somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হলুদ হিমুর সাথে কিছুক্ষন

১১ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলুদ হিমুর সাথে কিছুক্ষন

লেখকঃ জন রাসেল

লেখকের কথাঃ

হ্যালো আমি জন রাসেল। লেখালেখি আমার প্রিয় হবির অন্যতম। লেখালেখির জগতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে হূমায়ুন আহমেদ। কারণ আমার কাছে তাকেই একমাত্র লেখক মনে হয়েছে যিনি সহজের মধ্যে কঠিনকে তুলে ধরতে পারেন নিজের মত করে। দার্শনিকতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন স্বাভাবিকতার মাঝে। আমি জানি আপনারা অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন না। যাই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তার হিমু চরিত্রটি দ্বারা আমি বিশেষভাবে আকর্ষিত। আমার এই লেখাটিও মূলত সেই হিমুকে নিয়েই। এই হিমু ঠিক হূমায়ুন আহমেদের হিমু নয়, এটা আমার হিমু যে হিমু কিনা হূমায়ুন আহমেদের হিমু থেকেই বের হয়ে এসেছে। পাঠকদের কাছে আমার অনুরোধ এই লেখাটিকে কেউ হূমায়ুন আহমেদের লেখার সাথে তুলনা করবেন না। এখানে অনেকগুলো বিষয় অযৌক্তিক মনে হতে পারে কিংবা মনে হতে পারে গোজামিল দেয়া। এসব এখানে থাকবেই কারণ এটা কোন বিখ্যাত লেখকের লেখা নয় আর এই লেখার কোন উদ্দেশ্যও নেই । শুধু ইচ্ছে করল বলেই লিখলাম। এখানে হিমুর অন্তরালে নিজের কিছু অনুভূতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

যদি আপনাদের ভালো লেগেই যায় তবে সেটা হবে আমার সৌভাগ্য। ধন্যবাদ।

জন রাসেল

আমার আকাশে আজ জোছনা অনাবিল,
তোমার আকাশে তারা করে ঝিলমিল,
টপকে যাবো আজ সকল পাচিল,
হয়ে যাবো সাগরের বুকে উড়ে চলা দিকভ্রান্ত গাঙচিল ।


দূর আকাশের মেঘের পাড়ে,
উঠেছে ভয়াল গুঞ্জন,
বিভোর আমি আপন আধারে,
হয়তো এরই নাম মৃত্যুক্ষণ ।






এক

আচ্ছা মানুষ সব সময় নিজের ইচ্ছাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে কেন ? এটা মনে হয় মানব জাতির একটা রোগ । আর যদি তা নাই হবে তাহলে চায়ের দোকানের ওই ঘাটের মরা লোকটা এত রেগে গেল কেন ? ব্যাপারটা এরকম ঃ

আমি মানে হিমু , রজব আলীর চায়ের দোকানে বসে ছিলাম । আমার পাশে এক ঘাটের মরা বসে ছিল (ঘাটের মরা বাগধারাটার মানে আশা করছি জানেন)। ভুশন্ডির কাক বাগধারাটার মানে যাদের জানা আছে তাদের সুবিধার জন্য বলছি, ঘাটের মরা আর ভুশন্ডির কাক একই মিনিং বহন করে । মরা বাবার আচরনও অনেকটা মরার মতই,তেমন নড়েচড়ে না । এই মরা বাবা হটাৎ করেই বললেন,বাবা আপনের নাম কি ?
আমি বললাম ঃ আমি হইলদা হিমু । আঞ্চলিক ভাষায় হিমলু ।
বুড়া বলল ঃ বাবা আমি কানা সগীর ।
আমি বললাম ঃ আপনি কাইন্ডলি একটু চশমাটা খুলবেন, চোখটা দেখব ।
বুড়া বলল ঃ বাবা,আমার চোখ ঠিকই আছে । আমারে লোকে কানা সগীর বলে কারণ আমি মানুষের চোখ তুইল্যা ফালাই ।
আমি বললাম ঃ তাই নাকি ? দারুন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে , তা কিভাবে তুলেন ? যন্ত্রপাতি দিয়ে না খালি হাতেই ?
বুড়া বলল ঃ হাত দিয়াই তুলি । এইটা আমার শখ ।
আমি অবাক হবার ভান করে বললাম ঃ দারুন শখ তো ?
বুড়া এইবার কানে কানে বলল ঃ বাবা,আমার একটা শখ আছে । আমি এক হাজার জনের চোখ তুলতে চাই । এই পুযন্ত মাত্র বিশটা তুলছি ।
আমি বললাম ঃ চালিয়ে যান, মানুষ পারেনা এমন কিছুই নেই ।
বুড়া চোখে কৌ্তুহল নিয়ে বলল,বাবা আপনের শখ কোনটা ?
আমি বললাম ঃ আমার শখ আপনার শখের বিপরীত , মানে চোখ না তোলা ।
এটা শোনার পরই কোনো অজ্ঞাত কারনে বুড়া রেগে গেল । তারপর বলল ঃ না না , আপনের শখও চোখ তোলা হইতে হইব , নাইলে আপনের চোখ আমি অহনই তুলুম ।

আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই রজব আলীর হুংকার শোনা গেল ।
বুড়ায় কয় কি ! হিমুভাইয়ের চোখ তুলবো ! খারা , তরে চোখ তোলা আমি শিখামু । এই বলে, রজব আলী মরাবাবাকে লাথি দিয়ে দোকান থেকে বের করে দিলো ।
এই হলো ঘটনা । এই ঘটনা নিয়েই আমি ভাবিত মানে চিন্তিত ।


সমস্যা আরও আছে । রুপার এক বান্ধবী রুপার কাছ থেকে আমার অ্যাবনরমাল চরিত্রের কথা জেনে আমার প্রেমে পড়ে গেছে । সে নাকি আমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, দিন তারিখ ফিক্সড । অথচ এই খবর আমি কালকে রুপার মাধ্যমে পেলাম ।

রুপাকে বললাম , বিয়েতে আমার মত নেই ।
রুপা বলল ঃ তোমার মত থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি !
আমি মারাত্নক ভুল করে ফেলেছি এমন ভঙ্গিতে বললাম ঃ তাই তো , আমার আবার মত কিসের ? কিন্তু,আমি তো কাজ কিছুই করি না,বউকে খাওয়াব কি ?
রুপা বলল,তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না ।
আমি লজ্জিত ভঙ্গিতে বললাম,সরি ভুল হয়ে গেছে,আর ভাববো না ।

এরপর থেকে ওই মেয়ে রুপার কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে সারা রাত আমাকে ফোন করে জ্বালায় । যেমন কালকে রাত্রের আলোচনা ছিল এরকম ঃ

হ্যালো কে হিমু ?

