somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য কথোপকথন

১৮ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রম্য কথোপকথন

[পটভূমিঃ "বিশ্বাস" ও "আশা"। স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেয়া দুজন মানুষ। একজন পুরুষ, আর একজন নারী। গতানুগতিক শহুরে রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা দুটো সত্ত্বা। সময়ের সাথে সাথে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পালা বদলের মতোই বদলে যাওয়া তাদের জীবনের নানা স্তর। শৈশব, কৈশোর, তারুন্য ও যৌবন। একজন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন স্তর, ভিন্ন রূপ, ভিন্ন প্রকৃতি, পরিবর্তিত স্তর। সময়ের ব্যবধানে মানুষের স্বভাব, চিন্তা, চেতনা সবই বদলে যায়। মানুষ তার বিবেক, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। প্রতিটি স্তর বিন্যাসে যদিও তেমন কোন মিল নেই তবে প্রতিটি স্তরে কোন না কোন লক্ষ্য থাকে। জীবনকে সুন্দর ও সার্থকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য।

একসময় দেশে অস্থির, লক্ষ্যহীন ও সহিংস রাজনীতির যে পালা বর্তমান ছিল তা হঠাৎ করেই বদলে গেল। পরিবর্তনের কিছু আভাষ পাওয়া গেল। শুদ্ধতা অভিযান শুরু হলো। এমন এক কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শুভাগমনে "আশা" ও "বিশ্বাস" দুজনেই স্বস্তি পেলো। অতঃপর নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। সমাজের বিচ্ছিন্ন দুই প্রান্ত থেকে দুজনে এক সংসার বৃত্তে আবদ্ধ হলো। দুজনেই বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধলো। কিন্তু হায়! একি হলো! কোথায় যেন ভুল হয়ে গেল! গোল বাঁধলো তাদের আশা ও বিশ্বাসে। এমনতো হবার কথা ছিলনা! সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। আবারো সেই হতাশা। আবারো সেই অনিশ্চিত রাজনীতির ঝলকানি। কিন্তু কেন?]

কথপোকথনঃ

বিশ্বাসঃ একটু বিষ দিতে পারো?

আশাঃ কেন?

বিশ্বাসঃ খেতাম।

আশাঃ হঠাৎ বিষ খাওয়ার শখ হলো কেন?

বিশ্বাসঃ বেঁচে থেকে কোন মজা পাচ্ছিনা তাই!

আশাঃ মরে গিয়ে কী কোন মজা পাবে?

বিশ্বাসঃ নাহ্। সেভাবে ভেবে দেখিনি।

আশাঃ তাহলে বিষ খেয়ে লাভ কী? বরং না মরলে পুলিশ কেস হবে। নানারকম জিজ্ঞাসাবাদ হবে। চৌদ্দ রকমের জেরা হবে। আমি ওসব সামলাতে পারবোনা। নিজের ঝামেলা নিয়েই বাঁচিনা, তার উপর উটকো ঝামেলা। মরলে দূরে গিয়ে মরো, যেন কাক পক্ষীও টের না পায়।

বিশ্বাসঃ তাহলে মরার আর দরকার নেই, কি বলো!
আশাঃ সেটা তুমিই ভেবে দেখো। মৃত্যু সম্পর্কে আমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।

বিশ্বাসঃ সেতো আমারো নেই।

আশাঃ কে বললো নেই? তুমিতো আজকাল কথায় কথায় বলছো বিয়ে করে মরেছি। আগেই ভাল ছিলাম। আমিতো কখনো বলিনি, আমি বিয়ে করে মরেছি। বরং তুমিই আমাকে জ্বালিয়ে মারছো।

বিশ্বাসঃ তাই নাকি? কি দিয়ে জ্বালাচ্ছি তোমাকে? লাকড়ি, কেরোসিন নাকি এসিডে? জ্বালা কী, সে তুমি বুঝবেনা। আর কেন যে মরার কথা বলি সেটাও বুঝবেনা।

আশাঃ কেন বুঝবো না? আমি কী কচি খুকী? তুমি আমাকে কী ভাবো বলোতো?

বিশ্বাসঃ নাহ্ সেটা না। মানে, আমার জায়গায় তুমি হলে সেটা টের পেতে।

আশাঃ মানে! কী টের পাবো? তোমার কথার প্যাঁচ টের পেতে কী কিছু বাকি আছে! তা এসব কথা এখন বলছো কেন? বিয়ের আগেই সেটা ভাবা উচিৎ ছিল।

বিশ্বাসঃ বিয়ের আগে কী জানতাম, জিনিষপত্রের দাম এমন হু হু করে বেড়ে যাবে। সবকিছু এমন হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তুমিই শুধু পুরোনো ফার্নিচারের মতো ঘরে পড়ে আছো। বিয়ের পর হানিমুনে যেতে পারিনি-মানহানীর ভয়ে সেটাও মুখ ফুটে বলতে পারিনা।

আশাঃ কী! কী বললে! আমি পুরেনো ফার্নিচার? আর নিজে! নিজে বুঝি হাতিলের ফার্নিচার! তা দু’বছরেই যখন এতো পুরোনো হলাম, তাহলে ফেলে দিলেইতো পারো। কিন্তু সেই মুরোদতো নেই! আসলে তোমার মনে এখন ঘুণ ধরেছে। ঘুণপোকা’র মতো অসংখ্য হাহাকার তোমার ভেতরটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দু’বছর যেতে না যেতেই আমাকে পুরোনো ফার্নিচার মনে হচ্ছে। আসলে তুমি এই সংসারে ঘুনপোকা হয়ে গ্যাছো। আমাকে রাতদিন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছো।

