somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একি খেলা আপন সনে - ৩

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলতেই অজানা পরিবেশ, অচেনা ঘরের ছাঁদ, দরজা, জানালা, আসবাবপত্র এবং দেওয়ালে ঝুলানো বড় বাতি বা অপরিচিত ফ্যানগুলো দেখে ঠিক মনে করতে খানিকটা সময় লাগলো যে কোথায় আছি আমি। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। মনে হচ্ছিলো কোনো মৃত্যুপূরীতেই বুঝি শুয়ে ছিলাম এতক্ষন। এরপর প্রথমেই মনে পড়লো কাল রাতে মায়ের লাল শাড়ি চোলিতে বঁধু সাজা চেহারাটা। কাল মা যখন সেজেছিলেন আমি খুব অবাক হয়ে দেখছিলাম। এত সুন্দর লাগছিলো মাকে। কিন্তু আজ সকালে সে চেহারা মনে পড়তেই বুকের ভেতরে কোন গোপন কুঠুরীতে হুহু কেঁদে উঠলো। আমার হঠাৎ মনে হলো মা এই এক রাতেই অনেক দূরে চলে গেছেন আমার থেকে।

দরজা খুলে খুব সন্তর্পনে লম্বা করিডোর ধরে সোজা বের হয়ে এলাম বাইরে। অতো ভোর বেলাতেও বাড়ির সদর দরজাটা হাট করে খোলা দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। পরে জেনেছিলাম খুব ভোরে ও বাড়ির কাজের লোকজন সবাই উঠে পড়ে এবং ভোরবেলা জানালা দরজা খোলা এবং সন্ধ্যায় বা রাতে বন্ধ করার দায়িত্বটাও ওদেরই উপরে থাকে। বড় দরজাটা পেরিয়েই ঘন সবুজ লন। অপরুপ সব ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। চেনা অচেনা শিশির ভেঁজা কোমল ফুলগুলো শুভ্র সুন্দর স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছিলো। আমি ভেজা ঘাসে পা ফেলে হাঁটছিলাম। এরপর যতদিন ও বাড়িতে ছিলাম খুব ভোরে উঠে ঐ সবুজ লনটাতে হাঁটার আনন্দটুকু ছিলো আমার একান্ত ভালো লাগার মুহুর্তটুকু। বাগানের মাঝে মাঝে পাথরের বেঞ্চ বসানো ছিলো। আমি গিয়ে তারই একটায় বসলাম। নতুন পরিবেশ, নতুন একটা আকাশ, নতুন নতুন আশপাশের গাছপালা, প্রাচীর, গেট। কতখন সেখানে বসে ছিলাম জানিনা তবে হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো কারো ডাকে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম কালকে রাতের সেই বুড়ো মত লোকটা। হাতে ফুলগাছে পানি দেবার ঝাঁঝরি আর এক গোছা নীল রঙের পাইপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বললেন,

