somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাজের সাহু সেজদায় ১৫ টি সমস্যা ও সমাধান

১৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার নামায/সালাতের ভিতর যদি কোন ওয়াজীব তরক হয়ে যায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই সাহু সিজদা দিতে হবে। যদি না দেন তাহলে আপনার নামায হবে না।

♥ সাহু সিজদা দেয়ার নিয়ম : শেষ রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে ২ টি সিজদা দিতে হবে। সকল ২ সিজদার মাঝখানে অবশ্যই ১ তাসবীহ পরিমান সোজা হয়ে বসতে হবে। তারপর যথারীতি আবার আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামায শেষ করতে হবে। তবে নামাযে যদি কোন ফরয তরক হয়ে যায় তাহলে সাহু সিজদা দিয়ে কোন লাভ হবে না। আবার নতুন করে নামায পড়তে হবে।

>> আমি এখানে সহজ ভাবে নামাযে কখন সাহু সিজদা দিতে হবে আর কখন দিতে হবে না এই মাসলা- মাসায়েল গুলি নিয়ে আলোচনা করবো। ( সাহু সিজদার এই মাসায়েল, ছেলে মেয়ে উভয়ের নামাযের ক্ষেত্রেই সমান।)

>> আপনি যদি জামাতে নামায পড়েন তাহলে ইমাম সাহেব যদি সাহু সিজদা দেন তবে আপনিও দিবেন। আর যদি আপনি জামায়াতে দেরি করে, মানে ১ বা ২ বা ৩ রাকাত পরে উপস্থিত হন আর যদি ইমামের সালাম ফিরানোর পর আপনার নিজে পড়ার রাকাতে কোন ওয়াজীব তরক হয়ে যায় তাহলে আপনি সাহু সিজদা দিবেন। নিচে আরো কিছু ক্ষেত্র দেয়া হলো:----------

>> ১. ফরজ নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া ওয়াজীব। যদি আপনি ফরজ নামাযের প্রথম রাকাত বা ২য় রাকাত বা উভয় রাকাতেই সুরা ফাতেহা ভুল বশত না পড়েন তাইলে আপনাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। আবার ফরজ নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া সুন্নত। তবে যদি কোন ফরজ নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহার পর অন্য সুরাহ পড়েন বা না পড়েন, আপনাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

>> ২. ফরজ নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সুরা মিলানো ওয়াজীব। যদি আপনি ভুল বশত ফরজ নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোন সূরা না পড়েন তাহলে আপনাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।

আবার ফরজ নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোন সুরা পড়ার নিয়ম নেই। তবে আপনি ভুল বশত ফরজ নামাযের ৩য়/৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য কোন সুরা পড়ে ফেললেও সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না,যা আগেই বলা হয়েছে।

>> ৩. সুন্নত ও নফল সব নামাযেই সকল রাকাতেই সুরা ফাতেহা পড়া ও সুরা ফাতেহা পড়ার পর অন্য একটি সুরা মিলানো ওয়াজীব।আপনি যদি যে কোন সুন্নত/নফল নামাযের যে কোন রাকাতে সুরা ফাতেহা বা সুরা ফাতেহার পর অন্য একটি সুরা না পড়েন তাহলে আপনার একটি ওয়াজীব তরক হলো, এতে আপনাকে অবশ্যই সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।

>> ৪. ভুল করে যে কোন রাকাতে ২ রুকু বা ৩ সিজদা দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। এক আয়াত ২ বার পড়লে দিতে হবেনা। কিন্তু ফাতিহার পর কম পক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।

>> ৫. সুরা ফাতেহা পড়ার পর এখন কি সুরা পড়বো এই চিন্তায় যদি ৩ তসবীহ পরিমান সময় চলে যায় তাইলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। অথবা কোন সুরার কোন আয়াত ভুলে গেছেন ঐ আয়াত কে স্মরন করার জন্য যদি ৩ তসবীহ পরিমান সময় চলে যায় তাইলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। তবে অই সুরাহ বাদ দিয়ে অন্য সুরা শুরু করলে সাহু দিতে হবে না।

>> ৬. ফরয ও সুন্নত নামাযের ১ম বৈঠকে যদি ভুলে ২ বার আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেলেন -সাথে দরুদপাঠ দোয়া মাসুরা পড়েন তাহলে ও সিজদায়ে সাহু দিতে হবেনা, ১ম বার উচ্চারণ ভুল হওয়ায় আবার ইচ্ছা করেও ২য় বার পড়লেও সাহু সেজদা দিতে হবে না।

>> আবার ফরয ও সুন্নত নামাযের ২য় রাকাতের ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর যদি দুরুদ শরীফের আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ পর্যন্ত পড়ে ফেলেন তাইলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। তবে এরচেয়ে কম পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

>> ৬ (ক). যেকোন বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় যদি ভুলে সুরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। তবে নিয়ত বাধার সময় ছানার বদলে ভুলে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

>> ৭. তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে ২য় রাকাতের প্রথম বৈঠক ভুলে গেছেন এবং ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন, যদি অর্ধেকের কম দাঁড়িয়ে থাকেন তাইলে বসে পড়বেন এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য দাড়াবেন। এই অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না, কোমর সোজা হলেই তবে সাহু দিতে হবে।

