somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সব রাজাকার ভাইসা যাইবো বঙ্গপোসাগরে" এই হুশিয়ারি প্রথম যারা দিয়েছিল-

১৬ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রিয় বন্ধুরা ,আজ সরকার সহ ও সাধারণ জনগণ সবাই যুদ্ধঅপরাধী দের বিচার নিয়ে সোচ্চার। এই দাবী কে সরকারী দল তাদের রাজনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে বারবার এর সুবিধা ভোগ করছে। এমন কি এই দাবীকে নির্বাচনী ইস্তেহারে উল্লেখ করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। এই দাবী নিয়ে যতটা না সফল সরকার হয়েছে তার পরিমাণে এই দাবী পূরণের কিছুই হয় নাই। আপনারা বলবেন যুদ্ধঅপরাধীদের গ্রেফতার করেছে, বিচার চলছে! তাহলে ঐটুকুতেই সান্ত্বনা নিয়ে নিন। কারন সরকার জানে যে পাবলিক বা আম জনতা কতটুকু পেলে খুশি হয় বা দেখলে শান্তি পায়! ততটুকু তারা দিয়ে ফেলেছে। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এই ছাগু এসব কি বলছে? আমি বলবো আমি ঠিক বলছি ,কারন এই দাবী যখন উঠে তখনকার সরকার ও বিরোধী দল ছিল একেবারে নিসচুপ এবং তখনকার বিরোধীদল ছিল আজকের ক্ষমতাসীন দল যারা এই যুদ্ধঅপরাধীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই মঞ্চে রাজনীতি করেছে, একই সাথে রাজপথ কাঁপিয়েছে এবং এই যুদ্ধঅপরাধীর বুদ্ধি দিয়েই ২১ বছর পর ক্ষমতায় গিয়েছিল । তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর রূপরেখা সম্পূর্ণ আবিষ্কারক ছিলেন যুদ্ধ অপরাধী গোলাম আজম সাহেব যার ফর্মুলা নিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী এই গোলাম আজমকে সঙ্গে নিয়েই লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তখন কেন উনি এদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হননি? আমি কাউকে কোন রাজনৈতিক ভাবে আঘাত করতে এই পোষ্ট দেইনি আমি শুধু আজকের এই বিচারের দাবির প্রেক্ষাপট কবে প্রথম এই দেশের জাগ্রত সাহসী তরুণরা তুলেছিল তা জানাতেই এই পোষ্ট দিয়েছি। যেখানে আজকের তরুণ সমাজ ও তখনকার তরুণ সমাজ এর একটা নীতিগত পার্থক্য পাওয়া যায়।

১৯৯০ সাল এ বের হয় মাথায় সাদা বেল্ট বাঁধা এক উচ্ছল দুরন্ত তরুণ ফজল ও তার দুরন্ত দুর্দান্ত দল আমাদের প্রিয় 'নোভা 'র ২য় অ্যালবাম 'রাজাকারের তালিকা চাই' অ্যালবামটি। প্রিয় বন্ধুরা ভেবে দেখুন কতটা দুঃসাহস থাকলে এবং দেশের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে সেই অগ্নিঝরা ৯০ এ যখন সারা বাংলাদেশ স্বৈরাচার পতনের লড়াইয়ে লিপ্ত ঠিক তখন এইরকম একটি স্লোগান / দাবী নিয়ে অ্যালবাম এর নামকরণ করতে পারে যেটা দিয়ে তখন চাইলে সরকার অথবা ঐসব শ্রেণীর লোকেরা নোভা ও ফজল কে সহজেই বিপদে ফেলতে পারতো । কোন বিপদের ভয় না করে ফজল ও নোভা তাদের সেই দাবী তখনকার সারা বাংলাদেশের তরুণদের হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছিল। আমাদের রাজনীতিবিদরা স্বাধীনতার পর এতদিন ধরে যা পারেনি তাই করে দেখালো 'নোভা' বাহিনী ,যেখানে স্বৈরশাসক এরশাদ কে ব্যঙ্গ করেও একটি গান আছে "খায় জেলে ভাত'' শিরোনামে ।
যাই হোক তখন বিচার না হোক অন্তত প্রথম বাংলাদেশের তরুণদের কণ্ঠ থেকে 'রাজাকার' দের ঘৃণা প্রকাশ পেলো । যা তারা পুনরায় আবার ১৯৯৮ সালে বের হওয়া 'ভাইসো' অ্যালবাম এ আরও বেশী করে ব্যাঙ্গাত্তক ভাবে ফুটিয়ে তুলে "ধর রাজাকার' গানটির মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রথমটি ছিল 'রাজাকার'দের তালিকা চেয়ে একটা সাধারণ নোটিশ আর দ্বিতীয়তটা ছিল তালিকা পাওয়ার পরপরেই তাদের শাস্তি দিতে ধরার অভিযানে নামার পরিকল্পনা বলতে পারেন।
ধর রাজাকার- ফজল (নোভা)


