somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক জোড়া শালিক আর এক জোড়া চিল এর গল্প।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শালিক দুটো আমার বাসার সদস্য, অর্থাৎ আমার এসির পেছনে খালি জায়গায় বাসা বেঁধেছে আজ অনেকদিন হলো। তবে চিল দম্পতি আমার প্রতিবেশী । আমার বাসার আরেকদিকে তিনটা দোতলা বাড়ী । সুইমিং পুল, লন, বাগান, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ছাড়াও অনেক গাছ পালায় ভরা। দেখে মনে হয় মালিকরা বেশ সৌখিন।এখনো ডেভলাপারদের থাবা পৌছেনি সেখানে। সেই এক বাসার নারকেল গাছ আর আমগাছের জড়িয়ে থাকা কোন এক গোপন জায়গায় তাদের বসবাস।



আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি আমার বাসার বিনে পয়সার ভাড়াটে শালিক দুটোকে । ভারী চঞ্চল, আমি দেখছি টের পেলেই ফুরুৎ করে উড়ে যায়। পর্দা দুটো সামান্য ফাঁক করে আমি যে ওদের দেখি এটা ওরা জানেই না। সকাল হলেই একজন বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যায় পাশের দুটো খালি প্লটে অনেক গাছ গাছড়া রয়েছে সেখানে। মানে আমি যেতে দেখেছি।

কিছুক্ষন পর ফিরে আসে কিছু একটা মুখে নিয়ে, তারপর আমাদের বিল্ডিং এর আড়াআড়ি পিলারটার উপর বসে ডাকতে থাকে। আমি উকি দিয়ে দেখি তার জোড়াটা ঘর থেকে বের হয়ে একটু উকি দিয়ে যায়। পিলারে বসা শালিকটা যেই উড়ে গিয়ে কার্নিশে তার বাসায় গিয়ে বসে তখন আরেকটি উড়ে যায় সেই বনের দিকে। মনে হয় খাবার খুজতে। প্রথম পাখীটি জানি না ছেলে নাকি মেয়ে, যদি তার আসতে একটু দেরী হয় তখন ঘরের পাখীটি বেরিয়ে এসে আম কাঠাল আর নানারকম গাছে ঘেরা জঙ্গলের দিকে চেয়ে কঁ কঁ করে কি রাগত স্বরে ডাকতে থাকে। আমার স্বামীর মতে,
"ওটা মেয়ে পাখী"।
আর একটু পরেই বনের পাখী এসে হাজির। সাথে সাথে ঘরের পাখী উড়াল দেয় সেই বনে। এমনি করে আমাদের বাসায় বিনে ভাড়ায় সুখে দিন কাটছে ওদের।



প্রতিদিন সকালে আমার প্রতিবেশী শংখ চিল দুটো রাজকীয় ভঙ্গীমায় আকাশে পাক দিয়ে যায় এক বার দুবার তিন কি চার বার। আমি পশ্চিমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি সুনীল আকাশে তাদের দুজনার সে কি মহিমান্বিত বিচরন।
বেশ কয়েকবার পাক খেয়ে ঘুরে ঘুরে এক সময় ঝুপ করে নেমে এসে বসে পড়ে নারকেল গাছ বা আম গাছের ডালে। অথবা পাশের বাড়ীর ছাদের উপর একটি আড়াআড়ি লোহার খুটির উপর। কখনো বা একটু দূরের আকাশে ভেসে বেড়ানো কারো পালিত কবুতরের ঝাকে গিয়ে হাজির হয়। কবুতর গুলো ভয়ে তাড়াতাড়ি তাদের বাসার ছাদে নেমে যায়। আর ওরা ফিরে আসে নিজের কূলোয়। আমি ফাঁক পেলেই তাকিয়ে দেখি ওদের কার্যকলাপ।