>> ৮. যোহর ও এশার ৪র্থ রাকাতে বসতে মনে নাই। একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ৫ম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন। তাও মনে হবার সাথে সাথে বসে পড়বেন। আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরাবেন। এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে ।আর যদি ৫ম রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ে ফেলেন এবং রুকুও করে ফেলেন তাহলেও বসে পড়বেন। এই অবস্থায় সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।
আর যদি রুকু করার পরও মনে না হয় যে ভুল হচ্ছে, তাহলে আরো ২ রাকাত পড়ে মোট ৬ রাকাত পড়বেন। এক্ষেত্রে শেষ ২ রাকাত নফল ও প্রথম ৪ রাকাত ফরয হিসাবে আদায় হবে।

>> ৯. নামায ৩ রাকাত পড়েছেন না ৪ রাকাত পড়েছেন এই রকম সন্দেহ যদি কখনোও হয়ে থাকে তাহলে কম টা ধরে নিয়ে বাকি টা পড়তে হবে, যেমন ২ নাকি ৩ সন্দেহে ২ ধরতে হবে।

>> ১০. নামায শেষ হওয়ার পর সালাম ফিরানোর পর যদি নামায ৩ রাকাত পড়েছেন না ৪ রাকাত পড়েছেন এই রকম সন্দেহ যদি হয়ে থাকে তাহলেও কম টা ধরে নিয়ে বাকিটা (মসজিদ থেকে বাড়ি আসলেও) পড়ে সাহু সেজদা দিলে হয়ে যাবে।।আর যদি স্পষ্ট ভাবে মনে পড়ে যে নামায ৩ রাকাত পড়েছেন এবং আপনি কিবলামুখি হয়ে বসে আছেন এবং কারো সাথে কথা বলেন নি তাহলে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেয়ে আরেক রাকাত পড়ে সিজদায়ে সাহু করে সালাম ফিরাবেন। তবে কারো সাথে কথা বলে ফেললে /, নামাজ বা অজু কারণ দেখা দিলে নামায পুনরায় পড়তে হবে।

>> ♦ ১১. একই নামাযে সিজদায়ে সাহু করার একাধিক কারন পাওয়া গেলেও একটি সিজদায়ে সাহু করলেই হবে।

>> ১২. বিতর নামাযে দোয়া কুনুত না পড়েই রুকুতে চলে গেছেন সাহু সেজদা দিতে হবে, আর দোয়া কুনুতের জায়গায় অন্য দোয়া, দরুদ পড়ে ফেলেছেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবেনা, এটা মুলত এমন যেখানে আপনার নিজের, পরিবারের, দেশের জন্য দোয়া করতে পারেন, কুনুত ই মুল কথা নয়।

>> আর যদি দোয়া কুনুতের জায়গায় অন্য কিছু পড়ে ফেলেছেন কিন্তু মনে হবার সাথে সাথে দোয়া কুনুতও পড়েছেন তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। অনেক কিছু পড়তে পারেন এখানে।

>> ১৩. চার রাকাত বিশিষ্ট কোন নামাজে ২য় রাকাতে বসে তাশাহহুদের পর দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে ফেলেছেন, সমস্যা নেই - দাঁড়িয়ে পড়ে বাকি রাকাত পড়ে সাহু সেজদা দিবেন। উল্লেখ্য, ১ দিক বা ২ দিকেই সালাম ফিরিয়ে ফেললে ও দাঁড়িয়ে বাকি নামাজ পড়ে সাহু সেজদা দিলে হয়ে যাবে।

>> ১৪. রুকুতে সেজদার, সেজদাতে রুকুর তাসবীহ পড়ে ফেললে ও সমস্যা নেই। এটা আমরা একমাত্র তাসবীহ মনে করি যা ভুল। সেজদা ও রুকুতে তাসবীহ মুলক ১০-১২ রকম তাসবীহ পড়া যায়।

>> ১৫. রুকু থেকে সোজা না দাঁড়িয়ে অথবা (রব্বানা লাকা আল হামদ) পুরো না পড়েই সেজদায় গেলে সাহু সেজদা দিতে হবে ।
আবার ২ সেজদায় পুরো তাসবীহ ৩ বার না পড়ে মাথা উঠালে অথবা ২ সেজদার মাঝখানে ৩ তাসবীহ পরিমান না বসলে ----সাহু সেজদা দিতে হবে।

♥ আসুন আমরা সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করি। এই ১৫ বাদে কোন ভুল বা সমস্যা দেখলে বা প্রশ্ন থাকলে দয়া করে কমেন্ট করবেন। আমি চেষ্টা করবো ভালো মুফতি দের কাছ থেকে জেনে সঠিক জানাতে ইনশাআল্লাহ। >>আর হা, অনেক এন্ড্রয়েড এপ্স বা ঢাকা আরিচার বাসে, ছোট দোকানে যে নামাজ শিক্ষার বই আছে তাতে প্রচুর ভুল আছে। তাই বই কিনলে ভালো লেখকের বই কিনবেন, আলেম দের পরামর্শ নিবেন.
ছোট ভুলে নামাজ বাতিল করবেন না। জাযাকাল্লাহ আল খাইর!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:০২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×