আমি বললাম ঃ না,আমি হিমালয় । আঞ্চলিক ভাষায় হিমলু ।

জ্বী , আপনাকেই চাচ্ছিলাম ।

এখন তো পেয়েছেন , যা বলার তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন । আমার কিছু কাজ আছে ।

হিমু , আপনি কি জানেন আমি আপনাকে কত বেশি ভালোবাসি ?

আমি বললাম ঃ না জানি না , আর জানার কোনো প্রয়োজনও দেখছি না । ফালতু কথা যত কম জানা যায় ততই ভাল । এতে মস্তিস্কের ফ্রি স্পেস সেইভ হয় ।

ছি ! ছি ! আপনি এতটা নিষ্ঠুর । অথচ,যেদিন আপনাকে আমি প্রথম দেখি সেদিন থেকেই আমি আপনাকে চাইতে শুরু করেছি ।

আমি বললাম ঃ আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন , আমার সাথে এখনও আপনার দেখা হয় নি ।

তারপর লজ্জা পেয়ে মেয়েটি লাইন কেটে দিয়েছিল । মজার ব্যাপার হল মেয়েটির নাম আমি এখনও জানি না ।


মেসে ফিরে যাওয়া উচিৎ । আমি মেসে ফিরে এসেই শুয়ে পরলাম । সাথে সাথে ঘুম । যাকে বলে একদম ধুমঘুম । আমি মেয়েটিকে নিয়ে কিছু ভাবার আগেই আমার মৃত বাবা পাশে এসে দাড়ালেন ,আমার বিরক্তির সীমা রইল না ।

তিনি বললেন ঃ বাবা,হিমালয় কেমন আছ ?

আমি বললাম ঃ ভাল আছি । আচ্ছা বাবা, আপনি কেন আসেন বারবার ?

তিনি বললেন ঃ তুমি মেয়ে বিষয়ক কোন ব্যাপারে জড়িয়ে পরলে আমাকে আসতেই
হয় । তুমি কি মনে কর ওই মেয়েটি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালবাসে ?

আমি বললাম ঃ না বাবা , আমি কিছু মনে করি না ।

তিনি এবার আমার দিকে তাকালেন সরাসরি । তারপর বললেন,মানুষের জীবনে এমন একটা বয়স আসে যখন মানুষ একজন সঙ্গীর জন্য পাগল হয়ে যায় । ওই মেয়েটি এখন সেই বয়সের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে । সে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তোমাকে,তাই সে তোমাকে ভালবাসে । তোমার জায়গায় অন্যকেউ হলে তাকেও সে ভালবাসত । সে তার নিজের চাহিদা থেকে তোমাকে চায়,মন থেকে নয় । এটাকে কি তুমি সত্যিকার ভালবাসা বলবে ? এটা তো আসলে ফিজিক্যাল ডিমান্ড । আর পৃথিবীতে একমাত্র নিখাদ ভালবাসা হল, শিশুর ভালবাসা । একটা শিশু যখন আবেগে দৌড়ে এসে তোমার কোলে উঠবে , তখন সে মুখে কিছু না বললেও তার চেহারায় ফুটে উঠবে আন্তরিকতা , যে আন্তরিকতায় কোনো উদ্দেশ্য জড়িত নেই । এবার বুঝলে ?

আমি বললাম ঃ বাবা, আপনি চলে যান ।
আচ্ছা যাচ্ছি , বলে তিনি চলে গেলেন তবে আমি আর ঘুমাতে পারলাম না ।


দুই


রাস্তায় হাটছি । কেন জানি মনে হচ্ছে পুলিসের হাতে ধরা খাব । আর,আমার সুপার ন্যাচারাল পাওয়ারের কথা তো জানেনই, যা ভাবি তাই সত্যি হয়ে যায়,অবশ্য শতকরা ২০ ভাগ ক্ষেত্রেই হয় । তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রাখা উচিৎ । আমি রুপাকে ফোন করলাম ।

হ্যালো , রুপা ?

রুপা বললো , হ্যা হিমু বল ।

আমি বললাম একটু পরে থানা থেকে আমি একটা মিস কল দেব তখন তুমি থানার অসিকে ফোন করে একটু থ্রেট দিয়ে দেবে , ঠিক আছে ?

রুপা হাসতে হাসতে বলল ঃ ঠিক আচ্ছে মানে ? অবশ্যই ঠিক আছে ।

আমি ফোন রেখে দিলাম । ও বলতে ভুলে গেছি আজকাল আমি মোবাইল নামক অতি বিরক্তিকর এক বস্তু ব্যবহার করা শুরু করেছি যেটা রুপা আমাকে জোর করে ধরিয়ে দিয়েছে। পাঞ্জাবীতে পকেট না থাকায় দারুন সমস্যা হয়েছে, মোবাইল নামক বস্তুটি হাতে নিয়েই ঘুরতে হচ্ছে।

এবার নিশ্চিন্তে হাটা যায় । পাওয়ারফুল বাবার কন্যাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখার এটাই হল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা ।

আমি গুলিস্তানের দিকে সবে গিয়েছি , ঠিক তখনই কে যেন পেছন থেকে আমাকে ডাকলো , আমি ভাবলাম পুলিশ মনে হয় । আমি তৈরীই ছিলাম যে পুলিশ হলে বলব ঃ স্যার মাফ করে দিন , আর করব না । তারপর পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে । আর থানায় গিয়েই শুরু হবে আসল খেলা । কিন্তু পেছনে ফিরে দেখি একটা মেয়ে । এই চোখকেই বোধহয় হরিণীর অক্ষি বলে । তবে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে একেই বলে কিনা কারণ , আমি নিজেও কোনো দিন হরিণ দেখিনি,আর হরিণী দেখা তো দুরের কথা । মেয়েটির চোখ দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম । মেয়েটি আমার দিকে দৌড়ে এলো । এই হরিণীই যে আমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই । আমিও তাড়াতাড়ি হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম । কিন্তু মেয়েটি আমাকে ধরে ফেলল ।


আপনার নাম হিমু ?

