somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিস্তফ কিয়েস্লোওস্কি'র দি থ্রি কালার ট্রিলজি : ব্লু, হোয়াইট, রেড (The Colors: Blue , White, Red)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও বহুল প্রশংসিত পোলিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্তফ কিয়েস্লোওস্কি (Krzysztof Kieślowski) অমর কীর্তি দি কালার ট্রিলজি। ক্রিস্তফের সাড়া জাগানো মুভির সংখ্যা নেহাৎ কম না হলেও এ মুভি ট্রিলজি তাঁর সাফল্যে সংযুক্ত হয়েছে অন্যতম মূল্যবান পালক হিসেবে।
ট্রিলজির মুভিগুলো হলো। The Colors: Blue , White, Red
ফ্রান্সের পতাকার তিনটি রং থেকে এ চলচ্চিত্র তিনটির নামকরন করা হয়েছে।রং তিনটি ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকের তিনটি মূলমন্ত্রের প্রতীক- liberty, equality, fraternity।
নামকরন প্রসঙ্গে পত্রিকায় দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ক্রিস্তভ বলেন-
The words liberté, egalité, fraternité are French because the money [to fund the films] is French. If the money had been of a different nationality we would have titled the films differently, or they might have had a different cultural connotation. But the films would probably have been the same.



অনেক সমালোচকই চলচ্চিত্রটি তিনটিকে তুলনা করেছেন এন্টি ট্রাজিক, এন্টি কমেডি আর এন্টি রোমান্স হিসেবে।
মুভিগুলো অনেকের কাছে শ্লথ গতির মনে হতে পারে। এ চলচ্চিত্রয় আসলে কোন গল্প বলার জন্য নির্মিত নয়। গল্পের চরিত্রগুলোর পরিপার্শ্বিক দিক ও মানবিক অনুভূতি তুলে ধরাই ছিলো পরিচালকের মূল উদ্দেশ্য। মানুষ জীবনের পদে পদে নানারকম অবস্থার সম্মুখীন হয়। সেই সব মুহূর্তে একজন মানুষ কীভাবে জীবনটাকে এগিয়ে নেয়, সে মহুর্তগুলো টিকে থাকার লড়াই ও অনুভুতিই এ চলচ্চিত্রের আলোচ্য বিষয়। চলচ্চিত্র তিনটিই আবর্তিত হয়েছে তিনজন নারীকে ঘিরে।
মুভি তিনটিতেই রঙের প্রচুর কিন্তু শৈল্পিক ব্যবহার চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে ব্লুতে। একই সঙ্গে ট্রিলজির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। অসাধারন! চলচ্চিত্রগুলোর সিনেমাটোগ্রাফি দুর্দান্ত। আর কিছু কিছু অভিনয় এক কথায় আসাধারন। বিশেষ করে ব্লু তে জুলিয়েট বিনোশের চোখ ধাঁধানো অভিনয়। আর ক্রিস্তফের মেকিং নিয়ে বলা বাহুল্য।
ব্লু আর হোয়াইট মুভি দু’টি ফ্রেঞ্চ ভাষায় আর রেড মুভিটি পোলিশ ভাষায় নির্মিত।

Blue (1993)

সিরিজটির প্রথম পর্ব। ক্রিস্তফের মতে ব্লু মুভিটির মূল বিষয় স্বাধীনতা বা লিবার্টি। রাজনৈতিক বা সামাজিক অর্থে নয়, এ হচ্ছে ইমোশনাল লিবার্টি। সড়ক দুর্ঘটনায় জুলির স্বামী ও কন্যা মারা যায়। দুর্ঘটনায় জুলি থাকলেও সে বেঁচে যায়। এ ঘটনার পর জুলি পারিবারিক সকল সম্পর্কের জাল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং একান্তে নিভৃতে জীবন যাপনের চেষ্টা করে। অতীতের সমস্ত স্মৃতি সে মুছে ফলতে চায়। এমনকি অতীতে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র কিছুই সে আর নিজের কাছে রাখেনা। শুধূ একটি জিনিস জুলি নিজের কাছে রেখে দেয়। তার মেয়ের নীল রঙের একটি ঝারবাতি। ঘটনাক্রমে সে জানতে পারে তার স্বামীর সঙ্গে একটি মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো এবং মেয়েটি সন্তান সম্ভবা। কিন্তু মেয়েটিকে ঘৃণা করার পরিবর্তে নিজের স্বামীর বাড়িতে তাকে থাকতে দেয়। জুলির পারিবারিক এক বন্ধু তার স্বামীর রেখে যাওয়া মিউজিক কম্পোজের কাজ শেষ করতে চায়। এ বন্ধুটি জুলিকে ভালোবাসে। জীবনের সকাল চাওয়া-পাওয়া আর বন্ধন থেকে মুক্তি চাওয়া জুলি তার অনুভুতিগুলোর কাছে কী জয়ী হতে পারে? এ ছবির একটি দৃশ্যেই জুলিকে কাঁদতে দেখা যায়। সম্ভবত এটিই মুভিটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দৃশ্য।
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৯
প্রাপ্ত পুরস্কার:
* Venice Film Festival, 1993: Best Film and Juliette Binoche, Best Actress, Best Cinematography: Sławomir Idziak
* Cesar Award, 1993: Best Actress: Juliette Binoche, Best Sound, Best Film Editing
* Goya Awards (Spain's Academy Awards): Best European Film


