঘ তাদের এই দাবী অগ্রাহ্য করলে তারা দাবী করে তাদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রয়োজন । বর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহনের মানবিক দিকটাই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪০ বছর পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন ধর্ষনসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে ১৫৯৭ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১০সাল থেকে বাংলাদেশের আন্ত্ররজাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল কয়েক জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দিয়েছেন।
ব্রিটিশ ভূখন্ড থেকে ভারতের আলদা হয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তান নামক দেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তান এং পশ্চিম পাকিস্তান নামে ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে পৃথক দুটি আলাদা ভুখন্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। পশ্চিমাংশের শাসকগোষ্ঠী বাঙালী মুসলমানদেরকে অতি বাঙালী হিসেবে দেখতো এবং তাদের মুসলমানিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতো। আর এই কারণেই তারা বাঙালীদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করতো না। এই দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী জোরপূর্বক সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালীকে পাকিস্তানীদের মত তৈরী করার চেষ্টা শুরু করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙলাভাষী জনগন মুসলমান হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বাঙালী বাস করে। খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ উর্দুতে কথা বলতো। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাঙালী জনগণ পাকিস্তানী শাসকদের এই অন্যায় আইন মেনে নিতে পারেননি। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে বাঙালী আন্দোলন শুরু করেন।১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাঙালী ভাষার দাবীতে রক্ত দেন যা বিশ্ব ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন নামে সুপরিচিতি লাভ করে। ১৯৪৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলীম লীগের বিকল্প হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম পরিবর্তন করেন এবং আওয়ামী লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তী দেড় দশক ধরে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে বাঙালী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক পটভূমিতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬০ দশকের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্থানের জনগণকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গন্য করার প্রবণতা শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে বলা হতো মিথ্যাবাদী জনগণের মিথ্যাবাদী দেশ।বাংলাদেশ ততকালিন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসনের পূর্বে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারন নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। বিপুল ভোটে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এই ফল মেনে নিতে পারেননি। ঢাকায় একজন জেনারেল মন্তব্য করেন চিন্তা করো না আমরা এই কালো জারজদের কিছুতেই আমাদেরকে শাসন করতে দেবো না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারী করেন।
বাঙালী জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট এর নামে বাঙালী নিধন শুরু করে দেয়। তারা হিন্দু এবং বাঙলাভাষী মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করে । ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যায় ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষ শহীদ হন ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যান । দেশের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ নিরাপত্তাহীনভাবে টিকে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেরা বাঙালিদের দূর্বল জাতি হিসেবে উল্লেখ করে এবং যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে বাঙালী নারীদের ধর্ষণ করে। বাঙালী জাতিকে শুদ্ধ করতে তারা বাঙালী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গর্ভবতী করার মাধ্যমে বিশুদ্ধ জাতি তৈরীর নোংড়া প্রকল্প হাতে নেয়। হাজার হাজার মা বোনদের উপরে নির্মম অত্যাচার চালানো হয় ।


