আমার এই শখের শুরু ভার্সিটি জীবন শেষ করার পর থেকেই। পাশ করার পর চাকরি নিয়ে ঢাকা চলে এলাম। একটা ঘর বিশিষ্ট টয়লেট কিচেনসহ বাসা ভাড়া নিলাম নারিন্দার লাল মোহন সাহা স্টীট-এ। নানীর বাড়ীর খুব কাছেই। ইচ্ছা করলে বড় বা মেজ মামার বাসায় থাকতে পারতাম। কিন্তু কারও উপর বোঝা হতে মনে প্রাণে আপত্তি ছিল। তাই একাই থাকতাম। গান শুনতাম, ক্যামেরা নিয়ে নাড়া চাড়া করতাম। নিজেই মাঝে মধ্যে রান্না করতাম শখ করে। আব্বা ঢাকায় এলে আমার এখানেই উঠতেন। 210 টাকার এই ঘুপচি ঘর দেখে গজ গজ করতেন। কারণ আব্বা রাজশাহীর নিজের দোতালা বাড়ীর সঙ্গে এটার তুলনা করতে যেয়ে ভুল করতেন। অধিকাংশ সময় আমি বাইরে খেতাম। আব্বার সকালে মাঠা (ঘোল) খাওয়ার অভ্যাস ছিল। পুরোনো ঢাকায় ভোরবেলা এটা পাওয়া যেত। সাথে লুচি মোহন ভোগ। পুরান ঢাকার মানুষ বাইরের নাস্তায় অভ্যস্ত। অমিও তাই ছিলাম। দুপুরে অফিসে আর রাতে সুবিধে মত কোথাও খেয়ে নিতাম। এই সময় হাজীর বিরানী ছিল মাত্র দু'টাকা প্লেট। এখন সেটা 70 টাকা প্লেট।
ক্যামেরা ও গান শোনার যন্ত্রের প্রতি শখ ছিল স্কুল জীবন থেকেই। আব্বার সেই বিখ্যাত "রোল্যিকর্ড" ক্যামেরা আর বাসার "হিজ মাষ্টারস্ ভয়েস" কোম্পানীর বিশাল এক গ্রামাফোন ব্যবহারের মাধ্যমে। "হিজ মাষ্টারস্ ভয়েস" এর একটা বিশাল ভাল্ব রেডিও তখন বাসায় ছিল। ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত বেতার যন্ত্র তখন আসেনি। আকাশবানী কোলকাতা'র অনুরোধের আসর, গীতি মালা, গীতিকা ও সাপ্তাহিক নাটক; 'রেডিও সিলোন' থেকে প্রচারিত পুরোনো দিনের হিন্দী গান; গৌহাটি কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক ভাষার গান ও আধুনিক বাংলা গানের অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত শুনতাম।
ছবি তোলার চাইতে ক্যমেরা ও এর ব্যবহার আর গান শোনার চাইতে গান বাজানোর যন্ত্রের প্রতিই আমার আগ্রহ ছিল বেশী। আর সেই বয়সে এই নেশাটাও ছিল ব্যতিক্রমধমর্ী নেশা। তবে ছবি তোলার নেশা যে কম ছিল তা না। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতাম। আমি জীবনে প্রথম ক্যামেরার শাটারে টিপ দেই 8/5 বছর বয়সে। প্রথম একা একা ছবি তুলি কাশ থ্রী-তে পড়া কালীন সময়ে। সেটা ছিল আব্বার খুব শখের সেই "রোল্যিকর্ড" ক্যামেরা। জামর্ানীর তৈরী বক্স টাইপ ক্যামেরা। এই ক্যমেরার বৈশিষ্ট্য ছিল এর 'ডুয়াল লেন্স' পদ্ধতি। একটা লেন্সের মাধ্যমে সাবজেক্ট "থ্রু দ্যা লেন্স" হয়ে ভিউ ফাইন্ডারে সরাসরি ইমেজ দেখার কাজ করতো। আর একটা লেন্সের মাধ্যমে সাবজেক্ট-এর ইমেজ শাটারের রিলিজের মাধ্যমে আলো সরাসরি নেগেটিভে পড়তো। ফলে প্রতিটি ফ্রেম ইচ্ছেমত ভিউ ফাইন্ডারে দেখে কম্পোজ করার সুবিধে ছিল। এতে আলোক বিন্যাসের তারতম্যও বোঝা যেত। সাবজেক্ট-এর প্রতিফলিত ইমেজ পরিস্ফুটনের মাধ্যমে নেগেটিভ থেকে এখনকার মতোই স্টুডিওতে পজিটিভ ছবির প্রিন্ট বের করা হতো। আর সেগুলো ছিল সম্পূর্ণ সাদা-কালো ছবি।
ছবি ঃ নদী ও নৌকা
(বিভিন্ন সময়ে শখের বশে তোলা আমার কিছু ছবির সংগ্রহ থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




