somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা - ১২

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমার কথা - ১১" পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুনঃ আমার কথা - ১১

এমসিসিতে রোজাঃ
এমসিসিতে প্রথম রোজাটা পেয়েছিলাম মাঘের শীতে। যেদিন আকাশে প্রথম রোজার বাঁকা চাঁদটি ওঠার কথা, আমরা সবাই সেদিন হাউসের ছাদে উঠেছিলাম তাকে স্বাগত জানাতে, আর রোজা শুরু করার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে। কিন্তু আমরা তার দেখা পাইনি। পরে রাতে খবরে শুনেছিলাম রাওয়ালপিন্ডির কোথাও চাঁদ দেখা গেছে, তাই পরদিন থেকে রোজা শুরু, অর্থাৎ ঐ রাতেরই শেষরাত থেকে সেহেরী খেতে হবে। কলেজে যাবার আগেও বাসায় রোযার মাসে রোযা রাখতাম, তবে তখনো সম্ভবতঃ পুরো মাসব্যাপী রোযা রাখা হয়নি। মনে মনে শপথ নিলাম, এবারের রোযা পুরো মাসব্যাপী রাখবো। ঈদের ছুটিতে বাসায় গিয়ে যে ক’টা রোযা পাবো, সে ক’টার একটাও ভাংবোনা। তখন আমাদেরকে শীতের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কম্বল আর জার্সি পুলওভার দেয়া হতো। ওগুলো যথেষ্ট গরম ছিলো, কিন্তু শেষরাতে বের হয়ে দেখি পুলওভার পড়ার পরেও শীতে শরীর অবশ হয়ে আসছে। ঐ রকম শীতে ‘ফল-ইন’ এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকার কোন অবকাশ ছিলোনা। যে যার মত দৌড়ে ডাইনিং হলে প্রবেশ করলাম আর ভেতরে প্রবেশ করে কিছুটা উষ্ণতা পেলাম। তবে মুশকিল হলো, যে উৎসাহ নিয়ে সেখানে এসেছিলাম, খাবার খেতে বসে সে উৎসাহ উধাও হলো। কোনরকমে কিছুটা খাবার গলধঃকরণ করে পানি খেয়ে উঠে এলাম।

এর পরদিন থেকে আমরা শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতাম। তিন চারজন মিলে একটা কম্বল পেঁচিয়ে আমরা ধীরে ধীরে হেঁটে ডাইনিং হলে যেতাম। খাওয়া শেষে আবার একই পদ্ধতিতে হাউসে ফিরে আসতাম। দ্বিতীয় দিনে আমাদের স্থানীয় আকাশেও চাঁদ দেখা গেলো। আমরা কয়েকজন চাঁদ দেখে হৈ হৈ করে উঠলাম। আমাদের হাউস টিউটর দোহা স্যার আবির্ভূত হলে তাকেও আমরা সোল্লাসে চাঁদ দেখালাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চাঁদ দেখার পর কী দোয়া পড়তে হয়, তা কে বলতে পারবে? আমরা কেউই জানতাম না, তাই সবাই নিরুত্তর থাকলাম। উনিও এ ব্যাপারে নিরুত্তর থেকে গেলেন। মনে হলো, দোয়াটা তারও জানা ছিলোনা।

