somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেক ইনলে (ছবি আর কথকতা ) বার্মা নিয়ে শেষ পর্ব

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লেক ইনলেতে জেলেদের বিখ্যাত মাছ ধরা স্টাইল

মায়ানমারের প্রাক্তন রাজধানী রেঙ্গুন থেকে সড়ক পথে ৬৬৬ কিঃমিঃ দূরে সমুদ্রের বুক থেকে ২৯০০ ফিট উপরে পাহাড়ের মাঝখানে রয়েছে মিঠা পানির এক বিশাল জলাশয়, নাম তার ইনলে । ঋতুভেদে ৫ থেকে ১৩ ফিট পানির গভীরতা নিয়ে বার্মার ২য় বৃহত্তম এই লেক তাদের সবচেয়ে বড় যে প্রদেশ শান, সে শানের নোয়াংশু নামের শহরের এক পাশ ঘেষে ১১৬ কিঃমিঃ জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।


পাহাড়ের পাশে লেক ইনলে

এর আগে আমি আমাদের দেশের বিখ্যাত টাংঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরে এসেছিলাম । সেই নীরব নিঃস্তব্দ সুবিশাল টাঙ্গুয়ার হাওড় তার রূপে আমাদের মন জয় করে নিয়েছিল । তবে ইনলে লেকের সাথে টাঙ্গুয়ার যেন আকাশ পাতাল পার্থক্য। সাংঘাতিক রকম কর্মচঞ্চল এক জলাশয় এই ইনলে।


পাহাড়ী পথে ইনলের দিকে এগিয়ে চলা

সকাল নটায় বাগান শহর থেকে রওনা দিয়ে কিছুটা সমতল ভুমি পেরিয়ে প্রায় বিকেলে চলে আসলাম পাহাড়ের রাজ্যে। একের পর এক পাহাড় তারপরই দেখা মিলছে উপত্যকার যেখানে রয়েছে কোন এক নিরিবিলি সুনসান জনপদ। চালকের কাছে জানতে চাচ্ছি এটাই কি ইনলে? প্রশ্ন শুনে চালক কোন মন্তব্য না করে হেসে ফেলে। পরে শুনেছি বার্মায় এক অদ্ভুত ট্যাবু আছে, তা হলো কাউকে গন্তব্যের কথা জিজ্ঞেস না করা । প্রায় আট ঘন্টা চলার পর অবসান হলো আমার কৌতুহলের। যখন আমরা নোয়াংশু নগরীর বাস স্ট্যন্ডে এসে নামলাম।


নোয়াংশু শহরে প্রবেশের তোরণ, বার্মিজ ভাষায় হয়তো লেখা আছে স্বাগতম

বাগানের মতই নোয়াংশু নগরীতে প্রবেশ ফি মাথা পিছু ২০ ডলার । গেটের পাশেই সেদেশীয় ঐতিহ্যগত এক নান্দনিক নকশার সাইনবোর্ড আমন্ত্রন জানাচ্ছে আমাদের ।


ঐতিহ্যবাহী নকশায় করা স্বাগতম বানী

গাইড মিঃ বো বো তার নিজস্ব গাড়ীতে করে আমাদের বাস স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে গেল নির্ধারিত হোটেল ইনলে লোটাসে।
শহরের কোলাহলের বাইরে হোটেলটির সামনে সার দেয়া সবুজ পাহাড় যেন আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।


হোটেল ইনলে লোটাস

সেই মনোরম পরিবেশে সাজানো বাহারী বাগানের মাঝে ইট, কাঠ আর বেতের ছোট ছোট আর জোড়া জোড়া কুটিরের আদলে তৈরী ইনলে লোটাসে রয়েছে সব রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা । বো বো বলে গেছে রাত আটটায় ডিনারের জন্য তৈরী থাকতে । নিয়ে যাবে ১ কিঃমিঃ দূরে শহরতলীর এক রেস্তোরায় যা আগেই সে ঠিক করে রেখেছিল।


