এই হাতে কি নিপুনভাবে তিনি বাঁধতেন খোঁপা!
ঠোঁটে ক্লিপ আটকে রেখে একটা একটা করে
খোঁপায় গেঁথে দিতেন। তারপর অলিন্দ থেকে
দু’একটা সতেজ ফুল এনে খোঁপায় লাগাতেন।
এই হাত ছিল তার নৃত্যকলার ভাষার প্রতীক,
এই হাত ছিল রসুইঘরের যাদুর কুহক কাঠি,
যার পরশে তৈরী হতো ক্ষুন্নিবৃত্তির উপকরণ।
এই হাত দোলাতো তন্দ্রাচ্ছন্ন শিশুর দোলনা।
এই চোখ দিয়ে কবি দেখতেন প্রকৃতির শোভা,
এই চোখে তিনি মেখে রাখতেন মেঘের কাজল।
এই চোখেই তার ঝলসে উঠতো দ্রোহের আগুন,
এই চোখ থেকেই নীরবে ঝরতো জলের প্রপাত!
হায়, আজ সে হাত দুটো নেই, সে চোখও নেই!
ভূতলে চাপা পড়ে আছে সে দুটো হাত, সে চোখ।
দৃষ্টি বার্তা পাঠাতো মনের গভীরে, উতলা মনের
নির্বন্ধে কবি যা লিখতেন, তা আজ শুধুই স্মৃতি!
(ছবিসূত্রঃ গুগল)
ঢাকা
২৩ আগস্ট ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
(পাদটীকাঃ আসলে, কবি কর্তৃক তার নিজের কবিতার কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা সমীচীন নয়। তবুও, যেহেতু কয়েকজন পাঠক কবিতাটি কার উদ্দেশ্যে লেখা বা কাকে স্মরণ করে লেখা এ কথাটি জানতে চেয়েছেন, আরও জানতে চেয়েছেন ‘এখানে নারী ও কবি কি আলাদা ব্যক্তি, নাকি নারী ও কবি একজনই- অর্থাৎ ‘নারীকবি’ - সেহেতু কিছু কথা বলতেই হয়। আমার জবাব শুনে হয়তো কেউ কেউ নিরাশ হতে পারেন, তবুও বলছি, কবিতাটি আমি কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে স্মরণ করে লিখিনি। একটা কঙ্কালের ছবি দেখে আমার কল্পনায় এসেছিল, বিশেষ করে কঙ্কালের হাতটা দেখে, যে এ কঙ্কালটি হয়তো কোন নারীর, এবং সে নারী তার জীবদ্দশায় কী কী করতেন, সেটা ভাবতে ভাবতেই এ কবিতাটা শুরু করেছিলাম। তৃতীয় স্তবকে এসে ভাবছিলাম একজন কবির কথা, যিনি দু’চোখ ভরে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পছন্দ করেন এবং সে সৌন্দর্য তার মননে ধারণ করে কবিতা লিখেন। যার দুটো মায়াভরা চোখ আছে (কবি নজরুলের মত – এখানে কাজলমাখা বলতে আমি মায়ামাখা বুঝিয়েছি), যার চোখ যেমন অন্যায়ের প্রতিবাদে দ্রোহের আগুন ঝরায়, তেমনি আবার প্রেম বা মায়ার আতিশয্যে অশ্রু ঝরায় - তার সেই সুন্দর চোখ দুটোও মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যায়, থাকে শুধু চক্ষুকোটর, কঙ্কাল করোটিতে। কবি ও নারী, উভয়ের সৃষ্টি ও সৌন্দর্য পৃথিবীতে রয়ে যায় স্মৃতি হিসেবে, তাদের তিরোধানের বহু বছর পরেও। কঙ্কালটির ছবি অনেকের কাছে বীভৎস লাগতে পারে, এজন্য এখানে পোস্ট করিনি। তবে গুগল সন্ধান করে একটি সুন্দর হাতের ছবি পেলাম, আবার সেই হাতের মাঝখানটিতে বসানো রয়েছে একটি সুন্দর চোখ। এ ছবিটা আমি কবিতা লেখার পরে দেখেছি। দেখে মনে হলো, কে যেন আমার কবিতাটা লেখার আগেই সেটা পড়ে নিয়েছিল এবং তারপর এ ছবিটা এঁকেছিল। কবিতার সাথে মিলে যায় বলে এ ছবিটাকেই এখানে সংযোজন করেছি।)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০১