সো হোয়াট?
বাংলা মিডিয়াম থেকে ইংরেজী মিডিয়ামে পড়তে এসে আমাদের জবানে প্রথম যে বুলিটি সার্বজনীনতা খুঁজে পেলো, তা ছিলো “সো হোয়াট?” কথায় কথায় এটা আওড়ানো অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। কথাটার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে মাঝে মাঝে আমরা সেটা টীচারদের সাথেও বলে ফেলা শুরু করলাম। কোন কোন টীচার সেটা সহজে গ্রহণ করলেও, অনেকেই বুঝিয়ে দিলেন যে সেটা কাম্য নয়। ছুটির আগে আমাদের বাংলা শিক্ষক আবদুল্লাহ আল আমিন স্যার আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা বাড়ীতে গিয়ে যেন দুটো জিনিস না করিঃ গুরুজনদের সামনে কথায় কথায় “সো হোয়াট?” যেন না বলি। তবে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আর সিবলিংসদের সাথে বলতে আপত্তি নেই। আর দ্বিতীয় কথাটা ছিলো, বাড়ীতে গিয়ে যেন আমরা খাবার টেবিলে কাঁটাচামচ না খুঁজি। ছুটি থেকে ফিরে আমাদের ময়মনসিংহীয় সতীর্থদের কাছ থেকে জেনেছিলাম, সানকিপাড়া নিবাসী আমাদের জনৈক বন্ধু দুটো নিষেধাজ্ঞাই অমান্য করেছিলো। এমনকি তাকে কলেজের টাই পড়ে সিনেমা হলেও যেতে দেখা গিয়েছিলো।

স্ল্যাং এর কথকতাঃ
আমাদের ইংরেজী মিডিয়ামের বন্ধুদের কথোপকথন শুনে মাঝে মাঝে কিছু কিছু শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে পারতাম না। চুপে চুপে অভিধান খুঁজে সেখানেও ওসব শব্দের সন্ধান পেতাম না। নিজের অজ্ঞতা গোপন রাখার লক্ষ্যে সেগুলোর কথা ওদেরকে জিজ্ঞেসও করতে পারতাম না। একদিন সকালে পিটি’র সময় প্রিন্সিপাল স্যার দূরে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছু লক্ষ্য করছিলেন। একজন ক্যাডেট পিটিতে একটু ফাঁকি দিচ্ছিল। ঠিক ফাঁকি দিচ্ছিল বললে ভুল বলা হবে। সে আর সবার সাথে তাল মিলাতে পারছিল না। কোন একটি আইটেম যেখানে দশবার করার কথা, দশবারের পর যখন সবাই থেমে যাচ্ছিলো, তখনও সে আনমনা অবস্থায় একাই কন্টিনিউ করছিলো। হয়তো সে বাড়ীর কথা বা অন্য কারো কথা ভাবছিলো। প্রিন্সিপাল তার কাছে এসে ‘ফল-আউট’ হতে বললেন। সে দল থেকে বেরিয়ে আসলে তিনি তাকে পুরো মাঠে চক্কর লাগাতে বললেন। যেহেতু প্রিন্সিপাল স্যার নিজে তাকে পয়েন্ট আউট করেছেন, সেহেতু সকল ওস্তাদগণ সাথে সাথে তার উপর হামলে পড়লো। সে চক্কর দিতে শুরু করলে প্রিন্সিপাল বললেন, “লেট দ্যাট শিট রান!”

আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, প্রিন্সিপাল হয়তো তাকে ‘শীপ’ বলেছেন, শিট নয়। কেননা এর আগেও তার মুখে ব্ল্যাকশীপ কথাটা আমরা বহুবার শুনেছিলাম, আর ব্ল্যাকশীপ কথাটার মানে আমিও জানতাম। কিন্তু ঘটনা ও চরিত্রের সাথে শীপ এর কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রুমে ফিরে অভিধান খুললাম। তখনকার দিনে অভিধানগুলোতে এখনকার মত স্ল্যাং আর ট্যাব্যু ওয়ার্ডস থাকতো না। একজন ইংরেজী মিডিয়ামের বন্ধুকে, যে ততদিনে আমার প্রতি বেশ বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে গিয়েছিলো, তাকে শিট কথাটার মানে জিজ্ঞাসা করলাম। সে প্রথমে একচোট হেসে নিলেও পরে আমাকে শব্দটার মানে ব্যাখ্যা করেছিলো। তখন থেকে কোন অপরিচিত ইংরেজী শব্দ শুনলে আমার কান দুটো খাড়া হয়ে যেতো।

চলবে…

ঢাকা
১৯ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×