সকালে নাস্তার সাথে থাকতো কয়েক টুকরো ফল

হোটেলে কমপ্লিমেন্টারি নাস্তার ব্যবস্থা থাকলেও অফ সিজন থাকায় লাঞ্চ বা ডিনার এর বন্দোবস্ত ছিল না। খেলাম স্থানীয় খাবার অর্থাৎ মাছ, মাংস ছাড়াও বিভিন্ন সবজী আর ভাত । হোটেলে ফিরিয়ে এনে বো বো বলে গেল কাল ঠিক নয়টায় সে আসবে আর আমাদের নিয়ে যাবে সারাদিনের জন্য ইনলে লেক ভ্রমনে।


গাইড বো বো আর তার গাড়ী যা ছিল আমাদের সর্বক্ষনের সঙ্গী

তখন সকাল আটটা , নাস্তা খেয়ে এসে আমি বিছানায় বসে বই পড়ছি আর আমার সহ পর্যটক বারান্দায় বসে একটি সিগারেট ধরিয়েছে। আমরা বো বো র অপেক্ষায় । হঠাৎ হুড়মুড় করে যেন পৃথিবী ভেঙ্গে পড়লো এমন আওয়াজ । মনে হলো কাঠের সেই কুটিরটি কে যেন দু হাতে ধরে শুন্যের উপর তুলে নিয়ে প্রচন্ড জোরে ঝাকিয়ে আবার জায়গা মত বসিয়ে দিল । আমি দৌড়ে বারান্দায় গেলাম।
হোটেলের বাচ্চা বাচ্চা ২/৩ জন কর্মচারীও বের হয়ে এসেছে । তাদের একজন ভীতসন্ত্রস্ত চেহারায় কোন রকমে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে জানালো এমন প্রচন্ড ভুমিকম্প তাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে কখনো দেখে নি।


কটেজের বারান্দা

তারপর দিনই নেপালে আঘাত হেনেছিল সেদেশের স্মরণাতীত কালের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ভুমিকম্প। কিন্ত স্থানীয় কোন প্রচার মাধ্যামে তার কোন খবরই জানতে পারি নি আমরা। যা আমরা পরদিন জেনেছি ফেসবুকে । এখানে উল্লেখ্য যে আমাদের ক্যামেরার তারিখটি এডজাষ্ট না করার দরুন ছবিতে দিনটি একদিন এগিয়ে রয়েছে ।


জেটিতে বাধা নৌকার সারি

যাই হোক বো বো আসলো আমরা রওনা দিলাম লেকের উদ্দেশ্যে । জেটিতে পৌছে আমাদের জন্য আগেই ঠিক করা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বসলাম। এখানকার নৌকাগুলো আকারে ভীষন লম্বা আর এমনই সরু যে সেখানে পাশা পাশি বসার কোন উপায় নেই । আমরা একজনের পিছে একজন এমন করে তিন জন তিনটি চেয়ারে বসলাম। সবার চেয়ারে একটি করে লাইফ জ্যাকেট। মনে হচ্ছিল একটু কাত হলেই বুঝি উলটে পড়বো ।


আমাদের জন্য নির্ধারিত নৌকা

শুরু হলো আমাদের যাত্রা । এক বিদেশিনী একাই এক নৌকা করে আসছে লেকের দিক থেকে । নৌকার সাথে যুক্ত করা সিঙ্গেল সিলিন্ডারের সেই ডিজেল ইঞ্জিনের প্রচন্ড গতি থেকে পানি যেন আকাশ পর্যন্ত ছিটকে উঠছে সেই ছিটকে ওঠা পানি ভিজিয়ে দিয়ে গেল আমাদেরও। আস্তে আস্তে লেকের গভীরে এগিয়ে চলেছি ।


লেকের পাশের সাইনবোর্ডে স্বাগতম জানিয়েছে ইনলেবাসী।

লেকের এক পাশে বাশের জাফরী কাটা সুন্দর নকশা করা একটি ঘর। বো বো বল্লো মৌসুমের সময় রাতের বেলা এটা হয়ে ঊঠে আলো ঝলমলে এক রেস্তোরা।


