ধর্ম নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে তাদের আমি সমর্থন করি না। সেই সঙ্গে তাদের কঠোর শাস্তি হোক সেটাও সমর্থন করি না।
কিন্তু যেসব মডারেট মুসলিমরা কঠোর শাস্তির দাবি সমর্থন করছেন তাদের প্রতি আমার কিছু প্রশ্ন:
আমাদের দেশে আরজ আলী মাতুব্বর, আহমদ শরীফসহ অনেকেই নাস্তিক ছিলেন বটে তবে তারা কুরুচিপূর্ণ কোনো মন্তব্য করেনি। তাদের ভাবনা চিন্তা তারা যুক্তিতর্কের আলোকে লিখে গেছেন। আরজ আলী মাতুব্বরের লাইফস্টাইলও ছিল অসাধারন। তিনি কখনো কারও সঙ্গে রেগে কথা বলেননি।
যাইহোক, তাদের নিয়ে দেশের কত আস্তিক কত কটুক্তি এবং আজেবাজে কথা বলছে জানেন? অনেকে 'খানকির পোলা' টাইপের ভাষা ব্যবহার করেতে দেখেছি। তাহলে ওই আস্তিকদেরও কি সাজা হওয়া উচিত নয়?? তারাও কি একই অপরাধে অপরাধী নয়?? এটা কি বিদ্বেষ নয়??
এই সামহয়্যারেই অনেক পোস্ট আছে যেখানে গঠনমূলক ও যুক্তি দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবং বিদ্বেষমূলক কোনোই কথাবার্তা নেই। কিন্তু দেখা যায়, সেখানে কিছু লোক বুঝে না বুঝে ব্যক্তি আক্রমণ ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করে বসেছে। এটা কি ??
এটাও কি একই ধরনের অপরাধ নয়?
আর এরকমভাবে সাজা দিতে চাইলে হাজার হাজার আস্তিকেরও সাজা দিতে হবে যদি নৈতিক মানদণ্ডে বিচার করতে চান। আস্তিকদেরই শুধু অনুভূতি থাকবে আর নাস্তিকদের কোনো অনুভূতি থাকতে পারে না??
একটা সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে সবার অধিকারই সমান। মজার ব্যাপার হলো বেশিরভাগ লোক সভ্য ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও রাখে না। কারন তারা মানবিক বিবেকবোধের চাইতে ধর্ম তথা সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে বড় করে দেখে।
বিদ্বেষ উভয়পক্ষ থেকেই ছড়িয়েছে। উভয়পক্ষই একই অপরাধে অপরাধী। হিসাবটা সোজা। নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখুন।
কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেওয়া আস্তিকদের যদি শাস্তি হয় তাহলে যারা বিদ্বেষমূলক রচনা লিখেছেন তাদেরও শাস্তি মেনে নিব। সেটা কি সম্ভব? যেহেতু সেটা সম্ভব নয় তাহলে একপাক্ষিক ও সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একপাক্ষিক বিচারকে সমর্থন সম্পূর্ণ অনৈতিক। এবং কোনো মানবিক বিবেকবোধসম্পন্ন মানুষ এটা সমর্থন করতে পারে না।
আমরা সবাই জানি, বিএনপি জামায়াতের মুখপাত্র আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও তাঁর সাগরেদ ফরহাদ মাজহার (নাস্তিক হিসেবে পরিচিত) এই সাম্প্রদায়িক চুলকানি সৃষ্টি করেছেন নিকৃষ্ট মানসিকতা থেকে। স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া তরুণের প্রতি লাল সালুর ভণ্ড মজিদ প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, ওই মিয়া তোমার দাড়ি কই?
সেই একই রাজনীতি আজ এখনো বাংলাদেশ চলে তা ভাবতেই অবাক লাগে। মোনাফেকদের সৃষ্টি করা উত্তেজনায় আমাদের সহজসরল ধর্মপ্রাণ মাদ্রাসার ছেলেরা আজ উত্তেজিত। তারা জানেও না ব্লগ জিনিসটা কি?
এটা নিয়ে জল ঘোলা করে তারাই ধর্মকে অপমান করছে। বর্তমানে আটক হওয়া ব্লগারদের লেখা যারা আগে পড়েনি তারাও তাদের লেখা পড়ছে। ওই ব্লগাররা তো তাদের লেখা পড়তে বাধ্য করেনি কাওকে। আমিও সম্প্রতি তাদের লেখা পড়লাম। দেখে কিছুটা অবাকও হলাম। প্রত্যেকে ব্লগার হিসেবে হিট। মানে তারা যা লিখেছেন, সবাই হুমরি খেয়ে পড়েছে তাদের লেখা পড়ার জন্য। যেনেশুনে থাপ্পড় খেতে গিয়ে ফিরে এসে বললো আমাকে থাপ্পড় মারলো কেন? কি অদ্ভূত আমাদের যুক্তি। তারপরও বলবো ব্লগের লেখা ব্লগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই উস্কানি দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। মাঝখান থেকে এরশাদও হাস্যকরভাবে কিছু ভোট কামাইয়ের চেষ্টা করেছে।
আমি মনে করি যাদের কাছে সাম্প্রদায়িক পরিচয় মুখ্য তারা মানুষের আওতায় পড়ে না। আমরা কারো সঙ্গে পরিচিত হলে তার ধর্ম কি সেটা জানার প্রয়োজন মনে করি না। বাংলাদেশে এখন সম্পূর্ণ অবান্তর একটা বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলছে।
পরিশেষে সবাইকে মানুষ হওয়ার আহবান জানাই। নিজেদের স্বীয় বিবেকবোধ জাগ্রত করার আহবান জানাই।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




