somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঃসংগ যুবকের মনোস্তাত্তিক যুদ্ধঃ পর্ব ২

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভোর সাড়ে পাচঁটা। সূর্য্য এখনো ওঠেনি, কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়তো উঠবে। সকালের আজকের সকালটা হবে একটু অন্যরকম। একটু নয় অনেক বেশি অন্যরকম। সে আজ থেকে নিজেকে নতুন করে চিনবে। ব্যাপারটা তাঁর কাছে অনেক বেশি বেখাপ্পা লাগছে। সে বাস্তবে দেখতে যেমন আসলে তাঁর তেমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তাঁর হওয়া উচিত ছিল অন্যরকম। সকাল বিচক্ষন ছেলে। সে মাথা খাটিয়ে যুক্তি ব্যবহার করে চিন্তা করতে চাইছে। কিন্তু হুটকরেই সে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না; ধকল সামলানোটা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ছে তাঁর জন্য। সকাল একবার একবার ভাবছে তাঁর এই সমস্যাটা পুরোপুরি মানসিক। আবার সে নিজের সাথে দ্বিমত পোষন করছে। কারন সে কলম দিয়ে দাগ কেটে বলে দিতে পারছে যে এর পরের অংশটুকু তাঁর নয়, অন্য কারো। যদি ব্যাপারটা পুরোপুরি মানসিক হত তাহলে সকাল কখনোই নিশ্চিতভাবে রেখা টেনে বলে দিতে পারত না যে এর পরের অংশটুকু সে শুধুশুধুই বয়ে বেড়চ্ছে। তাহলে কি ব্যাপারটা মনোদৈহিক? নাকি পুরোটাই দৈহিক?

বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আবারো স্থির হতে চাইছে সে। অদ্ভুদ এক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নতুন একটি সকালকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছে সে। বাসার কেউ এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। সে নিজেকে আরো ভালোভাবে বুঝতে চাইছে। আরো সময় নিতে চাইছে সে। সে কখনোই চায় না কেউ তাঁকে মানসিক বিকারগ্রস্থ ভাবুক। সব চেয়ে বড় কথা কেউ তাঁর সমস্যাটা বুঝবে না। এটা এমনি এক অনুভূতি যা কখনো কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়, এটা সকাল ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছে। তাই সে তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য আট দশটা সকালের মতই হবে আজকের সকালটা, আজকের দিনটা- এমনকি সামনের দিনগুলি। আপাতত সে আর কিছু ভাবতে চাইছে না।

তীব্র একটা মানসিক অশান্তিকে সঙ্গী করে সকাল তাঁর সময়গুলো পার করে দিচ্ছে। তবে তাঁর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে বেশ কিছু। সে এখন আগের মত কারো সাথেই মেশে না, বাসার বাইরে যায় না খুব জরুরী কাজ ছাড়া। বন্ধুবান্ধব আত্নীয়-স্বজন কারো সাথেই মিশতে চায় না সে। কেমন যেনো একটা অস্বস্তি বোধ হয় তাঁর। তবে তাঁর এই অস্বাভাবিক আচরন যাতে কেউ খুব সহজেই বুঝতে না পারে সে ব্যাপারেও সকাল সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখে। সকাল দুর্বল চিত্তের ছেলে নয়, যথেষ্ট কঠিন মনমানসিকতার ছেলে সে। প্রতিরাতে সে বারান্দায় বসে বসে নিজের এই রহস্যজনক নিয়তির কারন অনুসন্ধান করে, কিন্তু কোন উত্তর খুজেঁ পায় না। কখনো কখনো বারান্দায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে- চাঁদের দিকে প্রশ্ন বান ছুড়ে দিতে দিতে। কখনো ঘুমুবার আগে এমনটা ভাবে- যদি এমন হয় ঘুম ভেঙ্গে দেখি সব আগের মত ঠিকঠাক। এমনটা সে কতবার ভেবেছে তা সে নিজেও জানেনা।

কেটে যাচ্ছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। সকাল তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে নিজে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে। সে যে এখনো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেনি এটা ভেবে সে নিজেই হতবাক হয়। তবে তার মধ্যে ইদানিং একটু বেশি আক্রমনাত্নক ভাব চলে এসেছে এটা সে বুঝতে পারছে। বাড়তি যে অঙ্গটা সে বয়ে বেড়াচ্ছে সেটার প্রতি তাঁর বিন্দু মাত্র মায়া নেই; বরঞ্চ রয়েছে আক্রমনাত্নক মনোভাব। সে পারলে নিজেই কেটে সেটাকে আলাদা করে ফেলে দেয় বারান্দার গ্রীলের মাঝখান দিয়ে। কলম দিয়ে খুচিয়ে, ধারালো জিনিস দিয়ে আঘাত করাটা এখন তাঁর কাছে নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাটা এখন তাঁর সময়ের ব্যাপার মাত্র, বুঝতে পারছে সে। কিছু একটা করাটা খুব বেশি জরুরী।

সকাল সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর ডক্টর আঙ্কেলকে ব্যাপারটা খুলে বলবে এই শর্তে যে সে কারো সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করবে না, ব্যাপারটা তাদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ডক্টর নেয়ামত আলী সকালদের পারিবারিক ডাক্তার। সকালের বাবার সাথে বেশ ভালোই ওঠাবসা তাঁর। প্রায়ই তিনি আসেন সকালদের বাসায়। সকাল ঠিক করে সে কালই যাবে ডক্টর আঙ্কেলের চেম্বারে। প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে সে।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×