জেনারেল টিক্কা খান যিনি ছিলেন অপারেশন সার্চলাইট এর প্রণেতা তার নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনি বাংলাদেশে আক্রমণ পরিচালনা করে এবং তিনি তার কর্মকান্ডের জন্য বাঙালিদের নিকট থেকে বাংলার কসাই অভিধা লাভ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চ আমি এই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে একটি সংখ্যালঘুতে পরিণত করবো এই বক্তব্যের দ্বারা খান স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের দ্বায়িত্বে আছেন। বীনা ডিকোস্টা মনে করেন যে খানের ব্যবহৃত এই উপমাটি একটি সংকেত যার মাধ্যমে তিনি সামরিক অভিযানকালে গণধর্ষণকে একটি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহৃত কৌশল হিসাবে গ্রহণের প্রমাণপত্র প্রদান করেছেন। যশোরে সাংবাদিকদের একটি দলের সঙ্গে আলাপকালে খান প্যাহেলে উনকো মুছলমান কারো অর্থাৎ (প্রথম এদেরকে মুসলমান বানাও) বলে উক্তি করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো। ডিকোস্টা যুক্তি দেখান যে এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ স্তরের নিকট বাঙালিদের সম্পর্কে অনুভূতি হচ্ছে আনুগত্যহীন মুসলমান এবং দেশপ্রেমহীন পাকিস্তানী। রাতের বেলা অভিযান পরিচালনাকালীন আক্রমনকারীরা গ্রামের মহিলাদের উপর চড়াও হতো প্রায়শঃই ত্রাস সৃষ্টির অংশ হিসেবে তাদের পরিবারের সামনেই এগুলো ঘটানো হতো। তাছাড়াও ৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী নির্যাতিতাদের অপহরণ করে বিশেষভাবে নির্মিত ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতো যেখানে তারা পুনঃ লাঞ্ছিত হতো। ক্যাম্পে বন্দি থাকা অনেককেই হত্যা করা হয় অথবা তারা নিজেরাই আত্মহত্যা করেন । আবার কিছু নারী তাদের নিজেদের চুল ব্যবহার করে আত্মহত্যা করায় সৈন্যরা বন্দিনিদের চুল কেটে দেয়। যারা অপহৃৎ হয়েছিলো এবং সেনাবাহিনী দ্বারা অাটক ছিলো এধরণের ৫৬৩ জন নারী সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যেখানে বলা হয় যখন সেনাবাহিনী তাদেরকে মুক্তি দেওয়া শুরু করে তখন এদের সকলেই তিন হতে পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলো। কিছু নারীকে জোরপূর্বক পতিতাবুত্তিতে বাধ্য করা হয়। পাকিস্তান সরকারের হিসাব মতে যেখানে ধর্ষনের সংখ্যা শতাধিক সেখানে অন্যান্য হিসাব মতে এই সংখ্যা আনুমানিক ২,০০,০০০ হতে ৪,০০,০০০ পযন্ত হতে পারে। পাকিস্তান সরকার নির্যাতন সম্পর্কিত প্রতিবেদন এই অঞ্চলের বাহিরে পাঠাতে বাঁধা দান চেষ্টা করলেও কিন্তু গণমাধ্যমে নৃশংসতার সংবাদ বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ্যে তা পৌঁছে যায় এবং এটি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ব্যাপক আন্তর্জাতিক জনসমর্থন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
জেনিক এ্যারিন্স কর্তৃক বিবৃত আছে যে কোন একটি জাতিগত গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে অসংখ্য নির্যাতিতা ধর্ষিত হয় । হত্যা করা হয় এবং তারপর যৌনাঙ্গের মধ্যে বেয়নেট দ্বারা আঘাতও করা হয়। কানাডীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যাডাম জোনস বলেছেন যে এই গণ ধর্ষণের অন্যতম একটি কারণ ছিল বাঙালি নারীদের অসম্মান করার মাধ্যমে বাঙালি সমাজের মনোস্তাত্বিকভাবে পতন ঘটানো এবং সেজন্য কিছু নারীকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ধর্ষন করা হয়েছিলো অথবা বার বার এভাবে আঘাতের কারণে নিহত হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনি বাঙালি পুরুষদেরও ধর্ষণ করেছিলো। পুরুষেরা যখন কোন একটি তল্লাশীকেন্দ্র পার হতো তখন তাদেরকে খৎনা করানো হয়েছিল কি না তা প্রমাণ করতে নির্দেশ দেওয়া হতো এবং সেখানেই এধরণের ঘটনাগুলো সাধারণত ঘটতো। