somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিয়াং মাই শহরে ঐতিহ্যবাহী হস্ত শিল্প কারখানা আর নাইট সাফারিতে একদিন (ছবি ব্লগ)

১৪ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাগজের মন্ড দিয়ে বানানো বর্নিল ছাতা
চিয়াং মাই আসার তৃতীয় দিন সামনের রেস্তোরা থেকে নাস্তা করে ট্যুর অপারেটরের অফিসে ঢুকলাম । আজ দিনটি কি কি দেখবো সেটাই ছিল ভাবনার বিষয় । মালিক মহিলা তখন এসে পৌছায়নি। অত্যন্ত সুপুরুষ সেই সাথে দারুন রসিক তার স্বামীপ্রবর আমাদের বোঝালো আমরা যেন সকাল থেকে দুপুর সিটি ট্যুর করে তারপর রাতে অসাধারন সেই নাইট সাফারীতে যেতে ।


নাইট সাফারির সাইনবোর্ড
জানতে চাইলাম সিটি ট্যুরে কি আছে ? সে গড়গড় করে এক গাদা নাম শুনিয়ে দিল যার সবই ছিল কুটির শিল্পের বিভিন্ন কারখানা ও শো রুম। তার বাকপটুতায় আমরা আর চিন্তার অবকাশ পেলাম না। এসব দেখতে হলে দিতে হবে মাথাপিছু ২৫০ বাথ, সেই তার ভ্যানে করে নিয়ে ঘুরিয়ে আনবে। আমাদের গাড়ীর দরজা খুলে দিতে দিতে চোখ টিপে বল্লো "দাড়াও আমার বসকে বলে নেই" । বুঝে নিলাম তার বস কে ? গাড়ী চলতে শুরু করলো । চিয়াং মাই শহরের মাঝখানে San Kamphaeng Road এর দুপাশ জুড়ে রয়েছে এসব হস্তশিল্পের বিভিন্ন কারখানা।


লান্না আদিবাসীদের তৈরী গহনা
প্রথমেই সে নিয়ে গেলো অত্যন্ত সুক্ষ কারুকাজ করা রূপার গহনা ও বিভিন্ন স্যুভেনীর তৈরীর এক কারখানায়। চিয়াং মাই এর উন্নত মানের রুপা উৎপাদনের কারনে প্রায় ২০০ বছর আগে চিয়াং মাইতে রৌপ্য শিল্প গড়ে ওঠেছে। সামনে শো রুম আর পেছনে কারখানায় নানা রকম ঐতিহ্যবাহী এবং ট্রাইবাল ডিজাইনের গহনা ছাড়াও ছিল অসাধারন কারুকাজে তৈরী ঘর সজ্জার আনুসাংগিক এক একটি জিনিস। সেখানে প্রথমেই আমাদের দুজন বিশেষজ্ঞের কাছে স্টিল আর আসল রূপা চেনার পরীক্ষা দিতে হলো। আমি সসম্মানে পাশ করলাম।


একই নকশায় তৈরী এই ব্রেসলেটগুলো স্টিলের তৈরী যা রূপা বলে চালিয়ে দিচ্ছে ছোটখাটো দোকানীরা
কিন্ত চিয়াং মাই এর বিখ্যাত সেই রূপার গহনার দাম শুনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। একটা রূপার ব্রেসলেট সর্বনিম্ন ৩০০০ বাথ অর্থাৎ আমাদের দেশের টাকায় প্রায় নয় হাজার টাকা। তাহলে আমরা যে এখান সেখান থেকে দু তিনশ টাকা দিয়ে রূপার ব্রেসলেট বলে যা কিনি সেগুলো কি ! ঘুরে ঘুরে নয়ন স্বার্থক করে আমাদের কাছে রূপা তাদের ভাষায় স্টিলের ঊপর মুক্তো বসানো একটি আংটি কিনে রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যে।


নকশা করা বাঁশের কলমদানী
সঙ্গী ভদ্রলোক বার বার আমাদের থাই সিল্ক এর কারখানায় নিয়ে যেতে চাইছিল। এই জিনিস বহুবার দেখায় আমরা রাজী হইনি । মনে হয় ঐখানে তার কমিশন বেশি। ভদ্রলোকের অনুরোধে এরপর খুব অল্প সময়ের জন্য উকি দিলাম আগেও দেখা এক সিরামিক কারখানায় ।


সেখানকার নিজস্ব ডিজাইনে তৈরী বিভিন্ন ডেকোরেশন দেখলেই মনে হয় কিনি, কিন্ত ঘরে জায়গা নেই


