somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা -১

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ছোট ছেলেটা যখন দুই বৎসর পার হয়ে যাবার পরও মুখে কোন কথা বলতোনা, শুধু আকারে ইঙ্গিতে বলতো, তখন আমি আর আমার স্ত্রী খুব চিন্তিত হতে শুরু করেছিলাম। ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা করে জানালেন সবকিছু ঠিক আছে। চিন্তার কোন কারণ নাই, ও কথা বলবে। তারও প্রায় মাস তিনেক পরে আমাদেরকে আনন্দে ভাসিয়ে ও প্রথমে আধো আধো বোলে, পরে স্পষ্ট করে সব কথাই বলা শুরু করলো। কিন্তু যখন কথা বলা শুরু করলো, তখন এমন অনর্গলভাবে বলা শুরু করলো যে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা বাসার একে একে সবাই হাঁপিয়ে উঠতাম। মনে হতো, ও যেন ওর এতদিনের সব জমানো কথাগুলো একসাথে বলা শুরু করেছে।

আজ থেকে ৫৩ দিন আগে আমি প্রথম এই ব্লগে বিচরণ শুরু করি। বলা যায়, আমি এখানে এক নবীন ব্লগার। এরই মধ্যে আমার মোট ৫০টি লেখা এখানে পোস্ট করেছি। অন্যদের অনেক অনেক চমৎকার ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা উপভোগ করে চলেছি। বেশ ভালো লাগছে। অন্যান্যদের কিছু চমৎকার লেখা পড়ে আমার মনে নানারকম সব স্মৃতি ভেসে উঠে। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, সবার সাথে শেয়ার করতে মনে বাসনা জাগে। কিন্তু আজ যখন এই এত্ত বছর পর আমি আমার নিজের কথা বলা শুরু করতে চাই, তখন মনে ভয় হয় যে আমি না যেন আমার কনিষ্ঠ পুত্রের ন্যায় জমানো কথা এমনভাবে বলতে শুরু করি, যা বাচালতার পর্যায়ে পড়বে এবং পাঠক/ শ্রোতাদেরকে হাঁপিয়ে তুলবে। যাহোক, জনসমক্ষে কথা বলার চেয়ে ব্লগে কথা বলা অনেক সহজ । তাই আমি আমার সাদামাটা জীবনের কথাগুলো এখানেই বলা শুরু করলাম। কর্মজীবন শেষ করে অবসর জীবনে এসে সুযোগ হচ্ছে পিছু ফিরে তাকাবার। জীবনের নানা বাটে ঘাটে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধ দর্শনকে স্মরণ করে বিদগ্ধ পাঠককূলের সাথে আমার অনুভূতিগুলো শেয়ার করার। সাদা চোখে যা দেখেছি, তাই বলবো। অতএব, উত্তম পুরুষেই বলা শুরু করলাম।কতদিন থাকবো জানিনা, তবে পাঠকের ভালো লাগলে থেকে যাবো, অন্যথায় চলে যাবো।বোরিং আর মনোটোনাস লাগলে দয়া করে কেউ শুধু একটু আওয়াজ দিবেন, থেমে যাবো।

আজ থেকে প্রায় একষট্টি বছর আগের কোন এক শীতের বিকেলে অগ্রহায়নের শেষ দিনে, এক রোববারে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনীতে আমার জন্ম হয়। এমনিতেই ছোট দিন, তখন দিনেরও প্রায় শেষ, একটু আগেই আসর নামাজ শেষ করে নামাজীরা মাসজিদ থেকে ঘরে ফিরে গেছেন। ক্লান্ত সূর্য্টা দিগন্তে রক্তিমাভা ছড়িয়ে অস্ত যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, পাখিরা ঘরে ফেরার। এমনি এক সময়ে আমি দিনের শেষ আলোটুকু ধরার জন্যই যেন পৃ্থিবীর বুকে ভূমিষ্ঠ হ’লাম। পুরো জীবনটাকে যদি একটা দিন হিসেবে ধরি, তবে বলা যায়, আমার জন্মের সময় যেমন দিনের পড়ন্ত বিকেল ছিলো, আজও, যখন আমি আমার কথা বলা শুরু করলাম, তখনও যেন জীবনের সেই পড়ন্ত বিকেলটা উপনীত। ধূসর গোধূলীর এই মায়াভরা ক্ষণে পিছু ফিরে দেখা কখনো উজ্জ্বল কখনো তমসাচ্ছন্ন দিনগুলোর কথায় থাকবে কিছু প্রাপ্তির কথা, অপ্রাপ্তির কথা। সাফল্যের কথা, ব্যর্থতার কথা। আনন্দের কথা, বিষাদের কথা।

