somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খলনায়কের মৃত্যু বার্ষিকী

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একজন স্বেচ্ছাসেবক সৈনিক হিসেবে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। সেই যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড ক্লাস আয়রন ক্রস লাভ করেন। ১৯১৮ সালের আগস্টে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেয়া হয়। একজন সামান্য কর্পোরালের এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।
পরবর্তীকালে তিনি নানান ছল-চাতুরী, চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ভাইমার প্রজাতন্ত্রে নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। এরপর মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই একসময় তুমুল জনপ্রিয় নেতায় এবং জার্মানীর ভাগ্যবিধাতায় পরিণত হন।
তার অনেক পর ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানী পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর এভাবেই তিনি নিজ হাতে রচনা করেন মানবসভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎ কাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের।
নাম বলার দরকার নাই, আপনারা সকলেই বুঝেছেন আমি কার কথা বলছি। হ্যাঁ, তিনি এডলফ হিটলার। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইতিহাসের খলনায়ক নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন।



হিটলারের অদ্ভুত বাসনা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবী থেকে ইহুদী নামক জাহান্নামের কীটকে চিরতরে বিদায় করতে হবে। কারণ তার মতে জার্মানীর উন্নয়ন অগ্রগতী এবং ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের একমাত্র কারণ কমিউনিস্ট & ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, আর এজন্য তিনি গ্রহণ করেন এক মাস্টার প্ল্যান। যেটা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত। আর এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে হত্যা করা হয় ৬০ লক্ষ ইহুদীকে। হিটলারের ইচ্ছা ছিল ইহুদীদের ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে তিনি তৈরি করবেন এক জাদুঘর। আর সেই জাদুঘরের সামনে বড় অক্ষরে লেখা থাকবে ‘ইহুদীদের ব্যবহার্য সামগ্রী, যারা পৃথিবী থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত’!!
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!! তিনি যাদের সামগ্রি দিয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, সেটা না হয়ে হিটলার নিজেই ইতিহাসের জাদুঘরে বন্দি হলেন !!
ইহুদীদের প্রতি অত্যাচার ও গণহত্যার এসব ঘটনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগেই নাগরিক সমাজ থেকে ইহুদিদের উৎখাতের জন্য জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করা হয়। জনাকীর্ণ বন্দী শিবিরে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবন্দীদেরকে ক্রীতদাসের মতো কাজে লাগাতো যারা পরে অবসন্ন হয়ে রোগভোগের পর মারা যেত।

আউশবিৎযে হত্যাকান্ডঃ


(আউশবিৎজ ডেথ ক্যাম্প)

জার্মানির স্বৈরশাসক এডলফ হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে কুখ্যাত মৃত্যুশিবিরটির নাম আউশবিৎজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কেবল এই একটি ক্যাম্পেই হত্যা করা হয় অন্তত ১১ লাখ মানুষকে, যাদের বেশির ভাগই ছিল ইহুদি। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে ক্যাম্পটি মুক্ত করে সোভিয়েত রেড আর্মি। জার্মান বাহিনীর নির্যাতনের মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও আউশবিৎজ কিন্তু পোল্যান্ডে অবস্থিত। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড দখল করে নেওয়ার পর সেখানকার রাজনীতিবিদদের বন্দি করে রাখার জন্যই মূলত আউশবিৎজ ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠা করা হয়। নির্যাতন ক্যাম্প ও সেনা ছাউনি তৈরির জন্য পোল্যান্ডের শিল্প নগরী অশউইসিমকে বেছে নেয় নাৎসি বাহিনী। তারা এ শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখে আউশবিৎজ।


(ডেথ ক্যাম্পে কিছু জীবিত বন্দি)

শহরটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪৮টি নির্যাতন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ক্যাম্পগুলো সম্মিলিতভাবেই আউশবিৎজ নামে পরিচিত। ১৯৪০ সালের ১৪ জুন প্রথম রাজনৈতিক বন্দিদের আনা হয় এ ক্যাম্পে। তবে আউশবিৎজে গণহত্যা শুরু হয় ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে। ওই জানুয়ারিতে হিটলার ইউরোপীয় ইহুদিদের হত্যার মাধ্যমে 'চূড়ান্ত সমাধান' এর সিদ্ধান্ত নিলে লাখ লাখ বন্দিকে আউশবিৎজে আনা হয়। হিটলারের কুখ্যাত এসএস বাহিনী ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রণ করত। আউশবিৎজে গণহত্যার প্রধান উপায় ছিল গ্যাস চেম্বার। একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হতো এসব গ্যাস চেম্বারে। শুরুতে কেবল পোলিশ ইহুদিদের হত্যা করা হলেও পরে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, যুগোস্লাভিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, গ্রিস, ইতালি, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও ইহুদি বন্দিদের হত্যার জন্য আনা হতো এ ক্যাম্পে। প্রতিদিনই ট্রেনভর্তি করে বন্দিদের আনা হতো আউশবিৎজ।


( ট্রেন থেকে নামানো হচ্ছে হতভাগ্যদের)

মাত্র ৩ বছরে এ ক্যাম্পে হত্যা করা হয় অন্তত ১১ লাখ মানুষকে। ১৯৪৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আউশবিৎজ পাশের বিরকেনাও শহরেও ডেথ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে নাৎসিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ১৯৪৫ সালের শুরু থেকেই ডেথ ক্যাম্পগুলো ধ্বংস করতে শুরু করে জার্মান বাহিনী। লক্ষ্য ছিল, নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলা। পোল্যান্ডের সোবিবর, ত্রেবি্লঙ্কা, বেলজেকসহ অন্যান্য ডেথ ক্যাম্প প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে সফলও হয় নাৎসিরা।

( হলোকস্টে নিহতদের লাশের স্তুপ)

তবে বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত আউশবিৎজ ধ্বংস করতে পারেনি তারা। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সেনারা ক্যাম্পটি মুক্ত করে। এ সময় মাত্র সাত হাজার বন্দিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ১৯৪৭ সালে আউশবিৎজ ক্যাম্পের জায়গায় 'আউশবিৎজ-বিরকেনাও স্মৃতি জাদুঘর' প্রতিষ্ঠা করে পোল্যান্ড। তখন থেকেই হিটলারের নৃশংস নির্যাতনের জীবন্ত চিহ্ন হয়ে রয়েছে আউশবিৎজ। আর হিটলার স্বস্ত্রীক আত্মহত্যা করে ইতিহাসের খলনায়কে পরিণত হন।

( হলোকস্টে নিহতদের লাশের সারি)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৪০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×