মৌসুমী রেস্তোরা

এখানে রয়েছে বিভিন্ন বন্য প্রানীর অভয়ারন্য । তাদেরও একটা সাইনবোর্ড লাগানো আছে লেকের পাশে । তবে তেমন ভয়ংকর কোন প্রানী আছে বলে মনে হলো না । হয়তো সাপ টাপ , বন্য শুকর এসব হয়তো থাকতে পারে ।


বন্যপ্রানীর অভয়াশ্রম

আরেকটু এগুতেই চোখে পড়লো লম্বা লম্বা কাঠের খুটির উপর জলাশয় বাসীর কাঠ আর বাশের তৈরী সাদামাটা তবে অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাড়ীঘর। স্বল্পভাষী বো বো জানালো এই লেকের চারিদিকে চারটি শহর ছাড়াও লেকের মাঝে প্রধানত চার পাঁচটি নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনথা, সংখ্যায় এরা প্রায় সত্তর হাজার । এছাড়াও পাও, বামার, ডানু নামেও রয়েছে উপজাতি গোষ্ঠী।


জলাশয়বাসী ইনথাদের সাদামাটা বাসাবাড়ীর সারি

এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য জাতি মৌসুমের সময় এসে থাকে তারা হলো লম্বা গলার কায়ান জনগোষ্ঠী। এরা ট্যুরিষ্ট মৌসুমের সময় তাদের আবাসভুমি থেকে এখানে আসে । বিভিন্ন স্যুভেনীরের দোকানের এক দিকে বসে তারা তাঁত বুনে থাকে। পাশাপাশি তাদের দেখিয়ে দোকানীরা পর্যটকদের কাছ থেকে যে আয় করে তা ভাগ করে নেয়।


এভাবে স্থানীয় দোকানীরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে কায়ান নারীদের নিয়ে বানিজ্য করছে।

এদের সাথে দেখা করার ব্যাপারে আমি খুব উৎসুক ছিলাম। কায়ান মেয়েদের গলা লম্বা করার ব্যাপারে যে ইতিহাস পড়েছিলাম/ দেখেছিলাম অন্তর্জ্বালে/টিভিতে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। এই ৫ কেজি ওজনের গলার হার যা টেবিলে সাজানো ছিল সেটা আমি দুহাতেও তুলতে পারিনি। কায়ান নারীরা নিজেদের আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য এ গহনা পড়ে আছে গলায়, হাতে আর পায়ে। দোকানী জানালো সব মিলিয়ে এই অলংকারের ওজন ৮কেজি।


লম্বা গলার বিখ্যাত কায়ান নারী

এই হার গলা লম্বা না করে তাদের কাঁধের হাড়কে নীচু করে দেয় ধীরে ধীরে। যা তাদের অল্প বয়সে মৃত্যুর একটি কারন। জিজ্ঞেস করে জানলাম এটা তারা স্বইচ্ছায় পড়ে থাকে, কারো আদেশে নির্দেশে নয়। তবে শুনলাম বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন এদের এই নির্মম সাজসজ্জা বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার মধ্যে একটা হলো বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে তাদের প্রদর্শন করে টাকা রোজগার বন্ধ করা এবং ট্যুরিষ্টদের নিরুৎসাহিত করা।


নৌকা বানানো চলছে

এই জলাশয়বাসীর যাতায়তের প্রধান অবলম্বন হলো কাঠের নৌকা।দৈনন্দিন প্রতিটি কাজেই রয়েছে এর ব্যাবহার। সুতরাং নৌকা বানানো তাদের অন্যতম একটি প্রধান জীবিকা। এছাড়াও কাঠ খোদাই করে বানিয়ে চলেছে ঘর ঘেরস্থালীর জিনিস থেকে ঘর সাজানোর উপকরন। তামা, পিতল, লোহার জিনিসপত্র ছাড়াও তৈরী করে বিভিন্ন স্যুভেনীর ও গহনা ।


