somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝামেলামানুষ-২; ভ্যলেরি টেইলর, আপনাকে

২১ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা চায়ে চুমুক দিয়েই বলে, ঠান্ডা হয়ে গেছে। আবার বানিয়ে দাও। সত্যিই ঠান্ডা। আমি চুপচাপ আরেক কাপ নিয়ে আসি। বলতে ইচ্ছে করে, চা সামনে রেখে একঘন্টা বসে থাকলে এমনি তো হবে।

মেয়েটাকে আমি অপছন্দ করি খুব। এতো কথা বলে। বিরক্ত করে সারাক্ষন। কিংবা আমিই বিরক্ত হয়ে যাই খুব তাড়াতাড়ি। মাঝে মাঝে চেষ্টা করি। বিরক্তি কমে না।

পোস্টার দেখেই তার বিকরিত হাসি টা দিল। আমিও কি মেলায় যাবো? তাকে নিয়ে যেতে হবে আমাকেই। বিরক্তি যথাসম্ভব কমিয়ে বললাম, যাবে। খুশিতেই বোধহয় পায়ে জোর এসে গেলো তার। পা টাকে টেনে টেনে গেলো আরেকজনের কাছে। ঘরের ভেতর হুইল চেয়ার ছাড়াও হাটতে পারে সে। কাকে যেন বলছে, ভাই বলেছে আমাকে কাল মেলায় নিয়ে যাবে। আমি কখনো মেলায় যাইনি। কেউ নিতে চায়না।

পরের দিন আমার মেজাজ খারাপ খুব। ছুটিতে যাবার আগে শেষ দিন। কত কাজ রয়ে গেছে জমা। ঘুম থেকে উঠেই তার দাবি, চুল বেধে দাও। ঠান্ডা চোখে একবার তাকাতেই চলে গেলো চুপচাপ। একটু পরে আবার এসে বললো তুমি মেলায় যাবে না? হাসি পেয়ে গেলো এবার। বেচারী ভয়ে জিগ্গেস করতে পারছেনা সে নিজে সত্যি মেলায় যাচ্ছে কি না।

দুপুর থেকে ব্রিষ্টি ভীষন। আমার ভালোই লাগছে। গরম কমে গেছে অনেক। আজেবাজে মেলায় যেতে হবেনা।

সে আবার এলো আমার কাছে। তুমি মেলায় যাবেনা? আমি বললাম, দেখি। তাকে কেউ বলেনি কখন যাওয়া হবে। তবু বাইরে যাবার কাপড় পরা। কে যেন লিপস্টিক ও লাগিয়ে দিয়েছে একটু। সে বসলো একটু দুরে। আমি যথারীতি বিরক্ত। কাজের সময় অহেতুক কথা একদম পছন্দ করি না আমি

হঠাত খেয়াল করি যেখানে যাই, সে আসছে সাথে সাথে। এক ফাকে বোনকেও ফোন করে একবার;আমি না মেলায় যাচ্ছি। এমনকি অফিস রুমেও। তুমুল বিরক্ত নিয়ে বলি, কিছু চাই তোমার? সে বলে আবারো, তুমি মেলায় যাবে না? আমি একটু চিন্তায় পড়ে যাই। ব্রিষ্টি কমে যায় যদি। সে আমার সামনে একটা সোফায় বসে থাকে। চোখের আড়াল করে না। যদি তাকে ফেলে মেলায় চলে যাই।

সে বসে বসে ঝিমায়। আমি নিশ্চিত হই। ব্রিষ্টি কমেছে। তবু এ অবস্থায় মেলায় যাওয়া সম্ভব না। মাঝে মাঝে শুধু সে চোখ খুলে দেখে, আমি আছি কি না। একা একা মেলায় চলে গেছি কি না।

বিকেলে হই চই করে আসে সবাই। তাদের কারো হুইল চেয়ার নেই। অনেক ভালো হাটে তারা। কোন বাধা নেই তাই মেলায় যেতে। সবাই কে নিষেধ করে দেই তাকে কিছু না বলতে। চলে যায় সবাই। সে হয়তো বোঝে কিছুএকটা। আস্তে আস্তে এসে বলে, তুমি মেলায় যাবেনা? আমি আবার বলি, দেখি। পা টেনে টেনে চলে যায়। ঘুমিয়েই পড়ে ঝিমাতে ঝিমাতে। লালা গড়িয়ে পড়ে তার হা করা মুখ দিয়ে ।


প্রিয় ভ্যালেরি, এটা গল্প নয়। সত্যি। আমি এমন করেছিলাম। আমি সত্যি এমনি করি। আচ্ছা, আপনি হলে কী করতেন?

আপনি তো অনেক পেশাদার ভ্যালেরি। এরকম ব্রিষ্টি ভেজা কাদা মাখা রাস্তায় হুইল চেয়ার টানা যে কি পরিমান কষ্ট, কি পরিমান বিপদজনক, জানেন আপনি।
তবু কী আপনি করতেন না কিছু?

