যে দেশে একটি মেয়ে, একটি মেয়ে শিশু নিরাপত্তায় নেই, সেই দেশ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। যে দেশের আইন মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভাবে না, সেই দেশে আইন না থাকাই ভালো। যে দেশে স্বাধীন স্বাধীন বলে সবাই দোহাই দেয়, সে দেশ কিসের স্বাধীন? আমি জানতে চাই।
- এই দেশের ভদ্র লোকদের কাছে আমার প্রশ্ন, হা করে বসে বসে কি আপনারা টিভির নিউজ আর খবরের পত্রিকা পড়ে দুঃখ প্রকাশ করবেন? আর লেখা-লেখি করে কলামের পর কলাম ভরে নাম জাগাবেন। নাকি আপনার মেয়ে বা বোন বা বৌ এর কথা ভাববেন? কিছু ছেচড়া কুকুর-বিড়ালের হাতে একটি মেয়ের জীবন নাশ হচ্ছে আর আপনারা ভদ্রতার মুখোশ পরে বসে আছেন। আপনারা না শিক্ষিত ভদ্র সমাজের লোক? যদি তাই হয়ে থাকেন তাহলে, আপনাদের চোখের সামনে কি সব ঘটনা ঘটছে দিনের পর দিন সেই গুলো কি আপনাদের চোখে পরছে না? একজন বাস ড্রেইভার, একজন বাসের হেলপার যার পরিচয় একজন টোকাই, সমাজের একটি অশিক্ষিত, যার অ আ লেখার যোগত্যা নাই যার পরিচয় কিনা একটি কুকুর, জন্ত জানোয়ার সেই সব জনোয়ারদের সাথে আপনারা পেরে উঠতে পারছেন না। হেরে যাচ্ছে আপনারা। ছি..ছি...ছি লজ্জা থাকার কথা আপনাদের। আপনার এতোটাই অপদার্থ? কিছু ভদ্র লোক আছেন যারা বসে বসে কলম খুচিয়ে লিখে যে ধ্বর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাকই দায়। হায়রে ভদ্র লোকেরা কবে যাবে আপনাদের এই মেয়েদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার অনুভূতিটা?
নিচের এই বোল্ট করা লেখাটি পড়ে দেখুন “আমাদের সময়” অনলাইন পত্রিকা থেকে কপি করা।
রাজধানীতে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল ও কলেজের এক ছাত্রী। মায়ের সঙ্গে বাসে চড়া ওই ছাত্রী এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। আব্দুল্লাহপুর থেকে রামপুরা যাওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে সে। মাঝপথে বাসটির বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। ওই ছাত্রী ও তার মা রামপুরায় বাস থেকে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে মা নেমে যান। কিন্তু ওই ছাত্রীকে নামতে চেষ্টা করলে তার হাত টেনে ধরে ৪/এ নম্বর রুটে সদরঘাট থেকে ছেড়ে গাজীপুরা পর্যন্ত চলাচলকারী পরিবহনটির এক কর্মী। তখন হাতে থাকা টিফিন বক্স দিয়ে পরিবহন কর্মীকে আঘাত করে বাস থেকে লাফিয়ে নামে ওই ছাত্রী।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রামপুরায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে ওই ছাত্রী সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা লিখে জানান।
ওই পোস্টটি নিচে তুলে ধরা হল-
‘একটা স্টিলের টিফিন বক্স আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’ আব্দুল্লাহপুর থেকে রামপুরা আসার জন্য বাসে উঠেছিলাম সাড়ে ৬টার দিকে। বাসে দুজন কন্ডাক্টরের একজন মনে হয় ড্রিংক করেছিল।