বিশ্বাসঃ বাহ্। দারুন বলেছো তো! এভাবে নিজেকে কখনো ভেবে দেখিনি। তুমি আমি দুজনে একই ঘরের বাসিন্দা। অথচ সেই ঘরের ভেতর ঘুণপোকার বসবাস। সেই ঘুণপোকা একটা সংসারকে তিলে তিলে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তাহলেতো সেই ঘুণপোকাকে সমূলে নির্মূল করতে হয়। একটা সংসার কখনোই এভাবে বিনষ্ট হতে পারেনা। সত্যিইতো! আমার ভেতরে হাহাকার, ঘুণপোকার মতো কিলবিল করছে। এগুলোকে নির্মূল করা দরকার। কিন্তু কিভাবে? সবকিছুর দাম দিন দিন হু হু করে বাড়ছে। শুধু অবমূল্যায়ণ হচ্ছে মানুষের। তোমার আমার মতো ছা-পোষাদের। যাদের প্রতিটি ঘরে এখন ঘুণপোকাদের অবাধ বসবাস।

আশাঃ অন্যের ঘারে দোষ দিয়ে লাভ কী? বলো আমরাই আমাদের মূল্য নির্ধারণে ব্যর্থ। আমরা নিজেরাই জানিনা আমাদের কতটুক প্রয়োজন, কতটুকু সামর্থ আর কতটুকুইবা প্রাপ্তি। আমরা প্রতিনিয়ত হিসেবে ভুল করে যাচ্ছি আর দোষ চাপাচ্ছি অন্যের উপর। দূর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্র তোমার আমার দাম বাড়াতে পারেনা, পারে জিনিষের দাম বাড়াতে। আর যখন স্বল্পআয়ের চাকরিজীবিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন মহার্ঘ ভাতার নামে কিছু জড়িবুটি হাতে ধরিয়ে দেয়, অভাব উপশমের জন্য। এমন কৌশলে আমরা অভ্যস্ত নই, বরং বিব্রত। একটা অদৃশ্য সিস্টেম আমাদের মূল্যহীন করে দিচ্ছে, পক্ষান্তরে অন্যান্য সবকিছু দিন দিন মূল্যবান হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের পুরো সিস্টেমটাই আজ ঘুণে আক্রান্ত।

বিশ্বাসঃ ঘুণপোকা দমনের জন্যইতো জরুরী অবস্থা দেয়া হলো। সেই সময় পেস্ট কন্ট্রোল অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ঘুণপোকা কী নির্মূল হলো? এখন মনে হচ্ছে আমাদেরকেও সেই নির্মূল অভিযানে নামতে হবে। তোমার আমার মূল্য বাড়াতে হলে সিস্টেমের ভেতরে লুকানো সব ঘুণপোকা চিরতরে ধ্বংশ করতে হবে। আর একবার যদি সেটা করা সম্ভব হয় তবে তোমার আমার বা আর কারো হাহাকার বলে কিছু থাকবেনা। তোমাকেও পুরোনো ফার্নিচার ভেবে দূরে ঠেলে দিতে হবেনা। তাহলে এবার আমি চাইতেই পারি। একটু বিষ দেবে! প্লীজ!

আশাঃ আবার বিষ! উফ্! অসহ্য! এবার আমাকেই বিষ খেতে হবে দেখছি!

বিশ্বাসঃ আহ্! এতো খেপছো কেন! বিষ চাইছি তাতে রাগের কী হলো! আরে বোকা, সেতো আমার জন্য নয়। ঘুণপোকা মারতে হবে। তাই বিষ দরকার। এবার দেবেতো!

আশাঃ দিতে পারি, এক শর্তে। পুরো সিস্টেমকে সেই বিষ খাওয়াতে হবে। যাতে কোন ঘুণপোকা বেঁচে যেতে না পারে। পারবেতো!

বিশ্বাসঃ এই সেরেছে! সেটা কিভাবে সম্ভব! সিস্টেমের নাগাল পেতে আমাকেও যে সিস্টেমের মধ্যে জড়াতে হবে। সোজা কথা, আমাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে হবে। আর যে করেই হোক সেই নির্বাবনে জয়ী হতে হবে। তারপর একটা শুভদিন দেখে সকল নেতাদের বড় কোন হলে দাওয়াত করতে হবে। তারপর সবাইকে একসাথে বিষ খাইয়ে নতুন এক সিস্টেমের গোড়াপত্তন করতে হবে। বিশ্বস্ততা অজর্নের জন্য সেই খাবার যে আমাকেও খেতে হবে। তুমি তখন রাজী হবে তো?

আশাঃ আলবৎ রাজি। এমন মহৎ কাজে আমিও তোমার সাথে মরতে রাজি আছি। কারণ তুমিতো এমনিতেই মরতেই চাও। একটা ভাল কাজ করে মরলে আমার দুঃখ কম হবে।

বিশ্বাসঃ তা, নির্বাচনে দাঁড়ানোর টাকা কোথায় পাবো?

আশাঃ টাকা পার্টি দেবে। পার্টিতে নাম লেখাবে। আর এই মহৎ কাজে আমি তোমার সাথে আছি। তোমার হয়ে আমি গলাবাজি করবো। এবার তুমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকো। আমি ততক্ষণ একটু ঘুমাই।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৩৯
১৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×