somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল নদ থেকে উঠে আসা মন্দির আবু সিম্বল, (ছবি ব্লগ)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিশরের আবু সিম্বল তথা নুবিয়ার মন্দির

ইউনেস্কো জাতিসংঘের একটি সংস্থার নাম। অন্যান্য কাজ ছাড়াও এ সংস্থাটির একটি গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব হলো বিভিন্ন দেশের যে সমস্ত বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রাচীন পুরাকীর্তিগুলো ধ্বংস বা হুমকীর সন্মুখীন সেগু্লোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক বলে ঘোষনা করা এবং পরবর্তীতে তার রক্ষনাবেক্ষন করা । মিশরের আবু সিম্বলের মন্দিরও তেমনি ইউনেস্কো ঘোষিত এক বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক।


সেই নুবিয়ার মন্দির দেখতে এগিয়ে চলেছি

হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার সুতিকাগার মিশরের এক প্রধান আকর্ষন হলো আবু সিম্বলের মন্দির। সে যেন পর্যটকের এক স্বর্গরাজ্য।।ছুটে গিয়েছি আমি বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল পথ পেরিয়ে তার দর্শনের আসায় আরো শত শত পর্যটকের সাথে।সড়ক পথে আসোয়ান শহর থেকে তিনশ কিলোমিটার দুরে এই মন্দির। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের নামে প্রতিষ্ঠিত কৃত্রিম জলাধার লেক নাসেরের পশ্চিম পাশেই এর অবস্থান ।


লেক নাসের যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল আবু সিম্বল

মন্দিরটি সুদান আর দক্ষিন মিশরের ভৌগলিক সীমান্তবর্তী এলাকা নুবিয়ায় অবস্থিত। কাদেশ এর যুদ্ধ বিজয়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্যই প্রাচীন মিশরের বিখ্যাত ফারাও দ্বীতিয় র‌্যামেসিস খৃষ্টপুর্ব তেরশ শতাব্দীতে পাহাড় খোদাই করে এই মন্দির দুটো নির্মান করেছিলেন।চেয়েছিলেন প্রিয়তমা স্ত্রী নেফারতারি আর নিজেকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য যা ছিল তৎকালীন রাজা বাদশাহ্‌দের একটি চিরন্তন বৈশিষ্ট।


মন্দিরের সন্মুখভাগ
এরই ফলশ্রুতিতে রাজা দ্বীতিয় র‌্যামেসিস ১২২৪ খৃঃ পুর্বে নুবিয়া রাজ্যের এক কঠিন শিলাময় পাহাড় খোদাই করে অপরূপ মন্দির দুটো নির্মান কাজ শুরু করার আদেশ দেন। এটা পরিপুর্ন করতে সময় লেগেছিল দীর্ঘ বিশ বছর । দ্বৈত মন্দির দুটো কাদেশ বিজয়ের স্মরনে নির্মিত হলেও বিখ্যাত দেবতা আমুনের অনুসারী র‌্যামেসিস চেয়েছিল এর মাধ্যমে প্রতিবেশী রাজ্য ও গোত্রগুলোকে বিস্মিত বা মুগ্ধ করা। এছাড়াও তাদের কাছে তৎকালীন মিশরীয় ধর্মকে সমুন্নত করে তোলাও তার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল ।


মন্দিরের দেয়ালে কার্তুচের মধ্যে লিখে রেখেছে অমর হওয়ার বানী

প্রচন্ড শুস্ক এই মরু এলাকায় পানি ধরে রাখার জন্য কিছু করা দরকার। অনেক চিন্তাভাবনার পর মিশর সরকার ১৯৫০ সালে নীল নদের উপর একটি বাঁধ তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন।যা বিখ্যাত আসোয়ান বাঁধ, একে হাই ড্যাম নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে ।আসোয়ান বাঁধের ফলে সৃষ্ট বিশাল লেকটি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের লেক নামে নামকরন করা হয় ।


