গত সোমবারের ঘটনা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মানুষকে আতঙ্কিত করতে জামায়াতে ইসলামী যেকোনও কৌশল অবলম্বন করতে পারে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি এ সুযোগ নেবে-এটাই তাদের চরিত্র। শুধু ভোটের স্বার্থ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এ ধরনের রাজনীতি মানুষকে উন্নয়ন দিতে পারে না। বরং জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাস দমনে সরকারের ইচ্ছাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করে। সরকারের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানতে চায় মানুষ। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না করার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। সম্প্রতি রাজধানীসহ কয়েকটি বড় শহরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাস্তায় অগ্নিসংযোগে করা হয় বিপুল সংখ্যক গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস। চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয় । এ থেকে রক্ষা পায়নি স্কুল কলেজে পড়-য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আমাদের সময়কে।
ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি সান সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর দল। বিচার বাধাগ্রস্ত করতে তারা দেশের কয়েকটি অঞ্চলে এক ধরনের গুপ্ত হামলা চালিয়ে ভয়ঙ্কর তাণ্ডব করেছে। যদিও এ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। সম্ভবত দলটি এ ঘটনা ঘটিয়ে দেশবাসীকে তাদের শক্তির ‘ম্যাসেজ’ দিতে চেয়েছে । তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু পার্লামেন্টে ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করতে মত দিয়েছিলাম। কারণ, জামায়াতে ইসলামী কাণ্ডকীর্তি সম্পর্কে আমাদের একাত্তরের অভিজ্ঞতা আছে। ধর্ম নিয়ে দলটি রাজনীতি করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। সরকারের কিছু কিছু বিষয়ের সমালোচনা করে সৈয়দ আনোয়ার বলেন, স্ববিরোধী আচরণ দেখেতে চাই না। বর্তমান সরকারের অবস্থাটি আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে চাই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল আচরণ বদলালেও ১৯৪১ সালে জš§ নেওয়া এ দলটি বদলায়নি। একাত্তরে দলটি এদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। গত সোমবার দলটি জনগণের ক্ষতি করে আতঙ্কিত সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিম কোর্ট এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বলেছে। এ থেকে এটা প্রমাণিত হল যে, তারা এহেন কর্ম নেই যা পারে না। জামায়াতের আস্তিনে এরূপ আরও ১শটি সংগঠন আছে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ রাখার বিরোধিতা আমরা করেছি একারণেই। বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীদের দূরদর্শিতা ছিল বলেই বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির কথা ছিল না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এরপরও সরকারের বোধোদয় হবে কি?
বিশিষ্ট কবি রফিক আজাদ বলেছেন, রাষ্ট্র সকল মানুষের কথা বিবেচনা করে বলেই তার কোনও ধর্ম থাকে না। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে। রাজনীতির নামে দেশের জনগণকে জিম্মি করা, আতঙ্কিত করা, হত্যা করা, সম্পদ ধ্বংস করা, আগুন দেওয়ার মত ঘটনা জামায়াতে ইসলামী করে থাকে। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে জš§লগ্ন থেকেই। এতবড় ঘটনার পর আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, জামায়াত পরিকল্পিতভাবে আরও তাণ্ডব করবে। এ কারণে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের ধর্ম হওয়া উচিত জনগণের নিরাপত্তা, জনগণের সুযোগ-সুবিধা। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অবিকৃতভাবে ধারণ করছে বাহাত্তরের মূল সংবিধান।
গত ২৬ জুন আলোচনা সভায় ‘সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম রাখলে ভোটের হিসাব উল্টোও হতে পারে’ এমন বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি কবীর চৌধুরী।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