আমি বললাম ঃ জ্বী , আমিই দি গ্রেট হিমু । আমার আঞ্চলিক নাম হচ্ছে হিমলু । তবে আমি হিমালয় নামে বিখ্যাত , আই মিন আমি আমার বিখ্যাত কাজগুলোয় হিমালয় নাম ব্যবহার করি ।
মেয়েটি বলল,তাই নাকি ? তা আজ অবধি কয়টা বিখ্যাত কাজ করেছেন হিমালয় নামে ?

আমি হেসে বললাম,করেছি অনেক তবে গোনাগুনি করি নি । মহাপুরুষদের এটাই স্বভাব,তারা মহৎ কাজ করবে কিন্তু করার পর নিজেরাই ভুলে যাবে ।

মেয়েটি বলল,ঠিক আছে সবই বুঝলাম । আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই ।
আমি বললাম,আমি জানি । বলেই চুপ হয়ে গেলাম ।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,তার মানে আমি কে তা আপনি জানেন ?
আমি বললাম ঃ না , মানে জানালেই জানবো আর কি !

আমার নাম নাতাশা , আমি রুপার বান্ধবী ।

আমি বললাম ঃ আস , বিয়ে করে ফেলি । তোমায় দেখে আমি পাগল হয়ে গেছি । দাড়াও আমার পাঞ্জাবীটা বদলে আসি । বলেই আমি যাওয়ার পায়তারা করছিলাম ।

নাতাশা বলল ঃ দাড়ান দাড়ান,এসব ফালতু কথা বলে আপনি পালাতে পারবেন না ।
আমি বললাম ঃ না,আমি পালাচ্ছি না । আমি এখনি আসব ।

পাশ দিয়ে দুই পুলিস মামা যাচ্ছিল । মেয়ে দেখে তারা দাড়িয়ে পড়ল। সম্ভবত তাদের মনে সুন্দরী মেয়েটাকে সাহায্য করার ইচ্ছে জেগেছে । সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুলিশরা ইদানিং খুব দায়িত্বপরায়ন হয়ে পরছে ।

নাতাশা বলল ঃ হিমু সাহেব ইচ্ছে করলে আমি কিন্তু আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারি এবং আমার কথা না শুনলে আমি সেটাই করব ।

আমি ব্যবস্থা তো করেই রেখেছি , তাই বললাম ঃ আমারও ধরা খাওয়ার ইচ্ছা ।

আমার কথা শুনে নাতাশা রেগে গেল । সে সত্যিই পুলিশ মামাদের ডেকে আমাকে ধরিয়ে দিল এবং বলল , পুলিশের মার পিঠে পরলেই ঠিক হয়ে যাবেন । মামারা অপরাধের কথা না জেনেই আমাকে অ্যারেস্ট করে ফেলল । সুন্দরী একটা মেয়েকে হেল্প করতে পেরেই তারা খুশি । সুন্দরী মেয়ে বলে কথা , অপরাধ থাক আর নাই থাক অ্যারেস্ট তো অবশ্যই করতে হবে ।

আমি এখন থানায় । ওসি সাহেবের পাশের চেয়ারে আমাকে বসতে দেয়া হয়েছে । ওসি সাহেবের মনে হয় টয়লেট রোগ আছে, ৫ মিনিতে তিনি ৩ বার সেদিকে ছুটে গেলেন । আমি হিসাব করছিলাম যে ৫ মিনিতে যদি ৩ বার হয় তাহলে ১ ঘন্টায় কয় বার হবে । উত্তরটা হলো, ৩ গুন ৬০ ভাগ ৫ মানে হল ৩৬ বার ।

আমি ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম ঃ স্যার, ৩৬ বার ।
তিনি অবাক হয়ে বললেন ঃ মানে ?
আমি বললাম ঃ ঘন্টার হিসাবটা করে ফেললাম স্যার ।

ওসি সাহেব কিছুক্ষন আমার দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রশ্নের পালা শুরু করলেন ।

আপনি একটা মেয়েকে রেইপ করতে চেয়েছিলেন ?
আমি বললাম ঃ জ্বী ,স্যার ।
ওসি সাহেব বললেন ঃ কোনো ফোন আসবে,নাকি আপনাকে শিকের ভেতর পাঠিয়ে দেব ?
আমি বললাম ঃ স্যার , আজকালের অপরাধীরা ধরা খাবার আগে থেকেই ফোনের ব্যবস্থা করে রাখে । ফোন তো অবশ্যই আসবে , তখন কিন্তু আপনি বিপদে পড়ে যাবেন । স্যার আপনার মোবাইল নাম্বারতা বলুন তো ?
তিনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নাম্বারটা বললেন ।
আমি আমার মোবাইলে নাম্বারটা লিখে হাত টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে সেখান থেকেই কল দিলাম । ওসি সাহেবের মোবাইল বেজে উঠলো ।

আমি বললাম ঃ স্যার এটা আমার বসের কল , রিসিভ করলে দেখবেন কেউ কথা বলবে না । বস আপনার গলা চিনে রাখবে । বসের নাম কানা সগীর ।

ওসি সাহেব যে ভয় পেয়ে গেছেন তা তার চেহারা দেখেই বোঝা গেল । তিনি ফোন রিসিভ করে কয়েকবার হ্যালো বলে আমার দিকে ভীত চোখে তাকালেন ।
এবার আমি হাত টেবিলের নিচে রেখেই রুপাকে মিস কল দিলাম । কিছুক্ষন পরেই ওসির টেবিলে রাখা টিএন্ডটি ফোন বেজে উঠলো । ওসি সাহেব ভয়ে ভয়ে বললেন , এটা কার ফোন ?