সেদিন দুপুরে আমি বই পড়ছি, হঠাৎ একটি শালিক কেমন করুন গলায় ডেকে উঠলো। আমি আস্তে উঠে পর্দা সরালাম। দেখি এক জন কোথা থেকে সারা শরীরে স্কচ টেপ পেঁচিয়ে এসেছে। দেখে আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। এটা খুলবে কি করে ! অনেক কষ্টে নীচে পরে যেতে যেতে কোনরকমে বাসায় গিয়ে ঢুকলো।
আমার স্বামীকে অফিসে ফোন করলাম 'কি হবে এখন? এসি খুলে ওটাকে ধরে কি স্কচ টেপ খোলা যাবে' ?
সে বল্লো "তা সম্ভব নয়, এসি খুলতে গেলে পাখী পালিয়ে যেতে চেষ্টা করবে"।
মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। ঘুরে ফিরেই জানালায় যাই। দেখা যায় কি না? বাসাটা সরাসরি দেখাও যায়না। এসির কাছে গিয়ে কান পাতি ওদের খটর মটর শোনা যায় কি না। কেন জানি সামান্য দুটো শালিকের জন্য অস্থির হয়ে গেলাম। রাতে স্বামী এসে স্বান্তনা দিল। বললো "পাখীটা যদি মাটিতে পরে যায় তখন ধরে টেপ খুলে দিলেই হবে"।
বাসার কেয়ার টেকারকে ডাকলাম। বললাম পাখির কথা। মাটিতে চোখ রাখতে বললাম। সেতো কিছুক্ষন হা করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ঢোক গিলে অবাক গলায় বললো 'পাখী'!
"হ্যা পাখী, স্কচটেপ গায়ে লাগানো পাখী" ।
মাথা ঝাকালো কেয়ারটেকার।সে অবশ্য আমার উদ্ভট সব আবদারের কথা জানে। একবার টবে তেল কুঁচা লতা বুনবো বলে সেটা খুজে আনার জন্য তাকে অস্থির করে ফেলেছিলাম।



শালিক পাখীটার জন্য মন অস্থির । ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন স্বামীকে কি করা যায় ? বেচারা সারাজীবন আমার এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কাহিল । চুপ করে আছে।
দু দিন পর দেখলাম শালিক দুটো পিলারে বসা। কারো গায়েই স্কচটেপ নেই। আমার স্বামী আমাকে ক্ষেপানোর জন্য বল্লো,
'ঐটা মরে গেছে, আর এটা নতুন আরেকটা'।
আমি বললাম "কি বলো ওরা কি মানুষের মত নাকি সঙ্গী মরার একদিনের মধ্যে আরেকটা জোগাড় করবে" !
বলতে চেয়েছিলাম তোমাদের মত পুরুষ মানুষ নাকি !



আজ তিন চার দিন হলো দুটো চিলের একটা চিল নাই। আবার তাকে প্রশ্ন 'কি হলো আরেকটা চিলের' ?
সারাক্ষন চোখ রাখি। একটাই চিল । উড়ে আবার গাছের উপর বসে আবার উড়তে থাকে। কিন্ত আরেকটা কই ?
'কেউ কি মেরে ফেলেছে ? একটা কাকের সাথে মাঝে মাঝে লড়াই করতে দেখতাম। সেটা কি কিছু করলো? কাক কি চিলের চেয়ে বেশী শক্তিশালী' ? এই সব নানা প্রশ্নবাণে আমার স্বামী যখন জর্জরিত। তখন কাল হঠাৎ দেখি দুটো চিল পাশাপাশি উড়ছে। ওরা ডিম পেড়েছে, মেয়েটা বসে বসে তা দেয় ডিমে, তাই দেখিনা সর্বক্ষন।

ভালোই আছে আমার বিনে পয়সার ভাড়াটিয়া আর প্রতিবেশী। ব্লগে তো কত কিছুই লিখলাম । আজ ভাবলাম লিখি ওদের নিয়ে যারা আমার সর্বক্ষনের পর্যবেক্ষনের সঙ্গী।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০১
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×