somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারকেলটা কেমন করে মায়ানমারে এলো ! ( একটি বার্মিজ উপকথা)

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেই যে সে এক সোনার দেশ যে দেশে চোখটি মেলতেই দেখা যায় অপরূপ সব কারুকাজ করা অগনিত বৌদ্ধ মন্দির। আর তার গম্বুজগুলো কিনা সব স্বর্নালী রঙ এ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে যেন সব সোনার তৈরী। সেদেশে বাতাসে পাতার মর্মর আওয়াজ তুলে দোল খেয়ে ওঠে সার বাঁধা হাজারো নারকেল গাছ। অপুর্ব সুন্দর এই দেশটির নামটি হলো মায়ানমার যাকে বার্মা নামেই একসময় সব্বাই চিনতো ।
সেই বার্মায় যে এত্ত এত্ত নারকেলের গাছ তাকে কিন্ত সেদেশের মানুষ বলে ‘গন-বিন’ গাছ। বর্মী ভাষায় এর অর্থ হলো লোক ঠকানোর গাছ। কেন, কেন? এত্ত সুমিষ্ট যার পানি আর তেষ্টা পেলে সব মানুষের প্রিয় সেই ফলের গাছটির কেন এমন অদ্ভুত নাম হলো!
তাহলে জানা যাক এমন অদ্ভুত নামকরণের কারন মায়ানমারেরই এক উপকথা থেকে।


অগনিত বৌদ্ধ মন্দির

সে অনেক অনেক বছর আগের কথা,আমরা কেউই তখন জন্মাই নি। ধরা যাক প্রায় এক শতাব্দী আগের কথা, তখন বার্মার লোকজন নারকেল গাছ কি তা চিনতোই না। সারা দেশ জুড়ে আঁতিপাতি করে খুজলেও নারকেল গাছ্ তো দুরের কথা একটি পাতা্রও দেখা পেতো না কেউ। পাবে কেমন করে ! থাকলেতো তো দেখবে!
সেই সময় একদিন এক ভেলায় চড়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দুজন পুরষ আর একজন মহিলা বার্মার উপকূলে এসে পৌছালো। ভিনদেশী সেই তিনজনা তীরে পা ফেলা মাত্রই কোটাল তাদের ধরে নিয়ে এক্কেবারে রাজার সামনে হাজির করলো।বেশ খানিক্ষন প্রশ্ন ট্রশ্ন করে রাজা বুঝতে পারলো তারা তিনজনই অপরাধী আর এ কারনেই দেশ থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এই তিনজনের এক জন ছিল চোর, সে অন্য লোকের জিনিসপত্র চুরি করতো, অর্থাৎ তার পেশা ছিল চুরি করা। দ্বিতীয়জনা ছিল এক ডাইনী বুড়ী। সে বুড়ী মানুষের উপর নানা রকম যাদু টোনা করতো আর যাদু করে তাদের সাপ ব্যাং বানিয়ে দেবে বলে ভয় দেখাতো। আর সবশেষে যে ছিল সে ছিল একজন মিথ্যেবাদী। শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে আর বানানো গল্প বলে সবাইকে প্রতারিত করাই ছিল তার একমাত্র কাজ।
রাজা মনযোগ দিয়ে এই তিন বন্দীর জীবন কাহিনী শুনলো, তারপর মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন,
‘শোনো, এই যে চোরকে দেখছো এখনি তাকে এক হাজার রৌপ্য মুদ্রা দিয়ে এদেশে বসবাস করার ব্যাবস্থা করে দাও। আর যাদুকর ডাইনী বুড়ির জন্যও রইলো একই ব্যবস্থা। তবে ঐ প্রতারককে এখনি নিয়ে তার কল্লা কেটে ফেলো’।
রাজার আদেশ শুনে রাজ্যের উজির-নাজির, মন্ত্রী-যন্ত্রী যারাই সভায় উপস্থিত ছিল তারা তো হতবাক। কি ব্যাপার দুজন অপরাধীকে পুরস্কৃত করা হলো আর বেচারা প্রতারকের মৃত্যুদন্ড! কিন্ত সবাই চুপটি করে রইলো কারণ রাজার উপর কথা বলবে এমন সাহস কার আছে বলো ?

রাজা বুঝলো তাদের মনের কথা, সবাইকে বল্লো, ‘শোনো চোর হলো এক গরীব মানুষ, দুই বেলা খাওয়া জুটে না বেচারার। তাইতো সে চুরি করে। আমরা যদি তাকে সাহায্য করি তাহলে সে আর চুরি করবে না, ভালো হয়ে যাবে। এই যে দেখছো ডাইনী, সেও গরীব, দুঃখী আর এই জন্যই সে ধনী লোকদের হিংসা করে আর তাদের উপর নানা রকম যাদুটোনা করে।তাকে যদি সাহায্য করি সেও চোরের মতন একজন ভালো মানুষ হবে’।
রাজা এবার তৃতীয় ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলে বল্লো।‘একে দেখো এ হলো একজন প্রতারক, আর একজন প্রতারক, সবসময়ই প্রতারক’। সবাই রাজার জ্ঞ্যান বুদ্ধি আর ব্যখ্যায় সন্তষ্ট হলো এবং তখনই সেই প্রতারককে সাগর পাড়ে নিয়ে গিয়ে গর্দান কেটে ফেলা হলো।