আমি বললাম ঃ স্যার এটা একটা মেয়ে , আপনাকে ধরার জন্য আমার বস কানা সগীর মনে হয় ফাদ পেতেছে ।

ওসি সাহেব টেনশানে ঘামছেন । কাপতে কাপতে তিনি ফোন রিসিভ করলেন ।
কিছুক্ষন রুপার সাথে কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ হিমু সাহেব আপনি যেতে পারেন । আমি খুব দুঃখিত,আমাকে মাফ করবেন প্লিজ । এখন আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি । আর আপনার বস কানা সগীরকে বলবেন , আমি তার কাছেও মাফ চেয়েছি ।

আমি বললাম ঃ আমি এখন যেতে চাচ্ছি না,সবে তো এলাম । চা খেয়ে তারপর যাই কি বলেন ! তবে চিনি কম দেবেন,অবশ্য গুড় দেয়া চা আমি বেশী পছন্দ করি ।

ওসি সাহেব তাড়াতাড়ি চায়ের ব্যবস্থা করলেন । আমি চা খেয়ে থানা থেকে বের হয়ে এলাম । বাইরে এসেই নাতাশাকে ফোন দিয়ে বললাম ঃ (কাদো কাদো গলায়) নাতাশা এরা তো আমার হাড়গোড় সব গুড়ো করে দিয়েছে । আমাকে থানায় এসে মুক্ত করে নিয়ে যাও প্লিজ,তা না হলে আমি মারা যাব ।


নাতাশা বলল ঃ বলেন কি হিমু সাহেব ? এদের এত্তোবড় সাহস ? দাড়ান আমি আসছি , আপনি কোনো চিন্তা করবেন না , সব কয়টার চাকরি আমি শেষ করে দেব ।
আমি বললাম ঃ না,না তোমাকে এখানে আসতে হবে না । তুমি ঢাকা মেডিকেলে চলে যাও কারন আমাকে এখনি সেখানে নেয়া হবে । আমাকে শেষবারের মতো দেখে যাও । একটু পরে এলে হয়তো সেটাও পারবে না । তখন আমাকে দেখার জন্য আজিমপুর যেতে হবে । অবশ্য রাতে প্রেতাত্তা হয়েও তোমার বাসায় আসতে পারি ।
এইটুকু বলে তাড়াতাড়ি লাইন কেটে দিলাম না হলে আশেপাশের শব্দ শুনে নাতাশা সব বুঝে ফেলবে ।


তিন


আচ্ছা মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে তার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে ? অবশ্যই আছে । পরিশ্রমের পর মস্তিষ্ক চায় রেস্ট মানে ঘুম । ঠিক যতটুকু রেস্ট দরকার মস্তিষ্ক ততটুকুই নেবে,বেশি নেবে না । রেস্ট পাওয়ার পর মস্তিষ্ক তার কাজ শুরু করে দেয় । মানুষটা যদি তখনো ঘুমিয়ে থাকে তাহলেই মস্তিষ্ক তাকে স্বপ্ন দেখায় ।

রাত ৪ টা । আমি সবেমাত্র মেসে ফিরে শুয়েছি এমন সময় স্বপ্ন দেখলাম যে প্রচন্ড গতিতে মাটিতে পরছি সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম মাটিতে শুয়ে আছি,অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি খাটেই শুয়েছিলাম । এর ব্যাখ্যা কি ? আমার কাছে এক ড্রিম স্পেশালিস্টের নাম্বার আছে । ফোন করে ব্যাখাটা জেনে নেয়া যায় । এত রাতেও তিনি যে জেগে আছেন তাতে অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই । কারন কয়েকদিন আগেই তার বৌ চলে গেছে । এখন তিনি রাতে এক সুন্দরী মেয়ের (তার প্রাক্তন রোগী) সাথে আলোচনা করেন । আস্তে আস্তে তিনি সাবজেক্টকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে থাকেন । যেমন শুরু হয়েছিল , “কেমন আছেন ” দিয়ে আর শেষ হলো “ওই কথাটা আর একবার বল না , প্লিজ ” দিয়ে ।

আমি তাকে ফোন করেই ফেললাম । ডাক্তার সাহেবই রিসিভ করলেন ।

তিনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন (যদিও ঘুমের পুরোটাই ভান) ঃ কে ?
আমি বললাম ঃ আমি শিউলির বড় মামা ।
তিনি বললেন ঃ শিউলি কে ?
আমি বললাম ঃ ঔ যে যার সাথে প্রতিরাতে গুটুর গুটুর করে কথা বলেন ।
তিনি সামান্য ভীত গলায় বললেন ঃ ইয়ে , মানে কথা বলি না ঠিক , স্বাস্থ্য বিষয়ক সামান্য আলাপ করি আর কি !
আমি বললাম ঃ এর আগে শিউলির সাথে যে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলাপ করতো তার এখনকার অবস্থা জানেন ?
তিনি বললেন ঃ না তো , মামা ।
আমি বললাম ঃ না জানাই ভাল । ওকে জামা কাপড় খুলে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল । এখন হাসপাতালে আছে । এখন আপনাকে কি করা যায় ভাবছি ।
তিনি কাদো কাদো গলায় বললেন ঃ মামা , আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ , মামা । আমি আর জীবনেও শিউলিকে ফোন করব না ।
আমি বললাম ঃ মাফ করে দিন বললেই তো আর মাফ করা যায় না । আপনার ব্যাপারে ডিসিশান নেয়া হয়ে গেছে । এ ব্যাপারে কানা সগীর আমাকে সহায়তা করবে । আপনাকে নুড ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে তবে কোন গাছের উপর আপনাকে ঝোলানো হবে সেই গাছ এখনো ঠিক করা হয় নি, বলেই লাইন কেটে দিলাম । কেটে দেয়ার পরই মনে পরলো স্বপ্নের ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করা হয় নি । থাক,আর কল করা ঠিক হবে না ।




