somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন বই এর পর্যালোচনা- বাসন্তি

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বই এর নামঃ বাসন্তি
বইয়ের ধরণ : গল্প
লেখক: শের আহমেদ খান
প্রকাশক: ঝিঙেফুল, ৩৪, নর্থ ব্রুক হল রোড, বাংলা বাজার, ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদ: খসরু
মুদ্রণেঃ আমানত প্রেস, কবিরাজ গলি, ঢাকা-১১০০
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
পৃষ্ঠা ৪৮, মূল্য : ১০০.০০ টাকা, (বইমেলায় ২৫% ছাড়ে ৭৫.০০ টাকা)
উৎসর্গঃ ‘আব্বা আর মাকে’

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা প্রবাসী অনুজপ্রতিম শের আহমেদ খান আমার চার দশকের বন্ধু শের মোহাম্মদ খান এর অনুজ। ২০১৬ এর বইমেলার একেবারে শেষের দিকে বন্ধুর টেলিফোন পেলাম, তার ছোটভাই এর বই ‘বাসন্তি’ মেলায় উঠেছে, ‘ঝিঙেফুল’ এর স্টলে। সেদিন ছিল মেলার শেষ শুক্রবার, মেলায় ছিল প্রচুর ভিড়। আমার প্রকাশকের স্টল ‘জাগৃতি’র সামনে আমি তখন দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করে ক্রেতাদের চাপ বেড়ে যায়, তাদের নানা ঔৎসুক্যের উত্তর দিতে গিয়ে বিক্রেতাগণ হিমসিম খাচ্ছিলেন। আমিও আমার কবিতার বই “গোধূলীর স্বপ্নছায়া” একটু একটু করে প্রমোট করছিলাম। ভিড়ের জোয়ার হ্রাস পেতে পেতে মেলার সময় শেষ হয়ে এলো, তাই সেদিন আর ‘ঝিঙেফুলে’ যাওয়া হয়নি। এর কয়েকদিন পর লেখক তার নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান, তবে যাবার আগে তিনি অবশ্য তার ভাই এর কাছে আমার জন্য একটা সৌজন্য কপি রেখে যেতে ভুলে যান নি। সেজন্য লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ।

‘বাসন্তি’ ঠিক ছোট গল্পও নয়, বড় গল্পও নয়, মাঝারি সাইজের একটি গল্পের বই। উত্তম পুরুষে বর্ণিত এ গল্পে চরিত্রের সংখ্যা খুব বেশী নয়। মূলতঃ লেখক এবং তার বন্ধু প্রকাশ এর প্রেম কাহিনী নিয়েই গল্প আবর্তিত হয়েছে। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্প বলার ঢঙে একটা সাসপেন্স থাকায় তা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করতে অসুবিধে হয়না। লেখক ও তার একই হলের বন্ধু প্রকাশের কথা দিয়ে গল্পের শুরু। প্রকাশ বড়লোকের ছেলে। তার বাবা রায় বাহাদুর ছিলেন বহির্মুখী, রাজনীতিতে নিবেদিত প্রাণ। প্রকাশের মা মীনাক্ষী রায় এর রাজনীতিতে প্রথমে তেমন উৎসাহ না থাকলেও, তার বাবা তাকে কায়দা করে রাজনীতিতে জড়িয়ে নেন। মীনাক্ষীর জীবনে কোন কিছুর অভাব ছিলনা, অভাব ছিল শুধু স্বামী-সান্নিধ্যের। তাই স্বামী সান্নিধ্য পেতেই তিনি স্বামীর কথায় রাজী হয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ফলে, বাবা আর মা উভয়েই রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় প্রকাশ তাদের আদর ভালোবাসা পায়নি। যেটুকু পেয়েছে, শুধু চাকর ওমর এর কাছ থেকে। প্রকাশ খুব ভালো ছেলে ছিল। বড়লোকের ছেলে হয়েও সে ডাইনিং হলের বাজে খাবার দাবার কোন অভিযোগ ছাড়াই পেট পুরে খেয়ে নিত। দারোয়ান রাজনের কিশোরী মেয়ে শাওনের যে সব আব্দার রাজন মেটাতে পারতোনা, সেসব সে মিটিয়ে দিত এবং স্বেচ্ছায় সে শাওনের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলো। তবে মাঝে মাঝে সে কাউকেও কিছু না বলে কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেয়ে তার সাথে প্রেম করতে চাইতো, কিন্তু প্রকাশ কারো নিবেদনে সাড়া দিত না।

