somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একি খেলা আপন সনে - ১

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার মা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। তার কাঁচা হলুদ মাখা গায়ের রঙ, বাঁশির মত টিকালো নাক, বড় বড় কালো ভ্রমরের মতন চোখ আর এক মাথা কুঁচকুঁচে কালো কোকড়া চুলের অমন অপরূপা সুন্দরী কোনো রমণী আমি আমার জীবনে আর কোনোদিন কোথাও কাউকেই দেখিনি। তবে কথায় আছে না ' অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর"। তবে আমার মায়ের ক্ষেত্রে কথাটা একটু ভিন্নভাবে খেটেছিলো। অতিরিক্ত সৌন্দর্য্যের কারণে বেশ তাড়াতাড়িই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো তার। তাও যে সে বিয়ে নয়, বেশ ভালো ঘরে বরেই বিয়েটা হয়েছিলো। আমার দাদু সে আমলের বেশ বনেদী বংশের নামজাদা মানুষই ছিলেন। অর্থ, সম্পদ, ধনে মানে প্রতিপত্তিশালী এ বাড়িতে এমন একটি অতি রুপবতী বউ যেন সেই বাড়ির শান শওকত চাকচিক্য শত গুন বাড়িয়ে দিয়েছিলো। শোনা যায় আমার দাদীও ছিলেন নাকি ডাকের সুন্দরী। ঘটকদের ঘটকালীর তালিকা খাতায় আমার দাদীর নাম ছিলো এক নাম্বারে। আমার দাদুর বাবা অর্থাৎ আমার দাদীর শ্বশুরমশাই কনে দেখার দিনে তার গলায় পরানো চিকন সোনার হার নাকি দেখতেই পাননি তার সোনার বরণ গাত্রবর্ণের কারণে। তবে আমার দাদুর পাশে দাদী যেমন বেমানান ছিলেন, আমার বাবার পাশে মা ছিলেন ঠিক তেমনি বেমানান। দাদা ছিলেন ঘোর কৃষ্ণ বর্ন। একমাত্র আবলুশ কাঁঠের রঙ্গের সাথেই বুঝি তার গাঁয়ের রঙের তুলনা চলে। বাবা ছিলেন দাদুর কার্বন কপি।

তো কোনো এক আলোকিত সন্ধ্যায় সারা পাড়া কাঁপিয়ে ব্যান্ড পার্টি বাঁজিয়ে আমার দাদুর পছন্দে ঘরে নিয়ে আসা হলো আমার মাকে। ঢাকা শহরের ওয়ারীর সেই বনেদী বাড়িটা আমার স্মৃতিতে বড়ই অনুজ্জ্বল। শুধু মাঝে মাঝে মনে পড়ে বাড়িটার প্রবেশ মুখে দুটি শ্বেত পাথরের হাতির মূর্তী ছিলো। আমার শিশুবেলায় প্রায়ই আমাকে সেই হাতীর পিঠে বসিয়ে দেওয়া হত। সেসব অনেক পরের কথা। এখন আবার ফিরে যাই আমার অপরূপা সুন্দরী মায়ের বিয়ের দিনগুলোতে।

তখনকার দিনে বিয়ে শাদীতে পাত্রীদের মতামত নেবার তেমন প্রচলন ছিলোনা হেতু মাকে মায়ের বাবা মানে আমার নানুমশাই যে বিয়েটা দিয়েছিলেন ভালো ঘর বর দেখে সেই ভালো ঘর মায়ের পছন্দ হয়েছিলো কিনা জানিনা তবে বর যে পছন্দ হয়নি তা খুব ছেলেবেলার স্মৃতি হলেও আমার বেশ স্পষ্ট মনে পড়ে। বাবা মায়ের সেই ঝগড়া বিবাদের কুরুক্ষেত্রের দিনগুলো মনে পড়লেই আমি আজও বিমর্ষ হয়ে পড়ি। তাই সে সব আমি খুব একটা মনে আনতে চাইনা। বাবা এবং বাবার বাড়ির কোনোকিছুই যে মায়ের পছন্দ না এবং মা এবং তার নিজের বংশ বা তার বাড়ি যে অনেক উচ্চ এটা মা উঠতে বসতে দিনে চৌদ্দবার করে দাদুর বাড়ির সকলকেই বুঝিয়ে দিতেন। আমার দাদী শান্ত শিষ্ঠ ও নিরীহ প্রকৃতির হওয়ায় মায়ের সাথে লাগতেন না সহজে। এমনকি দাদুও আশায় থাকতেন, অমন রূপসী মেয়ে কালো বরকে মানাতে হয়তো কিছুদিন সময়ই নেবে। সময়ে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে এমনই ধারণা ছিলো তাদের।