এখন বাজে রাত ৪ টা ৩৫ । ঘুমও আর আসবে না । রাস্তায় বের হলে মন্দ হয় না । আমি বের হয়ে এলাম । এসময় প্রকৃ্তি এক অন্য রুপ দেখায় । মনে হয় কোনো মা যেন তার সন্তানদের নিয়ে চুপটি করে শুয়ে আছে আর আকাশের চাদ যেন তাদের দেখার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে । আমি আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম । আকাশে তারাগুলো U অক্ষরের আকৃ্তি নিয়েছে । আচ্ছা , এটা কি মানব জাতির জন্য কোনো মেসেজ হতে পারে না ? হয়তো এই মেসেজে আগত দুঃসংবাদের কথা জানানো হচ্ছে,আবার সুসংবাদও হতে পারে । এমন সময় পেটের মধ্যে কিসের যেন ছোয়া অনুভব করলাম । তাকিয়ে দেখলাম আলকাতরার মতো কুচকুচে সাদা একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আর আমার পেটের মধ্যে একটা ছুরি ঠেকানো ।

আমি বললাম ঃ দাড়ান ভাই , এখনি প্যান্ট খুলে দিচ্ছি । তবে প্যান্টে কিন্তু পকেট নাই ।
মামা বলল ঃ প্যান্ট খুলবি কিলা ?
আমি বললাম ঃ ভাই আমি শুনেছি যে ইদানিং ছিনতাইকারীরা মানুষের সব কিছু নিয়ে মানুষদের পুরোপুরি নগ্ন করে ছাড়ছে । তাই আমি আগেই প্যান্ট খুলে দিচ্ছি । চাইলে পাঞ্জাবীটাও দেব । সব উজার করে দেব ।

মামা ঠাস করে আমার গালে এক চড় দিলেন । আমি হেসে বললাম বললাম , মামার হাত তো দারুন ! মামা এইবার কিছুটা ভয় পেল বলে মনে হলো ।

আমি বললাম ঃ মামা রাতের খাবার খেয়েছেন ? না খেলে , আমার সাথে আসতে
পারেন বলে আমি সোজা হাটতে থাকলাম । কিছুদূর মাত্র গিয়েছি এমন সময় কে যেন আমার পায়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, আমারে মাফ কইরা দেন ভাইজান , আমি মানুষ চিনতে ভুল করছি । তাকিয়ে দেখি আলকাতরা মামা । আমি তাকে বললাম , যা মাফ করে দিলাম ।

আলকাতরা বলল ঃ ভাইজান , সারাদিন কিছু খাই নাই ।
আমি বললাম ঃ আয় আমার সাথে , তোকে মুরগি খাওয়াব ।

আমি মোবারকের হোটেলে গিয়ে দেখি বন্ধ । ঝাপি নামিয়ে মোবারক সম্ভবত ঘুমাচ্ছে । আমি ঝাপিতে দুটো লাথি মারলাম । ভেতর থেকে মোবারকের আওয়াজ পাওয়া গেল , ওই কুন ... পুলা রে ?
সাথে সাথে আলকাতরা বলল , ওই ...... পুত তুই বাইরে আয় ।

মোটা একটা গদা নিয়ে মোবারক বাইরে বের হয়ে এসে বলল , কুন হালায় রে ? অবশ্য আমাকে দেখেই সেটা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলল , মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তুলল ।
আমি বললাম ঃ মোবারক তাড়াতাড়ি মোরগ পোলাও রান্না করো , এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছি , গপগপ করে খাবে ।
যেকোনো কারনেই হোক মোবারক আমাকে কিছুটা ভয় পায় , তাই আমার আদেশ অমান্য করার সাহস তার হল না , সে বলল দাড়ান অখনি রানতাছি ।

মোবারক চুলার সামনে বসে রাধছে আর আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । আমি বললাম ঃ মোবারক তোমার খবর বল ।

মোবারক বলল ঃ আপনের দোয়ায় আরেকটা নিকা করছি । বউ দেখতে পরীর লাহান ।
আমি বললাম ঃ আমার দোয়ায় বলছো কেন ? আমি আবার কবে দোয়া করলাম ?
মোবারক লজ্জা পেয়ে বলল ঃ কি যে কন ! আপনের দোয়া ছাড়া এই রকম বউ পাওয়া সম্ভব নাকি ?
আমিও সাথে সাথে বললাম ঃ তাই তো ! এভাবে অবশ্য ভাবি নি ।

দূরে আলকাতরা বসে বসে আমাদের কথা শুনছিল , হঠাৎ বলে উঠল , হিমু ভাইজান আমার লাইগা একটুখানি দোয়া কইরা দেন না , যেন আমার বিয়া হয় ।
আমি বললাম ঃ সবই হবে , আগে খেয়ে নেই ।

খাবারের সাধ হয়েছে অমৃতের মত , আলকাতরার খাওয়া দেখেই তা বোঝা গেল । খাবার দিতেই আলকাতরা ঝাপিয়ে পড়ল । আমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে মোবারক বলল , কি হইল হিমু ভাই শুরু করেন ।
আমি বললাম ঃ না আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না । আমি এখন যাব । তুমি আলকাতরাকে ভালো করে খাইয়ে দাও ।
মোবারক বলল ঃ আলকাতরা কেডায় ?
আমি বললাম ঃ আমার সাথের বেকুবটাই , বলে আর কিছু জিঞ্জেস করার সুযোগ না দিয়েই ঝাপি থেকে বের হয়ে এলাম ।

প্রকৃ্তি মনে হয় পথের মানুষকে পথেই দেখতে চায় । আমি খেয়াল করে দেখেছি যে বন্ধ জায়গা যতই ভাল হোক না কেন , আমার সেখানে দম বন্ধ হয়ে আসে । এখন রাস্তায় এসে স্বস্তি লাগছে । সম্ভবত,এজন্যই কবি বলেছেন ঃ


বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে
মানবজাতি ঘরে সুন্দর, হিমুরা পথে


চার


বিছানায় আরাম করে ঘুমুচ্ছিলাম । হঠাৎ কোনো অজানা কারনে ঘুম ভেঙ্গে গেল । কি যেন মনে পরিপরি করেও পরছে না । ইদানিং ব্যাপারটা হচ্ছে । আসলে মানুষের মস্তিস্ক প্রচুর তথ্য জমা করে রাখে,তবে তার বেশির ভাগই হল অবচেতন মনে । আর অবচেতন মনের উপর মানুষের কোনো নিয়ত্রন নেই । মানুষের সচেতন মন যখন কোনো বিষয়কে অবচেতন মন থেকে সচেতন মনে আনতে চায় তখন এই মনে পরা না পরার ব্যাপারটা হয় । বিষয়টা আমি ধরে ফেললাম । আমার মনে বাদলের ব্যাপারটা নিয়েই ঝামেলাটা হচ্ছে । খালা-খালু আমাকে জরূরী ভিত্তিতে দেখা করতে বলেছেন,বাদলের বিষয়ে কি নাকি বলবেন । খবরটা পাওয়ার পর থেকেই আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি । আজ আচানক ওই ব্যাপারটা মনে পরল কেন ? প্রকৃ্তি নিশ্চয় চায় আমি বাদলদের বাসায় যাই ।

আমি বিছানা থেকে উঠে মোবাইলে টাইম দেখলাম । রাত ৮ টা । এখন যাওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না । এটা যেহেতু ওদের খাওয়ার টাইম,এখন গেলেই সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হওয়ার কথা । আমি ঠিক করলাম এখনই যাব । অবশ্য আমাকে দেখলেই যে জামাই আদর দেয়া হবে এটা ভাবার কোনো কারন দেখা যাচ্ছে না । তবে একটু রিস্ক তো নিতেই হবে । “কস্ট বিনা কেস্ট মেলে না ”বলেও তো একটা প্রবাদ না কি যেন আছে ।


আমি পরপর ৩ বার কলিংবেল টিপলাম । কলিংবেল চাপার নিয়ম হচ্ছে পরপর তিন বার টিপে দিয়ে থেমে থেমে টেপা । আমাকে অবাক করে দিয়ে এক মহিলা গেট খুলল । আমি তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা বাদলের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম । একবার ঢুকে পরলে আর কোনো রিস্ক থাকল না । কিন্তু ঘরে ঢুকেই বুঝলাম বিরাট ভুল হয়ে গেছে । বাইরে থেকে কেউ দরজা বন্ধ করে দিল , সাথে সাথে খালুর অট্টহাসি শোনা গেল , তিনি এক লাইন কবিতাও আবৃতি করলেন “ বারবার ঘুঘু তুমি ধান খেয়ে যাও ” ( সম্ভবত পরের লাইন আর মনে করতে পারলেন না )।

আমি বললাম ঃ খালু সাহেব আর ধান খাবো না , আমাকে ছেড়ে দিন ।
খালু সাহেব হাসির মাত্রা এক ডিগ্রী বাড়িয়ে বললেন ঃ ধরা খাবার পর সবাই এসব কথা বলে । আর ধান খাওয়া তো দুরের কথা,তোমাকে ধানের খোসাও খেতে দেয়া হবে না ।
আমি বললাম, আমি ধরা খাবার আগেই বলতাম কিন্তু বাদল আমাকে থামিয়ে দিল ।
খালু সাহেব আমাকে ধমক দিয়ে বললেন ঃ আবার ধোকাবাজি করার চেষ্টা । একদম চুপ । বেশী কথা বললে গুলি করে মারব এখনি ।

বুঝতে পারছি ভালো ভাবেই ধরা খেয়েছি । তবে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে বের হয়ে যাওয়া যাবে বলেই মনে হচ্ছে । কি করা যায় ভাবছি । খালা খালা বলে চিৎকার করলে কি কোনো লাভ হবে ? না হওয়ারই কথা কারণ খালা আর খালু প্লান করেই নিশ্চয় আমাকে ধরেছে । তাই নিউটনের সূত্র অনুযায়ী খালা নিশ্চয় আমার দিকে খালা খালা ডাকের প্রতিক্রিয়ায় হিমু হিমু ডাকে মুখর হয়ে ছুটে আসবেন না । বাকি থাকে বাদল আর রুপা । রুপাকে ফোন করা যাবে না , কারণ ফোন করলেই ও বলবে , মহাপুরুষ হয়েও সামান্য একটা ঘর থেকে বের হতে পারছ না , এও কি সম্ভব ? এখন, শুধু বাকি রইল বাদল । শতকরা ৯০ ভাগ চান্স খালু ওকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছে । সুতরাং, আপাতত মুক্ত হবার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না ।

আমি এখন দেখছি ঘরে কি কি জিনিশ আছে । একটা খাট , একটা সোফা , ঘরের কোণে কিছু দড়ি , এক যায়গায় কিছু মাটি জড়ো করে রাখা । আমি বিছানায় গিয়ে আরাম করে শুয়ে পরলাম । মস্তিস্ক রেস্ট পেলেই নতুন করে মুক্তির উপায় বের করা যাবে ।

কতক্ষন ঘুমিয়েছি মনে নেই । জেগে উঠে দেখলাম কে যেন ঘরে খাবার দিয়ে গেছে । আয়োজন সামান্য । পান্তা ভাত সাথে দুটো শুকনা মরিচ । আমি খেতে বসে পরলাম । চাকুম-চুকুম করে খাচ্ছিলাম । খেতে খেতে হটাৎ করেই নাতাশার কথা মনে পরল । আমি তৎক্ষনাৎ ওকে ফোন করলাম ।

ওপাশ থেকে নাতাশা বলল ঃ বলুন, হিমু সাহেব ।

আমি বললাম ঃ আমাকে বাচাও,আমাকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে , বের হতে পারছি না । পান্তা ভাত খেতে দেয়া হয়েছে , সেটাই চপচপ করে খেতে হচ্ছে । গুলি করে মারবে বলেও কি একটা গুজব শোনা যাচ্ছে ।

