১৯৯০ সাল এ বের হয় মাথায় সাদা বেল্ট বাঁধা এক উচ্ছল দুরন্ত তরুণ ফজল ও তার দুরন্ত দুর্দান্ত দল আমাদের প্রিয় 'নোভা 'র ২য় অ্যালবাম 'রাজাকারের তালিকা চাই' অ্যালবামটি। প্রিয় বন্ধুরা ভেবে দেখুন কতটা দুঃসাহস থাকলে এবং দেশের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে সেই অগ্নিঝরা ৯০ এ যখন সারা বাংলাদেশ স্বৈরাচার পতনের লড়াইয়ে লিপ্ত ঠিক তখন এইরকম একটি স্লোগান / দাবী নিয়ে অ্যালবাম এর নামকরণ করতে পারে যেটা দিয়ে তখন চাইলে সরকার অথবা ঐসব শ্রেণীর লোকেরা নোভা ও ফজল কে সহজেই বিপদে ফেলতে পারতো । কোন বিপদের ভয় না করে ফজল ও নোভা তাদের সেই দাবী তখনকার সারা বাংলাদেশের তরুণদের হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছিল। আমাদের রাজনীতিবিদরা স্বাধীনতার পর এতদিন ধরে যা পারেনি তাই করে দেখালো 'নোভা' বাহিনী ,যেখানে স্বৈরশাসক এরশাদ কে ব্যঙ্গ করেও একটি গান আছে "খায় জেলে ভাত'' শিরোনামে ।
যাই হোক তখন বিচার না হোক অন্তত প্রথম বাংলাদেশের তরুণদের কণ্ঠ থেকে 'রাজাকার' দের ঘৃণা প্রকাশ পেলো । যা তারা পুনরায় আবার ১৯৯৮ সালে বের হওয়া 'ভাইসো' অ্যালবাম এ আরও বেশী করে ব্যাঙ্গাত্তক ভাবে ফুটিয়ে তুলে "ধর রাজাকার' গানটির মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রথমটি ছিল 'রাজাকার'দের তালিকা চেয়ে একটা সাধারণ নোটিশ আর দ্বিতীয়তটা ছিল তালিকা পাওয়ার পরপরেই তাদের শাস্তি দিতে ধরার অভিযানে নামার পরিকল্পনা বলতে পারেন।
ধর রাজাকার- ফজল (নোভা)
এরপর ১৯৯১ সাল। স্বৈরশাসন শেষ করে মাত্র নতুন গণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছে। সেই বছরে আমাদের আজকের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার (এই প্রজন্মের কাছে উনি এই দুই পরিচয়ে পরিচিত) প্রিয় প্রিন্স মাহমুদ নামের সঙ্গীতের আকাশে অতি নতুন নক্ষত্র ,এক তরুণ 'নোভা'র রাজাকারদের তালিকায় যারা তাদের অতীত কর্মকাণ্ড ও বর্তমান কর্মকাণ্ডের একটু বর্ণনা দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলো যে ওরা কারা! এবং তাদের ঠিকানা কোথায় হবে তাও তারা হুশিয়ার করে জানিয়ে দিলো "রাজাকার আলবদর '' গানটি দিয়ে। আমার কিশোর বেলার চরম প্রিয় একটি গান ছিল। প্রিন্স মাহমুদ কে কেন আমরা ভুলতে পারিনা বা কেন এতো বেশী পছন্দ করি তার কারন প্রিন্স মাহমুদ শুধু সুর দিয়ে নয় কণ্ঠ দিয়েও অনেক কিছু দিয়েছিল যা আজকের অনেকেই জানে না। প্রিয় বন্ধুরা দুঃখের বিষয় এই যে সেই ৯১ তে অ্যালবাম এ শুনে ও টেলিভিশনের ব্যান্ড শো তে দেখার পর দীর্ঘ এতটা বছর এই ''রাজাকার আলবদর'' গানটি কোথাও শুনতে পাইনি, অথচ এই গানটির কথাই আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে কিন্তু গানটি কেউ জানেনা এমন কি আমাদের ডিজিটাল যুগের 'চামকি চামেলি'' "কলাভেরি'' পোলাপাইনেরাও এই গানটি জানে না , যারা সারাদিন নেটে হিন্দি,ইংলিশ গান ,মুভির সব টাটকা খবর রাখে তাদের কাছেও এই গানটির কোন খবর নাই।আজ আপনাদের সেই গানটি দিয়ে এইটুকু প্রমান করে দিচ্ছি যে ''রাজাকার' দের বিচার আজকের আওয়াজ নয় এটা আজ থেকে ২২ বছর আগের তরুণদের দাবী ছিল। যেখানে কোন রাজনীতি ফায়দা লুটার কিছু ছিল না, কিন্তু আজ ২২ বছর পর সেই গর্জে উঠা তরুণদের কথা ধরেই আজকের রাজনীতিবিদরা ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই দেশের তরুণরা ফায়দা লুটার জন্য এই দাবী তুলেনি ,তারা তুলেছিল মনের ভেতর থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে আজকের তরুণ সমাজের কাছে যা দেখা যায়না। আজ গান হয় সেটা শুধু পয়সা দিয়ে সাময়িক বিনোদন দেয়ার জন্য, বিনোদন পাবার জন্য, এইটুকুই! কিন্তু আজকের গানে সেই ২২ বছর আগের প্রাণ পাইনা, পাইনা রক্তে আগুনলাগা কোন গান, কারন আজ যে চারিদিকে শুধু ফায়দা লুটার 'প্ল্যান'। কিভাবে কত তাড়াতাড়ি বিনোদনের জন্য একটু মনের মাঝে ঝাকানাকা তুলে জনপ্রিয়তা পাওয়া জায়,পয়সা হজম করানো যায় সেই চিন্তা। আমরা চাই আবার এই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠুক, এই দেশের সবাই প্রতিবাদী সাহসী হোক। কারন আমাদের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগেই আজকে যুদ্ধঅপরাধীর বিচার একটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার হাতিয়ার হিসেবে নিতে পেরেছে রাজনীতিবিদরা। আমরা কাউকে ফায়দা লুটতে দিবো না। আমরা চাই সত্যি সত্যি যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার । আমরা চাই এই দেশ থেকে সকল কালো হাত ধ্বংস হোক, সকল অপশক্তি নির্মূল হোক। সকল বিদেশী অপসংস্কৃতি ধ্বংস হোক।
সব রাজাকার ভাইসা যাইবো বঙ্গপসাগরে- প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)
বোনাস গান -
বেলা শেষে ফিরে এসে- প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)
এমন সব গান ও আরও অনেক সেরা কিছু পেতে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-
একটি শিক্ষিত রেডিও
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