তামা, পিতল, রুপা , পুঁতি, পাথর আর কাঠের স্যুভেনীর সাজিয়ে রেখেছে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য

আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি মেয়েদের মত এখানকার মেয়েরাও দারুন পরিশ্রমী। ঘর সংসারের কাজ ছাড়াও প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আয় রোজগারের কাজে ব্যাস্ত। তার মধ্যে প্রধান হলো হাতে চালানো তাঁতে কাপড় বোনা।, সবচেয়ে অবাক হোলাম একটি জিনিস দেখে তা হলো তারা পদ্ম ডাঁটা থেকে সুতো বের করে মাকুতে লাগিয়ে শাল স্কার্ফ বুনছে।


পদ্ম ডাঁটি থেকে সুতো বের করে মাকুতে পেঁচিয়ে নিচ্ছে মেয়েরা

ছোট একটা স্কার্ফ ধরে বিক্রেতাকন্যার কাছে জিজ্ঞেস করতেই শুনলাম অসম্ভব তার দাম, দেখতেও খুব একটা আকর্ষনীয় নয়। আঙ্গুর ফল টক প্রবাদটি মনে পড়লো । বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র পদ্ম আর তারই সুতো দিয়ে বুদ্ধের কাপড় প্রস্তত করা হয় বলে বো বো জানালো।

,
তাঁতে বোনা হচ্ছে পদ্ম ডাঁটি থেকে সুতো নিয়ে চাদর

কোন কোন বাসায় মেয়েরা হাতে চুরুট/সিগারেট বানাচ্ছে। স্বাদ পরীক্ষার জন্য তারা পর্যটকদের বিনে পয়সায় এই বিড়ি/চুরুট অফার করছে। তবে সেগুলো নাকি বাংলাদেশের সিগারেটের মত তেমন কড়া নয় বলে শুনলাম।


হাতে চুরুট/সিগারেট বানানো চলছে

এসব ছাড়াও এখানকার বাসিন্দাদের একটি প্রধান জীবিকা হলো কৃষিকাজ আর মাছ ধরা। এরা প্রত্যেকে অর্থনীতির দিক দিয়ে অত্যন্ত স্বাবলম্বী। আপনারা কি অবাক হচ্ছেন শুনে যে এই বিশাল জলাশয়ে কৃষি কি করে প্রধান জীবিকা হয় মানুষের ! আমিও অবাক হয়েছিলুম শুনে কিন্ত নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হোলাম ।


ভাসমান সবজী আর ফলের বাগান

তা হলো ইনলে লেকের বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরী ভাসমান সব্জী বাগান। সেখানকার কৃষকরা লেকের নীচ থেকে জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে থাকে। তারপর নৌকায় করে সেগুলো নিদৃষ্ট জায়গায় নিয়ে স্তরে স্তরে জমা করে। বাঁশের খুটি দিয়ে দিয়ে সেগুলোকে দিনের পর দিন আটকে রেখে ফসল উৎপাদনের উপযোগী জমি তৈরী হলে সেখানে চাষ করা হয় বিভিন্ন সব্জী এবং ফল।অসম্ভব কায়িক পরিশ্রমের ফলে তৈরী এসব ভাসমান জমিকে খন্ড খন্ড করে আবার বিক্রীও করে চাষীরা। বো বো জানালো পানির স্তর বাড়া কমার সাথে সাথে এই ভাসমান বাগানও ওঠানামা করে।


খন্ড খন্ড বাগান যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় ক্রেতারা

আমরা দেখেছিলাম এই ভাসমান জমিতে ফলে আছে অজস্র টমেটো, লাউ আর শসা । শানের ৮০% টমেটো যা তাদের দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় আছে তা ইনলের ভাসমান বাগান থেকে সরবরাহ করা হয়।কোন রকম রাসায়নিক সার এবং সংরক্ষন ছাড়াই উৎপাদিত অত্যন্ত সুস্বাদু এই টমেটোর সালাদ খেয়েছিলাম দুপুরে।