নাতাশা বলল , হিমু সাহেব আপনি কি ভেবেছেন , আমি বারবার আপনার ফাদে পা দেবো ? আর আপনার মতো বিপজ্জনক প্রানীকে বন্দী করে রাখাই উচিৎ । আমাকে আর ভুলেও ফোন করবেন না কোনোদিন ।

এইটুকু বলার পরই হঠাৎ লাইন কেটে গেল । বুঝতে পারছি,যা করার আমাকেই করতে হবে । আচ্ছা, বাদলের কথা ভাবতে ভাবতেই তো এখানে এসে ধরা খেলাম, এমন কি হতে পারেনা যে , বাদলের কথা ভাবতে ভাবতেই আবার মুক্ত হয়ে যাবো ? আমি বাদলের কথা ভাবতে শুরু করলাম । যতটুকু শুনেছিলাম, বাদল নাকি কোন এক মেয়েকে দেখে পাগল হয়ে গেছে । সারাক্ষন, তাকিয়ে থাকছে । চোখ বন্ধ করতে পারছে না । সে হাটছে,খাচ্ছে,ঘুমাচ্ছে কিন্তু তার চোখ খোলা । তখন অবশ্য আমাকে জরুরী ভিত্তিতে ডাকা হয়েছিল । আমি আসি নি । আর আজ বিনা কারনে এসেই ধরা খেলাম ।


আইডিয়া একটা মাথায় এসেছে, তবে কাজ হবে কিনা বুঝতে পারছি না । যে আমাকে খাবার দিতে আসবে তার সাথে খাতির জমাতে হবে । আশা করছি খালা নিশ্চয় খাবার নিয়ে আসবেন না , আর এলে এই প্লানে কাজ হবে না । অবশ্য অন্য ব্যবস্থাও করে রেখেছি ।

আরও ১৫ মিনিট পর আমার সকল আশাকে নিরাশায় পরিণত করে ঘরে ঢুকলেন খালু। ঢুকেই বললেন,হিমু তোমাকে মুক্তি দেয়া হবে তবে তার আগে তুমি নাতাশার কাছ থেকে বাদলকে ফিরিয়ে আনবে । ঠিক আছে?

আমি বললাম , অবশ্যই ঠিক আছে । তবে, নাতাশা কে ? ওই মেয়ে যাকে দেখে বাদল চোখ বন্ধ করতে পারছে না ?

খালু রাগত স্বরে বললেন , তলে তলে তো দেখছি সবই জান । হ্যা , ওই মেয়ের নামই নাতাশা । তুমি তাড়াতাড়ি বাদলকে মুক্ত কর, তা না হলে সারাটা জীবন তোমাকে এই ঘরেই কাটাতে হবে ।

আমি বললাম, এই ঘরে সারা জীবন কাটাতে আমার কোনো আপত্তি নেই তবে আপনি চাইলে বাদলকে মুক্ত করে দিতে পারি । বাদলকে ফোনে ধরিয়ে দিন ।

বাদলকে ফোন করা হলো , ফোন রিসিভ করল নাতাশা ।

আমি বললাম,নাতাশা কেমন আছ ? আমাকে ছেড়ে বাদলকে বিয়ে করছ নাকি? গুড ডিসিশান।
ওপাশ থেকে জবাব এল , কেন ফোন করেছেন সেটা বলুন ।
আমি কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললাম , বাদলকে একটু ছেড়ে দিতে হবে ।
নাতাশা বিস্মিত কন্ঠে বলল , কোন বাদল ?
আমি বললাম , চিনতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি ? ওই যে বাদর টাইপ ছেলেটা,যার সাথে বসে বসে এখন বাদাম খাচ্ছ কুড়মুড়িয়ে,সেই বাদল ।
নাতাশা বলল , বাদলকে আপনি কিভাবে চেনেন ? নিশ্চয় আপনি আমাকে ফলো করেন প্রতিদিন, কোথায় যাই কি করি সব ফলো করেন, তাই না ?
আমি বললাম , আমি বাদলের গুরু । গাধাটা কোথায় এখন ? ওকে একটু দাও তো ।
নাতাশা রেগে গিয়ে বলল , আপনি ওকে বাদর,গাধা এসব বলছেন কেন ? আপনার সাহস তো কম না । থাপ্পর দিয়ে আপনার দাত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে ।
আমি বললাম , ইচ্ছে করলেও লাভ নেই , গাধাকে গাধা আর গরুকে cow-ই বলতে হবে,এটাই জগতের নিয়ম । তবে গাধাকে ইচ্ছে করলে বলদও বলা যায় । তোমার কোনটা পছন্দ গাধা না বলদ ?
নাতাশা কিছু বলার আগেই বাদল ফোন কেড়ে নিয়ে বলল , হ্যালো কে হিমুভাই নাকি?
আমি বললাম , তুই কি নাতাশাকে বিয়ে করে ফেলেছিস নাকি ? করে ফেললে নতুন বউকে বাসায় নিয়ে আয় । আর না করে থাকলে তুই একাই বাসায় ফিরে আয় ।

বাদল বলল ঃ বিয়ে এখনও করিনি,তুমি ফোন করে ভালোই করেছ,বিয়েতে একজন সাক্ষী লাগবে । আর এখন বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না । তারচেয়ে তুমিই বরং এখানে চলে আস না ।
আমি খালুর অগ্নি দৃষ্টি উপেক্ষা করে বললাম ঃ মন্দ বলিস নি, বাসার ঠিকানা দে , আমি এখুনি আসছি । এতে এক পাখিতে দুই ডিলও মারা হয়ে গেল ।

বাদলের দেয়া ঠিকানা নিয়ে আমি মোবাইলের লাইন কেটে দিয়ে খালুর দিকে সরল দৃষ্টিতে তাকালাম । খালু সাহেব সম্ভবত আমাকে কি বলবেন তা খুজে পাচ্ছেন না ।