আসোয়ান বাঁধ
এই আসোয়ান বাঁধ আর লেক নাসের বর্তমান মিশরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসলো ঠিকই কিন্ত অভিশাপ হয়ে আসলো হাজার বছর আগে ফারাও ২য় র‌্যামেসিসের তৈরী অপুর্ব মন্দির দুটোর উপর। বিশাল লেকের পানির অতলে চিরতরে ডুবে যাওয়ার আশংকা দেখা দিল তাদের ।
এই অবস্থায় শংকিত হয়ে উঠে পুরো বিশ্ববাসী। যারই ফলে ১৯৫৯ সালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মন্দির দুটো সরিয়ে পুনঃস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে ইউনেস্কোর পতাকাতলে শত শত দক্ষ আন্তর্জতিক পুরাতাত্বিক দল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে আবু সিম্বলের এই মন্দির রক্ষার্থে।


যমজ মন্দির

পুরাতত্ববিদদের তত্বাবধানে ভারী পাথরে নির্মিত সুবিশাল মন্দির দুটোকে মেশিনের সাহায্যে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেন। এক একটি টুকরোর ওজন ছিল ২০ থেকে ৩০ টন।এর পর নদী থেকে ২০০ মিটার দুরত্বে ৬৫ মিটার উচ্চতায় মন্দির দুটোকে অবিকল একইভাবে তারা আবার পুনস্থাপন করেন।

অত্যন্ত জাঁকজমকপুর্ন বিশাল বড় মন্দিরটি ২য় র‌্যামেসিস নিজ উপাসনার জন্য নির্মান করলেও উৎসর্গ করেছিলেন তার আরাধ্য তৎকালীন মিশরের বিখ্যাত এই তিন দেবতা Ra-Harakhty, Ptah and Amun, কে। আর ছোট মন্দিরটি দেবতা হাথরকে উৎসর্গকৃত এবং সেটা ছিল অনেক স্ত্রীর মধ্যে প্রিয়তমা নেফরেতারের উপাসনার জন্য তৈরী ।মন্দিরের সামনে পাথরে খোদাই করা ২য় র‌্যামেসিসের বিশাল দৈত্যাকৃতির একাধিক মুর্তি ছাড়াও রয়েছে তার স্ত্রী নেফারতারে ও তার পুত্র কন্যার মুর্তি। তবে সেগুলো আকৃতিতে কোনটাই তার মুর্তিগুলোর মত এত বিশাল নয়।


এমন তপ্ত মরুর বুক চিরে গড়ে ওঠা পথ পেরিয়ে যেতে হবে আমাদের গন্তব্যে
বহুবার শোনা আর টিভিতে দেখা এই বিখ্যাত মন্দির দেখার জন্য সকালে ট্যুর কোম্পানীর নির্ধারিত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যানে গিয়ে উঠলাম। আমরা যেগুলো কে মিনিবাস বা মাইক্রোবাস বলি সেটাই অনেক দেশে ভ্যান নামে পরিচিত। আমাদের নীল নদ নৌ ভ্রমনের পাঁচ তারকা জাহাজ এ্যাটন থেকে নেমে ভ্যানে উঠে গাইডের সাথে রওনা দিলাম আবু সিম্বলের পথে।


ভ্যান গাড়ীতে মরুভুমির বুক চিরে যাচ্ছি বিখ্যাত আবু সিম্বল তথা নুবিয়ার মন্দির দেখতে।

প্রচন্ড গরম আর তপ্ত বালুর বুক চিরে আমাদের এয়ারকন্ডিশন ভ্যান অনেক খানি পথ পাড়ি দিয়ে উপস্থিত হলো মন্দিরের পেছনের আঙ্গিনায়। সেই হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরের ফারাও দ্বীতিয় র‌্যামেসিস তার স্বৌর্য বীর্য প্রকাশ করতে বানিয়েছিলেন যেই মন্দির দুটো। নেমে আসলাম গাড়ী থেকে । সাথে সাথে প্রচন্ড রোদের তাঁপে গায়ে ফোস্কা পড়ার অবস্থা। ক্রমশ উঁচু হয়ে উঠা এই পথ বেয়ে উঠে যাচ্ছি আমরা মন্দির প্রাঙ্গনে।