টমেটো ফলে আছে

এখানকার নৌকার মাঝিদের নৌকা চালানোর ভঙ্গীমাতেও রয়েছে ব্যাতিক্রম। তারা নৌকার গলুই এর উপর দাঁড়িয়ে বৈঠার উপরের দিকটা এক হাতে ধরে আর নীচের দিকটা এক পা এ পেচিয়ে নৌকা চালায় যা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায়না। ধারনা করা হয়ে থাকে ইনলে লেকে প্রচুর গাছপালা থাকায় বসে বসে বৈঠা বাইলে সামনের কিছু দেখা যায়না তাই ব্যবস্থা। তবে মেয়েরা গতানুগতিক পদ্ধতিতে বসে বসেই নৌকা বেয়ে থাকে।


নৌকা ভর্তি জলজ উদ্ভিদ নিয়ে পা দিয়ে বৈঠা বেয়ে যাচ্ছে ভাসমান এক বাগান কর্মী

আমাদের মতই বার্মিজরাও মাছে ভাতে বার্মিজ। আর তাদের মাছের যেন এক বিশাল ভান্ডার এই ইনলে লেক, এখানে বিশ রকম শামুক আর নয় প্রজাতির মাছ রয়েছে যা বিশ্বের আর কোথাও নেই বলে জানালো মিঃ বো বো ।এই লেকে এরা শুধু মাছই ধরে না মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে প্রচুর মাছ চাষ করা হয়ে থাকে।


এমন লম্বা পলো দিয়ে মাছ চাপা দিয়ে তারপর সেটাকে হাত দিয়ে ধরে আনে ।

শীতের সময় অসংখ্য পরিযায়ী পাখীর অভয়ারন্য এই লেকে জনগন ব্যাক্তিগত ভাবে প্রচুর হাঁস পেলে থাকে । জীব বৈচিত্রের এক উজ্জ্বল নিদর্শন যেন এই ইনলে লেক ।


মাংস লোভে বংশ হাতে কংস তেড়ে যায় , হংসগুলো ভয় পেয়ে সব ঢেঊ কেটে পালায়

এই লেক জুড়ে আছে সাধারন থেকে উন্নত প্রায় ৫০টির মত হোটেল যার মধ্যে রয়েছে ৫টি আবার ৫ তাঁরকা বিশিষ্ট হোটেল । এ হোটেলগুলোতে সাধারনত পরিব্রাজক এবং তীর্থ যাত্রীরাই থাকে। এছাড়াও আছে অত্যাধুনিক থেকে মাঝারী মানের রেস্তোরা যেখানে পরিবেশিত হয় পশ্চিমা থেকে দেশীয় খাবার ।


একটি মাঝারী মানের হোটেল নাম ইনলে হেরিটেজ

লেকের মধ্যে বিশাল আঙ্গিনা জুড়ে আছে অপুর্ব স্থাপত্যকলায় তৈরী এক বৌদ্ধ মন্দির, যেখানে শত শত পুন্যার্থী আর পর্যটকের ভীড়। এই প্যাগোডার প্রধান আকর্ষন পাঁচটি ব্যাতিক্রমী বৌদ্ধমুর্তি ।


লেকের বুকে বৌদ্ধ বিহার

কারন হলো ভক্তরা পুন্য লাভের আকাঙ্ক্ষায় স্বর্ন পাত দিয়ে দিনের পর দিন পাঁচ বুদ্ধ মুর্তিকে মুড়িয়ে চলেছে। ফলে বুদ্ধের নাক মুখ ঢেকে গোলাকার হয়ে গিয়েছে সেই স্বর্ন পাতের নীচে । এই মুর্তিগুলো নিয়ে প্রতিবছর এক নৌকাবাইচের আয়োজন করে থাকে ইনথা জনগোষ্ঠী ।