খালু সাহেব আমি বাদলকে নিয়ে এখুনি ফিরে আসছি,বলে আমি সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম । খালু সাহেব যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন সে ভাবেই দাড়িয়ে রইলেন ।

আমি বাদলের দেয়া ঠিকানা নিয়ে সেই উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম পুরোনো ঢাকার দিকে ।


পাঁচ


বাড়ির নাম আকাবাকা ভ্যালি । বাড়িটি যে ভদ্রলোক বানিয়েছিলেন তিনি সম্ববত ক্লাস ফাইভের বেশী পড়াশোনা করতে পারেন নি , অন্তত নাম দেখে তাই মনে হয় । নাহলে বাড়ির নাম রাখতেন জিগজাগ ভ্যালি । ভাগ্য ভালো যে বাড়িটা পুরোনো ঢাকায়,অন্য কোথাও হলে এই সাইজের বাড়ির ভেতর ভয়ংকর কিছু ট্রেনিং প্রাপ্ত কুকুর থাকতো । আমি চোরের মত করে বাড়ির ভেতর উকি দিলাম । দেখলাম কুকুর নেই একটাও,তবে খুব নিরীহ কিছু বিড়াল ঘুরাঘুরি করছে । বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে বাদলকে কল দিলাম ।

বাদল বলল , হিমু ভাই তুমি আসছো না কেন ? তাড়াতাড়ি কর না ।
আমি বললাম , আমি এখন ঢাকা মেডিকেলের সামনে , তোর জন্য দুইটাকার চিনাবাদাম নিয়ে বসে আছি ।
বাদল বলল , বল কি ! প্লিজ, হিমু ভাই তুমি দুই মিনিটের জন্য হলেও এখানে এস ।
আমি বললাম, ঠিক আছে যদি ঠিক দুই মিনিটের ভেতর তুই বাসার গেটে এসে দাড়াতে পারিস তবেই আমাকে পাবি । তবে এক সেকেন্ড দেরী করলেও আর পাবি না ।
দুই মিনিট লাগলো না,এক মিনিটের মধ্যেই বাদল এসে হাজির ।

আরে এতো দেখি সত্যিই হিমু ভাই । এত দ্রুত কিভাবে এলে ?
উত্তর না দিয়ে আমি বললাম , বাসা থেকে পালিয়েছিস কেন ?
বাদল লাজুক হেসে বলে , বাসায় ভালো লাগে না । তোমাকে তো একটা টেলিপ্যাথিক ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাম,তুমি পাওনি ? আমার ধারনা তুমি সেটা পেয়েই এসেছো ।
আমি বললাম , তোর ধারনা ঠিক না,টেলিপ্যাথিক ম্যাসেজ আমি পাই নি । তুই মনে হয় ভুল নাম্বারে পাঠিয়েছিস,কিংবা সারভার ব্যস্ত ছিল ।
বাদল অবাক হয়ে বলল , টেলিপ্যাথিক ম্যাসেজের আবার নাম্বার কি ?
আমি বললাম , মোবাইল ম্যাসেজের মত টেলিপ্যাথিক ম্যাসেজেরও নাম্বার থাকে । যেমন , আমার নাম্বার হচ্ছে “ 01পথের হিমু ” । তবে বিদেশ থেকে টেলিপ্যাথিক ম্যাসেজ সেন্ড করতে হলে কানট্রি কোড লিখতে হবে নাম্বারের আগে । তখন নাম্বারটা হবে “ +8801 পথের হিমু ” ।
বাদল বাচ্চাদের মত খিলখিলিয়ে উঠে বলল , দারুন তো ।
আমি বললাম,দারুন তো বটেই । এখন তাড়াতাড়ি বাসায় চল ।

আমার কথায় বিন্দুমাত্র আপত্তি না জানিয়ে বাদল সুবোধ বালকের মত পেছনে পেছনে হাটতে লাগল,বিয়ের কথা সম্ভবত ভুলে গেছে । বাদলকে বললাম মোবাইল অফ করে রাখতে । সামনে একটা খুপরি টাইপ হোটেল পাওয়া গেল । আমি বাদলকে নিয়ে সেটাতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম ।
কি খাবি ?
বাদল বলল, সিঙ্গারা খাবো ।

বাদলকে সিঙ্গারা খাওয়ানোর পর বলল,এবার পেপসি খাবো ।
আমি বললাম, খাই খাই বন্ধ কর,আমার পাঞ্জাবী ফাকা,মানে পকেটই নেই পাঞ্জাবীতে।
বাদল অবাক হয়ে বলল , তা হলে সিঙ্গারার বিল দেবে কি দিয়ে ?
আমি বললাম,বিল তো তুই দিবি ।


বাদলকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর খালু সাহেব বললেন, হিমু তুমি একটা উপকার করলে বটে তবে এখন তাড়াতাড়ি কেটে পড় ।
আমি বললাম, এত বড় একটা কাজ করলাম,একটু চা-টা খেয়ে তারপর যাই । পাষাণের মনেও তো গরীবের জন্য রহম হয় । আপনি তো আর পাষাণ না,তাই রহম হওয়া উচিৎ ।
খালু সাহেব বললেন,তুমি তো গরীব না,তুমি হচ্ছ আস্ত একটা ছোটলোক । যদি আর একটা কথাও বল তাহলে তোমাকে গুলি করব । ভালো কথা বাদলকে খুজে পেলে কোথায় ?
আমি চুপ করে বসে রইলাম । খালু সাহেব রেগে গিয়ে ধমকে উঠলেন,কথা বল না কেন ? ওকে কোথায় পেলে ?
আমি নিশ্চুপ । মানুবজাতির দোষ একটাই,কোনো একটা কিছু করতে বলবে,আবার তার কথা মতো কাজ করতে গেলেই রেগে যাবে । খালু সাহেব পাশের ঘরে গেলেন,সম্ভবত বন্দুক আনতে । আমি সেই সুযোগে কেটে পরলাম ।

হিমুর সাথে কিছুক্ষণ (বাকি অংশ)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:৫৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×