somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতবর্ষী মহান বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী শুধু একটি নাম নয় এই নামটি জড়িত বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বাঙালির চেতনার সঙ্গে। সূর্যসেনের সহযাত্রী, কৈশোর উত্তীর্ণ বিনোদ বিহারী চৌধুরী সে বয়সেই ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে নাম লিখিয়েছিলেন। দেশমাতৃকার তরে সঁপে দিয়েছিলেন নিজের জীবন। যে সব ব্যক্তিত্বের জন্য চট্টগ্রাম তার আপন মহিমায় ভাস্বর, বিনোদ বিহারী চৌধুরী সেই অগ্রগণ্যদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবেন।

বিনোদ বিহারী চৌধুরী ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিনোদ বিহারি উকিল কামিনি কুমার চৌধুরী ও রমা রানী চৌধুরীর ৫ম সন্তান । ১৯২৯ সালে সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তিনি এসময় রায় বাহাদুর বৃত্তি পান। তার আগেই ১৯২৭ সালে তিনি তৎকালীন বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৯৩৪ সালে ভারতের রাজপুতনা দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী অবস্থাতেই পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৯৩৬ সালে ওই ক্যাম্পে বন্দী থাকাকালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। ১৯৩৯ সালে ইংরেজিতে এমএ ও বিএল (আইনে স্নাতক) পাশ করেন ইংরেজ সরকার কতৃক গৃহবন্দী অবস্থায়।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার লুট করে ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মাষ্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিনোদ বিহারীসহ বিপ্লবী দলের বীর সৈনিকেরা। ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ হয় মাষ্টারদার বিপ্লবী বাহিনী এবং ব্রিটিশ আর্মি ও পুলিশের সঙ্গে। সেই যুদ্ধে শহীদ হন অনেক বিপ্লবী । বিনোদ বিহারীর কণ্ঠনালীতে গুলি লাগে। বেশ কিছুদিন গোপনে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। আর তখন তাঁকে মৃত কিংবা জীবিত ধরিয়ে দিতে ব্রিটিশ সরকার ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি সূর্যসেনকে চট্টগ্রাম কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী। এ সময় সূর্যসেনের ঘনিষ্ঠ সহচর বিনোদ বিহারী সূর্যসেনের মৃত্যুতে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন।

১৯৪০ সালে বিনোদ বিহারী চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী কিরন দাশের মেয়ে বিভা দাশকে বিয়ে করেন। বিভা দাশ চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বেলা চৌধুরী নামেই সমধিক পরিচিত। ২০০৯ সালে ২৯ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। বিয়ের পর ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে প্রায় ৭ বছর বিভিন্ন সময়ে জেল খেটেছেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী।

১৯৩৯ সালে বিনোদ বিহারী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দেশ বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এম এল এ ) নির্বাচিত হন বিনোদ বিহারী চৌধুরী। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি এমএলএ ছিলেন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ আমলের প্রতিটি সময়েই তিনি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, অপশাসন, সা¤প্রদায়িকতা ও মানবতাবিরোধী সংগ্রামে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রবীন এই বিপ্লবী বিভিন্ন সময়ে লাভ করেছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সংবর্ধনা। ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক, শহীদ নতুন চন্দ্র স্মৃতি পদক, বিপ্লবী তীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার সম্মাননাসহ লাভ করেন বহু সম্মাননা। সম্মাননার সঙ্গে যে আর্থিক সম্মানী দেয়া হয়েছিল তাঁর কিছুই নিজের জন্য রাখেননি তিনি। চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়াতে মাষ্টার দার যে বাস্তুভিটা রয়েছে তা দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন। সেখানে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সব মহলে।

শতবর্ষীয় এই প্রবীণ বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী আজো মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম। জীবিকার অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন টিউশনি। কিছুদিন আগেও বিনোদ বিহারী মোমিন রোডের নিজ বাড়িতে নিয়মিত ছাত্র পড়াতেন । তাঁর শরীর ভাল নেই, ভুগছেন রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে।

এ মহান বিপ্লবী ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি শতবর্ষ জন্মদিন পালন করলেন। তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
___________________________________________________
প্রবীন বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী আর নেই। আজ ১০ এপ্রিল ২০১৩ বুধবার রাতে কলকাতার ফর্টিজ হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।
___________________________________________________
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একবার এ মহৎপ্রাণ মানুষটি আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার সৌভাগ্য হয়। সে ছবিটি ব্লগে দেওয়ার লোভ সংবরন করতে পারলাম না।



(সূত্র: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা )
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০১
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×