জেড কারখানা ও শো রুম । কেনা হলো হাতী ।
এবারের গন্তব্য সেখানকার ঐতিহ্যবাহী অপরূপ নকশা করা এক ছাতা তৈরীর কারখানা। পর্যটকদের কাছে পরিচিত একটি ছাতা কারখানায় উপস্থিত হোলাম ।


বিখ্যাত ছাতা ও কাঠ-বেতের ফার্নিচার তৈরীর এক কারখানা ।


শো রুমের পেছনে ছাতা বানিয়ে রাখছে


ছাতার উপরে একটি অংশ


ছাতা তৈরীর জন্য বাঁশের কাঠি ।


শিল্পীর হাতের রঙ তুলিতে বাহারী ছাতা তার নিজস্ব রূপ পাচ্ছে


বানানো শেষ এখন শো রুমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছাতা। এখানে ছবি তোলা নিষেধ থাকায় তাদের রঙ বাহারী রুপ তুলে ধরতে ব্যার্থ হোলাম


সেই শোরুমের ভেতরে সাজিয়ে রাখা কাঠ আর বেতের আসবাব।
এরপরের গন্তব্য চিয়াং মাই এর বিখ্যাত কাঠখোদাই শিল্প। আগেও ব্যাংককে অনেকবার দেখেছি তারপর ও মনে হলো দেখেই আসি।


কাঠের উপর খোদাই করা মাছ


শোরুমের ভেতরে


কাঠশিল্পীর নিপুন হাত সুক্ষ কারুকাজে খোদাই করে তৈরী করেছে এক গ্রামীন জনপদের অপরূপ নকশা


গাছের ফোকরে ধ্যানমগ্ন সন্যাসী


গাছের কান্ডের ভেতরে অনেকগুলো হাতীর মুখের প্রতিকৃতি
এরপর সেই গাইড আমাদের ল্যাকার ও আরো কিছু দেখাতে চাইলো কিন্ত এর বেশিরভাগ আমাদের আগেই দেখা থাকায় ধন্যবাদ জানিয়ে ফেরার পথ ধরলাম ।
বিকেল চারটার দিকে নাইট সাফারিতে নেয়ার জন্য ভ্যান আসবে বলে জানিয়ে হোটেলের সামনে নামিয়ে দিল গাইড। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যান আসলো যথাসময়ে।এই ট্যুরে কোন গাইড ছিল না। গেটের কাছেই রঙ্গীন বিলবোর্ডে বিভিন্ন প্রোগ্রাম কখন কোনটা শুরু হবে তার বিস্তারিত বর্ননা দেখে দেখে আমরা নিজে নিজে ঘুরতে লাগলাম। সত্যি বলতে কি নাইট সাফারী ট্যুরে মাথা পিছু ৮৫০ বাথ দিয়ে দেখার পর মনে হলো টাকাটা পানিতেই গেলো ।


মনকাড়া এক গানের সাথে অসম্ভব সুন্দর পারফরমেন্সে মুগ্ধ কিছু দর্শক নৃত্য শিল্পীদের সাথে ছবি তুলছ
প্রথম প্রোগ্রামটি ছিল পরিচিত পরিবেশে বুনো জানোয়ারদের খোলা আকাশের নীচে ঘুরে ফিরে বেড়ানো আর তা দেখার জন্য রয়েছে দুধার খোলা তিন বগিওয়ালা ট্রাম । ফ্ল্যাশ জ্বালানো নিষেধ তাই অন্ধকার মুহুর্তে সেই বাঘ সিংহের ছবি তোলা সম্ভব ছিল না। একটা জিরাফ আমার একেবারে কাছে আসায় তার একটা ছবি নিতে সক্ষম হই ।


অন্ধকারে এক বিশাল জিরাফ
ভালোলেগেছিল একটি নৃত্যানুষ্ঠান ও নাইট অফ দ্যা প্রিডেটর শো যাতে নিশুতি রাতের ভয়ানক প্রানী্দের ভয়ংকর সাথে দুধর্ষ সব হিংস্র আচার আচরন। কাঁচের এক পাশে আমরা আর ওরা ওপাশে। আমরা ওদের দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্ত ওরা আমাদের দেখতে পায়নি।
ফেরার জন্য নির্ধারিত সময় সাড়ে নটায় ফিরে আসলাম গাড়ীর কাছে । তারপর হোটেলের পথে চলা শুরু হলো ।

৩ নং ছবি বাদে সব ছবি আমাদের ক্যামেরায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×