somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম বলে যারেঃ ভালবাসা দিবস স্পেশাল (প্রথম পর্ব)

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম বলে যারেঃ ভালবাসা দিবস স্পেশাল (প্রথম পর্ব)

ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে এমন কিংবদন্তি প্রেমের সংখ্যা খুব বেশী নয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে এমন প্রেমের সংখ্যা আঙ্গুলের কড়া গুনলেই শেষ হয়ে যায়। বিখ্যাত সব প্রেমকাহিনীর শেষ পরিণতি মোটেও সুখের নয় বরং বেশ কষ্টের। অমর সেইসব প্রেমকাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, কাব্যগীতি, লোকগাঁথা, পুঁথি আরও কত কী। নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র। সৃষ্টি হয়েছে বিখ্যাত শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য।

বাস্তবে কিংবা গল্পে প্রতিটি বিখ্যাত প্রেমকাহিনীর শেষ দৃশ্যটা মূলতঃ বিয়োগান্তক বা হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী। সেইসব প্রেমকাহিনীতে একের পর এক ট্রাজেডির সমাবেশ। প্রেমিক প্রেমিকার মিলনের অন্তরায় জটিল কোন সামাজিক সমস্যা নয়তো ক্ষমতার দাপট। আছে মর্যাদা আর ক্ষমতার লড়াই কিংবা বিচিত্র কোন নাটকীয় পরিস্থিতির অবতারণা। ক্ষেত্র বিশেষে প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে শ্রেণীগত বা বর্ণগত বৈষম্য। প্রতিটি প্রেমকাহিনীতে কোন না কোন অযাচিত ঘটনা প্রেমকে করেছে কলুষিত নয়তো বিরহ ও ব্যর্থতার প্রতীক। “অমরপ্রেম” মানেই প্রেমের শেষ পরিণতিতে বিচ্ছেদের ঘটনা। এমন সব ঘটনা সাধারণ প্রেমিক মানুষ বা প্রেমে বিশ্বাসী মানুষেরা চট করে মেনে নিতে পারেনা।

সামাজিক অনুশাসনের মধ্যে থেকে প্রতিটি প্রেম তার নিজস্ব একটা পথ বের করে নেবার চেষ্টা করে। সেটা গোপনেই হোক বা লোক চক্ষুর আড়ালেই হোক। অনেক সময় বাস্তব বা সমাজ প্রেমের পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সমাজের কঠিন অবস্থানের কথা ভেবে অনেক রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে-মেয়ে প্রেমের নামে শিউরে ওঠে। তাদের অনেকেই প্রেমের শেষ পরিণতির কথা ভেবে মন থেকে প্রেম করার সকল ইচ্ছা দমন করে। পরিবারের এমন সব বাঁধার মুখে অনেক প্রেম অংকুরেই বিনষ্ট হয়। তবুও মনে হয় মানুষের মন এক বিচিত্র ধাতে গড়া। সবকিছু ডিঙ্গিয়ে মানুষ প্রেম করে, প্রেমে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত প্রেমকে জয়ও করে।

বর্তমান যুগে ব্যর্থ প্রেম মানেই- গলায় দড়ি দেয়া নয়তো ফ্যানের সিলিং-এ ফাঁস লাগানো। প্রেম করে ব্যর্থ হলেই ইঁদুর মারার ঔষধ নয়তো কীটনাশক সেবন করা। প্রেমে প্রতারিত বা বাঁধা পেলেই নদীতে ঝাঁপ দেয়া নয়তো ট্রেনের নীচে আত্মাহুতি দেয়া। প্রেমে সফল না হওয়ায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে। আজকাল অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেমে ব্যর্থ হলেই ব্লেড বা ধারালো কিছু দিয়ে হাতের রগ কাটে। অনেকে আবার মনের দুঃখে মাদক বেছে নেয়া নয়তো মাতাল হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া। আমি নিজে অনেককে প্রেমের কারণে জ্বলন্ত সিগারেটে হাত পোড়াতে দেখেছি। ঘুমের বড়ি খেতে দেখেছি। আত্মহত্যা করতে দেখেছি।

