এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।
স্বৈরশাসকের বন্দী
এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে সমাধানের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেইনি (ভিডিওতে দেয়া আছে তাই)। আজ সমাধানের ব্যাখ্যা সহ ধাঁধাটি দিলাম।
ধাঁধাটি এমন, এক স্বৈরশাসক এক দ্বীপে ১০০ জন লোককে বন্দী করে রেখেছে, যারা একেবারে শিশু অবস্থায় বন্দী হয়ে এখন প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় দ্বীপে আছে। প্রাচীর ঘেরা দ্বীপে বন্দীদের পাহারা দেয়ার জন্য গেটে দারোয়ান আছে। বন্দীরা একজন আরেকজনকে দেখতে পারে, কিন্তু পরষ্পরের সাথে কথা বলতে পারে না বা কোনো তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে না। বন্দীরা অন্য বন্দীদের চোখ দেখতে পেলেও নিজের চোখের রঙ দেখতে পারে না, কারণ দ্বীপে কোনো আয়না বা প্রতিফলিত হতে পারে এমন কিছু নেই, সমুদ্রের পানিও অস্বচ্ছ যাতে চোখের রঙ বোঝা যায় না। স্বৈরশাসক বলেছে, বন্দীদের কারো চোখ নীল আর কারো চোখ সবুজ। যাদের চোখ সবুজ, তাঁরা চাইলে দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে পারে। এরজন্য রাতের কোন সময়ে দ্বীপের দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলতে হবে যে, "বের হতে চাই"। দারোয়ান তখন চোখে টর্চের আলো ফেলে দেখবে চোখের রং কিনা। সবুজ চোখ দেখলে দারোয়ান গেট খুলে দেবে, কিন্তু নীল চোখ দেখলে বন্দীকে নিয়ে সোজা দ্বীপের আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেবে। নিশ্চিত মৃত্যু!
কোন বন্দীই দারোয়ানের কাছে যাবার সাহস করেনা, কেননা নিজের চোখের রং জানার উপায় কোন বন্দীই বের করতে পারে না। একজন আরেকজনকে যদি চোখের রঙ বলে দেয়, তাহলে দুজনকেই আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেয়া হবে।
এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপের মানুষেরা দ্বীপ থেকে বেরোবার কোনো উপায় দেখছিল না। তাদের দুরবস্থা দেখে এক মানবাধিকারকর্মী তাদের সাহায্য করার উপায় খুঁজতে লাগলেন। এই মানবাধিকারকর্মীকে স্বৈরশাসক দ্বীপে যাতায়াতের অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু বন্দীদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেননি। মানবাধিকার কর্মী দেখলেন, স্বৈরশাসক মিথ্যা বলেছেন। দ্বীপে কোন নীল চোখের মানুষ নেই, দ্বীপের সমস্ত মানুষের চোখ সবুজ। তিনি ভাবলেন, এই তথ্যটা জানতে পারলেই দ্বীপের সমস্ত মানুষ মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু বন্দীদের সাথে কথা বলার অনুমতি তো মানবাধিকারকর্মীর নেই। অনেক অনুরোধের পর স্বৈরশাসক তাকে দুটি শর্তে বন্দীদের সাথে কথা বলার অনুমতি দিলেন:
প্রথম শর্ত- বন্দীদের উদ্দেশ্যে একটিমাত্র বাক্য বলা যাবে।
দ্বিতীয় শর্ত- সেই বাক্যটিও এমন হতে হবে যেন তা শুনে বন্দীরা নতুন কিছু জানতে না পারে, অর্থাৎ কেবলমাত্র তাদের জানা কোন বিষয়ই মানবাধিকারকর্মী তাদের জানাতে পারবেন।
এই শর্ত মেনে নিয়ে মানবাধিকারকর্মী একটি বাক্য তৈরি করলেন। স্বৈরশাসক যখন দেখলেন যে বাক্যটি তার দুটি শর্তই পূরণ করছে, তিনি মানবাধিকারকর্মীকে অনুমতি দিলেন বাক্যটি বলার। মানবাধিকারকর্মী একটি মাইক নিয়ে দ্বীপে গেলেন, দ্বীপের নানা জায়গায় গিয়ে তিনি বারেবারে একটি বাক্যই ঘোষণা করতে লাগলেন, যা দ্বীপবাসী সকল বন্দীই শুনতে পেল।
"তোমাদের মধ্যে অন্তত একজনের চোখ সবুজ।"
এরপর এক রাত, দুই রাত করে একশো রাত কেটে গেল। শততম রাতে দেখা গেল, একশো জন বন্দীই বের হয়ে গেছে। কি করে এটা সম্ভব হলো?
≠======================================================================
সমাধান: বোঝার সুবিধার্থে প্রথমে বন্দীর সংখ্যা দুইজন ধরে নেই। মনে করা যাক তাদের নাম A আর B। প্রথম দিন তারা পরস্পরের সবুজ চোখ দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু যেহেতু ঘোষণা বলছে অন্তত একজনের চোখ সবুজ, তাই A ভাবছে যে B এর চোখ সবুজ অর্থ তার নিজের চোখ হয় নীল না হয় সবুজ। সে ভাবছে:
১) A এর চোখ নীল হলে সেটা দেখে B বুঝতে পারবে নিজের চোখ অবশ্যই সবুজ, তাই সে প্রথম রাতে চলে যাবে।
২) A এর চোখ সবুজ হলে সেটা দেখে B প্রথম রাতে যাবে না, কারণ তার চোখের রঙ সম্পর্কে সে নিশ্চিত হতে পারে না। B প্রথম রাতে না গেলে A বুঝতে পারবে যে A এর সবুজ চোখ দেখে B যায়নি, আবার Bও বুঝতে পারবে যে তার সবুজ চোখ দেখে A যায়নি, অর্থাৎ দুজনের চোখই সবুজ। তাই দ্বিতীয় রাতে দু'জনেই চলে যাবে।
যদি বন্দী তিনজন হয়, ধরা যাক তাদের নাম A, B, C! C দেখবে বাকি দুজনের চোখ সবুজ, এবং বিবেচনা করবে:
১) C এর চোখ নীল হলে A, B দু'জনেই তা দেখবে এবং তাদের দুজনের চোখের রং সবুজ বলে বুঝতে পেরে দ্বিতীয় রাতে চলে যাবে।
২) যদি তাঁরা দ্বিতীয় রাতে না যায়, তবে বুঝতে হবে C এর চোখও সবুজ। কারণ A, B দ্বিতীয় রাতে যাবে না, যদি তাদের প্রত্যেকে দুজন সবুজ চোখের মানুষ দেখতে পায়, অর্থাৎ দ্বিতীয় রাতে কেউ না গেলে তিনজনেই বুঝতে পারবে তিনজনের চোখই সবুজ। সুতরাং তৃতীয় রাতে তিনজনই চলে যাবে।
গাণিতিক ভাবে দেখানো যায়, যদি n সংখ্যক সবুজ চোখের মানুষ থাকে, তবে nতম রাতে সবাই বের হয়ে যেতে পারবে, অর্থাৎ ১০০ জন সবুজ চোখওয়ালা ১০০ তম রাতে বের হয়ে যেতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