somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুসংস্কৃতির মিলিত স্রোতে আমরা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ৪শ বছর আগে ১৫৯১ ও ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট আকবর ধর্মনিরপেক্ষতাকে তার শাসনকর্মের নীতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও রাষ্ট্র বলতে আজ যা বোঝায় সেটার কোনো অস্তিত্ব তখন ছিল না। কিন্তু সম্রাট আকবর এ বার্তা সাধারণে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন যে, তাঁর শাসিত অঞ্চলে সব ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মানুষের সমান অধিকার এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি আগ্রহী। বৌদ্ধসম্রাট অশোক প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে তাঁর শাসিত অঞ্চলে সব ধর্মের এবং মতবাদের অংশগ্রহণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সম্রাট আকবরের আমলেই ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বা নবাবীয় স্বীকৃতি লাভ করে।
প্রাচীন ভারতের এ মুসলিম সম্রাট আকবর তাঁর চিন্তা-চেতনায় আধুনিক রাষ্ট্রের যে ভাবমূর্তি প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন তা সে সময়ের প্রেক্ষিতে তো বটেই আজকের বিশ্ব রাজনীতিতেও তার মূল্যায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। কেননা, ঠিক সে সময়েই ইউরোপে ধর্ম অবমাননার জন্য হত্যার বিধান প্রচলিত ছিল। কোপারনিকাস এবং গ্যালিলিও তাঁদের মতবাদ থেকে সরে এসে জীবন রক্ষা করতে পারলেও জিওরদানো ব্রুনোকে শুধু প্রচলিত খ্রিশ্চান ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরে কথা বলার জন্য হত্যা করা হয়েছিল। অথচ সম্রাট আকবর তাঁর নিজের রাজসভায় বিভিন্ন ধর্মের এবং মতবাদের সমাবেশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছিলেন। ধর্ম বিশ্বাসের ভিন্নতাকেই তিনি শুধু সম্মান জানিয়েছিলেন তা নয়, ধর্মে অবিশ্বাসী চার্বাকদেরও সম্রাট আকবর তাঁদের মত ও যুক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। সময়ের বিবর্তনে আকবরের এই চিন্তা-চেতনা ইউরোপে বিস্তৃতি লাভ করেছে। পাশ্চাত্যের প্রায় সব দেশেই ধর্মকে রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে পৃথক করা হয়েছে। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক রাষ্ট্রে আজও ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থার আদলেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা রয়ে গেছে।
একদিকে মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহেরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। অথচ মওলানা আবুল কালাম আজাদ নিজে একজন প্রচণ্ড নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। মহাত্মা গান্ধিরও হিন্দুধর্মে বিশ্বাসের কথা সুবিদিত। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান ধর্মের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছে। পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যিনি নিজে ধর্মকর্মে বিশ্বস্ত ছিলেন বলে তেমন প্রমাণ নেই। ফলে সমীকরণটা দাঁড়াল এই যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে আসা যতটুকু না ধর্মীয় কারণে, তার চেয়েও বেশি রাজনীতির কূটকৌশল বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ।
পাকিস্তানের এ ধর্মীয় জুজু থেকে সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ঠিকই বেরিয়ে এসেছে ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। কিন্তু ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে আবার ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতেই বাংলাদেশ ফিরে গেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক বাংলাদেশের আশার সলতেটুকু নিভিয়ে দেয়া হয়েছে।
তারপর সামরিক শাসন কিংবা গণতন্ত্রের লেবাসে সামরিক উত্তরসূরীদের সামপ্রদায়িক শাসন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুছে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে শুধু গণতন্ত্রকেই দূষিত করা হয়েছে তা নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বপন করা হয়েছে সামপ্রদায়িকতার বীজ। মাঝে মাঝে যখন ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ক্ষমতায় এসে কিছুটা আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে তখনই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অক্টোপাসে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া রামু-উখিয়ার বৌদ্ধবিহার ধ্বংস ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা সে সামপ্রদায়িক শক্তির অশুভ চক্রান্তেরই ধারাবাহিকতা। স্বাধীনতাবিরোধী সামপ্রদায়িক চক্রের সামনে উদ্দেশ্য দুটি। এক. ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে বানচাল করা। দুই. দেশে আবারও সামপ্রদায়িক ও মৌলবাদী সরকারকে ক্ষমতায় এনে জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়া।
স্বাধীনতার চার দশক অতিবাহিত হয়ে গেলেও স্বাধীন বাংলাদেশের মূল চার স্তম্ভের প্রধান যে ভিত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, তা আজও অধরাই থেকে গেছে। রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার- এই সহজ সরল যুক্তি এবং সৌহার্দ্যের কথাটি রাজনীতির কূটচাল এবং কৌশলের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছে। অথচ গ্রামগঞ্জের আপামর ধর্মপ্রাণ মানুষজন একথাটিকে মনে ও মননে লালন করেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একত্রে বসবাস করে এসেছে আবহমানকাল থেকেই।
হাসন রাজা ও লালন ফকিরের বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুসংস্কৃতির মিলিত স্রোতের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়া শুধু জরুরি প্রয়োজনই নয়, ঐতিহাসিক কতর্ব্যও বটে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×