"রোল্যিকর্ড" এবং "রোল্যিফ্লেক্স" ক্যামেরার লেনস্ ছিল বিশ্বসেরা লেন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান "কার্ল জীস"-এর হাইলি প্রিসাইজড্ হ্যান্ড ক্র্যাফটেড "সুমি কর্ণ" লেন্স। এই ক্যামেরায় 120 ফরম্যাটের ফিল্ম ব্যবহার করা হতো। এই 120 ফরম্যাটের নেগেটিভ ফিল্ম দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতিষ্ঠিত স্টুডিওগুলোতে ছবি তোলার কাজে ব্যবহৃত হতো। আর তা ছিল সম্পূর্ণ সাদা কালো মাধ্যমে। পাসপোর্ট আকারের ছবি হোক কিংবা আউটডোরের যে কোন অনুষ্ঠানের ছবি হোক সেগুলো তোলার কাজে এই ক্যামেরার ব্যবহার ছিল অপরিহার্য। গুনে, মানে ও দামে বক্স ক্যামেরা তখন পেশাদার বা এ্যামেচার ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের প্রতীক। পরবতর্ী সময়ে জনপ্রিয় বঙ্ ক্যামেরার মধ্যে ছিল "ইয়াসিকা 303" ও "ইয়াসিকা ম্যাট"। আরেকটু পরের দিকে ব্যবহার হতো অপেক্ষাকৃত দামী সেমি প্রফেশনাল "মামিয়া 606" ও "645"। তখন আরও দামী ক্যামেরা ছিল আসাহি পেন্ট্যাক্স -এর 6 বাই 7। রোল্যি বাদে এগুলো সবই জাপানের তৈরী।
অত্যন্ত নিখুঁত ও পেশাদারী কাজের জন্য সবার পছন্দের ও স্বপ্নের ক্যামেরা ছিল সুইডেনের তৈরী "হ্যাসেলব্ল্যাড"। ষাটের দশকের প্রথমদিকে এই ক্যামেরা বানিজ্যিকভাবে বাজারে আসার পর থেকে অদ্যাবধি উৎকর্ষতা, গুণগত মান, টেকসই ও বহুমুখী ব্যবহারিক সুবিধার জন্য ও রুচিশীল আঙ্গিকের জন্য বিশ্বের বাজারে সেরা ক্যামেরা হিসেবে স্বীকৃত। "হ্যাসেলব্ল্যাড" মানেই আভিজাত্য ও অহংকারের প্রতীক। এই ক্যামেরাতে জামার্নীর তৈরী "কার্ল জীস" এর অত্যন্ত সফিস্টিকেটেড লেন্স ব্যবহার করা হয় যা সম্পূর্ণভাবে হ্যান্ড ক্রাফটেড। প্রফেশনালিজম ও কারিগরী উৎকর্ষতার দিক থেকে এই ক্যামেরার সমকক্ষ কোন ক্যামেরা আমার জানা মতে আগেও ছিল না, এখনও নেই। এর পরেই যে ক্যামেরার নাম আসে তা হলো জামর্ানীর "লাইকা" ব্রান্ডের ক্যামেরা। এটা 35 মিমি ফরম্যাটের ক্যামেরা। তবে বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফারেরর পছন্দের তালিকায় এখনও নাম্বার ওয়ান প্রফেশনাল ক্যামেরা "হ্যাসেলব্ল্যাড"। বিশ্বের সেরা মডেল ফটোগ্রাফাররা এই ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গর্ববোধ করেন। জাপানের "নিকন" বা "নাইকন" ব্রান্ডের কিছু অভিজাত মডেলের ক্যামেরা বর্তমান সময়ে প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যানদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত।
আমার এই শখের কারণে ব্যক্তি জীবনে অনেক জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হয়েছি। বাংলাদেশে আলোকচিত্রকে যারা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এমন অনেকের সাথেই আমি পরিচিত হতে পেরেছিলাম শুধু মাত্র এই ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফীর উপর নেশা ও শখের কারণে। বিখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী মরহুম মঞ্জুরুল আলম বেগ, আন্তর্জাতিক পযর্ায়ে খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্র শিল্পী ডঃ নওজেশ আহমেদ, স্থপতি, চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্র শিল্পী জনাব আনোয়ার হোসেন, চলচ্চিত্রকার জনাব সৈয়দ সালাউদ্দির জাকী, আলোকচিত্র শিল্পী জনাব শফিকুল ইসলাম স্বপন এবং সর্বজনাব শামসুল ইসলাম আলমাজি, চঞ্চল মাহমুদ, হাবীব আহসান, তানভীর মোকাম্মেল প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের কাছে আসতে পেরেছিলাম। দীর্ঘদিন তাদের কারও সাথেই আর তেমন যোগাযোগ নেই। আনোয়ার ভাই ফ্রান্স থেকে দেশে বেড়াতে এলে কদাচিৎ দেখা হয়। আরও অনেকের সাথেই খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এই মাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে। নিজের এই শখ থেকে একসময় সরে এসে আমার ছোট ভাই হায়দারকে ক্যামেরাসহ ফটোগ্রাফীর যাবতীয় সামগ্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। ফটোগ্রাফিতে নাম হবে, ভাল একটা ক্যারিয়ার হবে এই আশায়। এর চেয়েও বড় কথা আমার প্রিয় এই শখটা ও বাঁচিয়ে রাখবে সেই আশায়। হায়দার দীর্ঘকাল ফটোগ্রাফী করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করেছিল। ওর এই কৃতিত্বে আমি এখনো গর্ব অনুভব করি। কারণ ওর এই সাফল্যের পিছনে কিছুটা হলেও আমার ভূমিকা ছিল।
ছবিঃ মানুষ ও জীবিকা
(বিভিন্ন সময়ে শখের বশে তোলা আমার কিছু ছবির সংগ্রহ থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