পরদিন রাজার এক মন্ত্রী সেই বধ্যভূমির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। সেই বিরান ভুমিতে হঠাৎ এক অদ্ভুত শব্দ শুনে ফিরে তাকালো মন্ত্রী। দেখলো সেই প্রতারক মুখ হা করে তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলছে “ওহে মন্ত্রী তোমার রাজাকে গিয়ে বলো এখানে আমার কাছে এসে মাথা নত করতে, নইলে আমি তার গলা কেটে দু টুকরো করে ফেলবো”।

এই আশ্চর্য্য ঘটনা দেখে ভয়ে মন্ত্রীর অবস্থা তখন শোচনীয় সে কোনরকমে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দরবারে হাজির হলো। মন্ত্রীর সেই আতংকিত চেহারা দেখে রাজা তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলো,
‘কি ব্যপার মন্ত্রী কি হলো তোমার’? মন্ত্রী কাঁপতে কাঁপতে সিংহাসনে বসা রাজার পায়ের কাছে বসে সেই অত্যাশ্চার্য্য ঘটনা খুলে বল্লো। রাজা একথা শুনে বিশ্বাসতো দূরে থাক উলটো হো হো করে হেসে উঠলো। রাজা যখন হাসলো তখন সভার বাকীরা কি না হেসে থাকতে পারে বলো ? রাজা আর সভাসদরা যখন মন্ত্রীকে নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মত্ত তখন মন্ত্রী একটু ক্ষুন্ন হয়ে নত মস্তকে বলে উঠলো, ‘মহারাজ আপনি যদি আমার কথা নাই বিশ্বাস করেন তবে কাউকে আমার সাথে পাঠান, তাহলেই সত্যি মিথ্যা যাচাই হয়ে যাবে’।
রাজা তার আবেদন শুনে আরেকজন মন্ত্রীকে তার সাথে যেতে আদেশ দিলেন। যখন তারা দুজন বধ্যভুমিতে হাজির হলো দেখলো সেই প্রতারকের মাথাটি নির্জীব অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে আছে, কোন সাড়া শব্দই নেই। দ্বিতীয় মন্ত্রী যখন এসে রাজাকে এই ঘটানাটি খুলে বল্লো রাজা সাঙ্ঘাতিক রেগে উঠলো, কারণ আগেই বলেছি রাজা মিথ্যাবাদীদের একদমই সহ্য করতে পারতেন না।
“জল্লাদ কোথায় তুমি ?এক্ষুনি একে সেই প্রতারকের পাশে নিয়ে গর্দান কাটো”।
রাজার আদেশে সেই দুর্ভাগা মন্ত্রীর গর্দান গেল। এই দৃশ্য দেখে সেই প্রতারকের কাটা মাথাটি হো হো করে হেসে উঠলো,
‘কি মশাই দেখলেতো?আমি মরে গেলেও মানুষকে ঠকাতে পারি’।
উপস্থিত দ্বিতীয় মন্ত্রী প্রতারক কাটামুন্ডুর কথা শুনেতো তাজ্জব। এক দৌড়ে রাজার কাছে গিয়ে এই আজব কাহিনীর কথা খুলে বল্লো।

একথা শুনে রাজার মন অনুশোচনা আর দুঃখে কাতর হয়ে উঠলো। সে বুঝতে পারলো প্রতারকটি ভীষন ভয়ংকর এবং মৃত্যুর পরও এর কাটা মুন্ডু আরো অনেক সমস্যা তৈরী করতে পারে। তাই সে আদেশ দিল ‘এই কে কোথায় আছো? এক্ষুনি ঐ পাজী প্রতারকের কাটা মুন্ডুটা মাটিতে গভীর গর্ত করে পুতে ফেলো’। সাথে সাথে রাজার আদেশে পালন করা হলো। ২ হাত গর্ত করে মুন্ডটা সেখানে পুতে মাটি চাপা দেয়া হলো।

পরদিন সবাই অবাক হয়ে দেখলো সেই গর্ত থেকে একটা অপরিচিত গাছ গজিয়ে উঠলো, এমন গাছ তারা জীবনেও কখনো দেখেনি। আর তার মাথার দিকে ঝুলে ছিল অচেনা এক রকম ফল যা কিনা দেখতে হুবুহু প্রতারকের সেই মাথাটির মত। এই অদ্ভুত গাছটিই হলো নারিকেল গাছ যাকে বার্মিজরা গন-বিন গাছ বলে থাকে। বহু বছর ধরে মানুষের মুখে পরিবর্তিত হয়ে এখন এর নাম হয়েছে অন-বিন।
তুমি যদি কখনো একটি গন-থি অর্থাৎ নারিকেল ধরে ঝাঁকি দাও দেখবে ভেতর থেকে একটা গল্‌ গল্‌ আওয়াজ ভেসে আসছে, এর অর্থ হলো সেই দুষ্ট ঠগের মাথাটি এখোনো বুদ্ধি আটছে কি করে তোমাকে ঠকানো যায়।

আমার কথাটি ফুড়োলো
নটে গাছট মুড়লো ।


ছবিঃ প্রথমটি আমার তোলা, দ্বিতীয়টি নেট



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×