আগের দিনে প্রেমের চিত্রটা ছিল একটু ভিন্ন। সেই যুগে গোত্রে গোত্রে ছিল সংঘাত। এক গোত্রের ছেলে অন্য গোত্রের মেয়েকে পছন্দ করলে বা প্রেম নিবেদন করলে পুরো গোত্র তা নিয়ে কলহে মেতে উঠতো। মারামারি কাটাকাটি হতো। তখনকার দিনে প্রেমঘটিত যে কোন অপরাধের শাস্তি ছিল মৃত্যু। আত্মহত্যার প্রবণতা অবশ্য সেই যুগে কম ছিল। অসম বর্ণ বা গোত্রের মধ্যে প্রেম মানেই ছিল অস্বীকৃত প্রেম। আর এই অস্বীকৃত প্রেমের পরিণতি ছিল মৃত্যুদন্ড। আর এই দন্ড কার্যকর হতো জনসম্মুখে। যাতে সমাজে সেটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়বার কেউ এমন অপরাধ করার আগে যেন দশবার ভাবে।

সেই যুগে শাস্তির ধরণগুলোও ছিল বেশ নির্মম। অপরাধী নারী কিংবা পুরুষ যেই হোকনা কেন তার শরীরের অর্ধেক মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে আঘাত করা হতো। তাদের পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা হতো। তাদের হাতে বিষের পেয়ালা হাতে তুলে দেয়া হতো এবং হুকুম করা হতো তা পান করার জন্য। এমনকি তপ্ত রোদে বালুর উপর তাদেরকে চিত করে শুইয়ে রাখা হতো। আবার কখনও খোলা তরবারীর এক আঘাতে শিরচ্ছেদ করা হতো। অনেককে জ্যান্ত কবর দেয়া হতো। খেঁজুর-কাঁটা দিয়ে চোখ উপরে ফেলার নজিরও সেই সময় কম ছিলনা। ভাবলেও গা শিউরে ওঠে!

লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, হীঁর-রাঁন্ঝা, আনারকলি-সেলিম, সোনি-মহিয়াল থেকে শুরু করে রোমিও-জুলিয়েট, দেবদাস-পার্বতী, নদের চাঁদ- মহুয়া সুন্দরী, চাঁদ সওদাগর-ভেলুয়া সুন্দরী, বেহুলা-লক্ষীন্দর, জুলেখা-ইউসুফ ছাড়াও হাছন রাজা, গুনাই বিবি, রূপবান এবং হালের ডায়না-ডোডি প্রেমের ইতিবৃত্ত আমাদের সকলেরই জানা। সবার জীবনই নানা ট্রাজেডিতে ভরা। আমি নিশ্চিত নই সেই যুগের প্রেম কাহিনীর নায়ক-নায়িকাদের কারও বয়স ত্রিশের কোঠা অতিক্রম করেছিল কিনা। আর যদি কারও বয়স ত্রিশের কাছাকাছি হয়েই থাকে তবে ধরে নিতে পারি যখন তারা প্রেমে পড়েছিল তখন প্রেমিকের বয়স ছিল ন্যুনতম আঠারো বছর। আর মেয়ের বয়স ছিল ন্যুনতম ষোল। কিশোর বয়স থেকে প্রেমে পড়লেও তাদের গড়-পরতা প্রেমের বয়স খুব বেশী হলে ১২/১৪ বছর হবে। মানে এক যুগ কিংবা তার কিছু বেশী। এক্ষেত্রে আমার এক ভাইয়ের প্রলম্বিত প্রেম বলুন আর বিলম্বিত প্রেম বলুন- সেই প্রেমের বয়স দুই যুগেরও বেশী। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। প্রায় ২৭ বছর। এই প্রেমকে “অমরপ্রেম” না বলে কী পারা যায়?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০৭
২৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×