আপনি হয়তো একটা গাড়ী জোগাড় করতেন। ঘুরিয়ে আনতেন তাকে মেলার আশেপাশে অথবা অন্য কোথাও। অথবা টুকটাক গল্প করতেন তার সাথে। সে হেসে ফেলতো আপনার কোন একটা কথায়। ভুলে যেতো মেলায় যেতে না পারার দুঃখ। অথবা কোন কিছু করতে না পারলে আপনি তাকে বুঝিয়ে বলতেন সমস্যাটা। বোকা তো না সে। ঠিক বুঝতো। আমিও পারতাম। করিনি। আপনি করতেন।

আচ্ছা ভ্যালেরি, এতোদিনের একটা কাজ থেকে আপনাকে সরিয়ে দিতে চাইছে কেন ওরা? আপনি কি প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা নিজের একাউন্টে ভরে নিয়েছেন? কী করেছেন এত টাকা দিয়ে? বিদেশে, নিজের দেশে কোন সম্পদ নেই কেন আপনার? হ্য়তো আছে। আমরা জানিনা। আমি আপনার জায়গায় হলে কবেই ফিরে যেতাম দেশে। বসে বসে খেতাম। কেন পরে থাকতাম এই কাদা মাখা দেশে কতগুলো খোড়া মানুষের মাঝে?

আপনাকে দুর থেকে দেখেছিলাম একবার। চিনতাম না তখন আপনি কে। শুধু ফরসা রমনী দেখবো বলে দেখেছিলাম। মাইক হাতে নিয়ে বলেছিলেন, আমি খুব দুঃখীত; এতোদিন বাংলাদেশে থেকেও বাংলা শিখতে পারিনি।
এটা আপনার বড় অপরাধ হতে পারে। ওরা একবার বললে আমিই আপনাকে বের করার ব্যবস্থা করতাম।

আচ্ছা চ্যারিটি তো অনেক আছে। আপনার সাংগঠনিক ক্ষমতা ভালো। পশুর মতো খাটতে পারেন। চাইলে কি একটা ভালো কাজ আপনি পেতেন না? ভালো পদবী, ভালো বেতন। ভাগ্য ভালো হলে একটা নোবেল প্রাইজ।
কী লাভ হলো কিছু গরীব চাষাভুষোর সেবা করে?

একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি ভ্যালেরি। আপনি কি বিয়ে করেছেন?
কে পাগল আছে এমন বিয়ে করবে আপনাকে?
দেখতে তেমন সুন্দর নন। যখন ছিলেন তখন তো বোকার মতো চলে এসেছিলেন এই দেশে। ভেতর - বাইরের সমস্ত সুন্দর ছড়িয়ে দিয়েছেন কিছু হাত পা ছেড়া মানুষর জন্য।
শুন্য থেকে বিশাল কিছু শুরু করার বোকাটে মেয়ে তেমন ছেলে পাবেই কোথায় একটা? তবু যদি বিয়ে করেই থাকেন আপনি। ঐ লোকের জন্য আমার রীতিমতো কষ্ট হ্য়। কতটুকু সময় আপনি রাখেন নিজের অথবা পরিবারের জন্য?

আচ্ছা ভ্যালেরি,সি আর পি ছাড়লে কোথায় যাবেন আপনি? বয়স হয়ে গেছে,তবু কোথাও ভালো একটা চাকরী নিশ্চয়ই পাবেন (আমাদের এখানে জয়েন করবেন? আমরা লোক খুজছি) কিন্তু পারবেন কি করতে?
আরে ২৫ বছর থাকলে কয়েদিরও জেলখানার প্রতি মায়া জন্মে যায়। আর আপনি গেলে যাবেন তো সারা জীবনের সন্চয় ছেড়ে। আপনার সন্তানদের ছেড়ে। কী করে থাকবেন আপনি?

বংলাদেশ বা অন্য কোথাও কটা লোক যেচেপড়ে সাহায্যকরেছে আপনাকে? আপনিই তো ভিখারির মতো নতজানু হয়ে ভিক্ষা চেয়েছেন কিছু ভিখারির জন্য।

তবু আপনার ভাগ্য ভালো ভ্যালেরি। আপনার গায়ের রং সাদা। আমাদের মতো বাদামী হলে এতোদিনে আপনার রিমান্ড হয়ে যেতো। কিংবা আপনি হতেন আরেকজন চলেশ রিশিল।

ভ্যালেরি, আমি আমার সরকার, সরকারের প্রতিটা লোক এবং প্রতিটা বাঙালিকে প্রচন্ড বিশ্বাস করি। তারা যদি বলে ২৮ বছর পর আপনি কোন পদের যোগ্য নন। আপনি নন।
তারা যদি বলে আপনি যাবেন। আপনি যাবেন।
তারা যদি বলে আপনি খারাপ। আপনি খারাপ।

ভ্যালেরি টেইলর, আপনার চলে যাওয়াই উচিত।



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৪২
৯৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×