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর জাস্টিস মন্তব্য করেছেন যে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতা ছিলো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী দ্বারা স্বেচ্ছায় গৃহীত নীতির একটি অংশ। লেখক মুলক রাজ আনন্দ পাকিস্তানি সেনাবাহিনির কার্যক্রম সম্পর্কে বলেছেন ধর্ষনগুলো এতোটাই পদ্ধতিগত এবং পরিব্যাপক ছিলো যে এগুলো সচেতনভাবে গৃহীত সমর নীতির অংশ ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানীদের কর্তৃক পরিকল্পিত একটি নতুন জাতি তৈরি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হালকা করে দিতে। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর আত্মসমর্পণ করার পর অমিতা মালিক বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে একজন পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিক বলেছে যে আমরা যাচ্ছি। কিন্তু আমরা পেছনে আমাদের উত্তরসুরি রেখে যাচ্ছি। সকল পাকিস্তানী সামরিক ব্যক্তিবর্গ সহিংসতাকে সমর্থন করেননি জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান যিনি রাষ্ট্রপতিকে সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং মেজর ইকরাম সেহগাল উভয়ই প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন একইভাবে পদত্যাগ করেন এয়ার মার্শাল আসগর খান। বেলুচ রাজনীতিবিদ মীর গাউস বখশ বাইজেনজু এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা খান আব্দুল ওয়ালী খান সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রমের প্রতিবাদ করেছিলেন। এই সকল প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব যারা সহিংসতার বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণ করেন এবং তাদের সাথে সাবিহউদ্দিন গাউসি এবং আই এ রহমান নামীয় দুজন সাংবাদিক সিন্ধি নেতা জি এম সৈয়দ কবি আহমাদ সালিম, বিমান বাহিনীর সদস্য আনোয়ার পীরজাদা, অধ্যাপক এম আর হাসান, তাহেরা মাজহার এবং ইমতিয়াজ আহমেদকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিলো। মালিক গোলাম জিলানিকেও গ্রেফতার করা হয়েছিলো প্রকাশ্যে বাংলাদেশে সশস্ত্র আক্রমণের বিরোধিতা করায় এবং ইয়াহিয়া খানকে লেখা বহুল প্রচারিত একটি খোলাচিঠির জন্য। তাছাড়াও কারারুদ্ধ করা হয় ডন পত্রিকার সম্পাদক আলতাফ হোসেন গওহরকে। ২০১৩ সালে জিলানি এবং কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে তাদের সহমর্মীতামূলক কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্মননা প্রদাণ করেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পিটার টমসনের মতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগনকে রুখতে পাকিস্তানী সিক্রেট সার্ভিস ( আইএসআই) রাজনৈতিকদল জামাতে ইসলামী এর সাথে মিলিত হয়ে আল বদর (চাঁদ) আল শামস (সূর্য) এর মত মিলিশিয়া আধা সামরিক বাহিনী গঠন করেন। এই সকল বাহিনী নিরস্তদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতো এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের মত যুদ্ধাপরাধে অংশ নিয়েছে। স্থানীয় সহযোগী যারা রাজাকার নামে পরিচিত তারাও এই সকল ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যা এবং ধর্ষণ বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে।

আনুষ্ঠানিক শুমারি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই নয় মাসের হত্যাযজ্ঞ নি:সন্দেহে গণহত্যা। পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত নারকীয় ঘটনা সমূহের মধ্যে ধর্ষন প্রথমেই বিশ্ব মিডিয়ার নজরে আসে এবং স্যালি যে স্কলজের মতে এটাই প্রথম কোন গণহত্যা যা বিশ্বমিডিয়ার নজর কাড়ে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক যুদ্ধকালীন সময়ে পরিচালিত নারী নিগ্রহের ইতিহাস প্রকাশ করেছে।
