somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইলস্টোন (গল্প)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিকশা থেকে নেমে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করলো লিটন। ঢাকার বাস তাকে কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হলো না। একটা ছোকরা এগিয়ে এসে বললো, ঢাকানি যাইবেন স্যার ?

লিটন হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়তেই ছোকরা ব্যস্ত হয়ে পড়লো-
-আইয়্যেন স্যার, সামনে সিট খালি আছে।
বলতে বলতে ব্যাগটা নিজের কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো ছোকরা। ওকে অনুসরণ করতে করতে লিটন জানতে চাইলো, বাস ক'টায় ছাড়বে ?
-আটটা বাজে।
ঘড়ি দেখে আশ্বস্ত হলো সে। সাতটা পঞ্চাশ। বেশিক্ষণ বসতে হবে না।

বাসের কাছে এসে দেখে আরেকটা ছোকরা ''ঢাকা'' ''ঢাকা'' বলে চেঁছাচ্ছে। তার সাথে আসা ছোকরা একটা সিটের সামনে ব্যাগটা রেখে বললো, বইয়্যেন, স্যার। বসার আগেই সিটটা পছন্দ হলো লিটনের। সামনের দিকে জানালার পাশে। আয়েশ করে বসে বাসের ভেতরটায় চোখ বুলিয়ে নিলো সে। পুরুষ মহিলা মিলে জনা আটেক যাত্রী আছে। তবে ব্যাগট্যাগের পরিমান দেখে বুঝলো আরো যাত্রী আছে। এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করছে।

বাইরে তাকিয়ে দেখে ওই ছোকরা আরেক যাত্রীকে প্রায় বগলদাবা করে নিয়ে আসছে। সাথে তার মুখও সমানগতিতে চলছে..
-আইয়্যেন, ছিট হছন্দ না অইলে আন্নে নামি যাইয়্যেন।
হঠাৎ ক্যাসেটে কোরবানী ছবির গান আর্তনাদ করতেই লিটন চমকে উঠে সামনে দিকে তাকালো। ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটাকে আগে লক্ষ্যই করেনি সে। ব্যাটা নাজিয়া হাসানের গলার সাথে তাল মিলিয়ে আচ্ছা মতো ভলিয়্যুম দিয়েছে।

কিন্তু গানে মন বসাতে পারলো না লিটন। মনটা কাল থেকে খুব খারাপ হয়ে আছে। বুকের ভেতর থেকে কি যেন বেরিয়ে গেছে। বড্ড খালি খালি লাগছে। অনেকবার মন থেকে এ ভাবটাকে তাড়াতে চেয়েছে সে। ভোলার জন্য নিজেকে নানা কাজে ব্যস্ত রেখেছে। কিন্তু কাজ হয়নি তাতে।

বাবার চিঠি পেয়ে বাড়ী এসেছিলো। এসে দেখে বিরাট আয়োজন। বেশ কয়েকজন মুরুব্বীস্থানীয় আত্মীয় উপস্থিত। বাবা তাদের সাক্ষী রেখে ওদের তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সব সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন।

বড়ো ভাই টাইটেল পাশ মাওলানা। একটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন আর সকাল বিকাল দোকানে বসেন। গ্রামের বাজারে তাঁর একটা কাপড়ের দোকান আছে। লিটন ঢাকার একটা সরকারী কলেজে অর্থনীতি পড়ায়। ছোট ভাইটা চট্টগ্রামে থাকে। এমবিবিএস পড়ছে। বোন দুটির বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা মা যতোদিন বাঁচেন বড়ো ভাইয়ের সাথে থাকবেন। ছোট ভাইটার পড়াশোনা, বিয়ে অর্থাৎ সংসার গুছিয়ে দেয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব। রান্নাবান্নাও আলাদা হচ্ছে কাল থেকে। তাই লিটন ঠিক করেছে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বউ নিয়ে আসবে। এতোদিন ওকে বাবা-মা'র খেদমতের জন্য বাড়ীতে রেখেছিলো।

