somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ৭

২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব -
Click This Link

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ

১৯৮০ সালে ভর্তি হলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজে। এখানে এসে দেখা পেলাম শিক্ষক হিসাবে এবং তারকা হিসাবে এই দুই বিচারেই বিখ্যাত শিক্ষকদের। অন্য কয়েক জনের সাথে অধ্যক্ষ হিসাবে পেয়েছি প্রফেসর আবদার রশীদকে। তাঁর লেখা কবিতা এক সময় স্কুল পাঠ্যও ছিলো। ''চড়ুই ভাতি'' নামে স্যারের লেখা ছড়াটি অনেকেরই পড়া।

উপাধ্যক্ষ হিসাবে পেলাম ওয়াজেদ আলী স্যারকে। রসায়নের অধ্যাপক। রসায়নের ওপর তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি পাঠ্য বই তখন বাজারে ছিলো।

বিভাগ হিসাবে সবচেয়ে তারকা সমৃদ্ধ ছিলো অর্থনীতি বিভাগ। পুঁথিঘর প্রকাশিত আনিসুর রহমানের অর্থনীতির বই ছিলো সুপারহিট। যখন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাদের মূল বেতন শুরু হতো ৭৫০ টাকা দিয়ে তখন বই থেকে আনিসুর রহমান স্যারের মাসিক গড় রয়ালটি ছিলো ৩ হাজার টাকার বেশী। তখনকার আরেকটি জনপ্রিয় বই ছিলো হক-রহমানের অর্থনীতি। এদের একজন অধ্যাপক আবদুর রহমানও ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অর্থনীতি বিভাগে। সৈয়দ আকমল মাহমুদের বইটি বেশী জনপ্রিয় না থাকলেও ভালো ছাত্ররা বইটি দিয়ে বেশী উপকৃত হতো। ভিক্কোরিয়া কলেজে পড়ার সময় আকমল মাহমুদ স্যারকে বেশী দেখিনি। কারণ তিনি প্রায়ই তাবলীগে চলে যেতেন। অর্থনীতি বিভাগের সব চেয়ে দামী বইটি লিখেছেন মনতোষ চক্রবর্তী। এই সেদিন পর্যন্তও দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগছে মনতোষ স্যারের বইটি। কারন এটি ছিলো ইকোম্রেট্রিক্স ভিত্তিক।

তবে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে তারকা খ্যাতিতে একাই একশ' ছিলেন মোবাশ্বের আলী স্যার। তাঁর লেখা বিশ্বসাহিত্য, মধুসূদন ও নবজাগৃতি ইত্যাদি বই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের এখনো অবশ্য পাঠ্য হয়ে আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় বলে স্যারকে খুব একটা পাইনি আমরা।

আমি ভর্তি হয়েছিলাম বিজ্ঞান শাখায়। সেখানেও নানা তারকার ভীড় ছিলো। এবার তাঁদের কথা বলবো যাঁদের সরাসরি ছাত্র হবার গৌরব লাভ করেছি।

স্বপ্না রায়

বাংলার ক্লাস করার জন্য বসে আছি। এমন সময় সবার চোখ ছানাবড়া করে ক্লাসে ঢুকলেন এক টুকরা সুন্দর। মনে হলো পথ ভুল করে একটি পরী ভিক্টোরিয়া কলেজের পুরনো শ্রীহীন পাকা টিনশেড ভবনে ঢুকে পড়েছে। হালকা প্রিন্টের শাড়ী চোখে সরু সোনালী রীমের চশমা। স্বপ্নীল চোখ মেলে হালকা গলায় বললেন, আমি স্বপ্না রায়। তোমাদের বাংলা পড়াবো।

সারা ঘরে পিন পতন নীরবতা। তিনি পড়াতে শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ''হৈমন্তী''। আমার এখনো মনে হয় এ গল্প পড়ানোর অধিকার শুধু স্বপ্না রায়েরই আছে। নিজেই যেনো সত্যিকারের হৈমন্তীর মতো স্বর্গের সব সুষমা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির। পড়াতেন খুব সুন্দর করে। ভালো শিক্ষক হওয়ার নিয়তি নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি। কারণ তিনি ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের ইংরেজী বিভাগের কিংবদন্তী এন জি রায়ের মেয়ে।

পড়াতেন খুব মজা করে। একদিন ক্লাসে এসে পড়লেন উপমা নিয়ে। বললেন, কবিরা যে উপমা দেন সেটার আসল অবস্থা দেখো। বলে বোর্ডে আঁকতে শুরু করলেন- মেঘের মতো চুল - বোর্ডে মেঘ আঁকলেন। (আঁকার হাতও ছিলো দারুন) বাঁশির মতো নাক- বাঁশি আকৃতির নাক আঁকলেন। পাখির নীড়ের মতো চোখ- পাখির বাসা আঁকলেন। কেউ কেউ বলেন, পটল চেরা চোখ -আরেক প্রান্তে চেরা পটল আঁকলেন। এরকম চাঁদের মতো মুখ- মেঘের নীচে বাকীসব ঘিরে গোল চাঁদ আঁকলেন। এরকম আরো উপমা মিলে আঁকা শেষ করে বললেন- এবার বলো এই সুন্দরীকে কে কে বিয়ে করতে রাজী ?

পুরো ক্লাস ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে। প্রথম বছর পুরোটা গেলো হৈমন্তী নিয়ে। কারণ সপ্তাহে একটি মাত্র ক্লাস ছিলো তাঁর। কি নিষ্ঠুর অপেক্ষায় যেতো পুরো সপ্তাহ !

দ্বিতীয় বর্ষে অবধারিতভাবেই তিনি পড়িয়েছেন শরৎ চন্দ্রের ''বিলাসী''।

পাদটীকা- এটাই ছিলো আমার জীবনে প্রথম কোন ম্যাডামের ক্লাস করা।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৪৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×