- এত ভোরবেলা জেগে ওঠো তুমি খুকি? বাহ বেশ ভালো অভ্যাস তো। ভোরের বাতাস সাস্থ্যের জন্য ভালো।
আমি অবাক হয়ে জিগাসা করলাম তাকে,
- তুমি কে? এই বাড়িটা কি তোমার?
উনি জীব কেটে আৎকে উঠলেন, বললেন,
- রাম রাম! আমার বাড়ি হতে যাবে কেনো? আমি এ বাড়ির বলতে পারো একজন পুরোনো চাকর।
আমি উনার নিজেকে চাকর বলা দেখে আরও অবাক হলাম, জানতে চাইলাম,
- চাকর!
উনি আমার জিজ্ঞাসা করার ভাবটা দেখে হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন,
- চাকরই তো। মানে আমি এ বাড়ির মালী। আজ বহু বছর হলো এখানেই রয়ে গেছি। ফুলেদের ভালোবাসায় পড়ে গেছি। দেখো এই বাগানের সব ফুলগুলিকে। কত যত্ন করে আমি ওদের বড় করে তুলি। ফুলগুলি সব শিশুর মত। এই যে তুমি এখন শিশু। ধীরে ধীরে বড় হবে। অনেক বড় হবে একদিন ....
উনি আরও কি কি সব বলে যাচ্ছিলেন। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
- তোমার নাম কি?
সে বললো, তার নাম রমেশ। আরও জানালেন আমি যেন তাকে রমেশ চাচা বলে ডাকি। উনি গাছে পানি দিচ্ছিলেন, আগাছা পরিষ্কার করছিলেন আর আমি ঘুরে ঘুরে তার সাথে তার কাজ দেখছিলাম। বাগানের কোনে এক বিশাল গাছে ফুল ধরে ছিলো বড় বড় অদ্ভুত সুন্দর! আমি জানতে চাইলাম, এগুলো কি ফুল। উনি জানালেন এই গাছ বেশ দূর্লভ। এই গাছের ফুলকে নাগলিঙ্গম বলে। উনি আরও বললেন,
- দেখেছো খুকি। এই ফুলের মাঝে কেশরগুলো কেমন নাগিনীর ফনার মত বাঁকানো। এই ফুলের অনেক গুন। অনেক কদর। উনি একভাবে কথা বলেই যাচ্ছিলেন। এমন সময় কালকে রাতের মিষ্টি চেহারার সেই মেয়েটি আমাকে ডাকতে এলো,
- ওমা! সারাবাড়ি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আর তুমি এখানে? চলো চলো তোমার মা তোমার খোঁজ করছেন।
"আমার মা" কথাটা কানে যেতেই এক রাশ অভিমান হঠাৎ কই থেকে এসে যে আমার বুকের পাঁজরে চেপে বসলো! মেয়েটির সাথে আমি গিয়ে দাঁড়ালাম ওদের বিশালাকৃতির ডাইনিং হলে।

মা, নতুন বাবা, নতুন বাবার রাশভারী মা আরও কে কে সব বসেছিলো সেখানে বড় ডাইনিং টেবিলটা ঘিরে। মায়ের এক পাশের চেয়ারটা খালি ছিলো। হয়তো আমার জন্যই। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম মায়ের পাশ ঘেষে। কি সুন্দর একটা মিষ্টি গন্ধ মায়ের গাঁয়ে। কিন্তু অবাক হয়ে সে বয়সেও লক্ষ্য করলাম। এই গন্ধটা আমার অচেনা। এই অচেনা গন্ধটা এই বাড়ির গন্ধ। এই বাড়ির ইট কাঁঠ পাথরে মনে হলো এই আলাদা রকম গন্ধটা খোদাই করে চিরস্থায়ী বসানো রয়েছে। মাকে আমার দূরের কেউ মনে হচ্ছিলো। এক রাতেই মা যেন অনেকখানি অচেনা হয়ে গেছে।

মা ফিস ফিস করে বললেন,
- কই ছিলে? মুখটা এত শুকনো কেনো? রাতে খাওনি?
এমন করে বললেন যেন কেউ শুনতে না পায়। আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো। অনেক কষ্টে আমি সে কান্না সামলালাম। চারিদিকে গুরু গম্ভীর থমথমে লাগছিলো। নতুন বাবার মা, মোটা সোটা ভীষন গম্ভীর মুখের ঐ মহিলাটা আমাকে একদমই যে পছন্দ করছেন না সে আমাকে আর কারো বলে দিতে হয়নি।


ও বাড়িতে আমার থমথমে পরিবেশের সেই শুরু। আমি যে ও বাড়ির অপাংতেয় একজন তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে ঐ মহিলা ছিলেন একাই একশো। প্রতি পদে পদে উনি বুঝিয়ে দিতে চাইতেন আমি যেন কখনই এ বাড়ির প্রতি কোনো রকম দাবীই মনের কোনাতেও স্থান না দেই।

ও বাড়ির কোনোকিছুর প্রতিই দাবী আমার কখনই ছিলো না, করিওনি কোনোদিন। শুধুই নিজের উপর নিজের দাবীটাকেই জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম একটা সময়....

সে এক ভিন্ন গল্প, ভিন্ন তার ডালপালা, শাখা প্রশাখা...



একি খেলা আপন সনে- ২

একি খেলা আপন সনে - ১
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৮:২৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×