প্রকাশের এই হঠাৎ হঠাৎ উধাও হওয়া নিয়েই গল্পের প্রথম বাঁক শুরু। পরিস্থিতির কারণে লেখক বাধ্য হন প্রকাশ কোথায় যায় সে অনুসন্ধানে নামতে। প্রকাশের কক্ষে ঢুকে কিছু চিঠি উদ্ধার করে লেখক জানতে পারেন, প্রকাশ পার্বত্য চট্টগ্রামের মাধবপুরে যায়। সেখানে মালতি রায়ের কন্যা সুষ্মিতা রায়ের সাথে তার একটা সম্পর্ক রয়েছে। লেখক কমলাপুর থেকে ট্রেনে চেপে রওনা হন প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে সেখান থেকে মাধবপুরের উদ্দেশ্যে। নানা ঘাত প্রতিঘাত শেষে অবশেষে পৌঁছে যান রাঘুর বাড়ীতে, যেখানে প্রকাশ আস্তানা গেড়েছিলো। সেখানে থাকতে থাকতে রাঘুর মেয়ে বাসন্তির প্রতি লেখক দুর্বল হয়ে পড়েন। প্রকাশের রহস্য উন্মোচনের সাথে সাথে সমান্তরালে চলতে থাকে তার আর বাসন্তির মাঝে মন দেয়া নেয়া। মাধবপুরে গিয়ে লেখক মালতি রায়ের সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে সুষ্মিতা রায় আর প্রকাশ রায়ের বাবা একই ব্যক্তি, রায় বাহাদুর সাহেব। অর্থাৎ তারা বায়োলজিকাল ভাই বোন, তাই তাদের এ সম্পর্ককে মালতি রায় কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। এমন কি সুষ্মিতা যে রায় বাহাদুরের মেয়ে সে কথাটি পর্যন্ত তিনি গোপন করে গেছেন সুষ্মিতার কাছ থেকে। সুষ্মিতা যখন বুঝতে পারে যে তার আর প্রকাশের বিয়ে কিছুতেই হবার নয়, তখন এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুষ্মিতার মানসিক রোগ দেখা দেয়। সেই রোগের যত রকমের চিকিৎসা করানো সম্ভব, তা করানোর পরেও যখন সুষ্মিতা আরোগ্য লাভ করেনি, তখন ডাক্তার বললেন, ও যা করতে চায়, তাই করতে দেয়া উচিত। প্রায় বাকহীনা সুষ্মিতাকে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা এক ঝর্ণাধারার পাশে পাথরের উপর বসে থাকাটাই ওর চিকিৎসা হয়ে দাঁড়ালো।

মাধবপুর থেকে ফিরে লেখক প্রকাশের মায়ের সাথে তাদের উত্তরার বাসায় দেখা করে সবকিছু খুলে বলেন। তা শুনে প্রকাশের মা তাকে যেকথা জানালেন, তাতে এক গোপন রহস্যের জট খুলে গেলেও আরেক রহস্যের অবতারণা হলো। লেখক জানলেন, প্রকাশের এই মা আসলে তাকে পেটে ধরেন নি। কে ধরেছেন, আর সেক্ষেত্রে প্রকাশের আসল বাবাই বা কে, সে রহস্যের জট গল্পের শেষ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি। তবে এ দুজনের আলাপের সূত্র ধরে এক নতুন পরিকল্পনা করা হলো। কিছুদিন পরই লেখক পুনরায় রাজন আর শাওনকে সাথে নিয়ে ছুটলেন মাধবপুরে, সুষ্মিতার মা মালতি রায়কে এ কথা জানাতে যে দু’দিন পরই প্রকাশে মা আসছেন তার সাথে দেখা করার জন্যে। তারপরে…..একটি মধুরেন সমাপয়েৎ এর কাহিনীতে পরিণত হলো এ গল্প, নিকটস্থ কালী মন্দিরে গিয়ে প্রকাশ আর সুষ্মিতার বিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু লেখক আর বাসন্তির কী হলো? প্রকাশের মা বাসন্তির বাবা রাঘুকে শুধোলেন, “রাঘু, আমি তরুণের মা নই, তবে ও আমার ছেলের মতই। তোমার অনুমতি পেলে আমি তরুণের মা হয়ে বাসন্তিকে তরুণের বউ করে তুলে নিতে চাই। বলতে বলতে নিজের গলা থেকে একটা দামী হার খুলে বাসন্তির গলায় পরিয়ে দিলেন। মালতি রায় স্থির থাকতে পারলেন না। কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন বাসন্তিকে। হাত থেকে বালা দুটো খুলে পরিয়ে দিলেন বাসন্তির হাতে”। আর তখন লেখকের অনুভূতি? ---“সবকিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মত লাগছিলো”।

গল্প যদিও সাবলীল গতিতে এগিয়ে গেছে, তথাপি আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু চরিত্র অনাবশ্যক ছিল। যেমন, সারাক্ষণ মদে বুঁদ হয়ে থাকা দেয়ান এর চরিত্রটি। ঢাকা থেকে মাধবপুর ভ্রমণ কাহিনীটাকেও অনাবশ্যক দীর্ঘ মনে হয়েছে আমার কাছে। গল্পে লেখকের ‘ঘুষি মারার’ প্রবণতাটা একটু বেশীই প্রকাশ পেয়েছে, একাধিকবার (যদিও স্বগতোক্তিতে)। তেমনি ‘নিকুচি করি’ কথাটাও একাধিকবার উচ্চারিত হয়েছে, যা পুনরোক্ত হওয়াতে ভালো শোনা যায়নি। আর আগে যেমনটি বললাম, “মধুরেন সমাপয়েৎ” পরিণতিটাকেও আমার কাছে একটু অতি সরলীকৃত ভাবনা বলে মনে হয়েছে। জীবনের জটিল সমস্যাগুলোর এত সহজে বাস্তবেও সমাধান হয়ে গেলে আমাদের সবার জীবন আর মধুময় হয়ে উঠতো।

বই এর অভ্যন্তরে দেয়া তথ্যে লেখকের পূর্ব প্রকাশিত বই এর কোন নাম নেই। তাই বোধকরি এটাই তার প্রথম প্রকাশিত বই। প্রথম প্রকাশনার জন্য লেখককে অভিনন্দন জানাই। লেখালেখির জগতে তার পদচারণা দীর্ঘ, সফল আর আনন্দময় হোক। কথা সাহিত্যের জগতে লেখককে সুস্বাগতম!

খায়রুল আহসান
ঢাকা, ০৮ মার্চ ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×