White (1994)

ক্যারলের স্ত্রী ডমিনিক তাকে ভালোবাসেনা । সে অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ডমিনিক ফ্রেঞ্চ ও ক্যারল পোলিশ। ক্যারল না চাইলেও ডমিনিকের জন্য তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। ক্যারল ও ডমিনিকের যৌথ মালিকানাধীন সেলুনটির কর্তৃত্ব হারায় ক্যারল। চরম হতাশাগ্রস্ত ক্যারল পোল্যান্ডে ফিরতে চায়। তাকে সাহায্য মিকোলাজ। মিকোলাজের সঙ্গে ক্যাররের পরিচয়টাও হয় অদ্ভূতভাবে। মিকোলাজ একজন সফল মানুষ কিন্তু অসুখী। সে আত্মহত্যা করতে চায় কিন্তু কার্যটি সম্পন্ন করার সাহস তার নেই। সে ক্যারলের সাহায্য চায়। ক্যারল রাজি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিকোলাজের আত্মহত্যা করা হয়না। ক্যারলকে একটি স্যুটকেসে ভরে সে পোল্যান্ডে নিয়ে যায়। সেখানে ক্যারল ধীরে ধীরে বিত্তশালী হয়ে উঠে এবং ডমিনিককে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে। ডমিনিক ফিরে আসে। আর এখানেই ছবিটির টুইস্ট। চমকপ্রদ ফিনিশিংটাই ছবিটিকে অন্য রকম একটা মাত্রা দিয়েছে। আর এ ছবি সম্পর্কে একটা কথাই বলবো-
There is nothing sweeter than revenge!!!
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৬
প্রাপ্ত পুরস্কার:
#"Silver Bear" Award for Best Director at the Berlin International Film Festival


Red (1994)

চলচ্চিত্রটিতে দু’টি ঘটনা পাশাপাশি দেখানো হয়। ভ্যালেন্টিন জেনেভার একজন পার্টটাইম মডেল। তার বয়ফ্রেন্ড লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ঘটনাচক্রে রাস্তায় ভ্যালেন্টিনের গাড়ি ধাক্কায় একটি কুকুর আহত হয়। ভ্যালেন্টিন কুকুরটিকে চিকিৎসা দিয়ে তার মনিবের বাড়িতে দিয়ে আসে। কুকুরটির মনিব একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক যার নাম কার্ন। কার্ন প্রতিবেশিদের ফোনে আড়ি পাতেন। এটি তার দীর্ঘদিনের অভ্যেস। ভ্যালেন্টিন ব্যাপারটি জেনে ফেলে আর তাকে সতর্ক করে দেয় কাজটি না করতে এবং হুমকি দেয় সে ব্যাপারটি সবাইকে জানিয়ে দিবে। একটা সময় কার্নের সঙ্গেই ভ্যালেন্টিনের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে । তিনি ভ্যালেন্টিনকে তার জীবনের গল্প বলেন। একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রণয় ছিলো। মেয়েটি তার সঙ্গে প্রতারণা করে অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মেয়েটি পরে মারা যায়। ঘটনাক্রে অনেকদিন পর তার বয়ফ্রেন্ড একটি আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পরে যার বিচারের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে বিচারক কার্নের উপর। কার্ন সঠিক বিচারটিই করেছিলেন এবং এর পরপরই তিনি চাকুরিজীবন থেকে অবসর নেন। অপরদিকে এ চলচ্চিত্রটি অগাস্টেরও গল্প। যে কারিন কে ভালোবাসে। সেও একটা সময় বিচারক হয় এবং একজন নারী কর্তৃক প্রতারিত হয়। ক্রিস্তফ চলচ্চিত্রটিতে কার্ন আর অগাস্টের জীবনের মিলে যাওয়া এ কাকতালীয় ঘটনাটি আর ভ্যালেন্টিনের অংশটুকু খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। শেষে যথারীতি চমক তো আছেই।
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১
প্রাপ্ত পুরস্কার:
# National Board of Review, Best Foreign Language Film
# New York Film Critics Circle Awards, Best Foreign Language Film
# National Society of Film Critics Awards, Best Foreign Language Film
# Los Angeles Film Critics Association Awards, Best Foreign Film
# Zbigniew Preisner won the Cesar Award for Best Music.


আমি মুভি ডিভিডিতে দেখি। তাই ডাউনলোড লিংক দিতে পারছিনা বলে দু:খিত। তবে মুভি ডাউনলোডের জনপ্রিয় সব সাইটগুলোতে পাবেন বলে আশা রাখি।
ধন্যবাদ :)

চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×