হত্যাযজ্ঞের মাত্রা দেখে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস গণহত্যা হচ্ছে বলে টেলিগ্রাফ প্রেরণ করেন। এর মধ্যে একটি টেলিগ্রাম ব্লাড টেলিগ্রাম নামে সুপরিচিত। তৎকালী সময়ে USAID এবং USIS এ কর্মরত মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ঢাকার মার্কিন কনস্যুল জেনারেল আর্চার ব্লাড এই টেলিগ্রাম প্রেরণ করেন। এটা গণহত্যা সম্পর্কে আমেরিকানদের মিশ্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।১৯৭২ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য প্রেরণের স্বপক্ষে বলেন আমরা কি বসে বসে তাদের বাংলাদেশের নারীদের ধর্ষিত হতে দেখবো? এই ঘটনা নিয়ে ব্রিটেনের হাউজ অফ কমন্সে বিস্তর আলোচনা হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পার্লামেন্টের ২০০ সদস্যের সমর্থনে জন স্টোনহাউজ একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। তারা তাদের প্রস্তাবনা দুইবার আইন পরিষদে পেশ করলে ব্রিটিশ সরকার আলোচনা করার সময় বের করতে পারেনি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের জন্য আন্তঃর্জাতিক সম্প্রদায় প্রচুর পরিমানে সাহায্য প্রেরণ করেন। মানবিক সহায়তা করা সত্ত্বেও যুদ্ধ শেষে যখন বাংলাদেশ যুদ্ধপরাধের বিচারের প্রস্তাবনা পেশ করেন তখন খুবই কম সমর্থন পাওয়া যায়। আমেরিকার সমালোচকদের বলতে শোনা যায় বৃহৎ আকারের হত্যা বন্ধে ১৯৭১ সালে সেনা অভিযান সঠিক ছিলো। যুদ্ধ ধর্ষণ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া যায়। বীরাঙ্গনাদের গর্ভে যেসব যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয় তাদের অনেককেই আন্তঃর্জাতিক বিশ্ব দত্তক হিসেবে গ্রহন করেন। সুসান ব্রাউনমিলারের মতানুসারে যুদ্ধকালীন সময় গণধর্ষণ কোন নতুন বিষয় নয়। তিনি অভিমত দেন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য বিষয়টি ছিল এটাই যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পারে যে মানুষকে সন্ত্রাসিত করতে নিয়মানুগ ধর্ষণ একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।


যুদ্ধ সমাপ্তের পর পাকিস্তান সরকার ধর্ষণের সংক্রান্ত বিষয়ে নীরবতা অবলম্বনের নীতি গ্রহণ করেন। তারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সার্বিক নৃশংসতা এবং পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ বিষয়ক বিস্তারিত বিবরণের জন্য হামুদুর রহমান কমিশন নামক একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেন। কমিশন সেনাবাহিনীর সম্পর্কে অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল। কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধানদ্বয়কে তাদের পদ থেকে অপসারন করা হয়। কমিশন রাজনীতিবিদ কর্মকর্তা এবং উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত্কারের উপর ভিত্তি করে তার প্রতিবেদন তৈরি করে। ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছিলো কিন্তু পরবর্তীকালে এর সমস্তটিই ধ্বংস করা হয় কেবলমাত্র পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো স্পর্কিতটি ব্যতীত। প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য কখনোই সর্বসাধরণের জন্য প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৭৪ সালে কমিশনটি পুনরায় চালু করা হয়েছিলো এবং তারা একটি সম্পূরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেটি ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হওয়া পূর্ব পর্যন্ত ২৫ বছর ধরে গোপনীয় অবস্থায় থাকে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয় যে ২৬ হাজার মানুষ নিহত এবং শতাধিক ধর্ষিত হয় এবং মুক্তিবাহিনীর বিদ্রোহীরা ব্যাপক ধর্ষণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সাথে জড়িত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমিত গাঙ্গুলী বিশ্বাস করেন যে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের এখনো সুযোগ আছে সংগঠিত নৃশংসতার জন্য বক্তব্য দেওয়ার যেমনটি ২০০২ সালে বাংলাদেশ সফরকালে তৎকালীন পাকিস্তারে রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফ দায় স্বীকার বিহীনভাবে নৃশংসতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×