ব্যাতিক্রমী সেই পাঁচ বুদ্ধ মুর্তি

এই লেকের মাঝে আরো আছে ১৮৫০ সালে তৈরী তিব্বতি ঘরানার কাঠের অপরূপ মনেষ্ট্রি যাতে রয়েছে সারা মায়ানমার থেকে খুজে পেতে আনা বিভিন্ন আকার/আঙ্গিকের বুদ্ধের মুর্তি। এটা বিশেষ করে জাপানী এবং চৈনিকদের এক প্রধান তীর্থস্থান। দলে দলে হাজির সেই তীর্থযাত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ হলো সেখানে।


মনেস্ট্রীর ভেতরে

সব কিছু ঘুরে ফিরে দেখা শেষেএবার খেতে গেলাম সাধারন এক রেস্তোরায় । ডিমের তরকারী দিয়ে ভাত , আর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সব্জীর তরকারী সাথে অবশ্যই ইনলে লেকে উৎপাদিত টমেটো আর শসার সালাদ।


আমরা যে ভাসমান রেস্তোরায় খেয়েছিলাম

খাবার আগে অবশ্যই থাকতো বিনে পয়সার এপিটাইজার । খাবারের অর্ডার দিয়ে খালি মুখে যেন বসে থাকতে না হয় । বার্মার আরেকটি ঐতিহ্য আমি বিভিন্ন শহরে দেখেছি তা হলো পথের পাশের যে কোন দোকান বা রেস্তোরায় বিনে পয়সায় চা । দোকানের সামনে টেবিলে্র উপর ট্রেতে সাজানোই থাকে কেটলী আর কাপ। আপনি ইচ্ছে করলেই বসে কেটলী থেকে ঢেলে গরম চা পান করতে পারবেন বিনে পয়সায় যত খুশী। অবশ্য সেটা লিকার আর তারা সেটাই প্রেফার করে থাকে।


খাবার আগের খাবার

এই লেকের যে কয়টি বাসা- বাড়ী, কারখানা, রেস্তোরায় আমি ঘুরেছি সব জায়গায় রয়েছে ঝক ঝকে তক তকে কমোড, পানি এবং টিস্যু পেপার সহ আধুনিক টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ যা আপনি চাইলেই বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে পারবেন। আর আমাদের রাজধানী শহর যাকে আমরা তথাকথিত উন্নত দেশের সমকক্ষ বলে জাহির করে থাকি সেখানকার বিভিন্ন দরকারী, সরকারী অফিস আদালত, শপিং মল এবং বিনোদনকেন্দ্র এমন সব জায়গা থেকে এ কারনে আপনাকে বাসায় ফিরে আসতে হবে।


জায়গায় জায়গায় অতিরিক্ত ব্যবহারে দুষন

এই লেক স্থানীয় জনগন আর পর্যটকদের অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু কিছু জায়গায় বেশ দূষন লক্ষ্য করা গেল। এছাড়া ক্রমাগত ভাসমান সব্জী বাগান তৈরীর ফলে লেকের আয়তনও ছোট হয়ে আসছে। গরমের অর্থাৎ অফ সিজনে যাওয়ায় পানির স্তর জায়গায় জায়গায় বেশ নীচু এবং ঘোলাটে ছিল। তবে এই লেকের সবচেয়ে বড় অংশটি সংরক্ষিত রয়েছে যেখানে দুরত্বের কারনে আমরা যেতে পারিনি । সারাদিন ধরে বো বোর সাথে বোবো করে ঘুরে দেখা হলো ইনলে কে । আপনারাও আমার চোখে দেখে নিন এক অজানা লেককে ।


পানিতে ঝড় তুলে এগিয়ে চলেছে ইঞ্জিন বোট ।



সমাপ্ত ।
সব ছবি আমাদের ক্যামেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৮
৮১টি মন্তব্য ৮২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×