তখনকার চট্টগ্রামের স্মৃতির মধ্যে একটু একটু মনে পড়ে ১৯৫৮ বা ৫৯ সালের দিকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইউব খানের চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে জাম্বরী মাঠের প্রস্তুতির কথা। সারাদিন ধরে রোলার, গ্রেডার আর ক্যাটারপিলার চলার শব্দ আর পোড়া ডিজেল মবিলের ধোঁয়ার গন্ধ আজও নাকে লেগে আছে। আর মনে আছে ১৯৬০ সালের প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোনের কথা, যার পরে পরেই আমার বাবার বদলীর কারণে আমরা চট্টগ্রাম ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসি। আমার স্কুলজীবন শুরু হয় ঢাকায়, সরাসরি তৃতীয় শ্রেণী থেকে। সে আমলে এটা তেমন অস্বাভাবিক কিছু ছিলোনা। এর আগে বাসায় বসেই বাবা আর মায়ের তত্ত্বাবধানে বাংলা, ইংরেজী, অঙ্ক আর হস্তলিপি শিখেছিলাম। আর সরাসরি বাবার তত্ত্বাবধানে স্কুলে যাবার আগেই প্রথমে কায়দা, পরে আম্পারা আর তারপর পবিত্র ক্বোরান পাঠ শিখেছিলাম। নামায পড়া শিখেছি আরো অনেক পরে।

স্কুল জীবন শুরু হবার দু'বছর পরে মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্ণমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম আর সে পরীক্ষায় টিকেও গেলাম। আমি সেখানে ভর্তি হবার পরে শুনি যে জনাব মঈন খান সাহেব (বিএনপি'র মন্ত্রী) ঐ স্কুল থেকেই ১৯৬২ সালে তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। স্কুলটাকে আমার খুব ভালো লাগতো, কারণ খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিল, আর শিক্ষকগণের মধ্যে অনেকেই খুব স্নেহবৎসল এবং বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন। জনাব বজলে কাদের নামে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ঐ সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পোষাকে আশাকে, কথা বার্তায় তিনি বেশ কেতাদুরস্ত ছিলেন। আমাদের স্কুলে ভালো টিফিন দেয়া হতো। ক্লাস ক্যাপ্টেনের তত্ত্বাবধানে তা বিতরণ করা হতো। ‘বুড়া স্যার’ নামে একজন শিক্ষক ছিলেন, যিনি কথায় কথায় মাথায় আর কনুই এর হাড্ডিতে ডাস্টার এর বারি মারতেন। একজন বাংলা শিক্ষক ছিলেন যার কন্ঠস্বর খুব চমৎকার ছিলো। তার আসল নামে আমরা তাকে তেমন একটা ডাকতাম না বলে সে নামটা ভুলে গেছি, তবে তাকে আমরা টেলিভিশন স্যার নামে ডাকতাম, সেকথা মনে আছে। স্কুলে বিরাট একটা খেলার মাঠ ছিলো এবং সেখানে প্রতিবছর নিয়মিত আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজের জন্যেও বেশ কিছু অবকাঠামো ছিলো। আমি নিজে কখনো খেলাধূলায় তেমন ভালো ছিলাম না, তবে পারি বা না পারি প্রায় সব খেলাই প্রাণভরে খেলতাম, খেলা দেখতেও ভালোবাসতাম। কখনো কেউ দলে না নিলে আমারই মত অন্যান্য আনাড়িদের নিয়ে আলাদা দল গঠন করতাম আর বড় মাঠের অন্য প্রান্তে তাদের নিয়ে খেলা শুরু করে দিতাম। বড়দের খেলা হলেই আগ্রহভরে দেখতাম, দর্শক হিসেবে উৎসাহ দিতাম আর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে রাখতাম। আমার আব্বা আর বড়ভাইরাও ফুটবলের ভক্ত ছিলেন। ঢাকা লীগের শেষ পর্বের খেলাগুলো যখন শুরু হতো, তখন ওনারাই ওসব খেলা দেখার ব্যবস্থা করে দিতেন। আর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব বনাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যে খেলা হলে তো কোন কথাই নেই। তখন আবাহনী দলের জন্ম হয়নি। ভিক্টোরিয়া আর মোহামেডানই দুটো সেরা দল ছিল। অপর একটা সেরা দলের নাম ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব।

চলবে....


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩৩
২৮টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×