somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অংক আতংক !!

১২ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠলাম সসন্মানে । আমাদের স্কুলটা দুটো সিফটে ছিল।সকালে মেয়েরা, দুপুর থেকে ছেলেরা ।
যথারীতি ক্লাস শুরূ হলো একমাস পর থেকে।বান্ধবীদের সাথে বেশ অনেক দিন পর দেখা খুব খুশী।
সেই খুশীর মধ্যে এক মূর্তিমান আতংক হয়ে আসল আমাদের অংক স্যার। উনি ছিলেন ছেলেদের সিফটে, কি কারনে যে তার আমাদের শিফটে আগমন ঘটলো তা আল্লাহ্‌ পাকই ভালো জানেন!
স্যার ছিলেন বেটেখাট মতন,চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করা, চেহারাটা ছিল গোলগাল , চোখ দুটো ভাটার মতন গোলগোল, শরীরটা সব সময় পেছন দিকে হেলে থাকতো। আমরা আড়ালে ডাকতাম চিৎ স্যার !

ক্লাসে ঢুকেই এক হাতে ডাস্টার আর আরেক হাতে চক নিয়ে কোনো কথা না,
কি থেকে কি হচ্ছে, কিচ্ছু না ,সারা বোর্ড জুড়ে এক বিশাল অংক করতো।
তারপরেই আমাদের দিকে তাকিয়ে বিশাল গোল গোল চক্ষু দুটো পাকিয়ে চিৎকার করে প্রশ্ন করতো, 'গার্লস তোমরা কি অংকটা বুঝেছো '?
আমরা না বুঝেই সমস্বরে বলতাম 'জী স্যার'
বলার সাথে সাথেই উনি ওটা মুছে আরেকটা অংক একে ফেলতো।
আমরা সাহসী দু একজন দু একবার বলতে চেয়েছিলাম 'বুঝিনি' ।

তাতে উনি আমদের জ্ঞান গরিমা এবং মগজ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে এমন বকাবকি করেছিলেন যে আমরা দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করিনি।
যাইহোক এর ফলে আমাদের অংকের বুনিয়াদ এতই শক্তিশালী হলো যে আমরা পুরো ক্লাস অংকে ফেল করলাম।
তাকে যে কেন ছেলেদের শিফট্‌ থেকে আমাদের এখানে প্রেরন তার কারনও বুঝলাম। তৈলাক্ত বাঁশ আর বাপ ছেলের বয়স বের করার অংক রুবিক কিউবের পাজলের চেয়েও জটিল।সরল যে এত গরল তা ঐ স্যারের কল্যানেই বুঝতে পারলাম।
সব সাবজেক্টে ৭০/৮০র ঘরে নাম্বার উঠছে, শুধু অংকে৪০/৫০। তিন বছর তার হাতে পরে আমরা পাশ ফেল, পাশ ফেল করে নাইনে উঠলাম।
এখানে নতুন স্যার খুবই ভাল। কিন্ত আমাদের তো গোড়াতেই গলদ।
যাক এবার এসএসসি পরীক্ষা এক মাস বাকী। মা আমার অবস্থা দেখে খুব শীঘ্রই আমার জন্য একজন গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করলেন।
স্যার সে বারই ঢাবি থেকে অংকে অনার্স সহ মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম স্হান অধিকার করে ওনার বিভাগেই চাকুরীর দরখাস্ত করে বসে আছেন। আর তারই উপর দায়িত্ব পড়লো আমার মতন গাধা পিটিয়ে মানুষ করার। ওনার অপরিসীম ধৈর্য্যকে এখনো ধন্যবাদ জানাই। আমাকে মনে হয় উনি মুখস্হ করিয়ে দিচ্ছিলেন।

যাক আসল কথায় আসি।পরীক্ষা শুরু।পন্চম দিন অংক। জীরো কনফিডেন্স নিয়ে হলে গেলাম। প্রশ্ন দেখলাম, ৬০ এর উত্তর দিতে পারবো। জ্যামিতির দিকে তো চেয়েও দেখিনি।
কারন এবিসি একটি ত্রিভূজ ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছুই জানতামনা।

যাই হোক যে মেয়েটা আমার পাশে (অন্য স্কুলের) বসে গত চার দিন ধরে অনবরত প্রায় সাদা খাতা জমা দিয়ে যাচ্ছে ,আজ তাকিয়ে দেখলাম আমার করা দুটো অংকের ফল ওর অংকের চেয়ে ভিন্ন। আমি জানি আমারটাই ঠিক, অংক দুটো আমার মুখস্ত, তারপরও নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাবে আমার ১৪ নম্বরের সঠিক অংক দুটো কেটে সাদা খাতার করা অংক লিখে আসলাম।
বাসার স্যার শুনে খুব মন খারাপ করলো।
ফল বের হলে দেখা গেল ৪৬।
যাক পরবর্তী জীবনে অংক আর কোনদিন আমার জীবনে আসেনি।

তা নাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সহ মাস্টার্সে দ্বিতীয় স্হান অধিকার করে জীবনে পাশ করতে হতোনা।

এই জন্য ব্লগে অংক সম্পর্কে কোন পোস্ট দেখলে আমি দুরে দুরে রই !!

ছবিটি নেট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১৭
১৪৩টি মন্তব্য ১৪২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×