লেখাটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আত্তসম্মানবোধ!!!' -লেখাটির উত্তরে লেখা।
কিংকর্তব্যবিমুঢ়,
আপনার প্রথম যুক্তিগুলো অসাধারণ। আমিও হলে থাকা মানুষ, ঢাবির সূর্যসেন হলে কাটিয়েছি প্রায় ৭ বছর। রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। আন্দোলন করেছি, দাবি আদায় করেছি। নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন (২৩, জুলাই, ২০০২) -এর সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এত কথা বলার কারন একটাই আপনি যেন আমার বক্তব্যটা আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেন। এবার বক্তব্যে আসি। নির্যাতন বিরোধী আন্দোনলের শুরুটাও ছিলো পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে, আর তাদের মদদ দানের কারনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ যেহেতু চালায় সরকার আর প্রশাসনও সরকারের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়, সুতরাং এ আন্দোলন চলে গিয়েছিলো সরকারের বিরুদ্ধে। তখন সরকারের ছাত্র সংগঠন এ আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার নানা চেষ্টা করেছে। আন্দোলন শুরুর প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের নানা হুমকী তারা দিয়ে এসেছে। কিন্তু এ হুমকী ছাত্ররা অগ্রাহ্য করেই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে এসেছে। যেদিন হল খালি করে দেওয়ার ঘোষণা এল, আমরা সবাই একসাথে প্রতিবাদ করেছিলাম। 'আমরা হল ছাড়বো না' স্লোগাণ নিয়ে আমরা বেরিয়েছিলাম রাস্তায়। আমার খুব মনে আছে, সেদিনও হলের গেট বন্ধ করে আমাদের আটকাতে চেয়েছিলো সরকার দলীয় ছাত্রনেতারা। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা সেদিন তাদের গালাগালি করে গেটের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে গেট খুলে বেরিয়ে এসেছিলো রাস্তায়। আমার আজও মনে পড়ে সেদিন দেখা সাধারণ ছাত্রদের প্রতিবাদীমুখ।
আমি খুব ভালো করে জানি, সাধারণ ছাত্ররা প্রতিদিন সরকারের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নির্যাতনের স্বীকার হয়। তখনও হতো। তাই আমরা আন্দোলনটার নাম দিয়েছিলাম 'নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন'। চেয়েছিলাম সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়াতে।
অনেক কথা বলে ফেললাম, অপ্রয়োজনীয় অনেক কথাসহ। ঢাবির এই আন্দোলন নিয়ে অনেকেই একটা কথা বারবার বলছিলো, আচ্ছা এত ছোট একটা ঘটনা এত বড় আকার ধারণ করলো কিভাবে। কিংকর্তব্যবিমুঢ়, আপনি আন্দোলনটা অনেক কাছে থেকে দেখেছেন। আপনি জানেন ঘটনা অনেক ছোট। কিন্তু এর বহিপ্রকাশ এত বড় হওয়ার কারন দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ। নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনেও তাই ঘটেছিলো। তখন শুধু পুলিশি নির্যাতন না, সরকার দলীয় ছাত্রদের নির্যাতনের বিরুদ্ধেও দাবী তোলা হয়েছিলো সেদিন। কিন্তু তখনও একটা মাত্র দাবী মেনে নিয়ে আমাদের বিদায় করা হয়েছিলো। পুলিশি আক্রমনে আহত, অনশনে ক্লান্ত ছাত্র ছাত্রীরা খানিকটা বিশ্রামের আশায় বাড়ি ফিরেছিলো। আর তারপর শুরু হয়েছিলো ধর-পাকরাও। এই কারফিউর মতই ক্যাম্পাস বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো অনেকদিন। আমরা যখন ৬ মাস পর ফিরে এলাম ক্যাম্পাসে ততদিনে ছাত্ররা সেশনজটের টেনশনে আছে। নতুন করে নির্যাতন বিরোধি আন্দোলনে জন্য তারা প্রস্তুত না। বরং আন্দোলনের কথা শুনলে ভয় পায়। আর সে কারনেই আর এ আন্দোলন দাঁড়ায় নি , বরং ২৩ জুলাই একটা দিবস পালনের মাঝেই পরে সীমাবদ্ধ হয়েগেছে এখন। কিন্তু আন্দোলনের সাথে সরাসরি ছিলাম বলেই নিশ্চিত বলতে পারি, নিজেদের দেনা পাওনার হিসাব মেটানোর জন্য এ আন্দোলনকে ব্যবহার করা হয়নি।
হ্যাঁ, আমি বলবো, ক্যাম্পাসে অধিকাংশ ছাত্ররা কোন মতে শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরীর আশায় পড়তে আসে। এটা তাদের কাপুরুষতা বলবো না। যেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দ্রুত বের হয়ে চাররীতে জয়েন করছে, সেখানে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও তাই করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই মফস্বল থেকে আসা হলে থাকা ছাত্ররা টিভি রুমে জুনিয়র ছাত্রের হাতে মার খেয়েও চুপ করে থাকে। কিন্তু যখন একসাথে কোন ঘটনায় ফুঁসে ওঠে সবাই, তখন হঠাৎ আবিস্কার করে তারা, হ্যাঁ, আমিওতো বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে চাই। যেদিন রাতে হল খালি করার ঘোষনা দিলো আমার রুম থেকে সেদিন মিছিল শুরু করেছিলাম আমরা ৫ জন। যখন আমরা মিছিল নিয়ে নিচে পৌঁছেছিলাম তখন পেছনে কমপক্ষে ৫০০ ছাত্র ছিলো।
আমি ঢাবির এ আন্দোলনকে আবার মরে যেতে দেখলাম। আমি জানি যাদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে আপনারা আন্দোলন করেছেন, তাদের কারও হাতেই আবার আপনার লাঞ্জিত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবু সবাই মিলে করা এ প্রতিবাদকে আমি কখনোই নিছক আত্মসন্মানবোধের কারনে সৃষ্ট বলবো না। এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিপ্রকাশ।
(মন্তব্য হিসাবে লিখতে গিয়ে মনে হলো কথাগুলো আলাদা পোষ্ট হবার দরকার আছে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ১২:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