এরপর ১৯৯১ সাল। স্বৈরশাসন শেষ করে মাত্র নতুন গণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছে। সেই বছরে আমাদের আজকের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার (এই প্রজন্মের কাছে উনি এই দুই পরিচয়ে পরিচিত) প্রিয় প্রিন্স মাহমুদ নামের সঙ্গীতের আকাশে অতি নতুন নক্ষত্র ,এক তরুণ 'নোভা'র রাজাকারদের তালিকায় যারা তাদের অতীত কর্মকাণ্ড ও বর্তমান কর্মকাণ্ডের একটু বর্ণনা দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলো যে ওরা কারা! এবং তাদের ঠিকানা কোথায় হবে তাও তারা হুশিয়ার করে জানিয়ে দিলো "রাজাকার আলবদর '' গানটি দিয়ে। আমার কিশোর বেলার চরম প্রিয় একটি গান ছিল। প্রিন্স মাহমুদ কে কেন আমরা ভুলতে পারিনা বা কেন এতো বেশী পছন্দ করি তার কারন প্রিন্স মাহমুদ শুধু সুর দিয়ে নয় কণ্ঠ দিয়েও অনেক কিছু দিয়েছিল যা আজকের অনেকেই জানে না। প্রিয় বন্ধুরা দুঃখের বিষয় এই যে সেই ৯১ তে অ্যালবাম এ শুনে ও টেলিভিশনের ব্যান্ড শো তে দেখার পর দীর্ঘ এতটা বছর এই ''রাজাকার আলবদর'' গানটি কোথাও শুনতে পাইনি, অথচ এই গানটির কথাই আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে কিন্তু গানটি কেউ জানেনা এমন কি আমাদের ডিজিটাল যুগের 'চামকি চামেলি'' "কলাভেরি'' পোলাপাইনেরাও এই গানটি জানে না , যারা সারাদিন নেটে হিন্দি,ইংলিশ গান ,মুভির সব টাটকা খবর রাখে তাদের কাছেও এই গানটির কোন খবর নাই।আজ আপনাদের সেই গানটি দিয়ে এইটুকু প্রমান করে দিচ্ছি যে ''রাজাকার' দের বিচার আজকের আওয়াজ নয় এটা আজ থেকে ২২ বছর আগের তরুণদের দাবী ছিল। যেখানে কোন রাজনীতি ফায়দা লুটার কিছু ছিল না, কিন্তু আজ ২২ বছর পর সেই গর্জে উঠা তরুণদের কথা ধরেই আজকের রাজনীতিবিদরা ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই দেশের তরুণরা ফায়দা লুটার জন্য এই দাবী তুলেনি ,তারা তুলেছিল মনের ভেতর থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে আজকের তরুণ সমাজের কাছে যা দেখা যায়না। আজ গান হয় সেটা শুধু পয়সা দিয়ে সাময়িক বিনোদন দেয়ার জন্য, বিনোদন পাবার জন্য, এইটুকুই! কিন্তু আজকের গানে সেই ২২ বছর আগের প্রাণ পাইনা, পাইনা রক্তে আগুনলাগা কোন গান, কারন আজ যে চারিদিকে শুধু ফায়দা লুটার 'প্ল্যান'। কিভাবে কত তাড়াতাড়ি বিনোদনের জন্য একটু মনের মাঝে ঝাকানাকা তুলে জনপ্রিয়তা পাওয়া জায়,পয়সা হজম করানো যায় সেই চিন্তা। আমরা চাই আবার এই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠুক, এই দেশের সবাই প্রতিবাদী সাহসী হোক। কারন আমাদের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগেই আজকে যুদ্ধঅপরাধীর বিচার একটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার হাতিয়ার হিসেবে নিতে পেরেছে রাজনীতিবিদরা। আমরা কাউকে ফায়দা লুটতে দিবো না। আমরা চাই সত্যি সত্যি যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার । আমরা চাই এই দেশ থেকে সকল কালো হাত ধ্বংস হোক, সকল অপশক্তি নির্মূল হোক। সকল বিদেশী অপসংস্কৃতি ধ্বংস হোক।
সব রাজাকার ভাইসা যাইবো বঙ্গপসাগরে- প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)

বোনাস গান -
বেলা শেষে ফিরে এসে- প্রিন্স মাহমুদ (ফ্রম ওয়েস্ট)

এমন সব গান ও আরও অনেক সেরা কিছু পেতে চাইলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-
একটি শিক্ষিত রেডিও
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৬:২৩
২৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×