কিন্তু তার আশা বিফলে গেলো। সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোনো এক বর্ষনমুখর ঘোর সন্ধ্যায় মায়ের সাথে বাবার তুমুল ঝগড়ার পরে বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। সেই যে তিনি নিরুদিষ্ট হলেন। আর কোনো খবরই পাওয়া গেলো না। এরপর যখন বাবার খবর পেয়েছিলাম আমরা। তখন বুড়িগঙ্গায় অনেক জল বয়ে গেছে। তার সেই পাঁচ বছরের শিশু মেয়েটি তখন কৈশোরে পা দিয়েছে। বাবা কিভাবে কখন, ঠিক কোনভাবে দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন সেই খবর বাড়ির কেউ ঘূর্নাক্ষরেও জানতে পায়নি। সে যাইহোক বাবার এই অন্তর্ধানে দাদু কোথায় নিজের সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করবেন তা না উনি চিন্তায় পড়লেন তার এই অসম্ভব রুপবতী আগুনের ফুলকীর মত পুত্রবঁধুটিকে নিয়ে। আর আমার অসম্ভব মুখরা এবং এক কথায় বলতে গেলে চরম বদরাগী মা ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। আসলে এই ঘটনায় সম্ভবত তিনি আত্মবিশ্বাস হারিয়েছিলেন। হাজার হোক কালো বর পছন্দ না হলেও তাকেও যে কেউ অপছন্দ করে এবং এক কথায় বিনা নোটিসে ছেড়েও যেতে পারে, এটা মনে হয় উনি মানতে পারেননি।

তার সোনার বরণ কালি হতে লাগলো। অষ্টপ্রহর গঞ্জনা শুনতে হত যার কাছ থেকে বাড়ির সকলকে, সেই মানুষটিই কেমন ম্রীয়মান হয়ে পড়তে লাগলো। তার কষ্ট সইতে পারলেন না দাদু। যে মেয়েকে এত ঘটা করে ঘরে এনেছেন তিনি। তার ভাগ্যে এই লিখন? নিজেকেই দোষী ভাবতে শুরু করলেন তিনি। তারপর তিনি যা করলেন তা কোনো দিন কোনো কালে এই পৃথিবীতে কোনো বাবা, কোনো শ্বশুর বা কোনো মানুষ করেছে কিনা জানা নেই আমার।

তিনি আমার মাকে আবার বিয়ে দিলেন। আমার মা তার কথা বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে নিলেন। ইগো বা আত্ম অহমিকাতেই হোক তিনি আর তার নিজের বাড়ি মানে নানুর বাড়িতে এই অবস্থায় ফিরে যেতে চান নি। একদিন সন্ধ্যায় খুব ধুমধাম করে না হলেও বেশ ঘটা করেই অনুষ্ঠানও হলো সেই বিয়ের। মায়ের সাথে আমিও চললাম সেই নতুন বাবার বাড়িতে। আমি তখন নিতান্তই শিশু। সকল ঘটনাই আমার জন্য ছিলো বেশ মজার ও কৌতুকপূর্ন!

কিন্তু এই নতুন বাবার বাড়ি যাবার পরদিন হতেই আমি বুঝে গেলাম আমার জীবনে যে এই নতুন পরিবর্তনটা আসলো তা মোটেই সুখের নয় বা যে সুখের দিন আমি এ ক,বছর আনন্দে হেসে খেলে কাটিয়েছি তার অবসান হলো.....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৯
৪৮টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×