somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা-৭

২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলা বই প্রীতিঃ
বাংলাদেশী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ বাঙালী পৃথিবীর আনাচে কানাচে বহু দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এঁরা বিদেশী ভাষা বলতে বলতে আর শুনতে শুনতে যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন হয়তো একান্ত অবসরে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া কোন বাংলা বই খুলে বসেন, নয়তো কোন বাংলা নাটক বা সিনেমার সিডি। তাদের অনেকে মুখিয়ে থাকেন একুশে বইমেলার দিকে। নিজে দেশে আসতে না পারলেও বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজন কাউকে দিয়ে দেশ থেকে বই কিনে নিয়ে যান। আবার তারা বিদেশে বসেও অনেক সময় ছোট পরিসরে বাংলা বইমেলার আসর খুলে বসেন। এবারের বই মেলায় আমার “জীবনের জার্নাল” যে স্টল থেকে বিক্রয় হচ্ছিলো, একই স্টল থেকে জাপান প্রবাসী একজন বাংলাদেশী লেখকের দু’ তিনটে বইও বিক্রী হচ্ছিলো। লেখকের পুরো নামটা আমার মনে নেই, তবে যে নামে তাকে সবাই সম্বোধন করেন, সেটা মনে আছে- প্লাসিড।তিনি একজন বাংলাদেশী খৃষ্টান, এই নামের সাথে আরও দুটো অংশ ছিল, যা একটু আনকমন হওয়াতে ভুলে গেছি। তার বই কিনতে এসেছিলেন আরেক জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী, নাম মুকুল মোস্তাফিজ। তিনি জানালেন, তারা নিয়মিতভাবে বাঙালীর সব অনুষ্ঠানই সেখানে পালন করতে চেষ্টা করেন, এমন কি বইমেলাও। তিনি, প্লাসিড এবং তাদের মত আরও অনেকে মেলা ঘুরে ঘুরে অনেক বই কিনেছেন বলে তিনি জানালেন। এগুলো জাপান প্রবাসী বাংলাদেশীরা যারা দেশে আসতে পারেন নি, তাদের বাংলা বই পড়ার তৃষ্ণা মেটাবে। তিনি সাগ্রহে এক কপি “জীবনের জার্নাল”ও সংগ্রহ করলেন।

শত ব্যস্ততার মাঝেও কবিতাঃ
ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত জনাব হাদী শত ব্যস্ততার মাঝেও রাতের বেলা সময় করে কবিতা পড়েন। এবারের মেলা থেকে তিনি কিনেছেনও অনেক বই, এসেছিলেন মেলার শেষ শুক্রবারে। ‘জাগৃতি’র সামনে দাঁড়িয়ে তার সাথে আলাপ হচ্ছিলো। আমার প্রথম কবিতার বই বের হয়েছে জেনে তিনি বেশ উৎসাহ নিয়েই বইটি হাতে নিলেন এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দুটো কবিতা পড়ে বইটা কিনে নিলেন।

মেলার শেষ শুক্রবারঃ
শেষ শুক্রবার বলে সেদিন মেলায় কর্মজীবি ক্রেতাদের বেশ ভিড় হয়েছিলো। মনি আর রুমা এসেছিলেন ছুটির অবসরে। তারা “জীবনের জার্নাল” এ আগ্রহ দেখালেন, যেমন দেখালেন শিক্ষা মান্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও কন্যা জেনিফার। বুয়েটে অধ্যয়নরত স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র পলাশ শাকিল এর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম মাত্র পাঁচদিন আগে, ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক্স-ক্যাডেটদের প্রকাশিত বই প্রদর্শনীতে। তখনই সে আমাকে বলেছিল, বই মেলায় এসে আমার সাথে একদিন দেখা করবে। এই শেষ শুক্রবারে সেও এলো। আমাকে অনুরোধ করে জানালো যে আমি যদি দশ মিনিটের জন্য তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, সে আমার একটা পেন্সিল স্কেচ করে দেবে। আমার তাতে খুব একটা আগ্রহ ছিল না, তাই ‘দেখি’ বলে একটু সময় নিলাম এবং আমার বই এর প্রমোশনাল কাজে মনোনিবেশ করলাম। একটু পরে সে এসে আবার অনুরোধ করলো। তখন মেলা শেষ হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এবারে ভাবলাম, জীবনে এই প্রথম কোন একটা কিছুর মডেল হয়ে একজন শিল্পীর সামনে দাঁড়াবার প্রস্তাব পেলাম, সেটা গ্রহণ করতে আপত্তি কেন? তাই সদাহাসিমুখ এই তরুণের আন্তরিক অফারে রাজী হয়ে গেলাম। ঠিক দশ মিনিটই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর পলাশ আমাকে বললো, “ভাইয়া, এবারে আপনি আপনার কাজ করতে পারেন। আমি একটু ফাইন টিউনিং করে স্কেচটি আপনার হাতে দিচ্ছি”। ঠিকই মেলার আলো নিভে যাবার আগ মুহূর্তে এসে সে স্কেচটি আমাকে দিল। আমি স্কেচ হাতে তার সাথে সোৎসাহে একটা ছবি তুলে রাখলাম। বাসায় এসে দেড় বছরের নাতনিকে স্কেচটা দেখিয়ে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কে? ও সাথে সাথে স্কেচটাতে ওর ছোট্ট তর্জনীটা লাগিয়ে বললো, “দাদা”! বুঝলাম, শাকিল হাই মার্কস নিয়ে পাশ করলো। পরে অবশ্য শাকিলের আরো প্রতিভার কথা জেনে মুগ্ধ হই। স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র হওয়া ছাড়াও সে একজন ভাল কন্ঠশিল্পী, MECA Band এর সাথে জড়িত। কিছুদিন আগে দ্বাদশ মেকা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানেও সে গান গেয়ে এসেছে। তার আরও গুণ-সে একজন ভাল কার্টুনিস্ট এবং বই এর প্রচ্ছদ শিল্পী। এত গুণের অধিকারী এই সদা হাসিমুখ, সদা বিনয়ী শিল্পীর আমি সার্বিক সাফল্য কামনা করি। অপেক্ষায় থাকবো, বন্ধু বৎসল এই পলাশ জীবনে কতটা উঁচুতে উঠতে পারে, তা দেখতে….

খায়রুল আহসান
ঢাকা
২২ মার্চ ২০১৬


জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী বইপ্রেমী মুকুল মোস্তাফিজ


ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত জনাব হাদী, শত ব্যস্ততার মাঝেও যিনি রাতের বেলা সময় করে কবিতা পড়েন।


মনি ও রুমা- সহোদরা না বান্ধবী, সে প্রশ্নটা রয়েই গেলো....


শিক্ষা মান্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী এবং কন্যা জেনিফার এর সাথে...


এমসিসি/৪৩ ব্যাচ এর প্রতিভাধর পলাশ শাকিল, বুয়েটে স্থাপত্যবিদ্যা পড়ছেন। এছাড়া একাধারে একজন কার্টুনিস্ট, প্রচ্ছদশিল্পী এবং গুণী কন্ঠশিল্পীও বটে।


"দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে"....
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×