আজ ভোরে একটা স্বপ্ন দেখলাম। তবে একে দুঃস্বপ্ন বলাই ভাল। দেখলাম আমাগো এক পশু ডাক্তার "বার্ড ফ্লু" তে আক্রান্ত। এই রোগ সম্পর্কে তার কোন ধারনা নাই। ডাক্তার তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এতোদিন 'রানীক্ষেত', 'খুরা রোগ', 'অশ্বরোগ' এগুলোর চিকিত্সায় বেজায় সিদ্ধহস্ত ছিল। কিন্ত নতুন এই জটিল রোগে ধরা খেয়ে তার সবকিছুতে প্যাঁচ লেগে গেল। মাথাটা কেমন আউলা হয়ে গেল। তাই জ্বরের ঘোরে সব উল্টা পাল্টা চিন্তা আর প্রলাপ বকা শুরু হইলো। সে মনে মনে প্রতীজ্ঞা করলো এই যাত্রা রক্ষা পাইলে সে আর কোনদিন পশুর চিকিত্সা করবে না। মানুষের চিকিত্সা করা অনেক ভাল। পশুর মতো বোবা না তারা। সবকিছু খুলে বলতে পারে। পশুর চিকিত্সা করতে করতে নিজেই একসময় মানুষের সহজ সরল ভাষা ভুলে গ্যাছে।
এমনিতেই দেশে পশু হাসাপাতালগুলো আজ বন্ধ হবার যোগার। গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল, মুরগী, হাঁস, ঘোড়া ইত্যিদির চিকিত্সা করে আজকাল মোটেও পোষায় না। ঘোড়াগুলো এখন রুগ্ন, জীর্ণ, হাড্ডিসার। শুনেছি ঘোড়ার দেহের বিশেষ এক জায়গার 'জিন' বা 'কোষ' থেকে সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরী হয়। তা দিয়ে সাপে কাটা রোগীদের চিকিত্সা করা হয়। 'সাপের ঔষধ' তৈরীর প্রকল্পের নামে তাই বেশ কিছু ঘোড়া বরাদ্দ ছিল। সৌদী ঘোড়ার নামে টাকা নিয়ে দেশী ঘোড়া দিয়ে কাজ চলতো। সেই সুবাদে মোটা অংকের টাকাও আসতো বিদেশ থেকে। সেই টাকায় ডাক্তারের দিনকাল ভালই চলতো। অনাহারী ঘোড়াগুলোর ছোলা আর ভুসি বাজারে চড়া দামে বেচে বেশ কিছু বাড়তি আয় হতো। সেই সাধের প্রকল্প আজ বন্ধ হবার যোগাড়। তাই পশু ডাক্তার আজ পশুর চিকিত্সা ছেড়ে মানুষের চিকিত্সা করতে বিশেষ আগ্রহী। কারন মানুষের চিকিত্সায় অর্থ ছাড়াও বাড়তি কিছু লাভ আছে। এতে সুন্দরী নারী রোগীদের চমত্কার সেবা করা যায়। তাদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রত্যক্ষ ও পরীক্ষা করার সুযোগ হয়। এতোকাল এমন সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত। পোড়া কপাল না হলে কি কেউ পশু চিকিত্সক হয়? জীবনে কতো বড় ভুল সে করেছে ভাবলে মাছের মায়ের চোখেও অশ্রু গড়ায়।
কিন্ত পশু ডাক্তারের সমস্যা একটাই। সে চিরকাল চিকেন হার্ট, কবুতরের বিষ্ঠা, ছাগলের লাদি, ভেড়ার পশম, ষাঁড়ের অন্ডকোষ, বলদের গুর্দা, পোয়াতী গাভীর মূত্র, উন্নত মানের গোবর সার, কুকুরের ঘি হজম করা ও পশম বিনাশ বন্ধ, বিড়ালের লালা, হাড্ডি ও নিঃশব্দে চলাফেরার রহস্য ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও গবেষণা করতে করতে তার জীবন শেষ। মানুষ ও মানুষের মন সম্পর্কে সে আজ রীতিমত অজ্ঞ। তাই যে করেই হোক পশুর জীবন থেকে সে চিরকালের মতো মুক্তি চায়। মানুষের হৃদয় ঘটিত ব্যাপারগুলো আজ সে বুঝতে চায়। অথচ তার মাথায় এই ব্যাপারগুলো কিছুতেই আসে না। পশুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হয়ে সে আজ কিছুতেই মানবীয় আচরণ রপ্ত করতে পারছে না। তাই এসেছে আমার কাছে পরামর্শ চাইতে। ঠিক তখনই আমার ঘুম তখন ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। জানালার কাছে এসে দাঁড়াতে চোখে পড়লো একটা কুকুর ডাষ্টবিনের নোংরা ঘাটছে। তার গায়ে লোম নেই। কবে কখন ঘি খেয়ে তার গায়ের চামড়া লোমহীন। দেখে মায়া হলো। চোখ গেল তার লেজের দিকে। ওটা কিন্তু তখনো বাঁকা। কারন কুকুরের লেজ নাকি কখনই সোজা হয় না। কোন পশু ডাক্তারকে কাছে পেলে জিজ্ঞেস করতাম, কারনটা কি?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:০৩