অনেক ভিড় ছিল, তবে রামপুরা আসতে আসতে প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। পেছনের দিকে কয়েকজন ছেলে বসেছিল আর সামনের দিকে আমি আর আম্মু। বাসের লাইটগুলো বনশ্রীতে এসে বন্ধ করে দেয় ড্রাইভার, বলে যে তার হেডলাইট নষ্ট এ জন্য বন্ধ করেছে।
কালকে (সোমবার) সকালে পরীক্ষা, হাতে সময় নেই বলে কেউ এটা নিয়ে ঝামেলা করিনি। রামপুরায় পৌঁছে গেলে বাস জ্যামে পড়ে আর আমরা নামার জন্য দরজার দিকে যেতে থাকি।
আম্মু প্রথমে নামে। আমি দরজা পর্যন্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমার হাত চেপে ধরে, আম্মু ততক্ষণে নেমে গেছে। আমি নামার চেষ্টা করি কিন্তু বাস সামনের দিকে যেতে থাকে আর পেছনে কয়েকজন বলছিল- ‘মাইয়াটারে ধর’। কী করব বোঝার মতো সময় ছিল না। অন্য হাতে একটা স্টিলের টিফিন বক্স ছিল ওইটা দিয়ে লোকটাকে বাড়ি মারলাম। কতটা লেগেছিল জানি না, কিন্তু আমাকে ধরে রাখা হাতটার শক্তি কমে গেল। ধাক্কা দিলাম লোকটাকে, বাস থেকে লাফ দিলাম।
আমার ভাগ্য ভালো ছিল যে বাস আস্তে যাচ্ছিল আর মধুবনের সামনে জ্যাম ছিল। নেমে পেছনে দৌড় দিলাম। দূর থেকে আম্মুকে দেখতে পেলাম, আমাকেই খুঁজছে। জানতাম যে রাস্তায় একা বের হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আজকে জানলাম মায়ের সঙ্গেও বের হয়েও আমি নিরাপদ না। কালকের খবরের কাগজে আমিও হয়তো একটা কলাম হয়ে যেতাম- আমার রক্ত-মাংসের শরীরটার জন্য, কিছু জানোয়ারের জন্য।
যে দেশে একটা মেয়ে তার মায়ের সঙ্গেও সুরক্ষিত নয়, সেই দেশ আর যাই হোক স্বাধীন নয়।
- কি বুজলেন আপনারা পড়ে?
- প্রত্যেকটি দিন, প্রত্যেকটি দিন এমন হচ্ছে কেনো? কোনো? কোনো? যদি এটা প্রতিদিন হয়ে থাকে তাহলে তো মনে করবো দেশে কোন ভদ্রসমাজের লোকই নাই, শৃংঙ্খলা কোন সমাজই নাই, ন্যায়ের কোন আইনই নাই, কোন সরকার নাই, দেশ স্বাধীন নয়। তাহলে কি বলবো আজ ঐ সব নর-পশুদের জন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছে, কোনো মেয়ের জন্য স্বাধীন হয়নি।
- যে ভদ্র সমাজ পারে না একটি অগাছাকে উগলে ফেলে দিতে, যে স্বাধীন দেশ পারে না একটি অগাছাকে উগলে ফেলে দিতে, যে আইন পারে না একটি অগাছাকে উগলে ফেলে দিতে, পারে শধু ঐ অগাছাকে আরো পানি ঢেলে বাচিয়ে রাখতে। সেই সমাজ, সেই আইন সেই দেশ দিয়ে কি হবে তাহলে, ঘৃর্ণা ছাড়া আর কি আছে এগুলোর প্রতি।
- আমি প্রতিটি মেয়ের হয়ে বলছি ঘৃর্ণা ছাড়া আর কিছুই থাকতে পারে না। পুরুষরা খুব বরাই দেখায় যে ওরা পারে অনেক কিছু পারে, কিন্তু কি পারে? কিচ্ছুই পারে না। পারে শুধু কুলঙ্গা কাজ করতে, আর কিছু না। কিন্তু এর জবাব তো একদিন ঠিক দিতে হবে। সেই দিন কোথায় থাকবে ওদের এই বরাইটা সেটাও দেখবে ওরা।
-ছবিটি নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২