মন্দির প্রাঙ্গনে যাবার পথ

আস্তে আস্তে হেটে উঠে আসলাম আবু সিম্বলের সেই জোড়া মন্দিরের সামনে। লেক নাসেরের পারে বিরাট আঙ্গিনা জুড়ে কি বিশাল সেই স্থাপত্য ! আরো অবাক লাগছে কি ভাবে কেটে কেটে এনে একদম নিখুত ভাবে এনে জুড়ে দিয়েছে সেই পুরাতত্ববিদ আর কলাকুশলীরা। যা আমি টিভির একটি চ্যানেলেও দেখেছিলাম কি পরিশ্রম করে সেই অসাধ্য সাধন করেছিল তারা । ঘুরে ঘুরে দেখছি সেই বিস্ময়কর স্থাপনা।


এক পাশ থেকে তোলা ছবিটিতেও বিশালাকার মুর্তিগুলো দৃশ্যমান
প্রাচীন মিশরের ঐতিহ্য অনুসারে নির্মিত মন্দিরের ভেতরে ঢুকলেই দেখা যায় এক বিশাল হলরুম যা সারি সারি স্তম্ভের উপর তৈরী। যার চারপাশ ঘিরে অনেকগুলো ছোট ছোট কক্ষ। আর সাদা চুনাপাথরে মোড়ানো প্রতিটি দেয়াল জুড়ে খোদাই করা থাকে মিশরীয় দেবতাদের সাথে সাথে ফারাওদের রাজত্বকালের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার ছবি আর প্রাচীন মিশরীয় ভাষা হেইরোগ্লিফিক ভাষায় তার বর্ননা। সারি সারি করে লেখা বিভিন্ন চিত্র সম্বলিত তাদের ভাষাও যেন শিল্পীর তুলিতে আকা কোন এক শিল্পকর্ম।আবু সিম্বলেও তার কোন ব্যাতিক্রম চোখে পড়লো না ।


দেয়ালের গা জুড়ে খোদাই করা বিভিন্ন দেবদেবীর সাথে ফারাওদের ছবি

বিশালাকার সেই স্তম্ভগুলোতেও আকা আছে ছবি, রয়েছে হায়রোগ্লিফিকে লেখা অনেক কিছু, যা আমার বোঝার সাধ্য নেই। কিছু কিছুতে রয়েছে দৃশটি নন্দন রঙ্গের ব্যাবহার।


আমার সেল ফোনে লুকিয়ে তোলা মন্দিরের ভেতরে র‌্যামেসিসের মুর্তি

তবে ভেতরে ছবি তোলা সম্পুর্ন নিষেধ রং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে হয়তোবা । যা ইতমধ্যেই অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি লুকিয়ে একটা ছবি তোলার সাথে সাথে সেখানকার রক্ষনাবেক্ষনকারী দৌড়ে এসে আমাকে ক্যামেরা বন্ধ করে ব্যাগে ভরতে নির্দেশ দিল। কিন্ত আমাদের সহযাত্রী এক আমেরিকান পর্যটকের রেহাই মিলেছিল অনেকক্ষন কাকুতি মিনতির পর। অনেক অনুরোধে ফিরিয়ে দিয়েছিল তার সেলফোন।


ছবির বাদিকের কোনায় লাল টি শার্ট পড়া আমেরিকান যুবকের সেলফোনটিই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল লুকিয়ে ছবি তোলার অপরাধে

এবার দেখা যাক আমার চোখে র‌্যামেসিসের নির্দেশে ২০ বছর ধরে তৈরী এক সময়ের জাঁকজমক পূর্ন আবু সিম্বলের সেই মন্দির যা এখনো প্রতিদিন হাযারো পর্যটককে সেই আগুনের মত প্রচন্ড তপ্ত বালুর মরুভুমিতে চুম্বকের মত টেনে আনে। তাদের পদভারে মুখরিত আবু সিম্বল প্রাঙ্গন।
যদিও ধুলোয় ধুসরিত ক্যামেরা বহুবার হাত থেকে পরে গিয়েছিল।লেন্সে ধুলো জমেছিল, তবুও কিছুটা হলেও দেখা যায় বৈকি ।


২য় র‌্যামেসিস আর স্ত্রী নেফ্রেতারের পাশাপাশি বসে থাকা আকাশ ছোয়া মুর্তি, এতই উচু যে মাথাটা ক্যামেরার ফ্রেমে আসে নি


ফিরে আসার পথে দুটো দৈত্যকায় পাথরের মুর্তি,এরা কারা জানা হয়নি


আমার ব্যক্তিগত গাইড

সব ছবি আমাদের ক্যামেরায় তোলা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×