কিন্তু কাল থেকে শান্তি পাচ্ছে না। মনটা উদাস হয়ে পড়ছে বারবার। এক সাথে ছিলো সবাই। সংসারের ভার ছিলো বাবার কাঁধে। বাবা চাকুরী থেকে অবসর নিলেন। এবার অবসর নিলেন সংসার থেকেও। এখন থেকে যার যার সংসার তার তার কাঁধে। এভাবেই বুঝি একের পর এক কাঁধ বদল করছে সংসার।পুরনোদের সরিয়ে নতুনরা আসছে। চোখের পাতারা ভারী হয়ে আসে লিটনের।

জোরালো ব্রেকে গাড়ীটা ঝাঁকুনি খেয়ে থামতেই বাস্তবে ফিরে এলো লিটন। খানিকটা বিব্রতও হলো। আশেপাশের যাত্রীদের ওপর চকিতে চোখ বুলিয়ে বুঝতে চাইলো কেউ ওকে লক্ষ করছে কিনা। তারপর আচমকা ব্রেকের কারণের দিকে মন দিলো। এক ভদ্রলোক সপরিবারে বাসে উঠছেন। আবার চলতে শুরু করে বাস।

বাইরে তাকিয়ে অবাক হলো। প্রায় মাইল খানেক রাস্তা পেরিয়ে এসেছে। কখন স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়লো বলতেই পারেনা।

বাসের ভেতরাট একবার দেখে নিয়ে আবার বাইরে তাকালো লিটন। সকালের সূর্যটা উজ্জ্বল আলোর সমুদ্রে পৃথিবীকে ডুবিয়ে রেখেছে। দূরের গাছগাছালী মৃদু বাতাসে দুলছে। ঘরবাড়ীগুলো সাঁই সাঁই করে পেছনে সরে যাচ্ছে। মাথা বের করে সামনের দিকে তাকালো সে। বেশ খানিকটা দূরে একটা মাইলস্টোন দেখতে পেলো। তাকিয়ে রইলো ওটার দিকে। কাছে আসতেই চমকে উঠলো- এটা আবার কবে বসালো !

এর ভেতর লেখাগুলো পড়েও নিয়েছে- ''ঢাকা ১৮২ কিলোমিটার, বেগমগঞ্জ ৬ কিলোমিটার''। পত্রপত্রিকায় এসব চালু হবার খবর সে পড়েছিলো। তবে তেমন গা করেনি।

চোখের সামনেই কেমন করে বদলে যাচ্ছে দুনিয়াটা ! - ভাবলো সে।
আবার সামনে তাকালো। ছুটে চলেছে বাস। দূরে দেখতে পেলো কয়েকজন লোক গাঁইতি শাবল দিয়ে রাস্তার পাশে কি একটাকে ঘিরে কাজ করছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো দৃশ্যটা। কাছে আসতেই বুঝতে পারলো। একটা পুরনো মাইলস্টোন উপড়ে ফেলছে ওরা। ওদের কাছ থেকে হাতবিশেক দূরে একটা ট্রাক দাঁড়ানো রাস্তার পাশে। অলস ভঙ্গিতে স্টিয়ারিং হুইলে হাত রেখে বসে আছে ড্রাইভার। গাড়ীর সামনে কালো হরফে লেখা-''স ও জ''।

সবকিছু পেছনে ফেলে ছুটতে থাকা বাসের বাইরে তাকিয়ে থাকে সে। হঠাৎ ছোটবেলায় দেখা বাবার সুঠাম দেহটা ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে এখনকার বার্ধক্যভাঙ্গা দেহটাও। মনে পড়ে নিজের শৈশব ছেড়ে যুবক হবার কথা। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস !
১ আগস্ট ১৯৮৪;
অনন্তপুর, নোয়াখালী।
( মাইল বাতিল করে কিলোমিটার তথা মেট্রিক পদ্ধতি চালুর পর লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৫১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×