অর্থনীতির ভাষ্য মতে, মানুষের সামর্থ্যের সাথে তার চাহিদার একটা নিবিড় যোগসূত্র বিদ্যমান। আরও খোলাসা করে বললে, চাহিদা তখনি বাড়বে যখন ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা বা ক্রয় করার সামর্থ্য বাড়বে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সুবাদে জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়ছে। যার সুবিধা আপাতত সমাজের উচ্চস্তরের নাগরিকরা বা কুলীনরা ভোগ করছে। রাজধানীর বড় বড় বিপনী বিতানগুলো এর নিরব সাক্ষী। আমাদেরও 'দেখিতেছি সার্কাস' টাইপের সুযোগ মেলে মাঝে-সাজে, সে সুবাদে আমরাও এর তাল-বেতাল সাক্ষী। তাদের বেশ-ভূষা, চাল-চলন বহু পূর্বেই 'ধরাকে সরা জ্ঞান' করার ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম করেছে। আহ! সেকি হাল। মিথ্যে যদি না বলি তবে, ইহা উপভোগ্য। বিশেষকরে,স্বল্পবসনা ললনারা। তাই হয়তো,ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বিবেচনায় এ সকলের বিরুদ্ধে যেতে মনের মাত্রা-মাফিক সাড়া মেলে না। তাছাড়া, এসব আমার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ও নয়। এ প্রসঙ্গে আমার অবস্থা অনেকটা "ধরা গোল্লায় যাক, আমি আর আমার সালমা আপু বেঁচে থাকিলেই খেল খতম"।
অনেক সময়ই মনের ভিতর আমিও আক্ষেপ অনুভব করি। ওরা কতকিছুই না কিনছে! আমাদের যেখানে লজ্জা নিবারণের ব্যবস্থা করতে গলদঘর্ম হতে হয়, সেখানে ওরা হাজার-হাজার টাকা ব্যয় করে কসমেটিকস্ দ্রবাদি কিনে। তাতেও আপত্তি ছিলো না, যদি গতকালের বিপদটার মুখোমুখি না হতাম।
নিত্যদিনকার মতো গতকাল সন্ধ্যায়ও 'কোলেস্টেরল' কমানোর স্বার্থে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। অন্যান্য দিন যে পথে যেতাম, গতকাল ইচ্ছা করেই রাস্তা বদলে ফেললাম। জানতাম না আমার এ ইচ্ছাই আমার পোয়া-বারোটা বাজাবে। নির্ধারিত বিশ মিনিটের যাওয়ার পথ স্বাচ্ছন্দে পার করে ফেরার পথে বিপত্তিটা বাজলো। এবারও ভিন্ন পথ অনুসরণ করে আসতে ছিলাম। খানিক পথ পার হওয়ার পরে রাস্তার ডান দিকের একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে চোঁখ আঁটকে গেলো। বিগত দিনের তিলোত্তমা, বর্তমানের সবচেয়ে অবাসযোগ্য নগরীর একটা এই ঢাকায় এত্তোসুন্দর সিমছাম একটা বাড়ী থাকতে পারে, না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাড়ীটার চারদিক পরিমিত সাচেঁর বনসাঁই দিয়ে সাজানো। সোডিয়াম লাইটের নিলাভ আলোয় আলো-আধাঁরীর চমৎকার খেলা পুরো বাড়ীময়। প্রধান ফটকটিও নিদারুণ সৌন্দর্যের বাহক। কোনো এক জাত শিল্পীর রুচিসম্মত কারুকার্য।
হাঁটতে -হাঁটতে যতটা সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়, তার সবটুকুই ভোগ করে নেয়ার চেষ্টা ছিলো। হঠাৎ করেই চোখে পড়লো, আমার পায়ের এক-দেড় ফুট দূরে দুটো তেড়ে আসা কুকুরের দিকে। সিদ্ধান্ত নেয়ার বিন্দুমাত্র সময় হাতে নেই। কষে এক লাথি মারলাম। বিলেতি কুত্তা, আত্মরক্ষায় পারদর্শী বুঝলাম। কিন্তু রণে ভঙ্গ দিলো না। একই ডিরেকশনে আবার আক্রমণ করলো। আমার পাঁয়ে 'ওয়াকিং' কেডস্ থাকার সুবাদে আমি স্কিপিং করা শুরু করলাম, যাতে টার্গেট নির্ধারণে কুত্তাদের সমস্যা হওয়ায় পাশাপাশি আমার লাথি দিতে সুবিধা হয়। কুত্তাদ্বয় আমার রেঞ্জের মধ্যে আসা মাত্র আবার কষে লাথি, কিন্তু এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ঠ। ওরা সরে গেলো, বুঝতে পারলাম আমিও ওদের মনে ভয়ের সঞ্চার করতে পেরেছি। এবার ডিরেকশান পরিবর্তন করে, দু'টো দু'দিক হতে আমাকে আক্রমণ করলো। ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, যাই হোক কামঁড় দিতে দিব না এবং দৌড়ও দিব না। সমান গতিতে দু'পা চালালাম। পুনশ্চঃ সরে গেলো। এবার, আক্রমণ না করে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিঁয়ে রইলো। বিপদে পড়ে গেলাম, ওদের চার চোখের বিপরীতে আমার দুই চোখ কার্যকর 'আই কন্টাক্ট' করতে পারছে না।অপেক্ষাকৃত ছোট কুকুরটি এবার আক্রমণ করে বসল। হঠাৎ মনে পড়ল, ইহারা ঢিলকে ভয় পায়। অতপরঃ ঢিল তোলার ভঙ্গি করে ধাওয়া করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। বুঝলাম, বিলেতিরা এই জিনিসের মর্ম জানে না্ এদের কে শিক্ষায়ও নি। অগত্যা মনে হলে, আমিই বরঞ্চ এদেরকে ধাওয়া করবো। কামঁড় খেতে হলে আক্রমণ করেই খাব। যেই ভাবা সেই কাজ। দিলাম ধাওয়া। ওহ! এবার কাজে দিলো। আমিও পেয়ে বসলাম, শালা বিলেতি- আজ তোদের একদিন, কি, আমার যে কয়দিন লাগে? একদমে তাড়া করে বাড়ীতে পাঠালাম। বাড়ীর কেয়ারটেকারকে শাঁসাতে গিয়ে যা শুনলাম, তাতে চক্ষু চড়ক গাছ। আনুমাণিক পরিসংখ্যান এমন, এ পর্যন্ত মোট ৩৬ জনকে কাঁমড়িয়েছে, যার মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেকে ১০০০টাকা করে পেয়েছে মোট ০৭জন। নভেম্বর ২০১৫ মাসেই ০৯জনকে কাঁমড়িয়েছে এ কুকুর দুইটি যার মধ্যে বাড়ির কেয়ারটেকার নিজেও আছেন। কেয়ারটেকারের অকৃপণ বাহবা নিয়ে ও পথ মুখো না হওয়ার শপথ নিতে নিতে চলে এলাম।
টাকা থাকলেই আপনি কুত্তা কিনবেন, আবার সে কুত্তায় মানুষকে নির্বিচারে কামড়ালেও আপনার কিছু করার থাকবে না? এ আবার কেমন বিচার আপনাদের? আপনাদের কুত্তাও কি তবে মানুষের চেয়ে দামি?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৬