somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের জন্য গান

২৪ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৭১ সালের ১ মে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে জগৎবিখ্যাত কিছু গানপাগল মানুষ এক হয়ে গাইতে এসেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া অচেনা অজানা ছোট্ট একটি দেশের জন্য। আর তাদের ডাকে সাড়া দিতে ভিড় জমিয়ে ছিল হাজার হাজার মানুষ। রাতারাতি যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই ছোট্ট দেশটি পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত পেয়ে গেলো। তারা জানতে পারল সেখানকার এক কোটিরও বেশি মানুষ অন্য দেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। জানতে পারলো যে বয়সে একটি ছেলের তার প্রেমিকার জন্য উজাড় করা ভালোবাসা নিয়ে কবিতা লেখার সময় সে বয়সেই ছেলেগুলো এক বুক ঘৃণা নিয়ে কাঁধে তুলে নিয়েছে স্টেনগান। দেশটিতে ছেলে-মেয়ে-শিশু-বুড়ো সবাই প্রানপণ বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে । প্রতিনিয়ত কখনও বুলেট কখনও ক্ষুধায় মরছে অথবা মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মানুষ কেঁপে উঠল এ ভয়াবহতার কথা শুনে। এক ঝাঁকড়া চুলওয়ালা তাদের আরও শোনাল-

Where so many people are dying fast
And it sure looks like a mess
I've never seen such distress
Now won't you lend your hand
Try to understand
Relieve the people of Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh…


এ দরাজ কণ্ঠের আহ্বানে অজান্তেই সবার চোখ বেয়ে নেমে এলো অশ্রু। তৎকালীন ২,৪৩,৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার জমা হলো তহবিলে। তুলে দেওয়া হলো ইউনিসেফের কাছে দেশটির অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করার জন্য। আর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এ ঝাঁকড়া চুলওয়ালাসহ তার ক্ষ্যাপাটে বন্ধুর দলের কাছে ঋণী রয়ে গেল আজীবনের জন্য। ইতিহাসের পাতায় 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' আর এই ঝাঁকড়া চুলের লোকটি যিনি 'ঈশ্বরের চেয়ে জনপ্রিয়' হিসেবে খ্যাত 'বিটলস' ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ, স্থাপন করলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্যার জর্জ হ্যারিসন সেই থেকে বাংলার বন্ধু। বিধ্বস্ত বাংলার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পণ্ডিত রবিশংকরের আহবানে আর জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে মাত্র ৫ সপ্তাহে আয়োজিত হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা এ কনসার্টটি। কে ছিল না সেদিন? ওস্তাদ আলী আকবর খান, ওস্তাদ আল্লারাখা খান, কমলা চক্রবর্তী, এরিক ক্ল্যাপটন, বব ডিলান, বিলি প্রেস্টন, লিওন রাসেল, রিংগোস্টার, ক্লাউস ভুরম্যান, পিট হ্যাম, টম ইভানসহ একগাদা দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত সব নাম। জোয়ান বায়েজ উপস্থিত থাকতে না পারলেও পরে সৃষ্টি করেছিলেন তার অমর 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ' গানটি। ১৯৭২ সালে এ কনসার্টটি তথ্যচিত্র আকারে মুক্তি পায়। কনসার্টটি পরবর্তী সময়ে অ্যালবাম আকারেও প্রকাশ হয়। শুধু কনসার্ট নয়, অ্যালবাম ও তথ্যচিত্র থেকে প্রাপ্ত সব অর্থও বাংলাদেশের দুস্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

শুধু নিউইয়র্কে আয়োজিত 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'ই নয়, বাংলার মানুষকে সহায়তার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আরও অনেক দেশের মমতাময় কিছু মানুষ। তাদের হাত ধরেই নিউইয়র্কের মতো লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় 'কনসার্ট ইন টিয়ার্স' এবং বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে 'স্ট্রিংস অ্যান্ড ফায়ার কনসার্ট'।

এ তিনটি কনসার্টের কথা সবাই জানলেও অখ্যাত লি ব্রেনান ও তার সঙ্গীরা অজ্ঞাতই রয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের কথা জানতে পেরে লিভারপুলের এ তরুণ দুটি গান লিখেছিলেন। অনেক কষ্টে তার বন্ধুদের নিয়ে ছোট্ট একটা স্টুডিও থেকে গানগুলোর ৪৮আরপিএমের রেকর্ড বের করতে সক্ষম হন। তাঁর গানের দলে ছিলেন ডন, প্যাটি টমাস, জন ব্রাউন ও জিমি সেফটন। মামুলি একরঙা মোড়কে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বাণী সংযোজন করে তার রেকর্ডটি দীনহীনভাবে প্রকাশ হয়।
লি ব্রেনানের একটি গানের কথা ছিল- 'ইন দ্য নেম অফ হিউম্যানিটি/ ডোন্ট অ্যালাউ বাংলাদেশ টু ফাইট অ্যালোন'। আর তার কণ্ঠে ছিল দরদ আর অনুভূতিতে প্রাণের আবেগ। ঝোলায় রেকর্ড নিয়ে তিনি শহরের এক পানশালা থেকে আরেকটিতে গিটার বাজিয়ে এ গান সবাইকে শোনাতেন আর অর্থ সংগ্রহ করতেন বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের জন্য। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে হয়তো বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন হাজার হাজার মাইল দূরের মমতাময় এ মানুষটি। কিন্তু তারপরই হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের অতল গহ্বরে। লি ব্রেননের সুর বসানো গানের সে রেকর্ডটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

(২৪ মার্চ ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)

লি ব্রেনান সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরো পোস্ট
তাঁদের জন্য ভালোবাসা
দুই শহীদের গল্প শুনো
মুক্তিযুদ্ধে ভিনদেশী বন্ধুদের তিনটি অজানা গল্প শুনুন
মুক্তিযুদ্ধে ভিনদেশী সাহিত্যিকদের অবদান
ফটোগ্রাফিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং একজন কিশোর পারেখ
টেস্টিমনি অব সিক্সটি এবং একজন জুলিয়ান ফ্রান্সিস
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:০১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×